স্বপ্ন

ইদানিং অনেক সকাল বেলা মিশু ভার্সিটিতে চলে আসে। ক্লাস থাকে না। তাও আসে। একটা লাভ অবশ্য আছে- ফাকা রাস্তায় সকাল বেলা একটানে চলে আসা যায়। আর হাত খরচের টাকা বাচানো তো আছেই!! এসেই প্রথম কাজ চা-সিগারেটের টঙ্গে ঢোকা কিংবা একটা সিগারেট ধরিয়ে আনমনে অজানার উদ্দেশ্যে হেটে চলা। আজকেও সে চলে এসেছে অনেক আগে। আজকে একটু বেশিই আগে হয়ে গেছে। টং গুলাও এখনো খুলেনি। কি আর করার। হাটাই লাগবে। নতুন সিগারেট আসছে কিছু। ট্রাই করা দরকার। দোকানে গিয়ে মিশু সিগারেট কিনল ৬টা। ক্লাসের আগে এর কম হলে হবে না!!

কানে হেডফোন লাগিয়ে ফুল ভলিউমে গান ছেড়ে সে আরেকটি চেনা পথের অজানা উদ্দেশ্যের হাটা শুরু করে। আশে পাশে অনেক লোক। সবাই ব্যস্ত! কারও দিকে কারও ঘুরে তাকানোর সময় নাই। ব্যস্ত রাস্তায় তার মাঝে আনমনে চিন্তা করতে করতে হাটতে থাকে মিশু। হাটতে হাটতে সে এসে পরে পার্কটার কাছে। ইতস্তত বোধ করল কিছুক্ষণ। তারপর পার্কের ভিতর ঢুকে একটা নির্জন বেঞ্চ এ গিয়ে বসে পড়ল! অনেকে পার্কের ভেতরে ব্যস্ত ছোটাছুটি করছে। তার সাথে কারো চোখাচোখি হলেই কেমন অদ্ভুত একটা দৃষ্টি দিয়ে তার দিকে তাকাচ্ছে! হয়ত ভাবছে “আজাইরা পোলাপাইন- বাপ মা ট্যাকা দিয়া কি পার্কে ঘুরাঘুরি করার লাইগ্যা পড়ায়!!??” ভাবলে ভাবুক, আমার কি!!?? এইটাই এখন মিশুর একমাত্র সান্তনা। হঠাৎ করেই মিশু নিজেকে প্রচন্ড অসহায় অনুভব করে। চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে থাকে সে! স্বপ্নভঙ্গের অদৃশ্য অস্রু তার গাল বেয়ে নেমে আসে। শালার কাদতেও পারে না…এই দুঃখে সে নিজেকে আরও বেশি অসহায় অনুভব করে! নাহ। আমাকে দিয়ে কিছু হবে না। উঠে যাওয়ার প্রস্তুতি নেয় সে। ক্লাসে নাহয় দেরী হয়ে যাবে। হঠাত করে সে বেঞ্চের পাশে একটা ছেড়া ডায়েরী খুজে পায়। কোন নাম নেই। আশে পাশে তাকালো সে। নাহ এর মালিক আসলে জিনিসটা হারিয়েই ফেলেছে। কি আর করার! তার চাইতে আমিই না হয় হলাম এর নতুন মালিক! আস্তে করে ডায়েরীর কয়েকটা পাতা উলটে দেখলো! ডায়রীর মধ্যে মাত্র দুয়েকটা পাতায় সুন্দর টানা টানা হাতের লেখায় কিছু লেখা আছে। একটা পাতায় বড় করে লেখা “স্বপ্ন”। যাই হোক, পরে পড়তে হবে, এখন টাইম নাই। ক্লাস মিস করা যাবে না। বলেই ডায়েরীটা বন্ধ করে সে ভার্সিটির দিকে দৌড় দেয়।

ক্লাসে ঢুকল মিশু। আধা ঘন্টা লেট। ক্লাসের সবগুলা জীবন্ত চোখ একসঙ্গে তার দিকে তাকিয়ে আছে, যেন সে একটা বিদঘুটে প্রাণী। তাকানোটা অস্বাভাবিক না। ধুলার মধ্য দিয়ে সে এতক্ষণ দৌড়ে এসেছে। পুরোপুরি বিধ্বস্ত অবস্থা। আপাতত সে আসলেই ক্লাসের সবচাইতে বিধ্বস্থ প্রাণী। তাড়াহুড়ো করে সে কথা এড়ানোর জন্য পিছের কোণার সিটে গিয়ে বসল। টিচারের কাছে অ্যাটেন্ডেন্স চাওয়ার দুসাহস সে করল না। কি না কি আবার ঠাস করে বলে বসে ঠিক নাই! ভয়াবহ সেই বোরিং ক্লাসটা সে কোন মতে ঘুমিয়ে পার করে দিল! বাকি দুইটা ক্লাসও একভাবে কাটিয়ে দিল সে।

————————————————————————————————————————————————————
বাসায় এসে মিশু ডায়েরীটা খুলে পড়া শুরু করল। সব পৃষ্ঠায় একটাই শব্দ লেখা- “স্বপ্ন”। আশ্চর্য!! প্রত্যেক লাইনেও একটাই শব্দ- “স্বপ্ন”। হঠাত কলিং বেল বেজে উঠে। ডায়েরীটা বালিশের নিচে গুজে রেখে সে দরজা খুলতে গেল। দরজা খুলেই সে ভয়ে পুরো জমে গেল। ভয়ঙ্কর চেহারার এক লোক হাতে একটা রাম দা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হঠাত করেই সে প্রচন্ড ক্রোধে মিশুর উপর ঝাপিয়ে পরে। রাম দা টা মিশুর গলার কাছে ধরে সে বলে উঠে, “তুই আমার ডায়রী চুরি করেছিস! আমি তোর স্বপ্ন চুরি করব।” বলেই সে এলোপাথারি কোপানো শুরু রাম দা টা দিয়ে।
—————————————————————————————————————————————————————

ধরমর করে ঘুম থেকে জেগে উঠে মিশু। লাইব্রেরীর কোনার এক টেবিলে সে ঘুমিয়ে পরেছিল। এখনো বুক ধরফর করছে। আশেপাশে সে সতর্ক ভাবে দেখতে লাগল। প্রচন্ড ভয় পেয়েছে সে। হঠাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে চমকে উঠে সে। সাড়ে পাচটা বাজে। বাসায় যাওয়া দরকার। নোট খাতাটা নিয়ে সে লাইব্রেরী থেকে বেরিয়ে আসে। টোকেন দিয়ে ব্যাগটা নিয়ে নেয় ইনচার্জের কাছ থেকে। এলোমেলো পায়ে সে সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসে বাইরে।অনেক্ষণ রিক্সার জন্য দাড়িয়ে থাকল সে। পেল না। অবশেষে শুরু করল সে বাসার পথে “হন্টন অভিযাত্রা”। আর যাই হোক এই টাইমে বাসে যাওয়া থেকে হেটে যাওয়াই ভাল। কে জানে, হয়ত বাসের আগেই পৌঁছান সম্ভব।

মিশু বাসায় এসে পৌছাল সাড়ে সাতটায়। প্রচন্ড রকমের টায়ার্ড। কিন্তু ডায়রীর কাহিনীটা তার মধ্যে একটা অদম্য কৌতুহল সৃষ্টি করে রেখেছে। কোনমতে সে ফ্রেস হয়ে খাওয়া দাওয়া সারল। নিজের রুমে এসে পিসি টা অন করে ফেসবুকে ঢুকল। তারপর একটা সিগারেট ধরিয়ে লাইট টা নিভিয়ে দিল। ব্যাগ থেকে ডায়রীটা বের করল। কাঁপা কাঁপা হাতে ডায়রীটা সে খুলল। মনিটরের মৃদু আলোয় প্রথম পাতাটা চোখে পরল তার। আস্তে আস্তে সে পড়ল- “স্বপ্ন”। পাতা উল্টালো মিশু। খেয়াল করল- অনেকগুলো পাতা ছেঁড়া। দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে প্রচন্ড রাগে অন্ধ হয়ে কেউ ছিড়েছে। পরের পাতা উল্টানোর পড়ে রীতিমত চমকে গেল মিশু। একজন অপরূপ সুন্দরী মহিলার ছবি। এই পাতাটা হয়ত ছিড়তে ভুলে গেছে ডায়রীর মালিক। হয়তবা ছিড়তে পারেনি। তার পরের পাতাটা উল্টালো সে। সেখানে টানা হাতের লেখায় কিছু লেখা। পানি লেগে কালি ছড়িয়ে গেছে। টেবিল ল্যাম্পটা জালালো মিশু। পড়া শুরু করল মিশু-

“……মানুষ স্বপ্ন দেখতে পছন্দ করে। কারো কারো স্বপ্ন সাদা কালো আলো ছায়ার অপূর্ণতায় ঘেরা, আবার কারো কারো স্বপ্ন রং-বেরঙের মায়ার পূর্ণতা পাওয়া। কারো জন্য স্বপ্নটা হয় সুস্বপ্ন, কারো জন্য স্বপ্ন মানেই দুঃস্বপ্ন। অগনিত মানুষের মাঝে শুধু একটিই ইচ্ছা, স্বপ্নপূরণের ইচ্ছা। সে স্বপ্ন অবশ্যই দুঃস্বপ্ন নয়। আর সুস্বপ্নে আসা মুহুর্তগুলো হয়ত অনেকেরই পূরণ হয় না। কিন্তু আমরা স্বপ্নবাজ জীব। আমরা সেই ভাঙ্গা স্বপ্ন পরম ভালোবাসায় বুকে আগলে রেখে নতুন করে স্বপ্ন গড়ি, হয়তো এক ঝাঁক কিংবা একগুচ্ছ….অথবা একটাই।”

পাতা উল্টালো মিশু। নাহ, আর কিছু নেই। আরেকটা সিগারেট ধরাল মিশু। চিন্তা করতে লাগল। আমরা তো স্বপ্নবাজ জীব। স্বপ্নে বিভোর আমাদের জীবন। সুঃস্বপ্ন কিংবা দুঃস্বপ্ন। কিন্তু আমি স্বপ্নে কি দেখি? অথবা আমি কি নিয়ে স্বপ্ন দেখি? নাহ, আমি মনে হয় জানি না। হয়তবা দেখি! হয়ত আমার সেই স্বপ্ন দেখা আমার স্বপ্ন নিয়েই!!

[বি.দ্রঃ অনেকের সাথে অনেক কিছুই মিলতে পারে। মনে আসছে লিখছি। কারও কথা চিন্তা কইরা লিখি নাই। আমারে কেউ দোষ দিবেন না!! :S :S]

১,০৮২ বার দেখা হয়েছে

১০ টি মন্তব্য : “স্বপ্ন”

  1. মুসতাকীম (২০০২-২০০৮)

    কিঞ্চিৎ মাথার উপর দিয়া গেছে 🙁 🙁 🙁
    তাও লেখা ভালো ছিল, কিপিটাপ :thumbup:


    "আমি খুব ভাল করে জানি, ব্যক্তিগত জীবনে আমার অহংকার করার মত কিছু নেই। কিন্তু আমার ভাষাটা নিয়ে তো আমি অহংকার করতেই পারি।"

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : আসিফ (২০০৩ - ০৯)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।