আমার হকি খেলা এবং হসপিটালে ৭ দিন….

ক্যাডেট কলেজ এ চান্স পাওয়ার দরুণ মোটামুটি ডর্ম ক্রিকেট থেকে শুরু করে সব খেলাই খেলার সৌভাগ্য হয়েছিল । তবে এর মধ্যে একটা খেলা ছিল যা খেলতে মোটামুটি সাহস নামের বস্তুটা একটু বেশি লাগতো । এতক্ষণে গেজ করে নাওয়ার কথা, হ্যা খেলাটা হকি ।

সেই ক্লাস সেভেন থেকেই দেখেছি এই খেলা নামক দুর্গতিটি প্রতি বছর্ই চলে আসছে এবং এর ফলে ক্যাডেটদের দক্ষ ক্রীড়াশৈলী ও পারদর্শিতা স্বরূপ প্রতি বছর দু-এক জন কে দীর্ঘ সময় ধরে সি.এম.এইচ নামক জায়গাটাতে অবস্থান করতে হয়েছে । তবে এতে হয়তো কিছু কিছু ক্যাডেট (নাম কমু না )এর লাভ (!?!) হতো ব্ইকি, কেননা সি.এম.এইচ নামক জায়গাটিতে এডমিট হ্ওয়া যে অনেকের্ই আরাধ্য ছিল । বলে নেওয়া ভালো , এই যায়গাটিতে কখনো থাকতে পারিনি বলে আমার নিজের্ও এক আধবার যেতে ইচ্ছা হতো না তা নয় তবে যাই হোক , যেবার এক ভাইয়ের হাতখানি কেটে প্রায় দুভাগ হয়ে ঝুলতে দেখেছিলাম , আমার হকির খায়েশ সেবার ই মিটে গেছিল । পণ করি আর যাই করবো হকি খেলব নাহ ! কিন্তু আমার ভাগ্যে বোধহয় অন্য কিছু ছিল…

ক্লাস ইলেভেনে সবে উঠেছি তখন । রক্ত গরম ছিল কিনা জানি না, জেপি হ্ওয়ার জিল ছিল এমন ও না, খেলোয়াড় পাওয়া যাচ্ছিল না বলেও হয়তো না, কিন্তু হকি স্টিক ধরেই মনে হল সব ই তো খেললাম, এই খেলাটা আর বাদ থাকবে কেন ! যে ভাবা সেই কাজ। পরদিন থেকে শুরু হল প্রাকটিস এবং অবাক হয়ে আবিষ্কার করলাম যে আমি বেশ ভাল ডিফেন্ডার (আমার এবরো খেবরো স্টাইলে শট নেওয়ায় স্ট্রাইকার ভয় পেলে আমি কি করতে পারি :p ) । বুঝলাম ইন্টার হাউসে এবার বোধহয় আমার হাতেই কয়েকজনের মাথা ফাটতেছে :s!!!

তো একদিন বিকেলে গেমস আওয়ারে প্রিন্সিপাল এলেন আমাদের সাথে খেলতে । আর্মি পারসন । ফলে এই হলো যে অনেকেই যারা (হবু জেপিরা) এই কয়দিন প্রাকটিস এ আসেনি তারাও লাফাতে লাফাতে চলে এল । বুঝলাম আজ একজন এর মাথা ফাটবে । খেলছিলাম বেশ, এর ই হঠাত্‍ স্যারের সামনে অপোনেন্ট করল ফাউল । আর্ও ভাল । শট নিতে যাব , দেখি “তাহা”দের একজন আগেই চলে এসেছেন । আমিও মজা দেখার জন্য প্রস্তুত হলাম (বলদটা বোধহয় জানতো না হকিতে শট নেওয়াটা অনেকটা কঠিন, স্টেজে আবৃত্তির মতো নে এবং বলে না লাগানোর রেকর্ড হায়েস্ট ৮ বার ও ক্রস করছিল কারো কারো )। তা বেশ জোরেই শট নিল বেটা। যা ভেবেছিলাম হলো ও তাই, প্রথম ৩টা শট ই মিস । এবার প্রিন্সিপাল স্যারের দিকে তাকালাম । বুঝলাম বিরক্ত হচ্ছেন । “হ্ইছে , এবার আমি শট নেই” বলে যেই ওকে থামাতে গেলাম , কিন্তু দেরি করে ফেলেছিলাম । ততক্ষণে সে প্রচন্ড জোরে শট নিয়ে ফেলেছে । ফলস্বরূপ একটু পর নিজেকে আবিষ্কার করলাম সাইডরোল দিতে দিতে কয়েকফুট দুরে ঘাসের মধ্যে…

এরপর বহু কাহিনী । সেই তুখোড় প্লেয়ারটি হকি ছেড়ে দিল , আমার রক্তে লাল হয়ে যাওয়া শার্ট প্যান্ট ধুপিতে গেল , বা চোখের ১/২ ইন্চি পাশে ৩টা সেলাই লাগলো, হসপিটালে কয়েকদিন সবাই চিরিয়া দেখতে আসলো, ৭ দিন আরামে ঘুমালাম, ইটিসি ইটিসি…

তবে আমার এখন্ও হাসি ঘটনা ভাবলে কারণ পরে শুনেছিলাম যে বলদটা নাকি ৪র্থ বার্ও হকিস্টিকটাকে বলে লাগাতে পারেনি :p:p:p

৭২১ বার দেখা হয়েছে

১৬ টি মন্তব্য : “আমার হকি খেলা এবং হসপিটালে ৭ দিন….”

  1. সাইফুল (৯২-৯৮)

    আসিফ,

    তোমার লেখাটা পড়ে আমাদের সময়ের কথা মনে পরে গেল। আমাদের এক বন্ধু হকিস্টিক এর বাড়ি খেয়ে তার গালে পারমানেন্ট টোল পরে গিয়েছিল, এখনো আছে। তবে জেপি হওয়ার জন্য এরকম কিছু করতনা ছেলেরা।

    মজা পেলাম লেখাটা পড়ে।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : ফরিদ (৯৫-০১)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।