একটি সাধারণ গল্প

[সামুতে প্রকাশিত এই লেখার আইডিয়া ঝিনাইদহের ইব্রাহীমের। এই আইডিয়াতে ও একটি গল্প লিখেছিল কোন এক আড্ডায়। সেই লেখা হারিয়ে যায় কিন্তু প্লট ব্যবহার করে আমি সামুতে লিখি। তাই ট্যাগে ঝিনাইদহ দিলাম। সামুর লেখাটাকে ঘষামাজা করে আজকে সিসিবিতে দিলাম। ]

– আয়নাটা ভালো করে ধর। অনেকটা আদেশের মত শোনাল বিল্লালের গলাটা। আর তা রঞ্জিতের কানে সূচের ফলার মত তীক্ষ্ম হয়ে বিধে আঘাত ছড়িয়ে দিল সারা গায়। আয়নাটা তুলে ধরল সে বিল্লালের ঘাড়ের পিছে।

-ঐ হালা সোজা হয় নাইতো। ভালো মত কাটতে পারছ না। পয়সাটাতো ঠিকই নেস। হারামখোর মালুর দল,।ঠিক কর।

বিরক্তমুখে আবার কাজে মনে দিল রঞ্জিত। এ নিয়ে তৃতীয়বার তাকে একই কাজ করে যেতে হচ্ছে। তবু মন ভরে না। মনে মনে কুৎসিত একটা গালি দিয়ে আবার কাজে লেগে গেল। পেছনে কাস্টমারদের অনেকেই বিরক্ত হয়ে চলে যাচ্ছে। সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই বিল্লালের। যত্তোসব।
তৃতীয়বারের প্রচেষ্টায় সে সফল হলো। এবার সেভের পালা। কাস্টমার আর দোকানে নেই। বিল্লালের মুখের উপর কথা বলে কার সাহস?।বিরক্ত হয়ে অন্য দোকানের খোজ করছে তারা। আর রঞ্জিতের ব্যবসার লালবাতি জ্বলতে এমন দুই তিনটা হারামিই যথেষ্ট।

সেভের ক্ষুর হাতে নিয়ে বিল্লালের গলার কাছে যখন চালাবে বিদ্যুতের ঝলকের মত তার স্মৃতি পটে ভেসে উঠে- ভেসে উঠে তার ভালোলাগার মানুষ বীণার কথা। সেই টানা টানা বিস্ময় মাখানো চোখ,সেই শ্যাম মায়া ভরা নিটোল চেহারার মেয়েটির কথা। সেই চপলা কিশোরীর সাথে তার দুষ্টুমি ভরা শৈশব আজও তাকে তাড়া করে ফেরে। সেই ছেলেবেলায় একসাথে খেলা করা নদীর পাড়ে ছুটে বেড়ানো,সেই লুকোচুরি খেলা- সবই একে একে ভিড় জমাতে থাকে তার মাসপটে। তার মনে পড়ে সেই দিনটির কথা। তার বাবাকে হারিয়ে সে তখন বাকরুদ্ধ। তার চাখ নোনা জলে ঝাপসা হয়ে উঠেছে – এমন সময়, হ্যা ঠিক এমন সময় কোমল কোন হাতের মায়ার পরশ তার কাঁধে পড়ে। আর সেদিনের সেই ছোট মেয়েটি কত ঠান্ডা অথচ কঠিনভাবে তাকে বাস্তবে ফিরিয়ে আনল ওটুকু মেয়ে । আর সেই বানী তাকে জুগিয়েছিল মানসিক শক্তি-ঘুরে দাড়ানোর ক্ষমতা। আর সেদিনের পর এটুকু মেয়েকেই যেন সে ভেবে নিয়েছিল তার অবলম্বন হিসাবে। জাগতিক সকল ঝড় পাড়ি দেবার বিশ্বস্ত সঙ্গিনী হিসাবে যেন।

তার মনে পড়ে তার প্রথম ভালোবাসার প্রকাশের দিনটাকে। তার প্রথম রোজগারের পয়সা দিয়ে কেনা আলতা। শুধুই আলতা সেটি। বোধ করি না। তার সাথে মেশানো ছিলো শুধুই অবুঝ প্রাণে সঞ্চিত নিখাঁদ ভালোবাসা। আর সেই ভালোবাসার উপহারভ পেয়ে বীণার গাল সেই আলতার চেয়ে বেশি রক্তিম আভা ছড়িয়ে রঞ্জিতকে দিয়েছিল বালিকার মনের ঘরের সুপ্ত ভালোবাসার সন্ধান। সেই নারী সেই আলতা সেই রক্তিম ভালোবাসা।

চোখের সামনে ভেসে উঠল সেই সন্ধ্যার কথা। কাজ বিরতি দিয়ে সে বিড়ি ফুকতে বেড়িয়েছিল জংলাটার পাশে। অতি পরিচিত কন্ঠের আর্ত চিৎকারে সে থমকে দাড়াল।দৌড়ে গিয়ে- একী? অবাক বিস্ময়ে সে তাকিয়ে থাকে ঝোপের দিকে। সেখানে লাল হয়ে পড়ে আছে তার ভালবাসার পুতুল। কিন্তু সেই লাল ভালোবাসায় কিংবা লজ্জায় নয় বরং ধর্ষকের পাশবিকতায় পিষ্ট প্রেমহীন কামে দগ্ধ রক্তাক্ত কিশোরী দেহ। ঘটনার আকস্মিকতায় বিমূঢ় হয়ে থেমে গিয়েছিল সেদিন। সে তাকিয়ে থাকে তার দিকে কঠোর দৃষ্টি হানা ধর্ষকদের দিকে। নিজের অক্ষমতায় মাটিতে মিশে যেতে চায়। সেদিনটিকে ফিরে ফিরে নিয়ে আসছে এই মূহুর্তে তার সামনে বসে থাকা এই বিল্লাল- সেদিনের ধর্ষকদের একজন।

বীনার মাথায় হাত বুলিয়ে সান্তনা যোগানোর ভাষা পায়নি। আর বীনা তাকে আর সুযোগ দেয়নি করুণা করবার। সেদিন রাতেই তার নিজের ঘরে ফ্যানের সাথে ঝুলে পড়ে শেষ করে দিয়েছে তার জীবন। রঞ্জিতের চোখের কোনে ফোটা ফোটা অশ্রুবিন্দু জমে উঠতে থাকে। তার মাঝে কেমন শুন্যতার বোধ জেগে উঠতে থাকে অবিরত। হাত কঠোর হয়ে উঠে। তার ভাবনা লোপ পেয়েছে অনেক আগেই। হিতাহিতজ্ঞান শূন্য হয়ে সে তার হাতের ক্ষুর চালনা করে দেয়-চালনা করে দেয় ধর্ষক বিল্লালের গলার উপর দিয়ে। নড়াচড়ার সুযোগ পায় না নরপশুটি। তার আগেই সে নিস্তেজ হয়ে আসে। রক্তে রক্তে চারদিক সয়লাব। আর তাতে রঞ্জিতের চোখেমুখে একটি সুর একত্রে বেজে উঠে – প্রতিশোধ।

[গল্পটা অসাধারণ হলে এখানেই শেষ হতো।কিন্তু যেহেতু এটি সাধারন গল্প তাই এ গল্পের আরো না বলা কিছু কথা থেকে যায়। ]

ঐ হালা, কী হইল তোর কাজ কর ঠিকমতো। ।বিল্লালের গর্জনে বাস্তবে ফিরে আসে রঞ্জিত। সে ভালো করে তার কাজ সমাপনে মন দেয়। আর প্রতিশোধ শব্দটা গর্জন হরে বের হবার আগেই শক্তি হারিয়ে চাপা আর্তনাদ আর ক্ষোভে পরিনত হয়ে তার এক দীর্ঘশ্বাসের সাথে বেরিয়ে যায়।

১,৪২৬ বার দেখা হয়েছে

২০ টি মন্তব্য : “একটি সাধারণ গল্প”

  1. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    সাধারণ পরিসমাপ্তিই বোধহয় গল্পটাকে অসাধারণ করে তুলেছে... :-B

    আমিন-ইব্রাহিম এর যৌথ প্রযোজনাকে ধন্যবাদ... :thumbup:


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
    • আমিন (১৯৯৬-২০০২)

      সত্যি কথা বলতে, ইব্রাহীমের প্রথম লেখাটা অনেক ভালো হয়েছিলো। সেটার কাছাকাছি কিছু একটা আনতে ও আমাকে অনেক খাঁটুনি দিতে হলো।
      ইব্রাকে আমি বলছিলাম ব্লগে লেখতে। চাকরির ব্যস্ততা আর বাংলা টাইপিং সমস্যার কারণে ও লিখতে চায় না। ও কে পেলে এই ব্লগ আসলেই অনেক সমৃদ্ধ হতো।

      ভালো লাগার জন্য ধন্যবাদ জুনা ভাইকে। 🙂 🙂 🙂

      জবাব দিন
  2. শার্লী (১৯৯৯-২০০৫)

    কে বলছে এটা একটা সাধারন গল্প। মানুষের ইচ্ছার সাথে বাস্তবিকতার যে অনন্যসাধারন সমন্বয় আছে এই লেখায় তাই এই গল্পটাকে অসাধারন করে ফেলেছে। সরাসরি ৫ তারকা :clap:

    জবাব দিন
  3. ফয়েজ (৮৭-৯৩)

    আমিন কালকেই দেখেছিলাম লেখাটা, সময় নিয়ে পড়ব বলে কাল পড়িনি। আজ পড়লাম।

    প্রথম লেখা হিসেবে অসাধারন হয়েছে। বিশেষ করে ফিনিশিংটা, আমি ভেবেছিলাম, সবাই হয়ত তাই ভেবেছিল, লেখকও ভেবেছিল, কিন্তু বাস্তবতা সংগে মিলিয়ে ফেলনি, এটা খুব ভাল লেগেছে।


    পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

    জবাব দিন
    • আমিন (১৯৯৬-২০০২)

      প্রথম লেখা !!? বুঝলাম না বস। ইব্রাহিমের কথা বললেন। ও অনেক ছোটবেলা থেকেই লিখে আর অনেক ভালো লিখে। গল্প প্রথম লিখার সময় শেষ প্যারাটুকু ছিল না। গল্পটা প্রথমবার পরার পর আমি ওকে অনুরোধ করেছিলাম ফিনিশিং টা এই টাইপ করতে। আপনার ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো।

      জবাব দিন
  4. টিটো রহমান (৯৪-০০)

    ইব্রাহিম কিংবা আমিন যেই লিখ না কেন ভাল হইছেভ বেকটা চমতকার শর্ট ফিল্ম হতে পারে
    ইনফ্যাক্ট ইন্ডিয়ান একটা এইরকম শর্ট ফিল্ম আছে। নাম eight & halfভ ওটায় বরং বিল্রারের দৃষ্টিকোন থেকে দেখা। মাত্র সে একটা খুন করে আসে সেটা শরীরের দলাইমালাইয়ের সাথে সিনক্রোনাইড হয়ে যায়। চুর কাটার সময় লাশটা টুপ করে ঝরে পড়ে।
    এনিওয়ে সে ভিন্ন গল্প। তবে কামস এটা বানাতে পারিস

    মাস্ফু কই?? তোর নস্যুতে গ্যান্জাম হইয়া ফাইটা যাইতাছে


    আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : আমিন (১৯৯৬-২০০২)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।