মিশরের পিরামিড

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (১ বছর ফিজিক্সের ছাত্র ছিলাম কিনা) পড়ুয়া তিন বন্ধু ফার্মগেটে একটা মেসে থাকতাম। টয়লেটসদৃশ রুমে বন্ধু নিয়াজ, শাকিল আর আমি; তিন বন্ধুর সুখের সংসার।

মেঝের তিন কোনায় পরস্পর সংলগ্ন তিনটি বিছানা, দুইটি টেবিল ফ্যান, খানকয়েক বই (শাকিলের ১০১ ম্যাজিকশিক্ষা, পত্রিকা(?), নিয়াজের জীবনানন্দসমগ্র, আমার কিছু ওয়েষ্টার্ন), একধামা আলুপটল, চাল, এক বোতল সয়াবিন তেল, কিছু কাপড়চোপড় -এই ছিল আমাদের পার্থিব সম্পত্তি।

মাঝেমাঝে ক্লাসে যাই, প্রত্যেক বিকালেই হন্টন ভ্রমণে বের হই।রাজধানী দেখে বেড়াই। মোড়ের দোকানে ‘গরুর মূত্র’- সদৃশ রং চা খাওয়া, রাতের অন্ধকারে পানি খেতে গিয়ে ভুলে সয়াবিন তেল দিয়ে গড়গড়া করা, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে উজিরনাজির মারা, প্রচন্ড গরমে বাইরে থেকে এসেই জনৈক বন্ধুর লুঙ্গী তুলে ফ্যানের বাতাস খাওয়া;সবই আমাদের জন্য নতুন অভিজ্ঞতা।৩০% ছাড়ে বন্ধু শাকিল একবার গ্যালারি এপেক্সের চপ্পল নিয়ে আসল ১২০০ টাকায়। সেইসময়ের হিসেবে অনেক টাকা।

“বলিস কি রে? চপ্পল না জুতা?”
“বেকুবের মত কথা বললি, পায়ে দিয়া দ্যাখ ব্যাটা, মনে হবে একদম সোফা।” একে একে তিন জনই ক্যাটওয়াক করে ট্রায়াল দিলাম। ১২০০ টাকার ‘সোফা’ পায়ে দিয়ে সবাইই চমৎকৃত হলাম।

টিভি, পিসি, এমপি৩, স্মার্টফোন, আইপড কিছুই নাই। সিনেমা, গানবিহীন জীবন আর ভাল লাগে না। কি করা যায়? সহজ সমাধান দিল শাকিল। তার নোকিয়া ফোনে ওয়েলকাম টিউন সেট করল “কবিতা পড়ার প্রহর এসেছে/রাতের নির্জনে”।

বিনোদনের অভাব হলেই শাকিলের মোবাইলে কল দেই। ওয়েলকাম টিউনের গান শুনি।গভীর রাতে সে গান শুনে বিষন্ন হই। একবার, দুইবার, বারবার।

মন্দ কী?? কিছু একটা শোনা তো হল।

মেসের রান্না করতেন এক খালা। খালার সবই ভাল শুধু মাঝেমাঝে মিসকল দেয়ার জন্য মোবাইল চাইতেন। তাতে আপত্তি ছিল না। কিন্তু যে সর্বনাশা মিসকল দিতেন তাতেই একাউন্ট ফাঁকা হয়ে যেত। না দিলে প্রতিশোধ নিতেন….তরকারির লবন বাড়িয়ে…বা না দিয়ে।

তিন বন্ধু আজ তিন দিকে।কেউ জাহাজী, কেউ হতে যাচ্ছে আইনজীবী, কেউ মেডিকেলে।
ম্যাড়ম্যাড়ে জীবন।
অনেক দিন সিগারেটের ধোঁয়া দিয়ে কুলি করা দেখি না, লুঙ্গী তুলে বাতাস খাওয়া দেখি না, ওয়েলকাম টিউনে গান শুনি না।
কার প্লেটের ভাত দেখিয়ে বলি নাঃ “মিশরের পিরামিড বাংলাদেশে ….শালা,তোর প্লেটে।”

১,৩০৬ বার দেখা হয়েছে

৭ টি মন্তব্য : “মিশরের পিরামিড”

  1. সামীউর (৯৭-০৩)

    এইচ এস সির পর ঢাকায় কারওয়ান বাজার হোটেল স্টারের পেছনের একটা গলিতে আমরা সিলেট ক্যাডেট কলেজের ৬ ফ্রেন্ড থাকতাম। সেই অভিজ্ঞতাগুলো মনে করিয়ে দিলে।

    জবাব দিন
  2. বন্ধুর লেখায় নিজেকে একটা চরিত্র হিসেবে দেখে ভাল লাগল। একরাত্রে চাবি না নিয়ে তালা টিপে বেরিয়ে গিয়ে, পরে ফিরে এসে করাত দিয়ে তালা কেটে ঘরে ঢোকার ঘটনাটা বেশ পেইনফুল আছিল। তদুপরি বিভিন্ন মেয়ের নাম বসিয়ে এডিট করে গাওয়া মান্না দে'র গান,
    ' জানি তোমার প্রেমের যোগ্য আমি ত নই,
    পাছে ভালবেসে ফেল তাই,
    দূরে দূরে রই ......'
    আহা ।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : রশিদ (৯৪-০০)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।