আমার নাড়ি অনেক পাতলা। সব কথা না বলে থাকতে পারিনা। সি.সি.বি পড়ি আর ভাবি….আরে, আমারতো অনেক না বলা কাহিনী আছে। যা কাউকে না বলে, এতদিন কিভাবে থাকলাম? এখনতো ক্লাশমেটদের কে ঠিকমত কাছে পাওয়া যায়না, সবাই অনেক ব্যাস্ত…। তাই এখানেই বলি আর কি…
সর্ষের ফুল দেখা জিনিসটা মুলত দুইজনের কাছে দুইরকম। ১) মৌমাছির কাছে মধুর উৎস, আর ২) মানুষের কাছে মধু বের হয়ে যাবার উৎস(ভাইরা দয়া করে অন্য কিছু ভাববেন না !)। তো সব মানুষের কপালে এই জিনিস দেখার সৌভাগ্য(!) আল্লাহ্ দেয়না। তবে ক্যাডেট কলেজে পড়ার সুবাদে এই অনবদ্য অভিজ্ঞতা পেতে আমার বেশী দিন লাগেনি..ক্লাশ সেভেনের নভিসেস্ প্যারেডের আগেই আমি তা দেখতে পেয়েছিলাম।যাহোক………..আসল কাহিনীতে আসা যাক..
শেষ পিরিয়ডের সময় শেষ হতে তখনও বেশ বাকী,কিন্তু বাংলার আখতার স্যার ক্লাশের পড়ানো শেষ করে, আমাদের চুপ করে বসে থাকতে বললেন। কিন্তু চোরে শোনে কি ধর্মের কাহিনী? আমরা যথারীতি দুষ্টমি শুরু করলাম, এবং রেজাল্ট আখতার স্যার দেখল..আমাদের মাহমুদ ওর ডেস্ক ছেড়ে অন্য একজনের ডেস্কের সামনে দাড়িয়ে গল্প করছে। সাথে সাথে স্যারের হাতে কট। শাস্তি স্বরূপ সবার সামনে ” নি-ডাউন” । তখন নতুন ক্লাশ সেভেন তাই শাস্তিটা কেউ সহজে মেনে নিতে পারতোনা….তাই মাহমুদ খুবই মন খারাপ করে সবার সামনে গিয়ে ” নি-ডাউন” হয়ে বসে থাকলো। অন্যরা শাস্তি পেলে আমরা তখন খুবই খুশি হতাম…
সবাই হাসি হাসি মুখ করে তারদিকে তাকিয়ে বসে থাকতাম। যাহোক স্যারের মনে কি যেন খেয়াল হলো, হঠাৎ তিনি বললেন “যা ক্যাপ নিয়ে আয়..আর মাথায় দিয়ে নি-ডাউন হয়ে থাক, দেখতে সুন্দর লাগবে” এই কথা শুনে আমি বেশ খুশি হলাম, অন্যরাও। তো মাহমুদের মন আরো খারাপ হয়ে গেল, তবু আর কি করে বেচারা মাথায় সুন্দর ক্যাপ পরে নি-ডাউন হয়ে বসে থাকলো, তবে ঠোট ফুলিয়ে রাখল। আমি সামনের ডেস্কে বসে ছিলাম। ডেস্কে দুই হাতের পর মাথা দিয়ে মাহমুদের দিকে হাসিহাসি মুখে তাকিয়েছিলাম, এইদেখে মাহমুদের ঠোট আরো ফুলে উঠলো রাগে। আমি তখন ওকে নকল করে, আমার ওষ্ঠ মোটা করে, ভ্রু কুচকে মন খারাপের ভান করে ওরদিকে তাকিয়ে থাকলাম। এই জিনিস দেখে, ওর মাথা আরো বিগড়ে গেল। আমি আরো বেশী ওষ্ঠ মোটা করে ফেললাম। এইবার মনেহয় ওর ক্লাশসেভেনিয় সহ্য করার ক্ষমতা শেষ হয়ে গেল। সাথে সাথে দাড়িয়ে “স্যার আরিফ আমাকে টিজ্ করে।” স্যার ” কি ভাবে টিজ্ করছে তোকে?” মাহমুদ তখন স্যারের দিকে তাকিয়ে, ঠোটটা ঝুলিয়ে ” স্যার এইভাবে”.. এই কথা শুনে আখতার স্যার তড়িৎ গতিতে আমার কাছে এসে “কি? ও যা বলছে সত্যি?” আমি চুপ করে দাড়িয়ে পড়লাম কিছু না বলে।
স্যার মৌনতা সম্মতির লক্ষণ টের পাইয়া…তার আড়াই মণি হাত, আমার ক্লাশ সেভেনীয় নরম গালে পড়ল…….সাথে সাথে আমি চোখে হলুদ কিছু দেখে ডেস্কের উপর পড়ে গেলাম………..।
দৃশ্য ২: আমি যখন চোখ মেলে তাকালাম, দেখতে পেলাম ক্লাশ নাইন তখন একাডেমি ব্লক ছেড়ে লাঞ্চের জন্য রাস্তায় ফলিন হচ্ছে…
দৃশ্য ৩: লাঞ্চে ডাইনিং টেবিলে, ক্লাশ টুয়েলভের প্লেটে ভাত তুলে দেবার সময়, আমার টেবিল লিডার রায়হান ভাই আমার গালের দিকে তাকিয়ে ” তোমার কিছু হয়েছে?” । আমি ” না ভাই, কিছু হয়নি” । সে ” শেষ পিরিয়ড কি বাংলার আখতার স্যারের ছিল?” আমি “হ্যা” । শুনে রায়হান ভাই মুচকি হাসলেন।
পুনশ্চ: পরে জানতে পেরেছিলাম রায়হান ভাই, আখতার স্যারের ছোট ছেলে, এবং আখতার স্যারের কলেজের সবচেয়ে পপুলার টিজ্ নাম তিনি নিজে দিয়েছিলেন। প্যারেন্টস্ ডেতে রায়হান ভাইয়ের মা আসতেন, বাবা আসতেন না ছেলের কাছে।
ক্যাডেটদের যারা রোবট ভাবে তারা কি জানে ক্যাডেটদের সেন্স অব হিউমার কতো উচ্চমানের?
=))
আরিফ ভাই, ঈদ মোবারক।
বাসি ঈদ মোবারক, তৌফিক। তুমি কি MUN এ পড়াশুনা করো। আমাদের আমিন(হিমেল) কে চিনো?
কি সাঙ্ঘাতিক!!নিজের বাপ রেও ছাড়ে নাই!!!
পাপ বাপ্রেও ছাড়েনা 😛
আমাদের কলেজের প্রিন্সিপাল ছিলেন মোফাজ্জল হোসেন।তার ছেলে মিফতাউল ভাই আমাদের হাউসে ছিলেন।প্রিন্সিপাল প্রতিদিন লাইটস অফের সময় গাড়ি নিয়ে রাউন্ড দিতেন।শুধু রাতের সেই সময় না,যেকোন সময় হাউসের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় ভাই তার ফ্রেন্ডদের সাথে সমস্বরে চিৎকার করতেন 'ঘুটলী, ঘুটলী'
বলে। :goragori:
=)) =)) =)) =))
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
কি ভাবব আরিফ ভাই? :-/
খিকজ 😀
ব্যাটা তুই এতো পাজি কেন? মানুষের আবার মধু বাহির হয়নাকি? তবে স্যারের ঐ স্কেলে একটা চড় খেলে বুঝতি মধু কোন দিক দিয়া বাহির হতো.... 😮
আখতার স্যারের সাথে আমার বেশ ভালো কিছু স্মৃতি আছে। কিন্তু আমি এখনও বুঝে পাই না বয়স/ ক্লাস নির্বিশেষে কারণে, তুচ্ছাতিতুচ্ছ কারণে এবং অকারণে তার এরকম শর্ষে ফুল দেখানো চড় চাপাটির পিছনের নিষ্ঠুরতার লজিক কি। অনেক ক্যাডেটকে দেখেছি যারা শুধু এই কারণেই স্যারকে মন থেকে শ্রদ্ধা করতে পারেনি কলেজের শেষ দিন অবধি। অথচ চমৎকার বাংলা পড়ানো (যখন তিনি চাইতেন আর কি) থেকে শুরু করে নাটক বা কালচারাল কম্পিটিশন মঞ্চস্থ করা অথবা খেলার মাঠে রেফারির দায়িত্ব পালনে স্যারের যে ভূমিকা তাতে ক্যাডেটদের সামনে এক উজ্জ্বল উদাহরণসহ শ্রদ্ধার আসনটাই অধিকার করার কথা ।
Life is Mad.
সহমত সায়েদ ভাই। তবে তার পানিশমেন্ট হত আইডিয়া নির্ভর। আমার স্যারকে অনেক ইন্টারেস্টিং মনে হত।
বাংলা বানান মানেই স্যারের চমতকার উপস্থাপনা।
আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই
সায়েদ ভাই, আসলে ঐ ঘটনার পর স্যারের উপর রাগ করার জন্য যেই সময়টুকু দরকার, চড় খাইয়া আমি সেই সময় টুকু সেন্স ছিলনা। 😛
আর যার ছেলে রায়হান ভাইয়ের মত ভালো লোক,তার বাবার উপর কি আর রাগ যায়?
বাপ কা বেটা, খুব মজা পাইলাম।
সায়েদের সাথে আমিও একমত...।
কলেজ জীবনের শ্রেষ্ঠ প্যাঁদানী আমি স্যারের কাছ থেকে খেয়েছিলাম...। :((
আপনের মত ভদ্র মানুষরে পিটাইছিল?? 😮
আমি ভদ্র কিনা জানিনা...।
তবে আমি পিটানি খাইছি...।
হয় না নাকি দোস্ত ??? 😀 😀 😀 😀
দোস্ত হয় হয়.... 😀 :gulli:
আমিও একবার মৌমাছি সমেত সর্ষে ফুল দেখেছিলাম, এবং ইনিও বাংলার শিক্ষক, আবু মুহম্মদ রইস। 😕
www.tareqnurulhasan.com
ভাল লাগল আপনার অভিজ্ঞতা শুনে।