কোন আশ্রয় নেই বলেই … ..

ছুটি দেখতে দেখতে একেবারে শেষপ্রান্তে এসে গেল। ব্লগ লেখাই হলো না। এর মাঝে মনে পড়ে গেল গত সপ্তাহের কথা। অন্যরকম দিনগুলোর স্মৃতিময়তায় লেখা এই স্মৃতিকথা…

দ্বিতীয় পর্বের সবচেয়ে বড় এক্সারসাইজ ছিল লৌহকপাট। আর এখন তৃতীয় পর্বের প্রথম বড় এক্সারসাইজ রণগতি। এটার কষ্ট একটু বেশী যে হাঁটতে হয় অনেকটুকু পথ।

“দেখতে দেখতে লৌহকপাট থেকে রণগতি। আজ লেখার এই সময়টা চমকপ্রদ। সেবার পুরো একটা নোটবুক লিখেছিলাম ট্রেঞ্চ এ বসে। আর আজ লিখছি গাছের গোঁড়ায়।” রাস্তার পাশে খাল, শুকনো ছিল। পানি জমছিলো ধীরে ধীরে। তার মাঝে বৃষ্টির আন্দোলিত ফোঁটা টপটপ পড়ছিল। শুকনো পাতাগুলো নৌকা হয়ে ভাসছিল আর ভিজছিল। আমিও ভিজছিলাম। তবে একটু একটু। স্মলপ্যাকে রেইনকোট নিয়েছিলাম বলে রক্ষা। নইলে কারও বাড়িতে আশ্রয় নিতে হত। সবাই জড়সড় হয়ে থাকার চেয়ে এটাই মজা।

গাছগুলোর সাথে রেইনকোট তাঁবু হিসেবে লাগিয়েছিলাম। ভয় ছিল একটাই! রাস্তার পানি গড়িয়ে যাচ্ছিল বসে থাকা সেই ঢালু পথ বেয়ে। চিন্তা করছিলাম না জানি কখন নিজেকে আবিষ্কার করব কাদার মধ্যে বসে আছি। আরিফুল কে দেখে খুব আফসোস হচ্ছিল। পিক আপে বসে প্রায়ই ওয়্যারলেস এ কাজ সারছিল
আর নিশ্চিন্তে তখন ঘুমচ্ছিল(একদম শুকনো থাকলে কার না ঘুম আসবে সেই দিনে!!!)

কথায় বলে কারও পৌষ মাস কারও সর্বনাশ। ও নিশ্চিন্তে আর ১০মিটার দূরে আমি অসহায়ের মত বৃষ্টি থেকে বাঁচার চেষ্টা করছি। সামনে বাড়িটাতে অনেককে দেখতে পেলাম। জড়সড় হয়ে সবাই বসে আছে।

আমার কাঁধের ওপর দিয়ে সমুদ্রবিলাসী মানুষ কক্সবাজার অভিমুখে ছুটে যাচ্ছে। পূর্বানী নামের বাসটা খুব বেশী ছিল তার মাঝে। ভ্রমণের জন্য আবহাওয়াটা খুবই ভালো ছিল। আমি ওরকমটাই চাইতাম সবসময়। কিন্তু সেদিন তো আর ভ্রমণের সময় ছিল না। এসব চিন্তা করতেই খেয়াল হল মাথার ওপর রেইনকোট এ পানি জমে ভারে খুলে পড়েছে। আবার লাগালাম।

মনে হচ্ছিল- It´s really amazing and soothing singing song in this weather. If I could go to Cox’sbazar beach that day, I’d be very happy the way I became last Friday beside the muddy!! Sea beach….”

বাসগুলোর গতি অনুভব করার চেষ্টা করছিলাম। লিখতে ইচ্ছে করছিল না; বৃষ্টির কমার অপেক্ষায় ঘড়ি দেখে অবাক হয়ে খেয়াল করলাম; সেদিন আমার অন্যতম, প্রকৃত বলতে যা বোঝায় সেইরকম এক বন্ধুর জন্মদিন ছিল। আমার করার কিছুই ছিল না। কী করব ভাবছিলাম। এবার Green days এর লাইনটার কথা মনে পড়ল-
Here comes the rain again,
falling from the stars.. … … …

বৃষ্টি কমে আসতে থাকলো আর আমার শুধু মনে হতে লাগল কখন মুভ অর্ডার চলে আসে। উল্টো আর একটু বৃষ্টির আশা করলাম তখন আবার। সাথে যা যা ছিল ভিজে শেষ, শুধু আংশিক শুকনো রাখতে পেরেছিলাম আমি। কল্পনা করছিলাম “বাসায় যাবার দিন যেন এমন বৃষ্টি হয়। ঝিরঝির বৃষ্টি, ঠাণ্ডা বাতাস। একটা ঘুম .. .. ..”

এরপর দিনটা খুব কষ্টে গিয়েছিল কারণ আমাদের বহনযোগ্যে জিনিস খুব ভারী ছিল। “ককর” এর শরিফের কথা বলে শেষ করা যাবে না। ফয়সাল মাহমুদের কথা না বললে অন্যায় হয়ে যাবে। খুব পারষ্পারিক একটা সৌহার্দ্যে হয়ে গেল সেদিন ওই ভারী জিনিসগুলোর জন্যে। শিখলাম কখন মানুষ আরকজনের কষ্ট বুঝতে পারে। যার জ্বালা সেই শুধু জানলে আসলে বাঁচাটা সম্ভব হতো না কখনোই।

পরদিন পাহাড়ে থাকতে হয়েছিল। ওখানেও রেইনকোট দিয়ে রোদের থেকে রক্ষা পাওয়ার ব্যবস্থা করলাম সবাই মিলে। সাঙ্গু গ্যাস ফিল্ড এর সমুদ্রের বেস দেখা যাচ্ছিল। দূর থেকে পাহাড়ের ওপর একটা ফুটবল মাঠ দেখা যাচ্ছিল । বিকেলে সেটা প্রাণ পেল কয়েকজন ক্ষুদে ফুটবলারদের অংশগ্রহণে। সূর্য অস্ত যাবার
সময় হয়ে আসতেই অদেখা অনেক রকম পাখি আশেপাশে ওড়াওড়ি বেড়ে গেল। নীড়ে ফিরতে আমরাই কতটা উদগ্রীব আর পাখির তো ওটাই সব! দূর থেকে এসব দেখছিলাম আর ভাবছিলাম জীবনটা এরকম না হলে বোধহয় সত্যিই বিচিত্রতাটা দেখা হতো না এভাবে; এতোটা কাছ থেকে।

অপূর্ণতা একটা ছিলোই। যা আর পূরণ করবার মতো নয়। ছবি তুলতে খুব ইচ্ছে করছিলো। কিন্তু সুযোগ ছিল না। শুধু আশা করে আছি ইনশাআল্লাহ আর ৮মাস পরে কোথাও গেলে অপরূপ দৃশ্যগুলো তুলে রাখার সুযোগ হবে।

আজ ছুটিতে বসে লিখলাম। সেদিন কল্পনাতে ভাবছিলাম “ছুটিতে এক বৃষ্টিভেজা.. .. ঝিরঝির পতনের .. মৃদু বাতাসে যদি যেতে পারতাম!!!” কেমন করে যেন আসলেই সেই মুহূর্তটা পেয়ে গিয়েছিলাম। তাহলে কি মন থেকে চাইলে-ই সবকিছু সত্যি হয়???????

উৎসর্গ :
৬৫ দীর্ঘমেয়াদী কোর্সের ক্যাডেটদের স্মৃতিময় ও সার্থক রণগতির স্মরণীয় দিনগুলোর প্রতি

©আউয়াল উজ জামান ’২০১১

১,৮৫২ বার দেখা হয়েছে

৯ টি মন্তব্য : “কোন আশ্রয় নেই বলেই … ..”

    • রকিব (০১-০৭)

      ভাই সামীউর, মন্তব্যগুলো বাংলায় লেখার চেষ্টা করো। পুরো ব্লগে বাংলার মাঝে ইংরেজিতে লেখা মন্তব্য একটু দৃষ্টিকটু লাগে। অভ্র কিংবা অন্য কোন সফটওয়ার না থাকলেও সমস্যা নেই। সিসিবির মন্তব্যের ঘরেই ইন্টেগ্রেটেড অভ্র/প্রভাত/ফোনেটিক/ইউনিজয় রয়েছে। পছন্দ মতটা বেছে নিয়ে মন্তব্য কিংবা পোষ্ট দিয়ে ফেলতে পারো সহজেই।


      আমি তবু বলি:
      এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

      জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।