দিন শেষের আলো

অবশেষে ফিরে এলাম।
গত চার মাস ধরে সিলেট শহর থেকে দূরে বটেশ্বরের কোলে আছি।
জানে পানি নাই, সব রস শুকায় গেছে,…………।
(অবশ্য এইটা বোধহয় আমার জন্য প্রযোজ্য নয়, রস না থাকলে কি আর ব্লগ লিখতে বসি?)
যা হোক, কোর্স শেষ। এখন ঘরের ছেলে ভালয় ভালয় ঘরে(অথবা ইউনিটে) ফিরলেই বাঁচি।

এখানে একটা ডিস্ক্লেইমার দিয়ে রাখি, এই লেখাটা পুরোটাই একটা মনোলোগ, নিজের জন্যই লেখা। আপনাদের কারো বিরক্তি উৎপাদন করলে তার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী।

আমার জীবনটা ছোট, কিন্তু শখের শেষ নাই।
বই পড়া, গান শোনা, মুভি দেখা, ঘোরাঘুরি করা……ইত্যাদি ইত্যাদি।
কিন্তু এতদিন পরে এসে মনে হচ্ছে, এর কিছুই যেন করা হয় নি।

কথা হচ্ছিল বই পড়া নিয়ে।
আক্ষেপটা বই নিয়েই বেশি।
যত ছোটবেলার স্মৃতি মনে পড়ে, বইকে অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবেই দেখি।
নাইন/টেন পর্যন্ত গল্পের বইই বেশি পড়েছি, কিছু বিজ্ঞান…আমসুদ রানাতেই তখনো বুঁদ হয়ে আছি।
পরে পড়লাম জওহরলাল নেহরুর glimpses of world history, বাংলায়। মনে হল পুরো পৃথিবী চেঞ্জ হয়ে গেল।
এর পরে পড়া শুরু হল গল্পের বইয়ের বাইরের বই।
কিন্তু সমস্যা এখানেই। পড়লাম অনেক কিছু, পড়ে গেছি মনের আনন্দে, কি পেলাম কি হারালাম তার হিসেব রাখিনি।
এতদিন পড়ে এসে মনে হচ্ছে হিসেব রাখাটা বোধহয় দরকার ছিল।
পড়েছি অনেক, জেনেছি অনেক…………কিন্তু জানাটা সুসংবদ্ধ হয়নি।
জীবনের মনি মানিক, হীরে জহরত অনেক কুড়িয়ে নিয়েছি, কিন্তু অবহেলায় ফেলে রেখেছি এক কোণে।

এখন বড় ভাইদের কাছে প্রশ্ন, আসলে কিভাবে পড়া দরকার?
নীতিমালা কি হওয়া উচিত?
আনন্দের জন্য পড়া? নাকি জানার জন্য পড়া?
কোন বিশেষ বিষয় নিয়ে শুরু করা উচিৎ(ফোকাসিং)? নাকি বিস্তৃত বিষয় নিয়ে(পেরিফেরি)?

পড়ার অভ্যাস হয়েছে, তা মানি। এটা ভালো অভ্যাস, তাও মানি।
কিন্তু এই অভ্যাসের পুরো সুবিধা আসায় করা যায় কিভাবে?

বড় ভাই ও বোনেরা, উত্তরের আশায় বসে রইলাম।
ধন্যবাদ সকলকে।

১,৪৯৪ বার দেখা হয়েছে

১৩ টি মন্তব্য : “দিন শেষের আলো”

  1. ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

    আপাতত যা ্ভাল লাগে ্তা পড়তে থাক। অনেক সময় দেখা যায় বই হয়তো অনেক আছে কিন্তু সব বই পড়তে ইচ্ছে করছে না। নিজের পচ্ছন্দের কোন বিষয় থাকলে সে বিষয়েও পড়া চালিয়ে যেতে পার। রথ দেখা আর কলা বেচা টাইপের কিছু চাইলে ডিফেন্স থেকে আরো একটা ডিগ্রি নিতে পারবে এবং তা বাংলাদেশের কোন একটা বিষয়ে তোমাকে বিশেষজ্ঞ করে তুলতে পারে এমন একটা কিছু বেছে নিতে পার।


    “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
    ― Mahatma Gandhi

    জবাব দিন
    • আরিফ (১৯৯৭-২০০৩)

      সমস্যা ওখানেই। ভাল লাগার বিষয় অনেক, প্রায়োরিটাইয করতে পারছি না জন্যই আপনাদের কাছে, তথা ফোরামের কাছে হাজির হলাম।
      রথ দেখা কলা বেচা খুব ভাল জিনিষ, কিন্তু ডিগ্রি জিনিস টার পেছনে ছুটতে ইচ্ছা করে না।
      ফোকাসটা কোথায় দেয়া উচিৎ?
      আসলে আমি মনে হয় প্রমথ চৌধুরীর প্রবন্ধ থেকে বের হয়ে আসতে পারি নি।


      মুছে যাক গ্লানি/ঘুচে যাক জরা
      অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা

      জবাব দিন
    • আরিফ (১৯৯৭-২০০৩)

      আরো একটা কথা মনে পড়লো। আমাদের কি বিশেষায়িত জ্ঞানের পেছনে ছোটা উচিৎ, নাকি সব বিষয়ই জানা উচিৎ? আপনার মতামত কি?


      মুছে যাক গ্লানি/ঘুচে যাক জরা
      অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা

      জবাব দিন
  2. ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

    এ ক্ষেত্রে ভাল লাগাটাই মুখ্য বিবেচ্য বিষয়। আমি যখন কোয়ান্টাম মেকানিকস পড়ি তখন হাতের কাছে হলিউডি গু্জবের ম্যাগাজিন দেখলেও তাতে চোখ বুলিয়ে নিই।

    তুমি যেহেতু একটা স্ট্রাকচ্যারয়াল ওয়েতে পড়তে চাচ্ছো - এক কাজ করে দেখতে পার। ধরো আজ থেকে পনের বিশ বছর পরে তুমি একটা বই লিখবে 'বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে উপযুক্ত সেনাবাহিনী'। এখন এ বইয়ের মাল-মশলার জন্য যা যা পড়া দরকার সেসব পড়ে দেখতে পার। একটা উদাহরণ দিলাম। তুমি না হয় আরো পড়ে নিজের ভবিষৎ বইয়ের টাইটেল ঠিক করে নিও।


    “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
    ― Mahatma Gandhi

    জবাব দিন
    • আরিফ (১৯৯৭-২০০৩)

      আসলে আমাদের জীবনটা অনেক জটিল হয়ে গেছে। হাজারো বিষয়ের মাঝখান থেকে কোথাও ফোকাস করাটা যেমন জরুরী, তেমনি দুরূহ।
      আমার অভ্যাস ও আপনার মতই, ট্যাক্টিক্স পড়তে পড়তে মাসুদ রানা কিংবা শীর্ষেন্দুতে চোখ বুলিয়ে নিই। তবে এসব ব্যাপারে আমার আত্মনিয়ন্ত্রণ খুব কম...... 😉

      আমি আমার লক্ষ্য নির্ধারন করতে পারছিনা। এজন্য নিজেকে খুব অসহায় লাগছে। আর এজন্যই আপনাদের পরামর্শ চাচ্ছি।


      মুছে যাক গ্লানি/ঘুচে যাক জরা
      অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা

      জবাব দিন
  3. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

    এরকম দোদুল্যমানতায় আমিও ভুগি।
    কোনকিছু স্থির করে পড়া হয়না। ক'দিন খুব ভালো লাগলো বলে একটা বিষয়ের কয়েকটা বই হয়তো গোগ্রাসে গিললাম, কিন্তু কখন যে সেই খিদেটা হারিয়ে যায় টেরই পাইনা আর। তখন অন্যকিছু ভালো লাগে। কোন একটা বিষয়ে নিজেকে শিক্ষিত করে তোলার জন্য ফোকাসটা যে কত জরুরী তা হাড়ে হাড়ে বুঝি এখন।
    আর সব বিষয় 'জানা' সম্ভব নয়, জরুরীও নয়। তবে কোন একটা বিষয় জানতে শুরু করলে ভালো মতোই জানা উচিত - আর এটা করতে গেলে অনেক বিষয়ে সিম্পলি মুর্খ হয়ে থাকতে হয়, এটাই নিয়তি। কিছু করার নেই।
    তবে আমি মনে করি, সাধারণভাবে সাহিত্য, দর্শন, ইতিহাস এসব সম্পর্কে আমাদের আগ্রহ থাকা চাই কারণ এসব আমাদের ব্যক্তিগত চেতনা আর মূল্যবোধকে উন্নত করে, শাণিত করে। কিন্তু অপরদিকে এসব বিষয়েরই তাত্ত্বিক গভীরতায় চলে যাওয়ার কারণে যদি খেই হারানোর মতো অবস্থা হয়, তাহলে আমি মনে করি সেটা থেকে বেরুনোর চেষ্টা করাই ভালো।
    জীবনটা এতো ছোট যে, সব পড়ে শেষ করার মতো নয়।শুধু পড়লে, ট্রেন বাসে শুধু প'ড়েই গেলে দুধারে চোখ মেলে দেখবো কখন।

    আমি ব্যক্তিগতভাবে কোন নীতিমালা রাখার পক্ষপাতী নই পড়ার ক্ষেত্রে। নিজেকে বেঁধে দিলে আনন্দটা কই যেন পালিয়ে যায়।আনন্দ পালালে বিদ্যে শুধু কাগজের মতো গজগজ করতে থাকে।তাই লক্ষ্য নির্ধারণ থেকে পালিয়ে এসেছি।তুমি যে অনেক কিছু ছুঁয়ে যাচ্ছো, একদম ঠিক কাজটি করছো।নিশ্চিত থাকতে পারো।

    জবাব দিন
    • আরিফ (১৯৯৭-২০০৩)

      ধন্যবাদ ভাইয়া, অনুপ্রাণিত হলাম।
      আমাদের লক্ষ্য সম্ভবতঃ হওয়া উচিত, সব বিষয় সম্বন্ধে কিছু জানা, দুই/একটা বিষয় এর ওপর পূর্ণ দখল থাকা।
      আমার সমস্যা হয় যে, এত বেশি বিষয়ে আগ্রহ যে কোন বিষয়ে দখল আনার জন্য সিরিয়াসলি পড়বো, তা নিয়েই উভয়সংকটে থাকি। উদাহরণ দেই।

      ধরা যাক, ইতিহাসের কোন বই পড়ছি, সেখানে আর্টের ব্যাপারে কিছু লেখা আছে...অমনি আর্টের ঐ বিষয় টা ঘাঁটতে ইচ্ছা করে। চোখে পড়লো দর্শন, ওটা না দেখলেই নয়। ফিজিক্সের এই ঘটনার ব্যাখ্যা কি? ওহ হো, ডকিন্স কি বলছেন? হুম, তুর্গেনিভ টা একবার চেখে দেখতে হয়। বাহ, কবিতা টা মন ছুঁয়ে গেল, এনিওয়ে, ট্রান্স মিউজিকের ডেফিনিশনটা কি? ও, রোমেল পেপার্স টা ভালমত পড়া দরকার। লোকাল এডমিনিস্ট্রেশন কী? এডামস কি বলেন? মার্ক্স?...............ইত্যাদি, ইত্যাদি।

      এই হচ্ছে অবস্থা।
      তবে মনে হয়, রেগুলারলি ইররেগুলার হওয়া যেতে পারে। আর একটু ডিসিপ্লিন মেইন্টেইন করে পড়া দরকার। নেট এসে ডিস্ট্র্যাকশন ও বেড়ে গেছে।


      মুছে যাক গ্লানি/ঘুচে যাক জরা
      অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা

      জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : আরিফ (১৯৯৭-২০০৩)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।