কোন এক স্বপ্নকন্যার নিঃসঙ্গ দিনলিপি

এটা কোন মৌলিক লেখা কিনা বলা মুশকিল। বাংলা ব্লগে ব্লগিং শুরুর পর নিজের নামে ব্লগিং করলেও ভার্চুয়াল চরিত্র নির্মাণের আগ্রহ থেকে একজন কিশোরীর অবয়ব তৈরি করেছিলাম কিছু কাল্পনিক দিনলিপি লিখে। সেই স্বপ্ন কন্যার কোন নাম আমি দিতে পারিনি। শুধু তার দিনলিপিগুলো শেয়ার করার আগ্রহ হলো সবার সাথে। সেই কিশোরীর ডায়েরির পাতা থেকে আনা এই লেখা গুলো রইল।

স্বপ্নের রঙ সাদাকালো

আমি জেগে রই নিঃসীম রাত। জেগে রই স্বপ্নের জন্য। স্বপ্নেরা ধরা দেয় না কিংবা দেয় আমি বুঝি না কিংবা বুঝি উপলব্ধি করি না। আমি জেগে রই রাত জাগা পাখির মত। তাদের সাথে মিতালি করে জেগে থাকি।আধারকে আমার ভালো লাগে। নিঃসীম আধারের যে নিস্তব্ধতা তার যে ব্যাপক বিশাল শূন্যতা তা আমাকে গ্রাস করে।আমি জেগে রই আমার নিঃসংগতাকে পুঁজি করে। আমার চোখে ঘুম আসতে চায়। আমি চেয়ে থাকি রাতের তারাদের দিকে। আমি যেন তাদের মতই নির্ঘুম। রাত আরো বাড়ে। আরো বাড়ে। আমি জেগে থাকি নৈশ অপার্থিব সৌন্দর্যকে অবলোকন করে। রাতকে মনে হয় অসীম। দুরে মাঝে মাঝে শোনা যায় পাহারাদারের হুইসেল। আমার চমক ভাঙে। ফিরে আসি বাস্তব পৃথিবীতে। পুব আকাশে আলোকচ্ছটা নিঃসীম রাতের সমাপ্তি ঘোষনা করে। আর নিশাচর এই আমি ঢুলে পড়ি নিদ্রার সাদাকালো স্বপ্নের হাতছানিতে।

আমার কথা

অলস দিন আমার কাটে একা একা। নিঃস্তরঙ্গ নিসঙ্গ জীবন আমার। আমি বসে থাকি আমার বহুতল বাড়ির বারান্দায়। দেখে যাই আশেপাশের দুনিয়া। বাসা থেকে কলেজে যাওয়া আসা ছাড়া আমার দেখা হয় না বাইরের পৃথিবীর কিছুই। তাই তো ঘরের বাইরের জগত আমার কাছে বড়ই রহস্যময় বড়ই অদ্ভুত। আমি বন্দিনী রাজকন্যার মত বসে থাকি আমার বাসায়। রাজকন্যার ন্যায় আমার সখী নেই। বরং একা একা আমার বসবাস। আমি বসে থাকি সেই রূপকথার রাজকন্যার মত- যে রাক্ষসের হাতে বন্দী। কিন্তু এই জীবনের মধ্য থেকেও আমি দেখি জগতকে। আমি দেখি আমার আশেপাশের দুনিয়াকে। আমার বাড়ির নিচে খেলা করা কিশোর গুলোকে দেখে বড়ই হিংসা হয়। আহা ওরা কত স্বাধীন। ওদের পড়ালেখা নেই। সময় মতো বাড়ি ফিরতে হয় না।নেই কোন বাধাধরা নিয়মের উৎপাত। তারা আকাশের মুক্ত বিহঙ্গের মতই স্বাধীন। আমি দেখি কোন বর্ষা বিধৌত দুপুরে পাশের বাড়ির ছাদে বালক বালিকাদের বৃষ্টিস্নান। ওদের উদ্দাম ছোটাছোটি আমার মনে শিহরণ বইয়ে নিয়ে যায়। ইস যদি ওদের মত ছোটাছোটির স্বাধীনতা পেতাম। তবু আমি বসে থাকি বারান্দায় আমার প্রিয় চেয়ারটার উপর। আমার সর্বক্ষনের সাথী আমার নিঃসঙ্গতা বাস করে আমার সাথে । কখনো বই পড়ে কখনো বাইরে দেখে কেটে যায় আমার অদ্ভুত বিষন্ন দুপুর নিঃসঙ্গ বিকেল কিংবা স্বপ্নময় রাত। আর আমি খুজি আমার ভালোবাসাকে আমার নিঃসীম নিঃসঙ্গতায় যার বাস…….

নীল নিঃসঙ্গতা

আমি এক একলা পাখি। বসে থাকি আমাকে নিয়ে। আমার স্বপ্ন নিয়ে। আমার চারপাশে আমার সাদাকালো স্বপ্নের আনাগোনা চলে সবসময়। আর তাদেরকে জড়িয়ে রাখে নীল নিঃসঙ্গতার চাদর। আমার স্বপ্ন আমাকে তাড়িয়ে চলে সারা দিন সারারাত। আমার স্বপ্নেরা ছুটে চলে ক্লান্তিহীন। সে তার ডানায় ভর করে আমায় নিয়ে চলে স্বপ্নালোকে। তাইতো নিঃসংগতা আমার খুব প্রিয়। আমার অলস অবসরে আমি হারিয়ে যাই আমার নিজের তৈরি ছোট্ট জগতে।
আমার জগতে মানুষ নেই। শুধুই একলা আমার বসবাস। আমি জেগে থাকি সেখানে। সেখানে রূপালি চাদের ঝিরিঝিরি জোছনা নিয়ে কুলকুল শব্দে বয়ে চলে সর্প বাক নেয়া নদী তার বুকে অমিয়ধারা নিয়ে। সেই রজতধারার বুকে আমি ভেসে যাই স্বপ্নের ডিঙ্গিতে চড়ে। আমার চারপাশে অপার্থিব সুন্দর এক পৃথিবী। রাতের চাদ কখনও ঢাকা পড়ে যায় সাদা মেঘের ভেলায়। আমার জগতের একটাই ঋতু। শরত – রূপের রাণী। আমার রাত্রিগুলো থাকে সাদা মেঘের আনাগোনায় শুভ্র। আর চাদের সাথে লুকোচুরি খেলে সে হয় বর্ণিল। নদীর কুলুকুলু শব্দে আমি ভেসে চলি। ভেসে চলি দুরে আরো দুরে দিগন্তের পানে। আমার হৃদয়ের আনন্দের বহিপ্রকাশ গান হয়ে বেরিয়ে আসে। আর আমার সাথে যোগ দেয় রাত জাগা পাখিরা। চারপাশ স্বপ্নময় রহস্যময়।শনশন করে গান গায় শুভ্র কাশফুল। ভোর হয়ে আসতে থাকে আর আমি ভেসে যেতে থাকি স্বপ্নের তরী বেয়ে।

ভোরের সূর্য প্রকাশ করে তার অস্তিত্ব। চারপাশের ঘাসের উপরকার শিশির সূর্য রশ্মিতে ঝিলমিল করে স্বাগত জানায় প্রভাতকে। আর আমি। আকাশের পানে চেয়ে থাকি। শরতের গাঢ় নীল আকাশ আমার নীল নিঃসঙ্গতা হয়ে জড়িয়ে ধরে আমার শ্বেত শুভ্র অবয়বকে।

১১ টি মন্তব্য : “কোন এক স্বপ্নকন্যার নিঃসঙ্গ দিনলিপি”

মওন্তব্য করুন : আমিন (১৯৯৬-২০০২)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।