অসুস্থতা

আমি আজকে বুঝলাম আমি অনেক আগে থেকেই অসুস্থ ।

বি এম এ তে জয়েন করার আগে টানা এক মাস হাসপাতালে ছিলাম । নভেম্বর ২০০৬ এর শেষ দিকে জ্বর আসল । পাত্তা দিলাম না । ভাবলাম,  ধুর…  এই জ্বর কত্তো হইছে । এর জন্য ওষুধ !

এইভাবে এক সপ্তাহ কাটল । তারপর দেখি আমি ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বিছানায় । শুধু মনে আছে আমি চোখ বন্ধ করলেও সব দেখতে পারতাম !! প্রতিদিন আমাকে অনেকগুলো ইঞ্জেকশন দেয়া হত । মাঝে মাঝে শিরার বদলে মাংশে ইঞ্জেকশন পুশ করতো । আমি চিৎকার করতাম । পরে বুঝছি  নতুন নার্সরা আমাকে গিনিপিগ হিসাবে ব্যবহার করছে । আমার ওজন হইছিল ১১২ পাঊন্ড !

এর মধ্যে একটা ঈদও পার হয়ে গেল । আমাকে দেখতে হায়দার, অনিক আর জুলফিকার হাসপাতালে গেছিল । সেবার আমার কেমন লাগছে  তা আমি কোন ভাবেই প্রকাশ করতে পারব না । সবাই আমাকে নিয়ে টেনশনে । তখন বি এম এর জয়েনিং লেটারটা টাটকা আব্বুর হাতে পৌছায় । সবাই বললো এবার জয়েন করিস না । আগে সুস্থ হ । আমি আশিকের(লম্বা) সাথে যোগাযোগ করলাম । জানতাম ওর বাবা আর্মির ডাক্তার । ও একদিন আংকেলের সাথে দেখা করিয়ে দিল । উনি আমার কাগজপত্র গুলো দেখলেন ।

তুমি এবার ট্রেনিং এ জয়েন করো না । ট্রেনিং এ গেলে তোমার শরীর আরো খারাপ করবে । তুমি ত টাইফয়েড থেকে এখনও পুরোপুরি সুস্থ হও নি । ইউ নিড আ কমপ্লিট রেস্ট । তাছাড়া ম্যালেরিয়া কখনো পুরোপুরি ভালো হয় না । এর জার্মটা হিডেন থাকে । একটু ফিজিক্যাল প্রেশার পড়লেই এটা বেড়ে যাবে । আমি কারো কথা শুনি নাই । জানুয়ারীর ১০ তারিখ আমি ট্রেনিং এ  জয়েন করি । ব্যাগে ছিলো নেক্সট দুই  মাসের ওষুধ । ওষুধের কোর্স নাকি কমপ্লিট করতে হবে !!

এরপরও আমি বুঝি নাই আমি অসুস্থ । মোটামুটি জেদ করেই পরবর্তী ২ বছর আমি কোন ওষুধ খাই নাই । দু বছর ট্রেনিং শেষ করেও শিখি নাই কেমনে সিক রিপোর্ট করতে হয় । যে ট্রেনিং এ সবার ওজন ১০/২০ পাউন্ড কমলো সেখানে আমার হলো ১৩৭ !

এখন আমি ফেসবুকের যে কোন স্ট্যাটাসে ৪ টার কম লাইক পরলে, ঘন্টা তিনেক পর তা ডিলিট করে দেই । যে কারো লেখার গুরুত্ব মাপি লাইক এর সংখ্যা দিয়ে । কে কতো সুখে আছে তা বিচার করি তার রিসেন্ট এক্টিভিটি আর স্ট্যাটাস দেখে । ভালো খারাপ নির্ধারণ করি তার ফেইক আইডির সংখ্যা আর প্রাপ্যতা দিয়ে ।

আমি কি বুঝি নাই যে আমি সত্যিই অসুস্থ ????????     

১,১১৪ বার দেখা হয়েছে

১৩ টি মন্তব্য : “অসুস্থতা”

  1. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    আমিন, অনেকদিন পরে লিখলে মনে হয়। ভাল লিখেছো, মনের সুস্থতা আসলেই এখন দুস্প্রাপ্য হয়ে যাচ্ছে।

    নামটা সময় করে বাংলা করে দিও আর সাথে সাল জুড়ে দিও।


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।