বাঘের দুধ

ক্লাস ইলেভেন, এ ফর্ম । একাডেমিক ব্লকের নিচের তলা । চতুর্থ পিরিয়ডের ঘন্টা পড়লো । ক্লাসে হাজারী স্যার কেমিস্ট্রি ফার্স্ট পার্ট খাতা নিয়ে আসলেন । খাতা দেয়া শুরু হলো ।

আশরাফ খাতা পেয়েই মুখ কালো করে বসে রইলো । সে ঘামছে আর বারবার কাউন্ট করছে । দুই তিন বার কাউন্ট করেই তার মুখ হাসি হাসি । এবার সে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে এদিক সেদিক তাকাচ্ছে ।

তার দিকে চোখ পড়তেই, দোস্ত কত পাইছিস ?

আমারটা বললাম । তুই  ?

ভালো না দোস্ত ।

এভাবে সে তার আশে পাশের সবাইকে জিজ্ঞেস করতে লাগলো । একসময় জানতে পারলাম, তার খারাপ নাম্বারটি হচ্ছে ৬৭ । তবে যোগে ভুল হয়েছে , আরো বাড়বে ।

সবাইকে খাতা দেয়া শেষ হলে স্যার জিজ্ঞেস করলেন কারো কোন সমস্যা আছে কি না ।

আশরাফ লাফ দিয়ে দাঁড়িয়ে বললো, যোগে এ ভুল আছে স্যার ।

ওকে, খাতা নিয়ে আসো ।

তুমি তো অনেক পাইছো !!! কাউন্ট করে কত আসছে ?

৭২ ।

স্যার আবার খাতা দেখা শুরু করলেন । উনি বলতে লাগলেন, এখানে তোমার এই ভুলে ২ কম দিছি, এটায় ২.৫, এখানে ১ আর ………..। এরপরও তুমি ৭৫ এ  ৭২ পাও কিভাবে !!!

স্যার আপনি একটু যোগ করে দেখেন ।

যোগ করা শুরু হলো । আশরাফ হাসি হাসি মুখে তাকিয়ে আছে ।

৭২ ই  হয়েছে ।

স্যার আবার কাউন্ট শুরু করলেন । এবার আশরাফ ঘামতে শুরু করলো ।

আমরাও বুঝতে পারছি না কি হচ্ছে । হটাৎ স্যারের মুখ কালো হয়ে গেলো ।

দোস্ত, তুই বাহাত্তর পাইছিস!!! কনগ্রেটস ।

ও কিচ্ছু বলে না । আবারো মুখ কালো করে বসে আছে ।

মিল্ক ব্রেকের আগে  স্যার সবার চূড়ান্ত নাম্বার জানিয়ে দিলেন । খেয়াল করলাম আশরাফ পেয়েছে ৫৩ ।

আমরা  অবাক !!!

স্যার চলে গেলে জানতে পারলাম, সে ৭ টি প্রশ্নের আনসার করেছিলো । করার কথা ৫ টি । এজন্য তার শেষ দুটি উত্তর কেটে দেয়া হয়েছে ।

পাক্ষিক পরীক্ষায় কত পাইছিলি ?

১৭ ।

এক্সট্রা আনসার করছিলি কেন ?

ক্যামিস্ট্রি তো বুঝিই না । কি করমু ? এটাতে ৬৩ হইলেই অভারওল এ+ হইয়া যাইত ।

তুই তো ৬৭ পাইছিলি । আবার স্যারের কাছে নিয়ে গেলি কেন ?

এরপর আশরাফ চুপ করে রইলো ।

কিরে, কথা কস না কেন!!

স্যার ধরতে না পারলে তো হায়েস্ট পাইয়া যাইতাম ।

লোভ সম্বরন করা কঠিন । আরো কঠিন অনৈতিক সুবিধা একবার নিয়ে ফেললে পরেরবার সেটা থেকে বিরত থাকা । ধীরে ধীরে আদর্শ কিংবা নীতি শুধু গল্প-উপন্যাসেই সীমাবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে । কিতাবি এই আদর্শের বাস্তব ক্ষেত্রে ভয়াবহ দৈন্যটা ও বন্ধ্যাত্ব মোচন বাঘের দুধ পাওয়ার  মত । সুন্দরবন ছাড়া সম্ভবত আর কোথাও পাওয়া যায় না ।

বিঃ দ্রঃ হাজারী স্যার একটু বেশীই ভালো মানুষ ছিলেন । তিনি কেন জানি কাউকে ব্যাপারটি নিয়ে কমপ্লেইন করেন নি । 

২,৫৫৪ বার দেখা হয়েছে

১৮ টি মন্তব্য : “বাঘের দুধ”

  1. সাইদুল (৭৬-৮২)

    স্যার ধরতে না পারলে তো হায়েস্ট পাইয়া যাইতাম ।

    আমিন, তোমাকে অনেক ধন্যবাদ। তুমি চমতকার একটি বিষয়ের উপর নজর দিয়েছো, যেদিকে এখন আমারা বলতে গেলে তাকাইইনা। চুরিবিদ্যা বড় বিদ্যা জাতীয় কথাবার্তার ভুল ব্যাখ্যা আমাদের মাথা খারাপ করে দিয়েছে


    যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান

    জবাব দিন
  2. আমিন(০০-০৬)

    সাইদুল ভাই, ব্যাপারটি নিয়ে লিখার সময় আমার মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি কাজ করেছে । আমরা সাধারণত নিজেদের ভুলত্রুটি দেখতে অভ্যস্থ নই 🙂


    Coming together is a beginning; keeping together is progress; working together is success..

    জবাব দিন
  3. আমিন(০০-০৬)

    সাইদুল ভাই, ব্যাপারটি নিয়ে লিখার সময় আমার মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি কাজ করেছে । আমরা সাধারণত নিজেদের ভুলত্রুটি দেখতে অভ্যস্থ নই 🙂


    Coming together is a beginning; keeping together is progress; working together is success..

    জবাব দিন
  4. পারভেজ (৭৮-৮৪)

    অনৈতিক সুবিধা নেয়াটা এতই আট পৌড়ে একটা ব্যাপারে দাঁড়িয়ে গেছে যে যারা তা নিতে পেরেও নেয় না তাঁদের কে বোকার দলে ফেলা হয়।
    আর যাঁদের তা নেয়ার সুযোগ নাই, তাঁদের ধরা হয় হতভাগা রূপে।
    নৈতিকতা যাদুঘরে চলে গিয়েছে অনেক আগেই.........


    Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : আমিন(০০-০৬)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।