“মহান ভূত রজনী” এবং এম সি সি!!

২৫শে আগস্ট! মহান ভুত দিবস!!

ক্যাডেট কলেজের আন-অফিশিয়াল একটা স্পেশাল দিন।

এই দিনে MCC-র বিভিন্ন জায়গায় ভূত দেখা যায়। শুধু তাই নয়, সেই সব ভুতেরা নাকি সুযোগ পেলেই ভূত দিবস উপলক্ষে মকরা ক্যাডেটদের পাঙ্গানোও শুরু করে!!! মকরা ক্যাডেটরা তাদের 2nd choice. মূলত তাদের প্রথম পছন্দ ক্লাস সেভেন এবং এইটের নিরীহ অথবা কালারড পোলাপাইন।

কাহিনী শুরুর আগে আমাদের জেনে নেওয়া উচিত ভূত পেত্নী কি জিনিস!!!??? ভূত হলো অশরীরি পুরুষ আত্মা, আর পেত্নী অশরীরি মেয়ে আত্মা। অপঘাত, আত্মহত্যা প্রভৃতি কারণে মৃত্যুর পর মানুষের অতৃপ্ত আত্মা ভূত-পেত্নী হয়ে পৃথিবীতে বিচরণ করতে পারে।

প্রথমেই আসা যাক FH এর পিছনে অভিশপ্ত কাঠাল গাছের কথা। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি আর্মি MCC কে অন্যতম ঘাঁটি হিসেবে ব্যাবহার করতো। FH ছিল তাদের আন্যতম টর্চার ক্যাম্প। ৭১ এর সেই ভয়াবহ দিনগুলোতে টর্চার ক্যাম্পে মারা যাওয়া নিরীহ বাঙ্গালিদের গণকবর দেয়া হয় FH এর পেছনে সেই জায়গায়, যেখানে এখন দাঁড়িয়ে আছে একটি বিশাল কাঠাল গাছ! ভুত দিবসের রাতে সেইসব অতৃপ্ত আত্মার সম্মিলিত করুণ আর্তনাদ ভেসে আসে শেই অভিশপ্ত কাঠাল গাছের নিচ থেকে। প্রায়ই কাঠালের সিজনে ক্লাস ইলেভেন টুয়েলভ ওই গাছ থেকে কাঠাল পেরে আনে। একবার নাকি একটা কাঠালের ভেতরে একটা নরমুন্ডু পাওয়া গেছে। প্রায়ই কাঠাল ভাঙ্গা হলে ভেতর থেকে রক্ত বের হত!! এছাড়াও “মহান ভূত দিবস” এর কালো রাতে ওই গাছে এক সুন্দরী রমনী কে মগডালে বসে কাঠাল খেতে দেখা যায়!!!!! লোকমুখে শোনা যায় যে জনৈক এক সাহসী ক্যাডেট তার কাছে একবার কাঠাল চেয়েছিল বলে সেই সুন্দরী রমণী সারা রাত তার উপর কাঠালের বিচি বর্ষণ করে!!!!!!!!

তারপরেই আসা যাক অভিশপ্ত 10 seater- এর কথায়। কোন এক ছুটি থেকে আশার পর একটা 10 seater রুমের ভেতর পাওয়া যায় ফ্যানের সাথে লটকায় থাকা একটা কিশোরী মেয়ের লাশ!!……অতৃপ্ত সেই কিশোরী মেয়ের আত্মা প্রতিটি ভুত দিবসে আজও ঘুরে ফিরে হাউসে হাউসে!!! ভুত দিবসের রাতে সেই 10 seater এর কারও ঘুম ভেঙ্গে গেলে সে দেখতো যে একটা কিশোরী মেয়ে ফ্যানের সাথে লটকায় আছে!

এছাড়াও ভুত দিবসের এই রাতে অপঘাতে মারা যাওয়া এক ডিউটি ক্যাডেটের অতৃপ্ত আত্মাকে তিন হাউসে এবং হাস্পাতালে রাউন্ড দিতে দেখা যায়। ভূত দিবসের বিশেষ আকর্ষন এই গলা কাটা ডিউটি ক্যাডেট। তার সবই ঠিক আছে……খালি প্রবলেম একটাই!!!! তার গলা নাই……তাই বইলা কিন্তু ভাববেন না তার মাথা আছে!!!! তার মাথাও নাই……এইটা আরও বড় প্রবলেম!!!! গলাটা অসমান ভাবে কাটা…আর গলার ফুটোটা দিয়ে বের হয়ে থাকে ৮ ইঞ্চি লম্বা(এইটা খালিদ বলছিল) লকলকে কালচে লাল জিহবা!!!!!!! যাই হোক, তার কাজ হলো রাতের বেলা ডাইনিং হলের সামনে গিয়ে বিশাল বিশাল বেল দেওয়া! পাচ মিনিট পরেও তার বেল বাজানো শেষ হয় না। আর হাউস রাউন্ড দেওয়ার সময় কাউকে বাইরে পাইলেই হইছে……hands down করায় নাকি তাকে ডিউটি ক্যাডেটের স্টিক দিয়ে ১০ টা বাড়ি দেয়!!! আর তার মেজাজ খারাপ থাকলে পকেট থেকে চাপাতি বের কইরা কল্লা নামায় হাতে ধরায় দেওয়া হয়।

সবশেষে বলতে হয় যে, “এই ভূত, ভূত নয়…আরো ভূত আছে……”……মানে আরো অনেক কাহিনি আছে…ভুইলা গেছি!

[সত্য(!) কাহিনী অবলম্বনে]

৩,৮৯৯ বার দেখা হয়েছে

৪১ টি মন্তব্য : ““মহান ভূত রজনী” এবং এম সি সি!!”

  1. দেয়া (২০০২-২০০৮)

    এই লেখাটা পড়ে আমারও একটা কাহিনী মনে পরে গেলো।আমরা ক্লাস সেভেনে থাকতে আমাদের এক ক্লাসমেট রাতে তার রুমে একটা গলা কাটা ভূত দেখতে পায়।সেটা দেখার পর যখন তার কান্নাকাটি চলছে তখন হাউস প্রিফেক্ট এসে আবিষ্কার করে শেই কতিপয় গলাকাটা ভূতটি আসলে ছিল পাশের বেডের উপর হ্যাংগারে ঝুলানো হোয়াইট ড্রেস। :)) :))

    জবাব দিন
  2. আসিফ হাসান জোয়াদ্দার অভি

    :gulli: গলাকাটা ডিউটি ক্যাডেট !!!
    :no: :no: :no:

    শিশির ভাই ক্লাস সেভেনে এইটা নিয়া যেই ভয় দেখাইছিল। বলতে দ্বিধা নাই যে ক্লাস টুয়েলভে উইঠাও আমার মাঝে মাঝে ভয় লাগত!!!!!!

    :duel: :duel: :duel: :duel: :duel: :duel: :duel: :duel:

    জবাব দিন
  3. সাব্বির (০৩-০৯)

    আসিপ ! লেখা অতিশয় পাঙ্খা হইছে :thumbup:
    ক্লাস সেভেন এ যাওয়ার পর তখনকার ক্লাস টুয়েলভ্‌,-মহসীন ভাই,ফাহিম ভাই, মুনতাসির ভাই,সানিয়াত ভাই.ইমতিয়াজ ভাই , ইনারা আইসা রাত্রে যেই কাহিনী শুনাইয়া গেসিলো !!
    বাথরুমের ফ্ল্যাশ টানলে রক্ত বাইর হয় ,
    ফ্যানের লগে লটকাইয়া থাকা সাদা কাপড় পড়া মাইয়া ,ইত্যাদি ইত্যাদি
    তখন তো বুঝিনাই , যে এইটা মাঝরাত্রে ভয় দেখানোর ডেমো!! ~x(
    ভুতুড়ে লটকী (!) র দোষে দুষ্ট টেন সিটার টা ছিলো দোতালা'র প্রথম রুম #16...কিন্তু সব টেন সিটার এর মধ্যের ফ্যান বরাবর যেইসব পোলাপান থাকতো...সবডি ডরাইতো !!
    সবচেয়ে বড় ব্যাডলাক টা ছিলো ক্লাস সেভেন এর ; গণকবর-ওয়ালা কাঁঠাল গাছ টা ছিলো ক্লাস সেভেন এর রুম বরাবর পিছনে !!! 😐
    ভয় দেখানোর ট্রেডিশন টা রক্ষা করতে গিয়া ভুতের সাথে আমরাও পরে হাত মিলাছিলাম...প্রতি ২৫ তারিখে রাত্রে জুনিওর দের রুমে গিয়া ভয় দেখানো , চার্জার দিয়ে লাইটিং করে ভয় দেখানো , ব্যাকগ্রাউন্ড এ ভুতের কান্না ...পোলাপানের "আজান- দেওয়া-ঘড়ির" এলার্ম ...নাইলে ডাইরেক্ট সাদা বেড-শীট গায়ে পেচাইয়া ভয়...
    একবার একটা জুনিয়র রে খাট সহ দো'তলার পোর্চ এ স্থানান্তর করসিলাম, বেচারা মাঝ্রাত্রে উঠে দেখে , আকাশের তলে শুয়ে আছে !! :grr:

    জবাব দিন
  4. লুবজানা (২০০৫-২০১১)

    আল্লাহ! ভাইয়া কি লিখসেন!! পড়ার পরে আমার কম্পু হ্যাঙ হয়ে গেছে! কমেন্ট নোটপ্যাডে লিখতে হল!!! ভয় আমি না পাইলেও কম্পিউটার টা খুব ই ভয় পাইছে!!


    নিজে যেমন, নিজেকে তেমনি ভালবাসি!!!

    জবাব দিন
  5. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    ভাল লিখেছো... আমাদের কলেজে এরকম কোন নির্দিস্ট তারিখ না থাকলেও বেশ কিছু কাহিনি প্রচলিত ছিল।


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  6. শিবলী (১৯৯৮-২০০৪)

    ক্লাস নাইনে থাকার সময় এক রাতে আমাদের এহসানের কাঁধে জাভেদ উইঠা বেডশীট দিয়া মোড়াইয়া টয়লেটে বইসা রইল । আমরা মাঝ রাতে এক জুনিয়ররে ঘুম থেইকা ডাইকা পানি আনতে পাঠাইলাম । সে গিয়া দেখল দেওয়ালের ওপাশ থেইকা কী জানি উইঠা দাঁড়াইতাছে । তারপর যে দৌড় দিছিল,,,,,,আজও মনে পড়ে :))

    জবাব দিন
  7. রাকেশ (৯৪-০০)

    আমাদের কলেজে এতো প্রকট ছিলো না ভুতের ব্যাপারটা, তবে জুনিয়র টয়লেটের সোজা একটা পানির ট্যাঙ্কি ছিল আর বলা হত সেখানে রাতে ভুত পা দুলিয়ে বসে থাকে। সেভেনে রাতে একবার আমাকে সাইজ দিছিল অনেকখন ভয় দেখায়ে বলে যাও বাথরুমের ট্যাপ থেকে পানি নিয়ে আসো। যাওয়ার সময় কিভাবে যে গেছি মনে নাই, তবে আসার সময়ও ভয় ছিল কারন তখন ট্যাঙ্কি ছিল আমার পিছনে আর পিছনে আমার চোখ নাই। 😀

    যাই হোক, আমাদের ব্যাচের কেউ ভয় জুনিয়রদের ভয় দেখাইছে বলে মনে নাই। একটাই মনে আছে, ক্লাস টুয়েলভে হঠাত শখ হল নিউ ক্লাস সেভেনকে ভয় দেখাব, ইলেভেনের এক পাকনারে নিয়ে গেলাম টিম করে। বাট ৩ নাম্বার রুমের জানালায় যখন দাড়াইছি (পুরা সাদা বেডশীট প্যাচায়ে), অন্ধকারের মধ্যেই রুমের চারজন ঠাস করে দাড়ায়ে বলে 'স্লামালেকুম ভাইয়া'

    জবাব দিন
  8. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    ইয়ে,জেসিসির জনৈক শিক্ষকের গায়ের রঙ ছিলো আফ্রিকানদেরকেও লজ্জা দেওয়ার মত।একদা বৃহষ্পতিবার রাত্রে ডিউটিমাস্টার থাকা অবস্থায় তিনি সাদা পাঞ্জাবি-পায়জামা পরে সাইকেল চালায় হাউসের দিকে আসতেছিলেন-সেইটা দেইখা ক্লাস সেভেনের দুই তিনটা মুর্ছা গেছিলো,ওরা মনে করছিলো শরীর ছাড়া খালি পাঞ্জাবি পায়জামা হাওয়ায় ভাইসা আসতেছে(সাইকেলের রঙও কাল ছিলো)

    জবাব দিন
  9. ফারাবী (২০০০-২০০৬)

    তোরা তো ক্লাস সেভেনে রুম নাম্বার #১৬ তে ছিলি । আমরা ছিলাম নীচতলায় রুম নাম্বার #২ তে, অর্থাৎ ঠিক জানালার পাশেই কাঁঠাল গাছটা ।
    * *আমার আবার উৎসাহ একটু বেশী ছিল তো, তাই ক্লাস সেভেনে থাকতেই নিজের ক্লাসমেটরে ভয় দেখানোর জন্য বিশাল একটা সাদা আর্টপেপারে লুকায়া লুকায়া একটা মরার খুলি আঁইকা শেপ কইরা কাইটা রাখছিলাম... উদ্দেশ্য- গভীর রাতে আমার ১০ সিটারের কোন এক রুমমেটের ঘুম ভাঙ্গায়া তার চোখের সামনে ফট কইরা মরার খুলি তুইলা ধরব... :grr: তারপরে 'মজা হি মজা'... 😀
    **কিন্তু দুঃখের বিষয়, আমার সেই মহান প্রচেষ্টা সেই রাতেই লাইটস অফের আগে আমার হাউস মাস্টারের (জনাব রাখাল চন্দ্র ধর , কিংবদন্তীতুল্য পুরুষ) নিকট ধরা খাইয়া যায়, :gulli2: এবং তিনি তাহার ভাষণের দ্বারা ৫ মিনিটের মধ্যেই আমার বংশ পরিচয় সম্বন্ধে সম্পূর্ণ নতুন এক তত্ত্ব উপস্থাপন করেন... :-B

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : আসিফ (২০০৩ - ০৯)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।