এই সময়

উম্মাতাল এই সময়ে, জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে- আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, জামাত-শিবির, প্রজন্ম চত্বর, আওয়ামী লীগ, সাধারন জনতা, বিদেশী সরকার বা সংস্থা, পুলিশ, আস্তিক-নাস্তিক, ডান-বাম ইত্যাদি যে যার অবস্থান থেকে যার যার বিচার-বুদ্ধি প্রয়োগ করে সঠিক কাজটি করতে সচেষ্ট (অন্য পক্ষের কাছে তার গুরুত্ব বা গ্রহনযোগ্যতা যা-ই হোক)। (বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষকেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা অদূর ভবিষ্যতে কেমন বাংলাদেশ দেখতে চায় এবং শেষ পর্যন্ত একমাত্র তারাই ঠিক করবে এই পরিস্থিতিতে তাদের অর্জন বা ভুল কতটুকু।) কেননা পৃথিবীর কোন আন্দোলনই কোন কালেই আসন্ন সমগ্র ভবিষ্যতের ভাগ্য নির্ধারন করেনি; মানবমুক্তির, মানব-উন্নয়নের লড়াই একটি সদা চলমান, নিরন্তর সংগ্রাম- এ থেকে মানব জাতির অবসর নেবার কোন সুযোগ নেই) এক্ষেত্রে, চলমান পরিস্থিতিতে- শেষ বিচারে কারও পক্ষেই নিরপেক্ষ থাকা অসম্ভব! (যদিও নিজেদের নিরপেক্ষ, অরাজনৈতিক প্রমানে সচেষ্ট মানুষের সংখ্যা যে কোন মানব-সমাজেই যে কোন সামাজিক প্রেক্ষাপটেই বিস্তর!) আর যদি প্রশ্ন ওঠে মানবতার; “অস্তিত্ববাদ” ও “মানবতাবাদের” দার্শনিক, প্রবাদ পুরুষ জ্যাঁ পল সাত্রে কিন্তু মানবতাবাদের অজুহাতে কোন গনতান্ত্রিক বা নৈতিক আন্দোলন থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখেননি! আরেকটা বিষয়ও আমাদের ভুলে গেলে চলবেনা (বরং এটা নিয়ে একটা গুরুতর গবেষনা হওয়া উচিত!) মহাত্মা গান্ধী, মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র, আব্রাহাম লিংকন, জন এফ কেনেডি, বংগবন্ধু শেখ মুজিব, জন লেলন, শহীদ জাতীয় চার নেতা, এমনকী ইসলামের চার খলিফার মধ্যে তিন খলিফা, ইমাম হাসান-হোসেন, ৭১-এর শহীদ বুদ্ধিজীবিরা প্রমুখ সমস্ত জীবন সত্য, সুন্দর ও অহিংসার বানী প্রচার করলেও তাদের সবাইকেই নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিল!! সত্য ও ন্যায় যতই অহিংস হোক তাকে ইতিহাস জুড়ে বারবার রক্তাক্ত হতে হয়, থেকে থেকে নিষ্পেষিত হতে হয়, আত্মরক্ষার তাগিদে রুপ বদলাতে হয়! আর তাই বুঝি- যখন চারিদিক অন্যায়, অশান্তি, অবিশ্বাস, প্রতিহিংসা, অনাচারে ভরে যায় তখন একটি দৃপ্ত, অকুন্ঠ সত্য-ভাষনই অনেক বেশী বৈপ্লবিক হয়ে ওঠে, একটি শ্লোগানই জাগিয়ে তোলে অসংখ্য মানুষকে, একটি মিছিলই জানান দেয় সমগ্র সমাজের; সমাবেশের এক একটা মানুষ, মিছিলের এক একটা মুখ একটু একটু করে পার্থক্য নির্নয় করে দেয় সত্যের সাথে মিথ্যার, ন্যায়ের সাথে অন্যায়ের, অগ্রসরতার সাথে পিছু হটার, প্রেমের সাথে হিংসার, আপোষের সাথে দ্রোহের!
আজ সেই সময়, আজ সেই কাল, আজ সেই ক্ষণ!!
আজ সেই সময়, আজ সেই কাল, আজ সেই ক্ষণ!!

৭৮১ বার দেখা হয়েছে

৫ টি মন্তব্য : “এই সময়”

  1. আসিফ খান (১৯৯৪-২০০০)

    আপু, বিস্তারিত লেখার ক্ষেত্রে আমার সীমাবদ্ধতা ভয়াবহ। বরং সংক্ষেপে বলি, আপনি বোধহয় বুঝতে পারবেন। তা হল- দার্শনিকতা, রাজনৈতিকতা বা সামাজিক আন্দোলনের মুখে যে কোন বিবেকবান, সচেতন মানুষের পক্ষে নিরপেক্ষ অবস্থান ধারন করা বাস্তবিক অর্থেই অসম্ভব। তাকে অবশ্যই প্রকাশ্যে স্পষ্ট করে তার অবস্থান উম্মোচন করতেই হবে, বা হয়। আর এটা করার ক্ষেত্রে অন্ততঃ মানবতা বা মানবাধিকারের কথা বলে কোন পিছুটান বা দ্বিধার কারনে পিছিইয়ে যাওয়াটা অগ্রহনযোগ্য বা এক ধরনের ভুল। উদাহরন হিসেবে বলা যেতে পারে- বৃটেনের উপর নাৎসী বাহিনীর বোমাবর্ষনের খবর শুনে মর্মাহত, অশ্রুসিক্ত গান্ধীজির আপাততঃ স্বাধীন ভারতের আন্দোলন ক্ষান্ত রাখার পরামর্শ বা সিদ্ধান্ত। এক্ষেত্রে অহিংসা বা মানবতার অজুহাতে চলমান স্বাধীনতা আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হল, যা ছিল চরম ঐতিহাসিক ভুল, কেননা এর প্রভাবেই পরবর্তীতে তৎকালীন "আজাদ হিন্দ ফৌজের" প্রতি ভারতবাসীর অবস্থান ছিল দ্বিধাবিভক্ত আর নেতাজীর প্রতি তৎকালীন সকল রাজনৈ্তিক নেতৃত্বের অবস্থান ছিল বিরোধিতাপূর্ণ!

    জবাব দিন
    • ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

      তুমি বলছো ভুল, আর আমার কেন জানি মনে হচ্ছে বিষয়টা ঠিক আছে। 'আজাদ হিন্দ ফৌজ'এর ব্যাপারে আমি অতো উচ্ছ্বসিত নয়। গান্ধিকে তো সরাসরি ব্রিটেনের দালাল বলা হয়েছিল কয়েকবার। সে অর্থে রবীন্দ্রনাথও অনেকবার দালাল উপাধি পেয়েছিলেন। চরম পন্থা না নিলে লোকে কেন জানি তাদের দালাল বলে।


      “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
      ― Mahatma Gandhi

      জবাব দিন
      • আসিফ খান (১৯৯৪-২০০০)

        আফজা আপু@ "আজাদ হিন্দ ফোউজ কিন্তু চরম পন্থার উদাহরন নয়। আর চরম পন্থার পরিবর্তে চূড়ান্ত পন্থা কথাটা বোধহয় এ ক্ষেত্রে বেশি মানানসই। আর "আজাদ হিন্দ ফোউজের" নেতৃত্বে ভারত স্বাধীন হলে নিশ্চয়ই দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে সেটা হতনা! সেটা কী আসলেই খুব মন্দ হত??

        জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।