কথা-রূপকথা

সবাই রাজা হতে চায়, রাজপুত্তুর হতে চায়,
আমিও চেয়েছিলাম।
কিন্তু শেষমেষ কি হল?
হয়ে গেলাম সেনাপতি।
লোহার বর্ম পরে, তরবারি উচিয়ে আমি ঘুরে বেড়াই,
ছায়ার মত লেগে থাকি রাজার সাথে, রানির সাথে,
রাজকন্যার সাথে।
আমি যে সেনাপতি।

আমার চারপাশে কত রাজা-রাজড়ার ভিড়,
ঘোড়া ছুটিয়ে হাতি নাচিয়ে ওরা আসে।
কারও চাই রাজ্য,
কারও বা – রাজকন্যে
কেউ আবার দুটোর আশায় বুক বাঁধে।
রূপকথায় রাক্ষস মেরে কত নাম না জানা মানুষ-
রাজ্য পায়, রাজকন্যা পায়।
কিন্তু বাস্তবে …………
রাজকন্যে শুধু রাজার হাতই ধরে।
 

কিন্তু আমার এতশত ভেবে কাজ কি?
আমার কাজ পাহারা দেওয়া , আমি তাই দেব।
খোলা তলোয়ার হাতে পাহারা দেব,
মশাদের গান শুনতে শুনতে পাহারা দেব,
নিজের ক্লান্তি ভুলে পাহারা দেব,
আঁধার রাতের জ্যোৎস্না দেখতে দেখতে পাহারা দেব।
অথবা কাওকে ভালবেসেই পাহারা দেব।
ভয় হয়-
যদি পাছে কিছু খোয়া যায়।
 

তাই আমাকে সজাগ থাকতে হয়,
দেখতে হয় সবকিছু।
আমিও দেখি- চোখ বুলোই চারদিকে,
হঠাৎ হঠাৎ দৃষ্টি থমকে যায়,
যখন দেখি-
রাজকন্যা বসে থাকে জানালার পাশে,
কখনও উদাস, কখনও বিষন্ন অথবা চিন্তিত।
কি এত ভাবে সে? কিসের এত ভাবনা তার?
কিসের আক্ষেপ? কিসের অভাব?
 

হয়ত অপেক্ষা করে কোন রাজকুমারের-
যে পংক্ষীরাজ নিয়ে আসবে,
আলতো করে কপালে হাত রেখে-
সোনার কাঠি-রূপোর কাঠি বদলে দিয়ে ঘুম ভাঙ্গাবে।
দরজায় কান পেতে বসে থাকে রাজকন্যা-
এই বুঝি ঘোড়ায় চেপে রাজপুত্তুর এল।
দুঃস্বপ্ন দেখে লাফিয়ে ওঠে-
রাজকুমার এল বুঝি?
রাজকুমার আসেনা; আমিই এগিয়ে আসি তরবারি হাতে।
 

আমায় দেখে রাজকন্যা অবাক হয়,
ঘোর ভাংলে কিঞ্চিত হাসে।
এ হাসি কি বিদ্রুপের? না’কি মায়ার?
আমার জন্য তার মায়া হয় বুঝি?
না’কি ভাবে- কেন আমি প্রতিটা রাত জাগি তার জন্য?
কেনই বা তাকে পাহারা দেই?
মনে হয় বলি, “যদি তোমায় কেও চুরি করে নিয়ে যায়?”
বলতে পারি না।
আমি যে তার সেনাপতি; রাজপুত্র নই।
রাজকন্যে আবার অপেক্ষায় বসে-
রাজকুমার কখন আসে? কখন আসে?
 

আমি আবার পাহারায় দাঁড়াই, দাঁড়িয়েই থাকি……
এভাবেই দিন যায়, বছর যায়।
দুই/এক বছর নয়……………  দশটা বছর।
কত রাজা আসে, রাজপুত্র যায়
কিন্তু রাজকন্যা ঠায় তার জানালার পাশেই বসে থাকে।
কবে আসবে তার রাজপুত্তুর?
 
আমি চেয়ে থাকি,
‘ইশ একবারের জন্য যদি রাজা হতাম! রাজার কুমার হতাম!’
পরক্ষনেই ভাবি, ‘তাহলে কি এভাবে সারাটাদিন পাহারা দিতে পারতাম তাকে?
পুরোটা সময় জুড়ে রাখতে পারতাম- চোখের সামনে?
তার কাছে থাকতে পারতাম……… সারাটাক্ষন?’
“না-ই বা হলাম রাজপুত্তুর
সে তো আমারই রাজকন্যে।
এমনি করেই রাত জাগব, এমনি করেই বাঁচব,
ভালবেসে আমি না হয় তার সেনাপতিই থাকব।“
 

২,৪৩৯ বার দেখা হয়েছে

১১ টি মন্তব্য : “কথা-রূপকথা”

মওন্তব্য করুন : ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।