কবিতা রিভিউ : তালগাছ (ত্রিমিতার পোস্ট পড়ে লেখার তাগিদ অনুভব করলাম)

খুব ফানি করেই কথাগুলো বলি যদিও কথাগুলো খুব ফানি নয়। আমাদের দেশ নিয়ে আমাদের হতাশা আমাদের ব্যঙ্গ বিদ্রুপ ভরা আড্ডা পার করে এসেছি অনেকদিন। ত্রিমিতার পোস্ট পড়েও সেই সময়টার প্রতিধ্বনি অনুভব করলাম অন্তরের গভীরে। জাফর ইকবাল মার্কা কিছু লোক নাকি নতুন প্রজন্মরে স্বপ্ন দেখায় যদিও আমি তেমন কিছু খুননজে পাই না তারপরেও দেশের ক্রান্তি কালে তাদের পিউর বিজ্ঞানী সেজে যাওয়ার ধৃষ্টতাতে আমি বিরক্ত। বরং আমি নিজেই জাফর ইকবালের মত আশার কথা বলি। তার সাথে সামনে রবিবুড়োটার জন্মদিন। ওঁর সুরে ওঁর এক কবিতা রিভিউ করেই আপাতত আশার কথা বলি।

যে কবিতার রিভিউ লিখছি সেটা আমরা প্রায় সবাই ক্লাশ টু বা থ্রিতে পড়েছি। সেটা হলো — তালগাছ। তালগাছ কবিতাটির মাঝে রবিবাবু তৎকালীন ইয়ং বেঙ্গল বিশেষ করে মাইকেল মধূসূদনকে ইঙ্গিত করে লিখেছেন। তাই ধরে নিতে পারি এই কবিতার তালগাছ আসলে মাইকেল মধূসূদন দত্ত কিংবা তাঁর ন্যায় কোন প্রতিভাবান কোন বাঙালি যে তালগাছের মত জ্ঞানে বুদ্ধিতে আশেপাশের সব মানুষকে ছাড়িয়ে আকাশ পানে উঁকি মেরেছেন। অসীমকে জয় করার দুর্বার স্বপ্ন নিয়ে সে উড়ে যেতে চায় আকাশ পানে। তাঁর পাতা সদৃশ জ্ঞানকে সম্বল করে সে আকাশএর মাঝে হারিয়ে যেতে চায়। উড়ে যেতে চায় সে আশেপাশের গাছ এবং তার বাসাখানি ফেলে অর্থাৎ দেশ ও দেশের মানুষকে ভুলে গিয়ে সে উড়ে যেতে চায় বিশ্বজনীন সত্তা নিয়ে।

কিন্তু তালগাছ পারেনি ছেড়ে যেতে তার মা রূপ মাটিকে ছেড়ে কিংবা বিশ্বজনীন হয়ে গিয়ে সে অনুভব করে আপন সত্তাকে বিকিয়ে সে বিশ্বের হতে পারে না পৃথিবীর কাছে তার পরিচয় তার সত্তা তার শিকড়রূপ সংস্কৃতি। তাই আশেপাশের সকল গাছকে তুচ্ছ বলে সে আকাশে চলে যেতে চায় কিন্তু মাতার টানে মাটিরে টানে শিকড়ের টানে তালগাছ রূপী মধূসূদন কিংবা প্রবাসী প্রতিভাবানেরা ফিরে আসে তার আপন মায়ের বুকে। সময়ের আবর্তে আমাদের মধূসূদনদের সংখ্যা বেড়ে গেছে অনেক। তারা সবাই যদি এই মায়ের টানে মাটির টানে তালগাছের মত ফিরে আসে আমাদের দেশকে নিয়ে হতাশ হওয়ার তেমন কারণ খুঁজে পাই না।

সকলের বোঝার সুবিধার্থে তালগাছ কবিতাটির যে কয় লাইন মনে আছে তুলে দিলাম—-

তালগাছ
এক পায়ে দাঁড়িয়ে
সব গাছ ছাড়িয়ে
উঁকি মারে আকাশে।
মনে সাধ কালো মেঘ ছেয়ে যায়
একেবারে উড়ে যায় কোথা পাবে পাখা সে।
তাইতো সে রোজ তার পাখাতে
গোল গোল পাতাতে
ইচ্ছাটি মেলে তার
মনে মনে ভাবে বুঝে ডানা এই
উড়ে যেতে মানা নেই’
বাসাখানি ফেলে তার।
তার পরে হাওয়া যেই নেমে যায়
পাতা কাঁপা থেমে যায়
ফেরে তার মনটি।
যেই ভাবে মা হয় যে মাটি তার
ভালো লাগে আরবার
পৃথিবীর কোনটি।

মুখস্ত থেকে লিখলাম কবিতাটিতে অনেক ভুল আছে। মূল থিমটা বুঝানোর জন্য আমি এর লাইন গুলো দিয়ে দিলাম।

৪,০২১ বার দেখা হয়েছে

৪৭ টি মন্তব্য : “কবিতা রিভিউ : তালগাছ (ত্রিমিতার পোস্ট পড়ে লেখার তাগিদ অনুভব করলাম)”

  1. ওরে বাপরে........... আমার তো মাত্র প্রথম ৪ লাইন মনে আছে 🙁

    ছোটকালের পড়া ছড়াকে নতুনভাবে দেখার স্টাইলটা ভাল লাগলো..... :clap: :clap:

    জবাব দিন
  2. তাইফুর (৯২-৯৮)

    মাইকেল হানিচো... দত্ত'দের রবি কাকু ভালই দিয়েচেন।
    সেই "ভাল দেয়া"টা সুন্দর করে বুঝিয়ে দেবার জন্য আমিন'কে ধণ্যবাদ।

    টেকনিক্যাল কিছু "বাঁশ" আছে ... বলদ টাইপ কাউকে দিলে তাকে আবার বুঝিয়ে দিতে হয় ... ওটা বাঁশ ছিল ... নইলে উৎসাহ প্রদান ভেবে বলদ ঝুলন্ত হাসি হাসে।


    পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
    মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥

    জবাব দিন
  3. আদনান (১৯৯৪-২০০০)

    আমিন তোর কবিতার ব্যাখ্যা লেখার ধরন সবি পছন্দ হয়েছে । তালগাছ কবিতার যে এমন গূঢ় মানে আছে জানতাম না । প্রতিভা না থাকলেও জীবন জীবিকার সন্ধানে প্রবাসে আছি, জানিনা ভবিষ্যতে কি হবে । তোর লেখা পড়ে স্বপ্ন দেখতে ইচ্ছা করে একদিন আমিও ফিরে আসব, যেভাবে বাবা ফিরে এসেছিল । ভাল থাকিস ।

    জবাব দিন
  4. মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

    আমিন,

    তুমি ত মিয়া বিরাট বস পাব্লিক। :grr:
    এমন শিশুতোষ একটা ছড়ার যে 'ইরাম' মাজেজা আছে তা ত জানতাম না!

    :thumbup: :gulli2:

    ঝুলিতে আরো থাকলে দিয়া ফালাও সিসিবি'তে......


    There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

    জবাব দিন
  5. আন্দালিব (৯৬-০২)

    আরে এইটা তো আমার প্রিয় কবিতার একটা। এইটার যে এই অর্থ তা জানতাম না! তুই জানলি কেমনে!! 🙂

    অনেকদিন পরে কবিতাটা পড়ে আবারও মন ভাল হয়ে গেল! থ্যাঙ্কু দোস্ত! :boss:

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : তাইফুর (৯২-৯৮)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।