বুমেরাং

একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ভিন্ন ডিপার্টমেন্টে অনেক ছেলেমেয়ের সাথে দুটো ছেলে মেয়ে পড়তো।
একজন জগৎ সংসার ভোলার জন্য রাতদিন নেশায় ডুবে থাকতো। অন্যজন সংসার করবে বলে সবার অমতে বিয়ে করে অকূলে পড়লো। এরা একদিন সেন্ট্রাল লাইব্রেরীর সিড়িতে এক আড্ডায় বন্ধুদের ভীড়ে পড়ে পরিচিত হলো। ছেলেটার লাল চোখ, ফর্সা মুখ আর আরো কী কী ব্যাপারের কম্বিনেশন মেয়েটার কেমন যেন লাগলো। বান্ধবীর কাছে সে জানলো ছেলেটা অসুখী, কারণ অজানা। মেয়েটা ভাবলো, সংসার ও এক রকম নেশাই, প্রতিদিন মানুষকে ধ্বংস করতে থাকে। দুজনের মধ্যে একটা মিল পেলো সে।

এই দুপুরের পর আরো একদিন ওখানেই নি:সংগ বসে ছিলো মেয়েটা, নি:স্ব,পরাজিত, নির্বান্ধব। ছেলেটা হাসিমুখে সৌজন্যমূলক কিছু কথা বলে চলে গেলো। মেয়েটা নিজের নি:স্বতার ছবি দেখলো ছেলেটার চোখেমুখে। কিছু বললো না। সংসার একা মানুষের ভীড় ছাড়া আর কী?
কিভাবে যেন ওদের ভিতরে এক অদ্ভুদ ভালোলাগা হয়ে গেলো! কিন্তু কেউ কাউকে প্রকাশ করলো না।

সাদামাটা দুটো দুপুর।
কেউ জানতো না কুড়ি পঁচিশ বছর পর সাদাসিধা আরেক দুপুরে তাদের আবার যোগাযোগ হয়ে যাবে।

পুরানা দিনের কথা ভেবে, কিম্বা আল্লাহ নিয়তিতে তাদের জন্য নতুন কিছু দিন রেখেছিলেন বলেই হয়তো তারা আবার চিনে নিলো দুজন দুজনকে। কিন্তু এই চিনে নেয়াটা তাদের জন্য নতুন এক বিড়ম্বনায় ফেলে দিলো। পুরনো সময়ের হৃদয়ের সেই অনুভূতিগুলোকে আজ আর ওরা আগের মত অনুভব করতে পারলো না। হৃদয় যদিও একই শরীরে একই রয়ে গেছে, কিন্তু কালের বয়ে যাওয়ায় আর নতুন কিছু হৃদয়ের সাথে অনুভূতির লেনদেনে একসময়ের চিরচেনা হৃদয়টা আজ কেমন অচেনা মনে হতে লাগল।

সবকিছু সময়ের প্রয়োজনে যদিও বা ফিরে আসে, কিন্তু ভালোলাগা একবার চলে গেলে সেটা আগের মত আর অনুভূতিতে জোনাক জ্বলা রাত কিংবা শেষ বিকেলের আলোয় ঝলমলে মায়াবী প্রহরকে নিয়ে আসে না।

# অণুগল্প

৬৮৭ বার দেখা হয়েছে

২ টি মন্তব্য : “বুমেরাং”

মওন্তব্য করুন : মোঃ সাদাত কামাল [০১-০৭]

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।