নীরবে একদিন

বুয়েটের হলের খাওয়াদাওয়ার মান সেইরকম। প্রতিদিন একই রকম অখাদ্য। মাঝে মাঝে কনফিউজড হয়ে যাই,ভাত খাচ্ছি না ঘাস খাচ্ছি। কোন টেস্ট পাই না। অবশ্য শুনসি ঢাকা ভার্সিটির খাওয়াদাওয়ার মান আরো খারাপ। তো সপ্তাহে একদিন আমরা এই অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচার জন্য বাইরে খাইতে যাই। জেনারেলি চাঙ্খারপুলের নান্না মিয়াই আমাদের ভরসা। মাঝেমাঝে স্টার বা নীরবেও যাওয়া হয়।
এই ঘটনা এই টার্মের ফোর্থ বা ফিফথ উইকের। বুধবার রাতে আমি বাইরে খাইতে যাব। দোজা আর লিটনরে বললাম,চল,নান্নায় খেয়ে আসি। ওরাও রাজি হল। নরমালি নান্নায় ৬০-৭০ টাকায় জোস খাওয়া দেয়া যায়। আমি পকেটে ১০০ টাকা নিয়ে রওনা হলাম।নান্নায় যাইতেসি,ভাবলাম ক্যাসুয়াল ড্রেসেই যাই। ড্রেসকোডের গুল্লি মারি। গেঞ্জি,হাফ প্যান্ট, আর স্পঞ্জএর স্যান্ডেল পরে রওনা দিলাম।
বকশিবাজার মোড়ে এসে আমার ২ বন্ধুর মনে হল, না, আজকে আমরা নীরবেই খাব। আমি হিসাব করলাম, নীরবের খিচুড়ি ৭৫ টাকা হাফ,আর কোক ১৫ টাকা, আমার পকেটে তো ১০০ টাকা আছেই। একটাই সমস্যা,নীরবে অলটাইম কিছু সুন্দরী মেয়ে থাকে। আমার এই ড্রেসআপ দেখলে কি না কি ভাববে। ধুর! সুন্দরী মেয়েদের সিটিএন। যা হয় হবে। গেলাম নীরবে।
নীরবে ঢুকে আমার ২ বন্ধু দেখল,নীরবে খিচুড়ী নাই। তাদের মনে হল, অনেকদিন চাইনিজ খাই না। আর নীরবে চাইনিজও আছে। তারা তখন চাইনিজ খাবেই। আমি বললাম,ভাই,মাফ কর,বেইজ্জতি হবে। লিটন বলল,আরে চল,কি আছে দুনিয়ায়।
চাইনিজ পার্ট নীরবের উপরের ফ্লোরে। যখন ঢুকলাম,চাইনিজের লোকজন সব আমার হাফ পান্ট আর স্পঞ্জের স্যান্ডেলের দিকে তাকায়ে আছে। বুঝলাম,এরা ভাবতেসে,হয় এই পোলা আল্ট্রা স্মার্ট,নাইলে আল্ট্রা খ্যাত। যাই হোক, ঢুকে বসতে বসতে খেয়াল করলাম, আমাদের পাশের টেবিলে এক হতভাগা বয়ফ্রেন্ড তার গার্লফ্রেন্ড এবং বান্ধবী কে খাওয়াতে নিয়ে আসছে। মেয়েদুইটাও চরম ফাজিল, আমারে দেখায়ে দেখায়েই হাসতে শুরু করসে। x-( x-( x-(
মেয়েগুলা এবং আশেপাশের অডিয়েন্সকে ইগনোর করে আমরা অর্ডার দেয়া শুরু করলাম। অর্ডার দেয়ার আগে সবাইকে বল্লাম,সবার টাকা পয়সা সব বের কর। হিসাব করে দেখা গেল,আছে মোট ৩৪০টাকা। আমরা হিসাব করে অর্ডার দিলাম। ৩২০টাকার মত বিল আসবে। কিছুক্ষন পর খেয়াল হল,আমরা হাফ ভেবে চিকেন অর্ডার দিসি,কিন্তু ওইটা আসলে ফুল।আরো ৬০ টাকা এক্সট্রা লাগবে। ওয়েটারকে ডেকে বল্লাম,মামা,ভুল হয়ে গেসে। ঐটার হাফ দিতে হবে। ওয়েটার বল্ল,মামা,বানানো শুরু হয়ে গেসে,এখন আর কিছু করার নাই।
খেয়ে গেলাম বাঁশ। এদিকে সবাই আমাদের দিকে তাকাতে শুরু করসে। ভাবতেসে,বোক্সরা টাকা পয়সা না নিয়েই খাইতে আসছে।কত বড়………। আমি ভাবতেসি,এই দুই স্লার জন্য আজকে ইজ্জতের ফালুদা বানায়ে ফেললাম। তখন মাথায় প্লান আসল। আমি ওদের বল্লাম, রিক্সাভাড়া দে। রিক্সা নিয়ে তাড়াতাড়ি হলে চলে আসলাম।ড্রেস চেঞ্জ করলাম। ১০০০ টাকা নিয়ে আবার ফিরে গেলাম। অবশ্য ইচ্ছা করতেসিল না যাইতে। তাইলে অই ২টা যে কঠিন বাঁশটা খাইত…।
ফিরে গিয়ে তো আমার ভাব দেখে কে। সেরাম গেটআপ দিয়ে আসছি। পকেট গরম। ওয়েটাররে ডেকে আরো অনেক কিছু অর্ডার দিলাম। খাবার আসার পর শুরু করলাম খাওয়া। এখন দেখি আশেপাশের সব(ঐ ২ মেয়ে সহ) আমাদের দিকে তাকায়ে আসে। সব খেয়ে শেষ করতে পারলাম না। আবশিষ্ট প্যাক করে নিলাম। ওয়েটার বিল নিতে আসলে মানিব্যাগ থেকে বের করলাম ১০০০ টাকার নোট(ভাআআব!!!)। ওয়েটাররে টিপ দিলাম ৫০ টাকা। তখন আমাদের প্রতি সবার শ্রদ্ধা ১০ ডিগ্রী বেড়ে গেছে। বের হবার সময় ও হেভি ভাব নিয়া বের হলাম।
এই গল্পের মরাল খুবই সিম্পলঃ টাকাই ভাবের ধারক ও বাহক।
(বি.দ্র. গার্লফ্রেন্ডটার চেহারা কাজের বেটি টাইপ হলেও তার বান্ধবীর চেহারা ভালই ছিল। যে মেয়ে তার বয়ফ্রেন্ডএর সাথে সুন্দরী বান্ধবীর পরিচয় করায় দেয়,তার বুদ্ধিমত্তা নিনীষ স্কেলে ২ এর বেশি হবার কথা না। এই মেয়ের কপালে খারাবি আছে।)

৪,৫৬৭ বার দেখা হয়েছে

৬১ টি মন্তব্য : “নীরবে একদিন”

  1. আন্দালিব (৯৬-০২)

    আমরা নীরবে খাইতাম না। নীরবে নারীরা উচ্চ-কলকাকলিতে আমাদের মনোযোগী খাওন-দাওন ব্যাঘাত প্রাপ্ত হইতো। (এইটা ফান না, সিরিয়াস)। আমরা চান খাঁর পুলের রাস্তা ধরে একটু সামনে এগিয়ে সোহাগ/সোহান (পাশাপাশি দুইটা দোকান)-এ খাইতাম। ওখানকার কালাভুনা কতোদিন খাই না! :((

    লেখার শেষ তিন লাইন দারুণ লাগছে :))

    জবাব দিন
  2. ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

    আমরা নিরবে খেতে যেতাম মাঝে মাঝে :just: বন্ধুদের সাথে। চানখারপুলে কখনও যাওয়া হয় নাই। জীবনে কতকিছুই বাদ রয়ে গেল।

    ঔ মেয়েদুটোকে এতো ধর্তব্যের মধ্যে নেওয়ার কারন কী? ও ভূলে গেছি তোমার বয়স কম।


    “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
    ― Mahatma Gandhi

    জবাব দিন
  3. সামি হক (৯০-৯৬)

    আমার কপালেই মনে হয় নীরবে খেতে গিয়ে চরম ভোগান্তি জুটছে কপালে। একবার খেতে গিয়ে পেয়েছিলাম ভাতের মধ্যে তেলাপোকার বাচ্চা (ভাগ্য ভালো তেলাপোকার দাম নেয় নাই), আরেকবার (সেইবারই শেষবার) খেতে গিয়ে দাঁতের নীচে পড়ল এক পাথর সাথে সাথে আমার দাঁতের দফারফা। ডেন্টিস্টের কাছ থেকে ফিলিং করানো লাগলো সেই দাঁত।

    আমরা প্রায়ই আহসান মঞ্জিলের কাছে সুমন নামের এক রেস্টুরেন্টে বিরিয়ানী খেতে যেতাম। আমার মতে ঢাকায় কোন রেস্টুরেন্টে এর চেয়ে ভালো বিরিয়ানী হয় না।

    আজহার কতো পুরানা দিনের স্মৃতি মনে করায়ে দিলারে ভাই :((

    জবাব দিন
  4. আজহার (২০০০-২০০৬)

    @আন্দালিব ভাই,কালাভুনার কথা আর বইলেন না। গত টার্ম এ পরীক্ষার মধ্যে একবার দিসিল। খেয়ে রশীদ হলের পোলাপান ৬০-৭০ জন শুয়ে গেসিল।(আম্মো কিঞ্চিত শুয়ে গেস্লাম 🙁 )
    @মাস্ফু ভাই,আপনে স্পন্সর করলে তো আমরা র‌্যাডিসন বা শেরাটনে যাব। আপনারে নীরবে কেমনে নেই বলেন? আপনার অসম্মান হয় না??(আর আপনিও বিদেশি পাখি দেখতে পারবেন 😀 )

    জবাব দিন
    • আন্দালিব (৯৬-০২)

      এক এক দোকানের কালাভুনার কোয়ালিটি আলাদা। আমি কেবল সোহাগ/সোহানের কালাভুনাই খেতাম। একবার অন্য এক দোকানে গিয়ে কালাভুনা খেয়ে আমারও ভালো লাগে নাই। যদিও শুয়ে পড়ার ঘটনা ঘটে নাই ভাগ্য ভালো। তবু বুঝতে পারছি যে এটাও সোহাগ/সোহানের স্পেশালিটি। এখন তো অতোরাত করে যাওয়া হবে না, যে বন্ধুদের সাথে যেতাম তারাও ব্যস্ত। তুমি না হয় বন্ধুদের সাথে গিয়ে একদিন খেয়ে এসো, আমার রসনা জুড়াবে তাহলে!...
      🙁 🙁 🙁

      জবাব দিন
  5. মান্নান (১৯৯৩-১৯৯৯)

    আমরা পিএল চলার সময় চাঁনখাঁরপুলে খেতে যেতাম রাত ২ টায় । দল বেঁধে গান গাইতে গাইতে রাত দুটার সময় খেতে যাওয়া টাই অসাধারন ছিল। খাবার বিবরন নাই দিলাম। আহা রে সেই দিনগুলো :(( :(( ।

    জবাব দিন
  6. আজহার, প্রত্যেকজনকে তো তার কমেন্টের নিচেই জবাব দিন তে ক্লিক করে উত্তর দিতে পারিস। এইটা খেয়াল করিস নাই মনে হয়।

    দারুণ মজা পাইলাম পইড়া... 😀

    জবাব দিন
  7. বহুত মঞ্জা পাইলাম তোমার খানাপিনার বিবরণ শুনে ,বিরিয়ানী থেকে খিচুড়ি,খিচুড়ি থেকে চাইনীজ,১০০টা টাকা পকেটে নিয়ে এমন সাহসিকতার পরিচয় দিলা,তোমারে তো ভাই মেডেল দেওয়া উচিত:D 😀
    আর জটিল একটা মোরাল :clap: :clap:

    জবাব দিন
  8. বন্য (৯৯-০৫)

    ১-১ এ,তখনও বাইরে খাওয়া শুরু করি নাই..পোলাপাইন খালি পেনাঙ পেনাঙ করত..আমি মনে করতাম...না জানি কি চাইনিজ রেষ্টুরেন্ট!!! এরপর যেদিন ফাষ্ট খাইতে গেলাম...দেইখা... :khekz: :khekz:

    লেখা জবরদস্ত 😀

    জবাব দিন
  9. জটিল লেখা। বিশেষ করে মোরাল টা। ট্যাকা না থাকলে ভাব কই থিকা আইবো?

    গার্লফ্রেন্ডটার চেহারা কাজের বেটি টাইপ হলেও তার বান্ধবীর চেহারা ভালই ছিল। যে মেয়ে তার বয়ফ্রেন্ডএর সাথে সুন্দরী বান্ধবীর পরিচয় করায় দেয়,তার বুদ্ধিমত্তা নিনীষ স্কেলে ২ এর বেশি হবার কথা না। এই মেয়ের কপালে খারাবি আছে।

    সাব্বাস ব্যাটা। তোর দূরদৃষ্টি তো ভাল। এইরকম দুই একটা পাখি পাইলে এই দিকে রিডাইরেক্ট করিস তো..

    জবাব দিন
  10. আহ্সান (৮৮-৯৪)

    সবাই খালি খাই খাই করতাছে... আমিও করি...সিলেটের নিরাপদ কেবিনে যাই...রাস্তার পাশের হোটেলটাতে ট্রাক ড্রাইভারদের সাথে খাইতে বড়ই মজা...তবে ইদানিং মজা একটু কইমা যাইতাছে...কারণ হোটেল মালিক টের পাইছে আমরা কোথা হইতে খাইতে যাই...

    আজহার,
    লেখা ভালো লাগছে...

    যে মেয়ে তার বয়ফ্রেন্ডএর সাথে সুন্দরী বান্ধবীর পরিচয় করায় দেয়,তার বুদ্ধিমত্তা নিনীষ স্কেলে ২ এর বেশি হবার কথা না। এই মেয়ের কপালে খারাবি আছে।

    =)) =)) :pira: :pira:

    জবাব দিন
  11. শর্টস আর টিশার্ট তো অনেক ভাল ড্রেস।
    থার্ড ইয়ারে থাকার সময় গুলশানের অ্যারোমা তে বুফে ডিনার খাইতে গেছিলাম লুঙ্গি পইড়া। এইটা নিয়া মহিবের একটা লেখা আছে, জঙ্গল থেকে গুলশানে নামে।

    পইড়া দেখতে পারিস চাইলে
    জঙ্গল থেকে গুলশানে পার্ট ওয়ান

    জঙ্গল থেকে গুলশানে পার্ট টু

    জবাব দিন
  12. মইনুল (১৯৯২-১৯৯৮)

    আহারে ......... নিরবে খাসীর মগজের সাথে কাটা পেয়াজে কিঞ্চিৎ লেবু মিশাইয়া ১০-১২ টা পরাটা নাই করে দিতাম -----
    আহারে ----- সেই যে আমার নানা রঙের দিনগুলি ...... =(( =(( =(( =((

    জবাব দিন
  13. তানভীর (৯৪-০০)

    আমরা সবচেয়ে বেশী খেতাম স্টার-এ, সোহাগেও যেতাম মাঝে মাঝে। সেই তুলনায় নীরবে যাওয়া হত একদমই কম।
    পিএলে এই ধরনের খাওয়া দাওয়ার পরিমাণ বেড়ে যেত অনেক, বিশেষ করে রাত বাড়ার সাথে সাথে ঐদিকের দোকানগুলার প্রতি আকর্ষণ বেড়ে যেত অনেকগুণে!
    সেই যে আমার নানা রঙের দিনগুলি …… 🙁 🙁

    জবাব দিন
  14. অসীম (১৯৯০-১৯৯৬)

    রসের মেলায় বেরসিকের মত রসভঙ্গ করছি। মাগার না কইইয়াও পারিনা। নান্না মিয়া চাঙ্খারপুল গেল কেম্নে? ওইডা তো আমাগো সম্পত্তি আছিল। বেচারাম দেউড়িতে। :grr: :grr:

    জবাব দিন
  15. আমিন (১৯৯৬-২০০২)

    খাওয়া নিয়া দেখি ব্যাপক আলোচনা হইতেসে। নীরবের খিচুড়িটা আমি খুব ভালো পাই। আরেকটা জিনিস ভাল্লাগে খাসীর মাথা (মগজ না কিন্তু)। স্টারের খাবার মিস করি নান্না কালাভুনা খাওয়া হয় বুয়েটের দিকে আসলে। তবে কালা ভুনার উপর ভক্তি গেছে গা একবার কালাগভুনার নামে কুখুরের মাংস (!!!) খাওয়ার পর। ও হ্যা নান্না মিয়ারে আমি সবসময়ই ভালো পাই।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : অসীম (১৯৯০-১৯৯৬)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।