তিন শহর

ফ্রাঙ্কফুর্ট। জার্মানী।
ম্যাসেঞ্জারে বন্ধুর ম্যাসেজ। আর এক মহাদেশ পার হয়ে আসাতেই যেন হ্যান্ডসেট স্ক্রীণে মৃদু কাঁপন অনুভব করে দূরের বন্ধু। মৃদু হাসি নিয়ে বিছানায় পাশ ফিরে আরাম অনুভব করে। ভালো লাগাটুকু চোখ বন্ধ করে উপভোগ করে।
স্ক্রীণে বন্ধুর মুখ।
‘ পারুর সাথে একবার কথা বলতে চাই। আমার ফোন ই ধরছে না। তোর বুবুকে বল না..’
সময় যেন থমকে যায়।
নিঃশ্বাসগুলো বিশ্বাসের ওপার থেকে এপারে আসতে বাঁধা পায়।
সমস্যার গভীরে চিন্তা-ভাবনাকে ঠাই দেবার আগেই বেদনারা ঘিরে ধরে দূরের বন্ধুকে। সে মোবাইলের দর্পণে কাছের বন্ধুর ছবির দিকে তাকিয়ে থাকে। উপায় খোঁজে।

মধ্যরাত। পারুর শহর।
একা এক প্রিয়দর্শিণী ঘুমন্ত ওর নিজ শহরের নিমগ্নতা যোগীর গভীর ধ্যানমগ্নতায় অনুভব করছে। ফ্ল্যাট লাগোয়া ইউক্যালিপটাস গাছটির পাতার ফাঁক গলে নেমে আসা চাঁদের আলোয় ওর দীর্ঘ এলোচুল কেমন মায়াবী! নিঃশ্বাস রুদ্ধ হয়ে আসে… দর্শকের বুকের গভীরে উষ্ণ রক্তের তান্ডব নৃত্য অনুভব করায়।
কালচে আগুন!
অহর্নিশি পোড়ায়- কাছে টানে- এমনই আগুন।
কি এক রহস্যময়, গোপন আবেশে পারুর অধর কোণে ফুটে উঠা মৃদু হাসি মিলিয়ে যাওয়ার আগেই হ্যান্ডসেটে মৃদু কম্পন…
‘ পারু! ফোন ধর… একবার…’

এতটুকুই কথা। কত ব্যথা। কথার ভিতরেও কতটা যে না বলা কথা রয়েই গেল! রেখে গেল- কিছু একটা- অনুভবে- কল্পনায়?
বাস্তবে নয় কি? কেন?
পারুর হাসি ই পারুর কান্না। সেই কান্না ধীরে ধীরে মৃদু হাসির কম্পনে চোখ স্পর্শ করার আগেই, মধ্যরাতের এক রহস্যময়ী অপ্সরী, নিজের শহরে বসে ভাবে-
‘ ওকে যদি আমি ভালো ই না বাসি, তবে ওর কষ্ট অনুভব করে, আমার ও কষ্ট পাবার কোনো অধিকার নাই। ‘
রুপালী তরল চাঁদের প্রবল বর্ষণে পারু ভিজে যেতে থাকে…

মধ্যরাত। কাছের বন্ধুর নিজ শহর।
টপ ফ্লোরে নিজের ‘সাময়িক বন্দীশালায়’ বসে এই মহানগরের ভিন্ন এক রুপ দেখছে কাছের বন্ধু। আলোয় ঝলমলে নগরীর নিচেই কতটা অন্ধকার। অনুভূতিতে খোকলা- বিশাল এক অজগরের মত প্রকান্ড হা করে থেকে, সকাল-সন্ধ্যা ওর বুকে বিচরণ করা যান্ত্রিক মানূষগুলোর অনুভূতিকে খেতে থাকে। সেই আলো-অন্ধকারের দিকে নির্ণিমেষ চেয়ে থেকে সে ভাবে-
‘ পারু ম্যাসেজের উত্তর দিল না! ‘

হৃদয়ের গভীরে কিছু একটা পুড়ছে। পোড়া গন্ধ পায়। কাছের বন্ধুর ভিতরে কোথায় যেন সহস্র জ্বলন্ত মোমবাতি গলে গলে পড়ছে- পুড়ছে- পোড়াচ্ছে!!
‘ ওহ! ভালোবাসায় এত কষ্ট কেন? ‘
নিজের পারুর কথা ভেবে ভেবে সে উদাস হয়-
একটা আক্ষেপ সারা জীবন থেকেই গেল। জীবন- ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র না পাওয়ার বেদনাগুলোর এলোমেলো পথ চলার নামই কি নয়? কারো কারো ক্ষেত্রে ভিন্নতা থাকলেও, অহংকার যাদের জীবনে অলংকারের মত জড়িয়ে থাকে, তাদের জীবনে বেশীরভাগ পথই এমন এলোমেলো চলতে হয়।।

৬ টি মন্তব্য : “তিন শহর”

  1. ওমর আনোয়ার (৮২-৮৮)

    মামুন, তোমার কাহিনীর ভেতর মাত্র ঢুকছি, আর দিলে শেষ করে! খুব সচল পর্যবেক্ষণ যা গল্পের আবেগের সাথে বেশ ভাল মিল খাচ্ছিলো। আরো টানো এটাকে। লিখা চালিয়ে যাও ভাইয়া।


    Pride kills a man...

    জবাব দিন
    • ধন্যবাদ ভাই। একটি অণুগল্প লিখতে চেয়েছিলাম। আপনার অনুভূতির প্রকাশে মুগ্ধ! টেনে সম্পর্কগুলোর ভিতরের গল্পটি বের করে আনার চেষ্টা করবো ইনশা আল্লাহ। শুভেচ্ছা নিরন্তর।

      জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মামুন

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।