দুটি স্মৃতি………

ব্লগের আগের পোস্টগুলো পড়তেছিলাম…জিহাদের একটা পোস্ট পড়ে জাহিদ রেজার কথা খুব মনে পরে গেল………অনেক কিছু লেখা যায় ওকে নিয়ে…তাই ভাবলাম, প্রথম লেখাটা ওকে নিয়েই লিখি… দুইটা স্মৃতি এই মুহুর্তে মনে পরতেছে………দিলাম লিখে……
১;
জাহিদ তখন JP। তখন নিয়ম ছিল,JP-কে এক্সট্রা ড্রিল দেয়ার দরকার পরলে, ড্রেস রেস্ট্রিকসন দেয়া হত। কোনো একটা কারনে জাহিদের ৩ দিন ড্রেস রেস্ট্রিকসন চলতেছিল, ঘটনার দিন ছিল,৩য় দিন।সন্ধ্যা বেলা, ২টা কাঠাল পাড়া হল,জাহিদ ২টা কাঠাল দুই পাশে নিয়ে যেই হাউসে ঢুকতে যাবে, সামনে পরলেন আমাদের তখনকার হাউস মাস্টার হাশিমুদ্দিন স্যার। স্যার কোনো প্রশ্ন করার আগেই, জাহিদের হাজির জবাব, ” স্যার, কাঠাল দুইটা রাস্তার উপর পরে ছিল, ভাবলাম কোনো ক্যাডেট যদি নিয়ে যায়,তাই হাউসমাস্টার অফিসে জমা দিতে নিয়ে আসলাম।ভাল করছি না স্যার? ” । স্যার খালি বললেন “হুমম”…
পরের দিন নোটিশ দেখা গেল ” ক্যাডেট জাহিদ রেজা, আজকে হতে তিনদিন পর্যন্ত ড্রেস রেস্ট্রিকসন দেয়া হল”। বোঝা গেল, স্যার খায় নাই।
সেইবার জাহিদ টানা ৯ দিন ড্রেস রেস্ট্রিকসন খাইছিল, পরের ৩ দিন এর কারনটা মনে নাই……

২;
এস এস সি পরীক্ষা চলতেছে। সেবার আমাদের ব্যাচের বেশীরভাগ পোলাপান পরীক্ষার সময় ভাইরাল ফ্লু-তে পরছিল।আমি পরছিলাম অংক পরীক্ষার আগের দিন।পরীক্ষার আগের রাতে প্রায় ১০১’ ছিল। কয়েকজন মিলে টার্ন ওয়াইজ আমাকে স্পঞ্জিং করতেছে।এর মধ্যে আমি একবার জাগি, আরেকবার ঘুমাই…রাত ১টার দিকে ঘুম ভাংগলে দেখি, জাহিদ অঙ্ক বই নিয়ে আমার পাশে বসে আছে, যেই আমি উঠলাম, আমাকে একটা সম্পাদ্য পড়ে শুনাইল, পরেরবার উঠলাম আরেকটা সম্পাদ্য। এভাবে প্রায় সারারাত আমাকে পড়াইল…ওর কথা হইল, “দোস্ত, তুই তো অংক করতে পারলি না, দেখ শুনে কিছুটা মনে থাকে কিনা”…মনে আছে, প্রতিবার সম্পাদ্য শুনতেছিলাম, আর চোখ ঝাপশা হয়ে যাচ্ছিল…

জাহিদ এখন আর আমাদের মধ্য নাই। কিন্তু, ওর স্মৃতি সারাজীবন থাকবে আমাদের সাথে…
” ভাল থাকিস দোস্ত, আল্লাহ যেন তোকে অনেক অনেক ভাল রাখেন”…এইটুকুই প্রার্থণা………

১,৭৭৬ বার দেখা হয়েছে

২২ টি মন্তব্য : “দুটি স্মৃতি………”

  1. আমিন (১৯৯৬-২০০২)

    আরমান ভাই, আপনার ১ম পোস্ট দেখে স্বাগতম কথাটা চলে আসছিল, পোস্ট পড়ে আরো কিছু বলার থাকলো যা এক কথায় হতে পারে মনটাই খারাপ করে দিলেন।
    জাহিদ ভাই যেখানেই থাকুন তিনি যেন ভাল থাকুন- এই প্রার্থণা।

    জবাব দিন
  2. জাহিদ রেজা ভাইকে খুব কাছ থেকে না দেখলেও যতটা দেখেছি, তাতে আমার বিশ্বাস এই মানুষটার মত ভাল মানুষ আর হয় না।

    একটা কথা শেয়ার করি, সিসিবি গেটটুগেদারে যেমন তাইফুর ভাই একাই পুরা আড্ডা জমায়া রাখছিলেন, আমার ক্যান জানি হঠাৎ জাহিদ রেজা ভাইয়ের কথা মনে পড়ছিল, উনি আমাদের মাঝে থাকলে এভাবেই কথায়, হাসিতে পুরোটা আড্ডা জমিয়ে রাখতেন।

    আল্লাহ উনাকে জান্নাত নসিব করুন।

    জবাব দিন
  3. আহ্সান (৮৮-৯৪)

    ছেলেটাকে কখনো দেখিনি...।কিন্তু তারপরেও চোখটা ভিজে উঠলো...। বিধাতার কাছে আবারো জানতে ইচ্ছে করে, ভালো মানুষগুলোকে কেন তিনি এত তাড়াতাড়ি নিয়ে যান? এই পৃথিবীর যে ভালো মানুষগুলির অনেক বেশী প্রয়োজন...।

    জাহিদ, ভাইয়া তুমি যেখানেই থাকো, অনেক অনেক ভালো থেকো...।

    আরমান,
    ধন্যবাদ তোমাকে একট মানুষের কিছু ভালো মানবীয় গুণাবলী আমাদের সামনে তুলে ধরার জন্য। অপেক্ষায় থাকলাম আরো লেখা পাবার...।

    জবাব দিন
  4. সায়েদ (১৯৯২-১৯৯৮)
    “দোস্ত, তুই তো অংক করতে পারলি না, দেখ শুনে কিছুটা মনে থাকে কিনা”…

    :hatsoff: :hatsoff: :hatsoff: :salute: :salute:

    ভাই জাহিদ, যেখানেই থাক, আল্লাহ তোমাকে ভালো রাখুন।


    Life is Mad.

    জবাব দিন
  5. তানভীর (৯৪-০০)

    জাহিদ রেজার সাথে আমার কখনও পরিচয় ছিল না, কিন্তু যতবারই আমাদের শাহেদের কাছে ওর ঘটনা শুনি ততবারই মন খুব খারাপ হয়ে যায়।

    ওকে নিয়ে জিহাদের একটা লেখা আছে, সিসিবির শুরুর দিকে লেখা। লিঙ্ক দিলাম এখানেঃ
    না বলে চলে যাওয়া এক প্রিয় মানুষের কথা।

    দোস্ত, আশা করি সামনে তোর কাছ থেকে আরো লেখা পাব।

    জবাব দিন
  6. টুম্পা (অতিথি)

    রনন কে আমি দেখিনি কখনো, আমি আমার বন্ধুদের দেখেছি...প্রতি বছর ওর কবর জিয়ারত করতে যেতে, প্রতি ঈদে ওর বাসায় যেতে...রনন, তোমার বন্ধুরা তোমাকে কতটা ভালবাসে তা দেখেছি আমি। আল্লাহ তোমাকে ভাল রাখুন।

    জবাব দিন
  7. রকিব (০১-০৭)

    মনে কি পড়ে একদিন আমিও ছিলাম তোমাদের সবার মাঝে
    দুঃখ সুখের গল্প কথায় কত দিন রাত প্রহর গেছে
    আজো যায় যেমনি করে।।

    জাহিদ রেজা ভাইয়ের জন্য দোয়া রইলো।


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : রকিব (০১-০৭)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।