সানসেট বেঞ্চ

কলেজে প্রতি দিনের রুটিন একদম ঠাস বুননের।পিটিতে যাও,ফিরে গোসল কর, নাস্তা খেয়ে ক্লাসে যাও, মিল্ক ব্রেক থেকে ফিরে আবার ক্লাস শেষ করে লাঞ্চ…… দৌড় দৌড় দৌড়… সকালে পাচটা থেকে রাত দশটা অবধি … বছরে ২৬৫ দিন। পুরা দিনের রুটিনের ভেতর একটা দৌড়ের উপর থাকার ব্যাপার ছিল। কখনো নিজস্ব সময় পেলে, হয় খেলে নয় ঘুমিয়ে কাটানোর ইচ্ছাই ছিল ভারী। চিন্তা করার সুযোগ অনেক কম।

এর ভিতর শ্রেষ্ঠ সময় ছিল … মাগরিবের নামাজের সময়টুকু। পুরো কলেজ চুপচাপ … সানসেট বেঞ্চে বসে থাকা।সূর্যাস্তের আগেই পৌছে ওখানে সূর্য্য ডোবার অপেক্ষা করা … আজান পড়তেই কলেজ ফাকা, কংক্রিটের বেঞ্চগুলি একা। সেই সুপারফাস্ট চিন্তাবিহীন জীবনে ঐ বেঞ্চগুলি খুব স্থির কিছু মুহূর্ত উপহার দিয়ে যেত প্রতিদিন। সূর্য্য ডুবছে, সন্ধ্যা নামছে, আকাশের রং বদলাচ্ছে। কি অসম্ভব স্থির প্রকৃতি । চিন্তাহীন জীবনে একমাত্র চিন্তা করার সময়।  নামাজ শেষ হবার পথে, আমিও ফিরছি। প্রতিদিনই ফিরি কিন্তু বেঞ্চগুলি একা রেখে ফিরতেও একধরনের বিষণ্ণতা কাজ করে।

রিইউনিয়নে কলেজে গেলাম একটা বাকেট লিস্ট নিয়ে।সাতটা পয়েন্টের ভেতর প্রথমটাই ছিল এই বেঞ্চে গভীর রাত পর্যন্ত অকারনেই বসে থাকা। ভীড় ছিল, একা বসে থাকা হয়নি দেখা হয়নি সূর্যাস্ত এখানে বসে। কিন্তু বেঞ্চগুলি্র স্পর্শ ছিল সেই আগের মতই। প্রায়ই অনেককে বলি, আমার শেষ বিশ্রামের যায়গাটা যদি হত কলেজের পেছনের কোন পাহাড়, তাহলে সমুদ্র আর সেই আশ্চর্য সূর্যাস্ত দেখে পার করে দেয়া যেত এক মহাকাল। সেই এক পাহাড়ে উঠে সূর্যাস্ত দেখা ছিল লিস্টের দ্বিতীয় কাজ।

একধরনের বিদঘুটে এলিয়েনেশনের অনুভূতির চিন্তায় রূপ নেয়া এখান থেকেই শুরু। অনেকটা গাড়ির ক্লাচ থেকে পা সরিয়ে নেবার মতই।বড় চিন্তা, ক্ষুদ্র চিন্তা, স্বার্থ চিন্তা … সারা দিনের চিন্তাগুলির সাথে আরো একটা যোগ হোল। বয়স কম ছিল, তাই চিন্তা গুলি কোন সময়ই যুক্তির পথে হাটেনি। এখনো হাটেনা যদিও। কিছু বিচ্ছিন্ন অনুভুতির কনগ্লোমারেশন তৈরি হতে শুরু করল এখান থেকেই …

২,২৬৪ বার দেখা হয়েছে

১৭ টি মন্তব্য : “সানসেট বেঞ্চ”

  1. "আজান পড়তেই কলেজ ফাকা, কংক্রিটের বেঞ্চগুলি একা। সেই সুপারফাস্ট চিন্তাবিহীন জীবনে ঐ বেঞ্চগুলি খুব স্থির কিছু মুহূর্ত উপহার দিয়ে যেত প্রতিদিন। সূর্য্য ডুবছে, সন্ধ্যা নামছে, আকাশের রং বদলাচ্ছে। কি অসম্ভব স্থির প্রকৃতি । চিন্তাহীন জীবনে একমাত্র চিন্তা করার সময়।"
    - আমি এফ সি সি'র নই, তবুও কল্পনা করতে পারছি সেই মুহূর্তগুলোকে। চট্টগ্রামে চাকুরী করার সময় মাঝে মাঝেই বি এম এ'র নিকটস্থ সানসেট পয়েন্টে গিয়ে সূর্যাস্ত দেখতাম। ব্যস্ত জীবনের রুটিন থেকে ইঁদুর দৌড় পরিহার করে ঐটুকু সময় বের করে আনাটাও এক ধরনের বিলাসিতা ছিল তখন। নস্টালজিয়ায় আক্রান্ত হ'লাম।
    "কিছু বিচ্ছিন্ন অনুভুতির কনগ্লোমারেশন তৈরি হতে শুরু করল এখান থেকেই …" - চমৎকার!

    জবাব দিন
  2. পারভেজ (৭৮-৮৪)

    দৃশ্যকল্পটা পুনঃনির্মানের চেষ্টা করলাম।
    খুব কঠিন কিছু না আমার জন্য।
    কারন, ১৯৮৪-১৯৮৬ পর্যন্ত্ প্রায় উইক এন্ডেই ঐ রকম একটা সময়ে এফসিসি তে যেতাম মেজর আতিয়ার অথবা মিঃ মাহবুবুল আলমের বাসায়।

    দৃশ্যপট ভেসে ওঠার পর দেখলাম আমার ভাবনাগুলোও তোমার সাথে ভালোই মিলে যাচ্ছে।
    বাহ্‌ !! দারুন তো!!!


    Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

    জবাব দিন
    • অরূপ (৮১-৮৭)

      আরে পারভেজ ভাই, ঐ সময় ওখানে যেতেন ??? :thumbup: :thumbup:
      আমার কবিতা প্রীতির শুরুর মাহবুব আলম স্যারের কারনে ।উনি আট বছর আগে একদিন কবিতাটা এমন ভাবে আবৃত্তি করে ছিলেন ......
      ডিসকাশন করেছিলেন আমার কবিতা পড়ার পোকা মাথা ভরে ফেলেছিল। আতিয়ার স্যার কোথায় আছেন বা কেমন আছেন জানি না।


      নিজে কানা পথ চেনে না
      পরকে ডাকে বার বার

      জবাব দিন
  3. সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

    🙂 🙂 🙂 🙂

    আপনার লেখার শিরোনাম পড়েই আমার বন্ধুর তোলা একটা ছবির কথা মনে পরে গেলো, দাদা! লেকের পাড়ে তোলা একটি ছবি। একটি একাকী বেঞ্চ, সামনেই ফেনায়িত জলরাশি! সূর্য ডুবছে জলের ওপারে! বেঁচে থাকবার মতো আনন্দ আর হয়না!!

    জবাব দিন
  4. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    দূর্দান্ত লাগলো অরূপদা। :boss:

    কলেজে আমার নিজের সময়টা ছিল লাঞ্চের পরের রেস্ট টাইম। পুরো কলেজ যখন ঘুমাতো তখন দুপুরে না ঘুমানো আমি খা খা রোদ্দুরে পোড়া ফাকা মাঠগুলো উপভোগ করতাম। চৈত্র বৈশাখে রোদ যখন খুব বেশি হতো তখন রোদে কেমন যেন নেশা নেশা হতো।


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  5. সামিউল(২০০৪-১০)

    একদম মনের কথা লিখেছেন ভাই। :boss:
    আমারো অনেক প্রিয় জায়গা ছিল আমার কলেজের মাঠের বেঞ্চগুলো।
    বসে বসে খোলা মাঠ আর আকাশের দিকে তাকালে মনে জীবন সম্পর্কে কেমন একটা দার্শনিকতা চলে আসতো। অনেক বড় হয়ে গেছি মনে হত। খুব মিস করি 🙁


    ... কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালবাসে!

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : পারভেজ (৭৮-৮৪)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।