অতৃপ্তি

একলোক নাকি ভুট্টা তোলায় এক্সপার্ট !!! 
তার মনিব তাকে ডেকে বলল, আমার জন্য এই ক্ষেতের সবচেয়ে ভালো ভুট্টা তুলে নিয়ে আসো । কিন্তু তুমি ভুট্টা তোলার সময় কখনো পিছনে তাকাতে পারবে না । 

লোকটি মুচকি হেসে ভুট্টা ক্ষেতে প্রবেশ করলো । প্রথমেই সে চমৎকার একটি ভুট্টা পেলো, কিন্তু তুললো না । কারন সামনে আরো ভালো কিছু দেখতে পেলো । এভাবে এগোতে গিয়ে একসময় ক্ষেতের আইল এসে পড়ল । তখন তার মনে হতে লাগলো ভালো ভুট্টা গুলো পিছনে ফেলে এসেছি।

মাস তিনেক হয়ে গেলো আমরা মালিতে । মাঝে মাঝে আমাদের ক্যাম্পের পাশে বিশাল উটের পাল দেখা যায় । তখনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম এই ঈদে ঊটের মাংশ খাবো । পেটের চেয়ে চোখের তৃপ্তিকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলাম ।

কয়েকদিন আগে আমাদের সেকেন্ড ইন কমান্ড উটের হাট দেখে উৎফুল্ল হয়ে ফিরে এসেছেন । আড়াই লাখ সেফায় ঊট পাওয়া যায় । এটাকে খাওয়ানোর ঝামেলার কথা চিন্তা করে, আগে সুযোগ পেয়েও ঊট কেনা হয় নি ।

রবিবার সকাল ৯ টায় বের হলাম । যাওয়ার আগে খুব হই চই করে ঊট কিনতে যাচ্ছি জানান দিয়ে বের হয়েছি । মনটা একটু খারাপ ছিল, কেননা শুধু এই দিনটাতেই আয়েশ করে ঘুমানো যায় ।

হাটে গিয়ে দেখি কোনো উট নাই। তখন বাজার ঘুরে গরু আর ছাগলের দাম দেখে নিলাম । চমৎকার একটা গরু পেলাম অনেক কম দামে। কিন্তু ঊটের আশায় সেটাকে পাত্তা না দিয়ে এড়িয়ে গেলাম । হটাৎ দূরে বাধা একটা ঊট চোখে পড়লো।

ওদিকে যেতেই এক লোক এগিয়ে আসলো। তার সাথে কথা বলে বোঝা গেলো আজকে আর উট আসবে না । দাম জিজ্ঞেস করায় সে মালিককে ডেকে নিয়ে আসলো । মালিক দাম চাইলো ৪ লক্ষ ২০ হাজার সেফা । ঊটটা দেখে খুব একটা পছন্দ হলো না । দাত দুটো, কিন্তু গলার বিশাল একটা অংশে কাটা দাগ । আমারা ২ লক্ষ সেফা দাম করে খোজ নিতে লাগলাম, আর কোথাও ঊট পাওয়া যাবে কি না ।

এরপর, সেখানকার এক দালাল আমাদের ০৮ কিলো দূরে এক কসাইখানায় নিয়ে গেলো । সেখানে তিনটা উট আছে। এগুলার অবস্থা আরো খারাপ । দাত দেখলাম, ১৪/১৮ টার মতো !!! দাম চাইলো ৩ লাখ ৫০ হাজার । যখন বুঝলাম চাপাচাপি করলে এটা ৩ লাখে দিবে তখন মনে হলো আগের ঊটটাই ভালো ছিলো ।

দামের একটা আইডিয়া পেয়েছি ভেবে আবার আগের জায়গায় ফিরে গেলাম । তখন সেই মালিক ঊটের দাম চাইলো ৪ লাখ ৫০ হাজার সেফা । যখন বলা হলো একটু আগেই ত এর চেয়ে অনেক কম চাচ্ছিলেন ? তখন ৪ লাখ ২০ হাজার তার লাস্ট প্রাইস জানিয়ে দিলো ।

নরমাল দামের দ্বিগুণ চাওয়ায় ঊট কিনার সিদ্ধান্ত বাদ দিয়ে আবার গরুর হাটে গেলাম । গিয়ে দেখি ওই গরু বিক্রি হয়ে গিয়েছে । খুব আফসোস লাগলো কেনো গরুটা কিনলাম না।

যাই হোক, আবার তাড়াহুড়া করে কসাইখানায় গেলাম । পছন্দসই কিছু পেলাম না । ভালো গরুর তথ্য দিয়ে এক লোক আমাদের প্রায় ১০ কিলো দূরে তার গ্রামে নিয়ে গেলো । অবশেষে তার নিজের গরু আমাদের কাছে বিক্রি করায় কোন মতে পড়ন্ত বিকালে ক্যাম্পে ফিরতে পেরেছি । হতাশ হলেও রোজার দিনে আমাদের কস্ট দেখে বোধ হয় ঊটের কথা আর কেউ বলে নি !!!!

বিঃ দ্রঃ ১ ডলার (ইউ এস) = ৪৭০-৪৯০ সেফা ।

১,৬৬৪ বার দেখা হয়েছে

৭ টি মন্তব্য : “অতৃপ্তি”

  1. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    আইভরি কোস্টে থাকতে মালি থেকে আসা গরুর পাল চোখে পোড়তো, উট দেখা হয়নি। আর ঈদের গরু জবাইয়ের পরে ক্যাম্পগুলোর মধ্যে মাংস বাদ দিয়ে হাড়ের ভাগাভাগি নিয়ে ভালই টানাটানি চলেছিল 😛


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : আশিক (৯১-৯৭)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।