আখ্যায়িকা ( সতর্কীকরণ: একটি আঁতলামি ধর্মী পোস্ট) -১

** সামুতে আমার একেবারে প্রথমদিকে লেখা একটি পোস্ট।

সন্ধ্যা নেমে এসেছে অনেক আগেই।ঢাকার কোন এক রাস্তায় হাটছে নিলয়।নিসঃঙ্গতা উপভোগ করতে শিখেছে সে ছোটবেলা থেকেই।তার একান্ত নিজঃস্ব মূহুর্তগুলো কাটে নিঃসঙ্গতায়।টিপটিপ বৃষ্টি পড়ছে চারদিকে।কিন্তু তা তার হাটার স্পৃহা মোটেই কমাতে পারছে না।অর্থহীন বিষন্নতায় ছেয়ে আছে তার মন।কোন এক অজানা কিছু হারাবার আশায় না জানা কিছু পাবার নেশায় তা সে ঠিক বলতে পারে না।শুধু সে জানে তাকে ছুটে চলতে হবে এ পথ ধরে।

ফুটপাতের পাশে কোন এক ভাসমান চায়ের দোকান দেখে থামলো সে।এককাপ গরম ধূমায়িত চা আর একটি জ্বলন্ত সিগারেট এই মূহুর্তে তার চরম প্রার্থিত বস্তু।সিগারেট ধরিয়ে চায়ে ফু দিতে যাবে এমন সময় তার কানে ভেসে এল ,স্যার মালা নিবেন একটা?

সে চমকে তাকাল।অল্প বয়সী বার কি তের বছরের একটি মেয়ে তার সামনে দাড়িয়ে।বিরক্ত সহকারে সে মেয়েটিকে ফিরিয়ে দিচ্ছিল কিন্তু তার আগেই মেয়েটির চেহারার করুণ আকুতি তাকে থামিয়ে দিল।

সারা দিন কিছু খাই নি।প্লিজ স্যার।

নিলয় একটি মালা কিনে জিজ্ঞাসার ভংগিতে মেয়েটির বৃত্তান্ত জানতে চাইল।এই বয়সে যার লেখাপড়া করার কথা সে কেন জীবন সংগ্রামে নেমেছে তা জানার তীব্র কৌতুহল তাকে বাধ্য করল মালা কিনতে।বলল,
তোর মা বাবা নেই?

মা মারা গেছে বাবা অন্য খানে বিয়ে করেছে ,আমাদের দেখার কেউ নেই।

আমরা কারা তা জানার সৌভাগ্য নিলয়ের হলো না।তার আগেই সে দেখতে পেল মালার বিনিময়ে তার দেয়া টাকা দিয়ে মেয়েটি একটা বনরুটি কিনেছে আর কিছুদূরে দাড়ানো তার ছোট ভাইকে নিয়ে ছোট বনরুটি ছিড়ে খুড়ে খাচ্ছে।

নিলয়ের বুক থেকে চাপা দীর্ঘশ্বাস বেরহয়ে আসে।এই নিষ্পাপ পবিত্র শিশুদের প্রতি করুণা করার কোন অধিকার তার নেই।তাই সে ধীরে ধীরে দোকান থেকে বের হয়ে আবার হাটতে থাকে।

কিছুক্ষন পর তার এক বন্ধুর সাথে দেখা হয়।সে তার হাতের মালা দেখে
ঠাট্টা করে।বন্ধুর প্রতি মনে মনে করুণার হাসি হাসে নিলয়।আহারে।এই স্বর্গীয় শিশুদের জন্য কী এই ধুলামাটির পৃথিবীতে কোনই সুখের স্থান নেই।–হাতের ফুলের মালার দিকে তাকিয়ে তার বুক থেকে কষ্টের এক চাপা স্রোত বেরিয়ে যায়।

২,৮৭৭ বার দেখা হয়েছে

৩৫ টি মন্তব্য : “আখ্যায়িকা ( সতর্কীকরণ: একটি আঁতলামি ধর্মী পোস্ট) -১”

  1. রহমান (৯২-৯৮)

    লেখাটা পড়ে আমার কাছে আতলামি মনে হয়নি আমিন।

    কিন্তু নামকরণ টা বুঝলাম না। আমিও বাংলায় একটু কাচা। আখ্যা, ব্যাখ্যা বুঝি; নায়িকা, গায়িকাও বুঝি কিন্তু "আখ্যায়িকা" মানে বুঝতেছিনা। একটু বুঝাই দেও

    জবাব দিন
    • আমিন (১৯৯৬-২০০২)

      আমার এই লেখার ধরণকে সাহিতয়ের কাতারে গল্প বা প্রবন্ধের মাঝে পড়ে না। এর না সাহিত্যের পরিভাষায় আখ্যায়িকা।
      জীবনের অভিজ্ঞতা লব্দ্ধ কোন গটনা থেকে ছোট ছোট কোন দর্শন কিংবা ছোট বক্তব্যকে পরোক্ষভাবে তুলে ধরার চেষ্টা।---এই শব্দটা আমার নিজের দেয়া না। আমার বাংলার শিক্ষিকা মা কে আমার লেখাগুলি পড়তে দিয়েছিলাম।তিনি আমার দুঃখবিলাস সিরিজের লেখা গুলোকে ক্যাটাগরিগতভাবে আখ্যায়িকা বলে অভিহিত করেন।এমনিতেই স্বপ্ন বিলাস দুঃখবিলাস শব্দ গুলোকে ক্লিশ আর একঘেয়ে মনে হয়।তাই এখানে নামটা চেঞ্জ করে আখ্যায়িকা দিলাম।
      আশা করি আমার ব্যাখ্যাটার মাধ্যমে আখ্যায়িকা শব্দটাকে পরিষ্কার করতে পেরেছি।
      ধন্যবাদ ভাইয়া।

      জবাব দিন
  2. হাসনাইন (৯৯-০৫)
    ( সতর্কীকরণ: একটি আঁতলামি ধর্মী পোস্ট)

    এইটা না দিলে মনে হয় কেউ টেরও পাইত না। দিয়ে ভাল হইছে তুলনা করতে গিয়ে সবাই ধরা খাইছে। 😀

    ভাল লাগছে ভাই। :clap:

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : রহমান (৯২-৯৮)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।