আমার দেখা ‘৭১ এর মুক্তি যুদ্ধ।(নয়)

একটা যুদ্ধে সব সময় শুধু দুঃখ, কষ্ট, মৃত্যুর ই হাতছানি থাকবে তা কিন্তু নয়, তার মধ্যেই নতুন জন্ম , হাঁসি, আনন্দ সবেরই মিশেল ছিল।বিশ্ব বিখ্যাত ওয়ার মুভি “সান ফ্লাওয়ার” এর কানের দুল খেয়ে ফেলার মত হাসির ঘটনা ও আছে প্রচুর !

দুই একটা এর মাঝে উল্লেখ না করলে আমার পাঠক দের প্রতি অবিচার করা হবে।

গেরিলা সম্মুখ ‘এঙ্কাউন্টার’ চলছে । দুই পক্ষই গুলির খৈ ফুটাচ্ছে। এর মাঝে হন্ত দন্ত হয়ে এক মুক্তি বাহিনির তরুন এক বাড়ীতে ঢুকে, ” মা গো শিগগিরে একটা ‘ বালতি ‘ দাও।” বালতি দিয়ে কি করবে বাবা? মিলিটারি দের মত  মাথায় দিবা? – “না মা, আমাদের আস্র, কিছুহ্মণ গুলি করলে গরম হয়ে যায়, তাই নল পানিতে চুবিয়ে ঠাণ্ডা করে আবার গুলি করতে হয়।”  উল্লেখ্য ভারতের তৈয়ারি কিছু আস,আল, আর -Carbine জাতীয় রাইফেল ( Self Loading Rifle) ছিল, নলের একদম সামনের দিকে তিন দিকে বরফির মত করে খাঁজ কাটা ।(এখনো রেলওয়ে পুলিশ দের হাতে মাঝে মাঝে দেখা যায়) , ওই অস্র গুলি  থেকে কিছুক্ষণ গুলি করলেই নল এত গরম হয়ে যেত যে পানিতে চুবিয়ে রাখা ছাড়া গত্যান্তর ছিলনা। এজন্যে ওই অস্র সজ্জিত কিছু মুক্তি ‘ প্লাটুন ‘ কে fun করে  ‘ বালতি প্লাটুন ‘ বলে ডাকা হোতো।

নানা বাড়ীর নদীতে গান বোট চলা চলের সময়  তীর থেকে গান বোট লক্ষ করে  প্রায়ই মুক্তি বাহিনীর ছেলেরা গুলি বর্ষণ করত । কারন গান বোট তীরে ভিড়ানোর সাহস ওরা কখনোই করতোনা  বা হয়তো অর্ডারই ছিলনা । কিন্তু  ক্ষ্যাপা কুকুরের মত মেশিন গান দিয়ে দুই পাড়ে বৃষ্টির মত গুলি ছুড়তে ছুড়তে যেত !

একদিন ঠিক এমন একটা ঘটনার পর হৈ চৈ শুনলাম থুড়থুড়ে ফকির বুড়ীটার গুলি লেগেছে। আহহারে এত মানুষ থাকতে ‘ ফকির বুড়ি ‘ ?  দৌড়ে গিয়ে দেখি বয়সের ভারে কুঁজো বুড়ী ঠিকই লাঠি ভর করে দাড়িয়ে আছে, ব্যথায় কান্না কাটি করছে। কিন্তু রক্ত-টক্ত নেই ! কি ব্যাপার? গুলি লাগলো, কিন্তু কোন রক্ত পাত নেই ? ঘটনার তদন্ত হোল !

এও ঘটে ? বুড়ীর মাথার এক পার্শে বেমাক্কা ফুলে আছে! ওখানেই নাকি গুলি লেগেছে, প্রচণ্ড বেথা ! গুলির সীসার মাথাটা ও বুড়ী কুড়িয়ে রেখেছে প্রমান স্বরূপ । সকলকে দেখালো ।                   ব্যাপারটা বিশ্লেষণ করে দেখা গেল যে, একটা গুলির চলার একদম “শেষ রেঞ্জে” এসে, শক্তি হীন হয়ে একটা ঢিলের মত বুড়ীর মাথায় পরেছে।ওই সীসার ভর জনিত কারনে মাথায় বেথা পেয়ে ফুলে উঠেছে । এমনও হয়? কথা আছে না ” রাখে আল্লাহ, মারে কে? ”

একদম শেষে মুক্তি পাগল দামাল ছেলেদের একটা মজার ঘটনা বলে আজ শেষ করবো, পাঠিকাদের কাছে অগ্রিম ক্ষমা চেয়ে !

নানা বাড়ীর ঘাটে বহু দেশি ছৈওয়ালা এক মালাই নৌকা বাঁধা থাকতো । বেশ কয়েকটাতে স্বশস্র মুক্তিবাহিনীর ছেলেরা সারা রাত ডিউটি করতো ।আশে পাশের বাড়ী গুলি থেকে স্ব প্রণোদিত হয়ে ওদের জন্যে খানা পাঠানো হতো ।

একদিন অনেক রাত। ঘাঁট থেকে হঠাৎ মহা হৈ চৈ , সাথে হাসির হল্লরা ! কি হয়েছে? হ্যারিকেন হাতে সবাই ছুটে গেল !

ঐ দিন কোথায় ” রেকি” করে ফিরতে ফিরতে অনেক রাত হয়েছে। এদিকে রাতে ওদের ডিউটি নেই মনে করে কেও আর খানা রাখেনি। বেচারারা খিদেয় অস্থির !

নৌকায় চিড়ে -কলা ছিল, নেতা সব চেয়ে কম বয়সীকে হুকুম দিল। সুন্দর করে চিড়ে ধুয়ে নিতে, কলা দিয়ে খেয়ে ক্ষুধা মিটানো যাবে। সাথে হুশিয়ারি ঃ খবরদার বাতি জ্বালানো যাবে না !

বেচারা অন্ধকারে কলা গুনে দেখে মানুষ গুনতির চেয়ে একটা কম । সে চিল্লায় ঃ কমান্ডার, কলাতো একটা কম ! কমান্ডার সাহেব গজর গজর করতে করতে বলেন, যত্ত সব সিভিলিয়ানদের নিয়ে হয়েছে জালা ! রেগুলার আর্মি হলে এসব স্যার কে শুনাতই না! রেগে মেগে বল্লেন তুই ব্যাটা কলা কম এনেছিস, তুই শুধু চিড়া খাবি।ভাল করে নদীর পানিতে কচলিয়ে ধুয়ে নে !

আদেশ মোতাবেক অন্ধকারে ভাল করে নদীর পানিতে সব ধুয়ে অন্ধকারে সকলে কলা- চিড়া দিয়ে খেতে বসে দেখলো, না! কলা তো কম নয়, সবার পাতেই একটা করে হয়েছে। বেছে বেছে কমান্ডার সাহেব অন্ধকারে ‘বড়ো ‘ টা নিয়েছিলেন। উনিই হুঙ্কার ছাড়লেন ” ওয়াক থু “!!

হাসির লুটোপুঁটিতে সনাক্ত হল, বাড়তি কলাটা নদীর পানিতে ভেসে আসা মানুষের………।।।

(চলবে)

 

 

১,০৬৮ বার দেখা হয়েছে

৮ টি মন্তব্য : “আমার দেখা ‘৭১ এর মুক্তি যুদ্ধ।(নয়)”

  1. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    সিরিজের ব্যতিক্রমি একটা পর্ব পড়ে ভাল লাগল, পরের পর্বের অপেক্ষায়...


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
    • আজিজুল (১৯৭২-১৯৭৮)

      না ব্রাদার, কয়দিন চলবে না।আমার "হাসপাতাল" পরিদর্শনে যেতে হচ্ছে পরশু থেকে! এক সপ্তাহের ছুটি চাই ।
      আর সিরিজ ও প্রায় শেষ। সাকুল্যে ১০ পর্ব হতো, এই ফাউটা ধরে হয়তো ১১ কি ১২ টা !
      (এর পর ক্যাডেট কলেজ সিরিজটা শেষ করবো ইনশাল্লাহ )
      শুভেচ্ছা রইল ।- আজিজ


      Smile n live, help let others do!

      জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : আজিজুল (১৯৭২-১৯৭৮)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।