কলেজের ডিজিটাল ভার্সন পার্ট ওয়ান

ক্যাডেট কলেজের যে যুগের সাথে আমাদের অনেক সিনিয়র ভাইদের পরিচয় নেই সেই দিনগুলোর কিছু শর্ট ভিউ দিতে চাই । আমরা তখন এইচ. এস. সি ইক্সামের ঠিক আগের পুলসিরাত “টেস্ট” দিলাম । শেষ বারের মতো ইক্সামের প্রিপারেশন নিতে যখন সবাই হিমশিম খাচ্ছে তখন আমাদের কজনের মাথায় শয়তানী বীজ কিলবিলইলো । ভাই খবর দিল আইজ রাইতে হইব । এখানে একটু বলে রাখা ভালো এই “ভাই” কিন্তু সিনিয়র ভাই না আমাদের ব্যাচের “আন্ডার ওয়ার্ল্ড” (কলেজে যা বিধানভুক্ত কাজ না) ভাই । তার সুখ্যাতি ক্লাস সেভেন থেকেই । তার নানা রকম মাথা নষ্ট করা গল্প করলে এক ইতিহাস রচনা হবে । তো সেদিকে বরং না যাই, ভাইয়ের কিন্তু আবার নীতি সেরকম টাইট কোন কাজ একবার ভাইয়ের সংসদে পাশ হলে চেঞ্জ নাই । প্লান করা হল নতুন প্রিন্সিপাল যে মুরগীর ফার্ম দিসে সেখানে হামলা হবে । “মুরগী নাইট” , পোলাপানের আনন্দের আর সীমা নাই । মসলা আনার জন্য উদ্ভিদ বিজ্ঞানের ল্যাব এ যে বেয়ারা ভাই ছিলেন তাকে ম্যানেজ করা হল । “রাঁধুনি” মসলা আনার টাকা গেল পঞ্চাশ । আমি ভাইরে কই রেট টা বেশি গেল না ? ভাই কয় তুই তো গাধা বাকি তো ফিউচার ডিপোজিট !!
অনেক আয়োজনের ব্যাপার আছে কিন্তু খুব একটা ঝামেলা করা যাবে না বেশি পোলাপান ডেকে । আমার ভাগে পড়লো ভাত সরানোর প্লান আর পাত্র ঠিক করা প্লাস একরামকে নিয়ে কলেজ মসজিদের পেছন থেকে পেঁয়াজ আনা । ভাই নিজেই ভারী কাজ নিল ইলেকট্রিক হিটার চুরি করার, যা ফিজিক্স ল্যাব থেকে আনা হবে । “মিল্ক ব্রেক” এর জন্য সবাই বের হচ্ছে আমরা দু জন আগেই দেখছিলাম যে আলিম পাগলা ( স্যার ) কই, এক জুনিয়রকে বললাম স্যার কে খাতা সাইন করানোর ভান করে মাঝে ঘিরে রেখে দিতে । তখন ঘটলো ভাই এর কেরামতি, ভাই কোন সময় যে গেল আর হিটার নিয়া বের হল কিছু বুঝে উঠার আগেই কইল চল ব্যাটা হাউসে ।
রাতের ডিনারের টাইম আমাদের কইলজা সুকানি অবস্থা বাটি লয়া বের হতে হবে, যদিও সব সেট করা কারণ ডিউটি মাস্টার ঝামেলা টাইপ না । প্লান মতো আমাদের রশিদ আর মেহেদি দু বাটি নিয়ে পার হয়ে গেল । “কেল্লা ফতে” । প্রেপ শেষের ঠিক দশ মিনিট আগে বের হলাম আমি আর একরাম গিয়েই সোটা সট উঠালাম পেঁয়াজ, হাত গন্ধে ভরে গেল লাগালাম দৌড় ।
রাতে ভাইয়ের সিগন্যাল পেলাম । মুরগী আনতে যেতে হবে , ডিজিটাল প্লান । গার্ড চেঞ্জে যে টাইম নেয় তার মধ্যে কাজ সারতে হবে । হাতে কম সময়, কলেজে তখন আমাদের ক্লাসের প্রায় সাতাশ জন নিয়মিত মোবাইল ইউসার । দুটা মোবাইল আনা হল, যে গ্রুপ মুরগী আনতে যাবে তাদের কাছে থাকবে একটা এবং আর গার্ড পার্টি দেখে সিগন্যাল ক্লিয়ার করতে আরেক গ্রুপ ইউস করবে অন্যটা । মুরগীর আনার কাজ একরাম করবে , ফার্মের দেয়া বিশাল তারকাটা কাটতে প্লাইয়ারস ইউস করা হবে, সাথে ভাই যাবে । আমরা বাকিরা অপেক্ষা করছি নিরাপদ জায়গায় গার্ড বাবাকে সামাল দিতে হবে, দিন ভাল ঝামেলা ছাড়া কাজ শেষ হল । মুরগী নিয়ে সেরকম বাংলা দৌড় । খালিদ হাউসে রান্না করা হবে বলে ঠিক করা ছিল । সবাই সেখানে উপস্থিত , একরাম দেখলাম হাত ধুতে সাবান নিয়ে দৌড় লাগাইসে । ঘটনা এরকম “তার” কেটে মুরগী হাতের না পেয়ে ঝাঁপাই পইরা হাতে বিষ্ঠা লাগসে । যাউক গা মুরগী তো ধরসে !!
এখানেই শেষ না সাথে যোগ হল পেপে আর অনেক উপস্থিত বাবুর্চি, সবার চিন্তা সর্ষের তেলে রান্না হবে তো ?? পেট খারাপের ভয় না করে সবাই খেলাম ভাত আর মুরগী, হায় ! কি অসীম আনন্দে ওই সামান্য কয়টা ভাত কাড়াকাড়ি করে খাচ্ছে সবাই । পরে মনে হচ্ছিল এই অ্যাডভেঞ্চার শুধু কলেজই হতে পারে, যারা এক সুতায় বাধা পরম বন্ধু । সেই ভালবাসার কাছে বাকি সবই যে তুচ্ছ ।

১,৫৪৭ বার দেখা হয়েছে

১৬ টি মন্তব্য : “কলেজের ডিজিটাল ভার্সন পার্ট ওয়ান”

  1. মুসতাকীম (২০০২-২০০৮)

    ভালো ছিল 😀 😀 😀
    বেচারা প্রিন্সিপালের কথা ভাইবা হাসি আসতেছে =)) =)) =))


    "আমি খুব ভাল করে জানি, ব্যক্তিগত জীবনে আমার অহংকার করার মত কিছু নেই। কিন্তু আমার ভাষাটা নিয়ে তো আমি অহংকার করতেই পারি।"

    জবাব দিন
  2. সামি হক (৯০-৯৬)

    ভাই কি তারিক হাউসের নাকি? ট্র্যাডিশন অনু্যায়ী কেমনে কেমনে জানি ভাইরা সব তারিক হাউসেই থাকে।

    নিজের কলেজের লেখা দেখলে ভালো লাগে খুব, স্মৃতিগুলোর সাথে আমিও ঘুরে বেড়াই।

    জবাব দিন
  3. আসাদুজ্জামান (১৯৯৬-২০০২)
    কলেজে তখন আমাদের ক্লাসের প্রায় সাতাশ জন নিয়মিত মোবাইল ইউসার ।

    কি সাঙ্ঘাতিক!!!!!

    Post-chicken-party কাহিনী কি? মুরগী কমে যাওয়া, ফার্মের তার কাটা, এইগুলা নিয়া ঝামেলা হয় নাই?

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : সালেকীন (২০০২-২০০৮)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।