পাকিস্তান – ভারত ভাবনা

আমাদের এলাকায় একটা প্রবাদ আছে – “যে পাতে খায়, সেই পাতে হাঁে *” পাকিস্তান নামের দেশটা দেখলে আমার কেন জানি এই প্রবাদ টার কথা মনে পড়ে। কেন মনে পড়ে? সে প্রসঙ্গে পরে আসি। তার আগে একটা confession খুব জরুরী।

সেটা ১৯৯৩ -৯৯ সময়ের ঘটনা। আমি পাকিস্তান ক্রিকেট দলের বিরাট ভক্ত। সাঈদ আনোয়ার এর লেগ এ ফ্লিক করা দেখলে মাথা নষ্ট হয়ে যেতো। আমার এখনো মনে আছে ১৯৪ রান করে আউট হবার পর আমার সেকি কষ্ট! সেকি কষ্ট! ওয়াসিম আকরাম আর ইউনুস এর দূর্দান্ত রিভার্স সুইং আমি মিনিমাম ৩৩৩ বার উউউ করে উঠেছি। সেই ক্যাডেট কলেজে হোস্টেলে থেকে আমরা খবর পেলাম শহীদ খান আফ্রিদী নামের এক ছেলে দ্রুততম সেঞ্চুরীর রেকর্ড ভেঙ্গে ফেলেছে। আমরা সাপোর্টারদের সেকি উত্তেজনা।

এরপর সময় বদলেছে। পাকিস্তান সম্পর্কে দৃষ্টভঙ্গি বদলেছে। কারন ততদিনে আমি khalar satha ragniti (খেলার সাথে রাজনীতি) মেশাতে শুরু করেছি। আমি বুঝে গেছি – রাজনীতি এবং খেলা কখনোই mutually exclusive না। যদি তাই হবে তবে বার্সা – রিয়াল el classico হয় না।খুব গোপনে জেনারেল ফ্রাঙ্কো মুচকি হাসেন আর কাতালান রক্ত জ্বলে ওঠে।ভারত-পাকিস্তান এর মওকা হয়না।অলক্ষ্যে কাজ করে যায় কারগিল-কাশ্মীর। অন্যরকম প্রনোদ না পায়না ইংল্যান্ড-আর্জেন্টিনার খেলা। পাড়ে না এড়াতে ফকল্যান্ড কে। খেলা আর রাজনীতি খুব এক।

এবার চিন্তা করুন একটা দেশের কথা। পুরা পৃথিবীতে দেশটা ব্যর্থ রাষ্ট্রের সমার্থক হিসেবে পরিচিত। বিশেষজ্ঞরা আতঁকে উঠেন – দেশটা কি শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের মত ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিনত হবে? রাষ্ট্র প্রধানরা বলেন – we will not let our country down like Pakistan. একটা বাচ্চা মেয়ে স্কুলে যেতে চায়, তাই তাকে ফট করে গুলি করে দেয়া হল। কি এতো বড় সাহস?? স্কুল?? সারা পৃথিবীতে বিয়ে বাড়ীতে যে পরিমান পটকা ফোটে তার চেয়ে বেশী বোম ফোটে। আমার ধারনা লোকজন বোর হয়ে গেলে ভাবে – চল একটা বোম ফুটাই, মানুষ মারি। একটা দেশের ক্রিকেট টিম মানেই –ম্যাচ ফিক্সিং এর অপর নাম। টাকা টুকা সহ বমাল গ্রেপ্তার – সারা দুনিয়া দেখলো এর এদের দেশকে বেচে দিচ্ছে। ব্যাপক ক্রিয়েটিভ – কখন মাথা চুলকাবে, কখন ঘষবে, কোন পাশে ঘষবে সেই সব নিয়েও এরা বাজি ধরে এবং ঘষা ঘষি করে দেশকে ধর্ষন করে ছেড়ে দেয়। আপনি চিন্তা করেন একটা দেশ – ক্রিকেট খেলে, হোম সিরিজ হয় আর এক দেশে – কোন লজ্জা আছে? তোর দেশের তথাকথিত ক্রিকেট তারকা তোর চিরশত্রুর দেশের কমেডি নাইটে গিয়ে হাসির পাত্র হয়ে দাঁত কেলাতে কেলাতে চলে আসে। তোর নিজস্ব কোন সংস্কৃতি নাই। পাশের দেশের সিনেমায় গান গাওয়াই তোর একমাত্র সংস্কৃতি!! IPL খেলতে না পারা দুঃখে এক একজন কানতে কানতে শেষ।

হুমায়ুন আযাদ স্যার বলছিলেন – “ইতর প্রানী একটু বেশি-ই প্রসব করে”। ভারতে জনসংখ্যার সাথে প্লীজ এর মিল খুঁজবেন না। বাজার অর্থনীতির যুগে যেহেতু সবাই consumer , সুতরাং ১২০ কোটি consumerই এখন সবচেয়ে বড় শক্তি।তাই পাতলা ফিনফিনে নাইটি, ঠোঁটে কড়া করে মাখা লিপষ্টিক, ৬ইঞ্চি পুরু মেকাপ নিয়ে ঘুম থেকে ওঠা দেখানোতে কোন সমস্যা নেই। সেটা বাস্তবতার কাছাকাছি না হোক, পাবলিক “খায়”। আপনি যেকোন সিনেমা, টিভি সিরিয়াল দেখবেন?? আপনি কিছু কিছু জিনিষ ভাবতে বাধ্য – ১। পৃথিবীর সব দেবর/ভাবী, বন্ধু/বন্ধুর বউ, যেকোন অল্প/স্বল্প পরিচিত লোকের/মেয়ের সাথে আপনার স্ত্রী/আপনি পরকীয়াতে লিপ্ত। ২। সব শাশুরী তার বউকে, বউ তার শাশুরী কে, ভাই তার ভাই কে, ছোট বোন বড় বোন কে, বড় বোন ছোট বোন কে বিভিন্ন উপায়ে মেরে ফেলতে চায়/মেরে ফেলে। ৩। যেকোন মুহুর্তে আপনার বাবা/মা চেঞ্জ হয়ে অন্য কেউ হয়ে যেতে পারে। বলিউড নিয়ে বলার কিছু নাই। সবাই জানে।এ দেশের রাজধানী “ধর্ষনের রাজধানী” নামে পরিচিত। আমার ধারনা এদেশের লোকজনও বোর হয়ে গেলে ভাবে – চল রেপ করি।মোদী সাহেব “সাচ্চা দেশ” করতে চান, কিন্তু তার রাজধানী পূঁতিগন্ধময়। গনতন্ত্রের সুতিকাগার অথচ একটা ডকুমেন্টারি বন্ধ করে দেয়া হল সত্য কথা দেখানোর অপরাধে, চরিত্র উন্মোচনের কারনে। আশেপাশের সমস্ত দেশ কে নিজের অংগরাজ্য ভাবার প্রবনতা আছে- অথচ নিজের দেশের একটা অংশ এখনো স্বীকার ই করলনা। এসব বলে আসলে লাভ নাই। বেয়াদপি এদের কাছে শিল্প বলে গন্য হয়, হাতে মার খেয়ে বেয়াদপের মত চোখ মুখ করে আর একটা হাত বাড়িয়ে দেয়া আমরা শিখাইনাই। কিছু কিছু অর্বাচীন এখনো স্বপ্ন দেখে- বলে দুই বাংলা এক করে দাও। আসো – দেবানি।

দুঃখের কথা হলো, শুধু মাত্র পাকিস্তান নিয়ে কথা বললে নিশ্চিত আমাকে ভারতীয় দালাল বলা হতো, আর শুধুমাত্র ভারত নিয়ে বললে আমাকে নির্দিধায় ছাগু, পাকিস্তানি দালাল বলা হতো। বাংলাদেশি দালাল দরকার। খুব দরকার। সুখের বিষয় হচ্ছে আশে পাশে প্রচুর বাংলাদেশি দালাল দেখতে পাচ্ছি। এরা সামনে সামনে সাকিব/তামিম এর গুষ্টি উদ্ধার করে, লুকিয়ে লুকিয়ে ক্রিকইনফোর স্কোর রিফ্রেশ করে। কারো কারো সামনে বাংলাদেশ ক্রিকেট নিয়ে বাজে কথা বললে ছোট বড় মানে না। এরকম বেয়াদপ দরকার। দেশটাতে সুসংবাদ এর বড্ড আকাল। ক্রিকেট এ জিতলে হরতাল তুলে নেয়া হয়। একদিন পেট্রোল বোমা কম ছোঁড়া হয়। জেতা টা দরকার। খুব দরকার। এবং বাংলাদেশ জিতবে। কে কি বলল, বানালো এই নিয়ে ভাবার সময় নাই।

“বান্দা চলে বাজার, কুত্তা বুখে হাজার” – সুতরাং তাদের কাজ তারা করছে – আমরা বাজারে যাচ্ছি – স্বপ্নের ফেরিওয়ালা হয়ে।

চলো বাংলাদেশ । ।

১,৭৬৮ বার দেখা হয়েছে

৮ টি মন্তব্য : “পাকিস্তান – ভারত ভাবনা”

  1. জিহাদ (৯৯-০৫)

    আমার ছোটবেলাটা আপনার মতই ছিলো। পাকিস্তানের ব্যাপক ফ্যান ছিলাম। বাসার সকল চিপায় চাপায় আফ্রিদি, সাঈদ আনোয়ার, মইন খানদের স্টিকারে ভরা ছিলো। "বুঝ" হবার পর থেকে খেলার সাথে রাজনীতি শেখানোর শুরু। যদি না মেশতাম, আজকে লোকজন আমাকে ছাগু বলতো। ভাবতেই আতঙ্কে হাত পা... 😀


    সাতেও নাই, পাঁচেও নাই

    জবাব দিন
  2. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    😀
    ভারত-পাকিস্থানের বিষয়ে আমি রেসিষ্ট।
    ওদের যেকোন পরাজয়ে বেদম আনন্দ পাই।


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
  3. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    বাংলাদেশি দালাল খুব দরকার।

    লেখা ভাল লাগলো আরিফ ভাই।


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : আহসান আকাশ (৯৬-০২)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।