সৃজনাকে ভালোবাসি (নারী বিষয়ক আজাইরা পোস্ট)

*** ইহা একটি নারী বিষয়ক পোস্ট। তবে আমি সাক্ষ্য দিতেসি যে, নিঃসন্দেহে ইহা সুস্থ ধারায় রচিত।

শিরোনামে একজন নারীর নাম ঝুলানোতে পোস্টটা অনেকের কাছে অনেক ভাবে মনে হতে পারে। আমি বরং খুশবন্ত সিং এর কোম্পানি অফ উইম্যানের আদলে কিছু বলার চেষ্টা করি। আমার পড়ালেখা কিন্ডার গার্টেন ছাড়িয়ে হাইস্কুলে পা দেয়ার আগেই আমি আইডিয়ালে চলে যাই। হুজুরভাবাপন্ন স্কুলে এসে স্বভাবতই নারী আমার কাছে নিষিদ্ধ বস্তু হিসাবে ঘোষিত হয়ে যায় তখন থেকেই। এর বলয় থেকে আজও আমার মুক্তি মিলেছি কিনা বলতে পারি না তবে অযাচিত নারীদের উপস্থিতি আমার মনে কেমন এক ধরণের বিকর্ষণধর্মী বিপ্লব তৈরি করে যেন। সে যা হোক, নারী সঙ্গকে নিষিদ্ধ বস্তু থেকে পরম প্রার্থণীয় বস্তু হিসাবে বুঝতে শিখেছিলাম ক্যাডেট কলেজের এক বন্ধুর হাত ধরে। তার নামটা প্রকাশ না করে তার কাছে ক্ষমা চেয়েই কিছু বলে ফেলি। আমার সে বন্ধু খুবই ভাবের জগতের লোক। আড্ডা দেয়া প্রেপের মাঝেও সে হঠাৎ হঠাৎ কেমন কাব্যিক হয়ে যেত আর তার কাব্যিকতার লেভেল আমাদের মত নির্বোধদের বোঝানোর জন্য টয়লেটে যাওয়ার আগে তার খাতার উপর বেশ কিছু ভাবে শব্দ নাযিল করে যেত- যেমন গৃহত্যাগী জ্যোৎস্না কিংবা রূপালি স্বপ্নের দ্বিতীয় প্রহর ইত্যাদি। আমি এতই নির্বোধ যে তাতেও আমার মাঝে ভাবান্তর আসে না। অতএব আমার জন্য ঔষধ হিসাবে সে তার চরম ভাবালু এক অ্যাক্রোস্টিক ধরিয়ে দিল। চরম রোমান্টিক সে অ্যাক্রোস্টিকের প্রতি লাইনের প্রথম অক্ষর গুলো যোগ করলে হয় ” আমার স্বপন গুলো জেগে উঠে কোন এক জোছনা রাতে” – ভুলও হতে পারে আমার এর কাছাকাছি কিছু একটা ছিল। তবে এই থিমের সাথে কবিতার কতটুকু মিল ছিল বলতে পারি না তবে আমার মত নির্বোধের মাথা খাওয়ার জন্য সে কবিতাই যথেষ্ট ছিল।
ক্যাডেট কলেজে নারী না থাকায় মাথা খেয়েও লাভ হলো না। অনেকে সুন্দরী ম্যাডামদের সাথে খাতির জমিয়ে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর চেষ্টা করে। কিন্তু ক্ষ্যাত আর আনস্মার্ট হওয়ার বদলতে সে দৌড়ে পিছে পড়ে গেলাম। এবারো পথ দেখালো আমার সে বন্ধুই। সে আমাদের সবার মাঝ্বে হঠাৎ করে উত্তেজনা ছড়িয়ে দিল। তার কাছে জনৈকা নারীর পত্র আগমন শুরু হয়েছে তখন। সবার মাঝে হৈ চৈ পড়লেও সে নারীর পত্রের হাতের লেখা আর আমার বন্ধুর হাতের লেখার আদল কিভাবে যেন মিলে যায়।

যাহোক বহুত বদনাম করা হলো। বরং নিজের কথা বলি। আমার বন্ধুর পত্রলেখিকার মত আমিও একটা বান্ধবী জুটিয়ে ফেললাম। ( এর চাইতে সহজে বোধ করি বান্ধবী জুটানো সম্ভব না)। তার একটি নাম দেয়া দরকার। কী দেয়া যায়, ভাবতে ভাবতে কেবলই স্বজনী সিনেমার গানটা মাথায় ঢুকে স্বজনী নামটি যখন কনফার্ম করে লিখতে গেলাম তখন এটাকে একটু সুন্দর রূপ দিয়ে করে দিলাম সৃজনা। আড়ে দারুণ । এবার একটা কাব্যিক নামের প্রেমিকা পাওয়া গেছে। এবার তাকে দিয়ে টক্কর দেয়া যাবে। তার দুয়েকটা লেখা নাযিল করা আমার জন্য খুব একটা কঠিন হলো না। তার সাথে আমি এবার নামলাম মিথ্যাকে সত্য বানানোর হের গোয়েবেলসীয় নীতিতে। অর্থাৎ এক মিথ্যাকে দশবার বলে তাকে সত্যে রূপ দেয়া। তার কোপ গেল আমার প্রতি ক্লাশের প্রতি ডেস্ক আমার পড়ালেখার বই সব জায়গা ভরে উঠল সৃজনা নামের মেয়েটির রূপচ্ছটায়। ফল হলো অনেকের কাছে এটুকু বিশ্বাস করানো গেলো আমার এক বান্ধবী আছে যার নাম আমি প্রকাশ করতে চাই না বলে সৃজনা বলে ডাকি। এই সময়ে চললল সৃজনার সাহিত্য প্রতিভাকে ঝালাই দেয়ার আঁকিবুকি।

সময় বয়ে চলে ক্যাডেট লাইফ শেষ হয়ে গেলেও হারায় না সেই ধূসর সময় গুলো আর হারায় না সৃজনা। অতএব আমি আমার বাস্ত পৃথিবীতে সৃজনার খোঁজ করতে থাকি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষে নাকি সবারই কী না কি ঘটে যায়। অতএব এই সুযোগ সৃজনাকে খুঁজে নেয়ার। আমাদের ক্লাশের এক মেয়ে নাকি সুন্দর সিম্পলের মাঝে। অতএব আমি ছুটি সৃজনার খোঁজে। ওি মেয়েকে দেখে মনে হয় কোথায় কী এতো ক্রিকেটার আশরাফুলের মত। হয়ত একটু বিড়বিড় করে বলে উঠেছিলাম। আমার পাশের জন সেটাকে বিকৃত করে সে মেয়েকে ডেকে ফেলল অ্যাশ। খবর রটে গেল আমি ঐ মেয়েকে অ্যাশ নাম দিয়েছি। ঘটনা আরো বৈপ্লবিক। সে মেয়ে ঐশ্বরিয়া থেকে অ্যাশ ভেবে আয়নায় নিজের চেহারা বুঝার চেষ্টা করছিল তেমন সময়ে হঠাৎ হ্যা হঠাৎই অ্যাশ রহস্যের সমাধান আশরাফুল বের হয়ে আসে। ফল হচ্ছে আমার ক্লাশে সেই স্বপ্ন কন্যার খোঁজ বন্ধ।

এমন সময় চড়ুইভাতি নামে এক টেলিফিল্ম দেখি সাথে সাথে সৃজনার বয়স একল লাফে বেড়ে যায়। সিম্পল্বের মাঝে বড় থেকে সে এখন হয়ে যায় আমার চেয়ে বয়সে বড়। অতএব আমার খোঁজও চলতে থাকে সেভাবে। আর খুঁজে পেতে খুব বেশি দেরি হয় না। হঠাৎ করে দেখে ভালো লাগে আর্কির এক বড় আপুকে। সাথে সাথে তাকে ভালো লাগার কথা জানানো আড় চপেটাঘাতের ভয়কে তুচ্ছ করার সাহসিকতার পুরস্কার জোটে তার বন্ধুত্ব। তার সাথে কথা বলি কিন্তু হঠাৎ করেই মনে হয় যেন সৃজনার মত উনি নন। তারপর- তারপর আমার এই ব্লগেই দেয়া একটি গল্পের মত তিনিও হারিয়ে যান। হারিয়ে যান চিরদিনের জন্য।

তারপর সৃজনাকে খুঁজেছি কিনা সেটা বলার আগেই বলে দেই সৃজনার আদলে আমি গড়ে তুলে আড়েক ভার্চুয়াল চরিত্র স্বপ্নকন্যা। এইবার তার কথা দিয়ে সৃজনার সেই আঁকিবুকিগুলো বিকশিত হয়। আর এই চরিত্র নির্মাণ করতে করতে আমি পেয়ে যাই বাস্তব জগতের সৃজনাকে- আমার এই লেখা শুধু তার কথা ভেবে —-না
তার আসল নাম বলব না,ব্লগের সবাই জানুক আমি একটি মেয়েকে ভালোবাসি কিন্তু তার নাম প্রকাশ করতে চাই না বলে আমি তাকে সৃজনা ডাকি।

৫,১৮১ বার দেখা হয়েছে

৭১ টি মন্তব্য : “সৃজনাকে ভালোবাসি (নারী বিষয়ক আজাইরা পোস্ট)”

  1. দিহান আহসান

    সিসিবি নেড়ে দেখি একটুও নড়ার জো নেই। ভাইয়ারা দেখি আমার সাথে প্রতিযোগীতায় নেমেছে। 🙁 আন্দামান ভাইয়া, নাও চা :teacup:

    আমিন ভাইয়া, মইনুল ভাইয়া'র ফ্রি পরামর্শ নিয়ে নাও।

    জবাব দিন
  2. আন্দালিব (৯৬-০২)

    আহা! দোস্ত। তোর লেখা পড়ে বিমোহিত হয়ে গেলাম!

    অ্যাশ! মনে পড়ে গেল অনেক অনেক পুরনো কথা। যেমন এইটা খুব খাঁটি কথা যে ১ম বর্ষে প্রেম প্রেম ভাবটাকে কতই না মূল্য দিতাম! :dreamy: :dreamy:

    শেষের অংশ পড়ে দারুণ লাগলো। আমরা ০২ দেখি এক এক করে সব প্রেম-প্রস্তাব রাখতেছি সিসিবি-তে। আশা করি সামনে আরো সুখবর শুনবো! :thumbup: :thumbup:

    জবাব দিন
  3. জিহাদ (৯৯-০৫)

    এই পোস্টের অন্যতম সার্থকতা হচ্ছে এর মাধ্যমে আমরা আন্দালিব ভাইয়ের ঝাক্কাস একটা নাম পাইলাম! আমার খুউউউউউবই পছন্দ হইসে! :awesome:

    আমিন ভাইয়া এবং আমিনা ভাবী - দুইজনকেই অভিনন্দন। আপনাদের চলার পথে সারাজীবন গোলাপফুল গড়াগড়ি খাক। আমিন!


    সাতেও নাই, পাঁচেও নাই

    জবাব দিন
  4. রকিব (০১-০৭)

    আমিন ভাই, শুভেচ্ছা রইলো। সেইদিন যেই আপুকে নিয়ে দোকানে :teacup: খাইতে আসলেন উনিই কি তিনি? ;;) ;;)


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
  5. কামরুলতপু (৯৬-০২)

    এতদিন পরে ঝেড়ে কাশলি।
    তুই বুয়েটের প্রথম দিকে তাহলে সেই যে ভাব গুলা নিতি সব তাইলে অভিনয় কেমনে কি?
    অনেকদিন ধরেই তোর সৃজনার কাহিনী জানি তোর মুখে এই প্রথম শুনলাম। আর তো বেশি দেরি নাই বিয়ের। মার্চের দিকে হইলে আমি থাকলেও থাকতে পারি।

    জবাব দিন
  6. সাব্বির (৯৫-০১)
    সবাই জানুক আমি একটি মেয়েকে ভালোবাসি

    মাত্র একটা?? আমি তো অনেক গুলো মেয়ে কে ভাল পাই B-)
    কিন্তু তাদের কেউ আমারে কেউ ভাল পায় না =((

    অ ট লেখা মারাত্বক হইছে। শুভ কামনা!!!

    জবাব দিন
  7. মুসতাকীম (২০০২-২০০৮)

    পুরা কোপা হইছে :clap: :clap: :clap:


    "আমি খুব ভাল করে জানি, ব্যক্তিগত জীবনে আমার অহংকার করার মত কিছু নেই। কিন্তু আমার ভাষাটা নিয়ে তো আমি অহংকার করতেই পারি।"

    জবাব দিন
  8. আদনান (১৯৯৪-২০০০)

    আমিনের আগের স্বীকারোক্তিটা কেমনে জানি চিপায় পরে ছিল । আন্দা এর আন্দামান নামকরনটা বড়ই সৌন্দর্য হয়েছে । :clap: দিহান ভাবী । আমিন আবারো অভিনন্দন ।

    জবাব দিন
  9. যাইহোক, শিমুল ভাই...মার্চ মাসে মনে হয় আমার পরীক্ষা থাকবেনা.......!!!.

    সৃজনা নামটা শুনে একটা সাম্প্রতিক এডের কথা মনে পড়ল: ঐ যে 'সৃজনশীল পদ্ধতির সেরা গাইড'...বুলবুল আহমেদ পৌনে মৃত চেহারায় বক্তৃতা দেয়।।।

    'হাইজেনবার্গের' কমেন্টটা লেখার বিশাল প্রাপ্তি, ছন্নছাড়া ভাইয়ের নামটাও পছন্দ হয়েছে....ছন্নছাড়া মানুষদের জন্য আন্দামান আর বান্দরবন একই হওয়ার কথা।।। যাইহোক, এই ব্লগে এসে অনেক কিছুই জানতে পারলাম...ভাবতেছি জানার চর্চাটা অব্যাহত রাখব।।।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।