ছবি ব্লগঃ প্রবাসে, পথে-১

গেছিলাম ইংল্যান্ডের ভেতরেই বাথ শহরে। তাও বেশ আগে। তিন মাস হতে চলেছে প্রায়। ১৪ই ফেব্রুয়ারিতে। ইউনিভার্সিটি থেকে মাঝে মাঝেই এদিক সেদিক ট্রিপে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে, যদিও শুধু নিয়ে যাওয়া আর ফেরত নিয়ে আসা পর্যন্তই তাদের মাথা ব্যাথা, তবু নিজের গাটের পয়সা খরচ করে যাওয়ার চাইতে ভার্সিটি বাসে গেলে যাওয়া আসার খরচটা ধাই করে অর্ধেকে নেমে আসে। তাই এমন মোক্ষম সুযোগ হাতছাড়া করাটা নেহায়েতই বোকামি। দিনটা যদিও ভ্যালেনটাইন্স ডে ছিল, তবু ভ্যালেন্টাইন না থাকার কারণে আমাদের মতন গুটি কতক পোলাপানের অচেনা অজানা নতুন এক শহরের এমাথা থেকে ওমাথা টো টো করে ঘুরে বেড়ানো ছাড়া তেমন কিছু করার ছিল না।

আগে সনি সাইবার শট ডিএসসি এইচ সেভেন ইউজ করতাম। ১৫এক্স এর অলমোস্ট মন্সটার জুমের কারণে ক্যামেরাটার উপর খুব মায়া জন্মে গেছিল। কিন্তু ছবির ডিটেইল অতটা ভাল আসতো না বলে মাস চারেক আগে শখ করে একটা ডিএসএলআর কিনে ফেলি দ্যুম করে। কিন্তু কেনার পরে দেখলাম হা করে বসে থাকা ছাড়া উপায় নাই, কারণ এত অপশন, আর সেগুলির কোনটা ব্যবহার করলে কিরকম ছবি উঠবে কিছুই জানি না। ফটোশপের মতন হাই-প্রোফাইল ইমেজ এডিটরে ক্যাম্নে নরমাল ছবিকেও পাঙ্খা ছবি বানান যায় জানি না, গুতানোর মতন সময়ও পাই না। অগত্যা আমাদের উল্ভারহ্যাম্পটনেই বাংলাদেশি, সমবয়সী, শখের ফটোগ্রাফার শিহাবের শরণাপন্ন হলাম একদিন। অল্প সময় নিয়ে picnik.com এ কিভাবে টুকটাক পোস্টএডিট করতে হয় দেখায়ে দিল।

এই ব্লগটা বাথ নিয়ে না। বাথ নিয়ে সময় পেলে পরে একটা ব্লগ লিখব (সম্ভাবনা যদিও খুবই ক্ষীণ)। বরঞ্চ এই ব্লগটা একটা ছবি ব্লগ। বিদেশের রাস্তায় রাস্তায় ঘোরার সময় তোলা টুকটাক ছবি……মানুষের, এক্সপ্রেশনের।

ফ্লেম জাগলার

ফ্লেম জাগলার


ইনি রোমান বাথের এন্ট্র্যান্সের ঠিক সামনে একচাকার সাইকেলের উপর দাঁড়িয়ে আগুন ছুড়ে ছুড়ে খেলা দেখাচ্ছিলেন। সেই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। এক এক গ্রুপ আসে, চারিদিক থেকে ঘিরে ধরে খেলা দেখে, শেষ হলে কেউ কেউ সামনে পেতে দেয়া টুপিটার মধ্যে টুকটাক কয়েন ফেলে। হয়ত মিনিট পাঁচেকের ছোট্ট বিরতি, তারপর আবার একদম প্রথম থেকে শুরু। এই ব্যাপারটা মনেহয় যেইসব শহরে টুরিস্ট যায় সেরকম প্রায় সব শহরেই খুব কমন। শেক্সপিয়ারের জন্ম যেই শহরে স্র্যাটফোর্ড আপন আভন, সেখানে যখন গেছিলাম তখনো এরকম একজনকে এরকম খেলা দেখাতে দেখছিলাম, একই রকম লাল রঙের জামা পরা। এদের প্রেজেন্টেশনটা খুব মজার হয়……প্রচুর হিউমার মেশানো থাকে। দর্শকদের হাসতে হাসতে অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। ফিজিক্যাল স্পোর্ট বলে এদের কষ্টও হয় অনেক……শীতের মধ্যে ঘেমে টেমে জামাটামা ভিজে একাকার! তবু, দর্শকদের মধ্যে অনেকেই ঘন্টা খানেকের এন্টারটেইনমেন্টের পরে টাকা দেবার পালা আসলে সুন্দর মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে হাঁটা দেয়!

যুদ্ধ যদি উত্তর হয়ে থাকে, প্রশ্নটা নিশ্চয়ই খুব ফালতু ছিল

যুদ্ধ যদি উত্তর হয়ে থাকে, প্রশ্নটা নিশ্চয়ই খুব ফালতু ছিল


রোমান বাথ থেকে বের হয়েই দেখি বাথ Abbey এর সামনে দাঁড়িয়ে ওনারা গাজায় ইজরায়েলি হামলার বিপক্ষে নীরব প্রতিবাদ জানাচ্ছে কতগুলো কাগজে লিখে আনা পোস্টার হাতে নিয়ে। একজনের পোস্টারে লেখা ছিল – If war is the answer, it must be a very stupid question.

সাডেন প্লে-মেট

সাডেন প্লে-মেট


এই ছবিটা আমার খুব ফেভারিট ছবিগুলির একটা। কেউ কাউকে চেনে না, হঠাৎ করে কোথা থেকে দুই পিচ্চি এক জায়গায় হয়ে গেল আর লাফালাফি শুরু করে দিল!

গল্পকথক

গল্পকথক


ইনি আসলে একজন টুরিস্ট গাইড। প্রতিঘন্টায় একটা একটা গ্রুপ নিয়ে রোমান বাথের ভিতর প্রতেকটা জায়গায় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখায়। ভয়ংকর বোরিং একটা কাজ হওয়ার কথা। অডিয়েন্স ধরে রাখা খুব কঠিন, প্লাস সারাক্ষণ চাপার উপর চলতে হয়। এই বোরিং কাজটাই ইনারা অনেক অনেক ইতিহাসের গল্পের সাথে মিশায়ে মিশায়ে বলে। কোন কোন গল্প খুব মজার হয়, কোন কোনটা বলতে বলতে আবার চোখে মুখে এক্সাইটমেন্ট ফুটে উঠে খুব স্পষ্ট ভাবে! সবাই খুব আগ্রহ নিয়ে শোনে ।

সামথিং ফানি

সামথিং ফানি


আগুন নিয়ে সাইকেলে চড়ে খেলা দেখাচ্ছিল যেখানে, সেখানে জড়ো হওয়া মানুষের ভিতর থেকে একটা মুহূর্তে কেটে নেয়া এই ছবিটা। খুব মজার কোন কিছু একটা শুনে সবাই হেসে দিল, এই ভদ্রলোকের হাসিটা হলো একদম প্রাণখোলা……উঠে গেল ক্যামেরায়…

টুরিস্ট

টুরিস্ট


এই টুরিস্ট অবশ্য অচেনা কোন টুরিস্ট না। উনি এনামুল ভাই। আমার পুরানো সনি সাইবার শট ডিএসসিএইচ সেভেন ক্যামেরাটা সেদিন দিয়ে দিয়েছিলাম উনার হাতে। হাতে নিয়ে কিসের ছবি তোলা যায় ভাবছিলেন বোধহয়। ঠিক সেইসময় পাশ দিয়ে গেল একটা শহর ঘুরে দেখানোর লাল রঙের সিটি সাইট সিয়িং বাস। আর এই সুযোগে ছবি উঠে গেল আমার ক্যামেরায়……

১,৬৫১ বার দেখা হয়েছে

১৪ টি মন্তব্য : “ছবি ব্লগঃ প্রবাসে, পথে-১”

  1. তানভীর (৯৪-০০)

    আশিক......অ-নে-ক-দি-ন পর তোমার লেখা! 🙂
    কেমন আছ? লন্ডনের রাস্তায় তো খুব ঘুরে বেড়াচ্ছ! আরেকজন তো এখানে তোমার দেখানো পথে হাঁটার চেষ্টা করছে!
    ছবি আর ছবির বর্ণনা- দুইটাই চমৎকার! :clap: :clap:

    জবাব দিন
  2. সামি হক (৯০-৯৬)

    এইচ সেভেন আমি এখন ব্যবহার করতেছি, ক্যামেরাটা আসলেই ভালো। তবে হ্যা ডিএসএল আর এর কাছে কিছুই না। ছবিগুলো বিষয়গুলো খুব ভালো লাগল আর বর্ণনা একদম ঝরঝরে চোখের সামনে সব একদম ভেসে উঠে।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।