মিডিয়া নির্মিত দালাল বুদ্ধিজীবী : ঢাউস স্যারের গল্প

স্যার একটু কথা ছিল…..
– হ্যা বলেন।

স্যার, ‘আমাদের হওয়ার কথা ছিল বটগাছ আর আমরা হচ্ছি বনসাই’ , ক্লাসে যা বুঝালেন।ব্যাপারটা ঠিক ভাবে বুঝি নি… আপনি কি এখন ফ্রি আছেন?
-না না, আমি অনেক ব্যস্ত… (বলতে বলতেই স্যার চলে গেলেন)

(স্যারের পিছনে পিছনে যেতে যেতে ….) স্যার আপনি কখন ফ্রি থাকবেন… যদি কাইন্ডলি একটু……
-না না.. আমি অনেক ব্যস্ত (স্যার পাত্তাই দিলেন না)

এমন সময় এক পত্রিকার এক সাংবাদিক এসে নিজের পরিচয় দিয়ে বললেন, স্যার একটু কমেন্ট নিতাম আপনার। আমাদের দেশে লিভ টুগেদার বিষয়ে……
স্যার তো খুশিতে ডগমগ।
-হ্যা , এটাতো অনেক ভাইটাল একটা বিষয়। আসেন আমার রুমে আসেন।

কথা বলা শেষ করে সাংবাদিক চলে গেলেন। স্যারও রুম থেকে বের হচ্ছেন।এমন সময় আরো বড় এক পত্রিকার সাংবাদিক এসে বললেন, স্যার সমকামিতার ব্যাপারে আপনার একটা কমেন্ট নিতাম, আপনার সময় হবে কি?
-হ্যাঁ হ্যাঁ বলেন। এটাতো অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার। আসেন আসেন…….চা খেতে খেতে কথা বলা যাক।

দীর্ঘক্ষণ চা পানের পর স্যার বেরিয়ে গেলেন। এখন গাড়িতে উঠবেন, এমন সময় বিখ্যাত টিভি চ্যানেলের এক সাংবাদিক এসে বললেন, স্যার কি খুব ব্যস্ত?
-আরে না না… কোন কাজ নাই। তাই হলে যাচ্ছিলাম ।

তাহলে স্যার একটা রিকোয়েস্ট করি।ওখানে যে মানববন্ধনটা হচ্ছে , সেখানে কি একটু দাড়াবেন…… আমি একটা প‌্যাকেজ বানাবো আজকে।
-শিওর শিওর

স্যার দৌড়ে যেয়ে মানব বন্ধনের ব্যানারের নিচে দাড়ালেন আর একটু পরপর ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে দেখেন ঠিক মতো ভিডিও হচ্ছে কি না।

দূর থেকে এক অতি ভালো ছেলে দেখল মানবাধিকারের জন্য তীব্র রোদে স্যারের অপরিসীম কষ্ট… (হলের গণরুমের যে রুমে ৪২ জন ছাত্র থাকে সেই রুমে থাকার জন্যও বেচারাকে নিয়মিত নেতাদের হাতে নির্যাতিত হতে হয়।) তাই সে দৌড়ে স্যারের কাছে গেল।

স্যার , আমার উপর প্রতিদিন এতো এতো অত্যাচার হয়। গরীব ঘরের ছেলে স্যার, বাইরে থাকার সাধ্য নাই।আমি তো আপনার হলেই থাকি। আপনি যদি একটু….
– দূর হ হারামজাদা। এসব উদ্ভট জিনিস যে কোথা থেকে আসে…..

অসহায় ছেলেটি ছলছল চোখে চেয়ে থাকে আর স্যার গাড়ি হাকিয়ে রওনা হলেন ঢাকা ক্লাবে।

(ঢাবি’র বাস্তব প্রেক্ষাপট থেকে গল্পের প্লট নেয়া হয়েছে, এটা কোন কাল্পনিক গল্প না , দালালের চরিত্র )

২,০১৭ বার দেখা হয়েছে

৩৫ টি মন্তব্য : “মিডিয়া নির্মিত দালাল বুদ্ধিজীবী : ঢাউস স্যারের গল্প”

  1. আলীম , সিসিবির প্রথম পাতা তো দেখি এখন তোমার দখলেই থাকে! কিপ ইট আপ । আমি কবিতা খুব একটা বুঝিনা , তাই তোমার আগের লেখা গুলোতে কমেন্ট করা হয়ে উঠে নাই। আজকের লেখাটা পড়ে বলতেই হল,অসাধারণ ।
    ভালো থেকো ভাইয়া

    জবাব দিন
  2. সাবিহা জিতু (১৯৯৩-১৯৯৯)
    ‘আমাদের হওয়ার কথা ছিল বটগাছ আর আমরা হচ্ছি বনসাই’

    শিক্ষকদের কাছ থেকে এমন শিক্ষা প্রতিনিয়ত পেতে পেতেই আমরা বটগাছ না হয়ে বনসাই হয়ে যাই।


    You cannot hangout with negative people and expect a positive life.

    জবাব দিন
  3. ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

    তোমার লেখাটা প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করলো বলে কমেন্ট না করে পারছি না। শিক্ষকদের একটা নির্দিষ্ট সময় থাকে ছাত্রদের সাথে কথা বলার জন্য। অনেকক্ষেত্রে আগে থেকে সময় ঠিক করা থাকে যদি সাক্ষতকারী ছাত্রসংখ্যা বেশি হয়ে থাকে। আমি যখন দেশে ছিলাম তখন দেখেছি যে বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকদের কাউকে কোন জবাবদিহি করতে হয় না। সেই সংস্কৃতিতা এখনও রয়ে গেছে। এর সমাধানটা কী হতে পারে?
    ১-সময় চেয়ে শিক্ষককে ই্মেইল/চিঠি দেওয়া
    ২-কোন উত্তর না পেলে গনস্বাক্ষ্রসহ বিস্তারিত সমস্যা বর্ননা করে আবারো চিঠি দেওয়া
    ৩- নিউ মিডিয়া (ব্লগ/্ফেসবুক) ব্যবহার করে সমগোত্রীয় সমস্যাভোগীদের খুঁজে বের করা এবং সমাধানমুখী পথ বের করার চেষ্টা
    ৪-উচ্চপদের অথরিটিকে জানানো
    আমি কিছু ব্রেইনস্ট্র্রম করার চেষ্টা করলাম। শিক্ষকরা যেমন মূল্যবোধের শক্তভিত্তির অভাবে অগ্রজদের অনুসরন করে তেমনি ছাত্ররাও তাদের অগ্রজদের অনুসরন করে তেমন কোন সমাধানমুখী পদ্ধতি অনুসরন করে না।
    ভাবতে পার দূর দেশে এসির মধ্যে বসে আরামে আরামে এইসব লিখছি। তা হয়তো লিখছি। শুধু শুধু আহা উহু লিখে কী লাভ?


    “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
    ― Mahatma Gandhi

    জবাব দিন
    • আলীম (২০০১-২০০৭)

      এগুলি করা অনেক আগেই হয়ে গেছে। এক টিচার ক্লাসে বলেছেন ,সে নাকি present student দের সাথে অনলাইন বা ওভার ফোন যোগাযোগটা পছন্দ করেন না। আজব অবস্থা.....!!! আর এখন চেয়ারম্যানদের কাছে বিচার নিয়ে গেলে রেজাল্ট নিয়ে কেউ বের হতে পারবে কি না ..!!! সন্দেহ....উংরেজী বিভিগের ৭০+ শিক্ষাথীর রেজাল্ট শেষ .... ন্যায্য দাবি নিয়ে গণস্বাক্ষর করেছিল জন্য..... কোন কিছুতেই কোন লাভ নেই। যত তাড়াতাড়ি বের হয়ে যেতে পারি ততই ভালো.....


      -আলীম হায়দার.1312.

      জবাব দিন
  4. রাব্বী (৯২-৯৮)

    আমাদের সময়ের এক খ্যাতিমান শিক্ষককে অনেকে গালি দিতো "মিডিয়া হোর" বলে। উনি একজন বর্ণহীন বর্নীল বুদ্ধিজীবি। গল্পের চরিত্র ওনাকেই মনে হলো।


    আমার বন্ধুয়া বিহনে

    জবাব দিন
      • ফরিদ (৯৫-০১)

        প্রথমে ভাবছিলাম এইটা জাহিদ লুইচ্চার কথা, সাংবাদিকতা বিভাগের এক সহযোগী অধ্যাপক শুনে মনে হচ্ছে ওনার নাম "র" দিয়া শুরু "স" দিয়া শেষ। মিডিয়ার কল্যাণে অল্প বয়সে বিরাট খ্যাতি কামাইছেন। ;;;

        জবাব দিন
          • ফরিদ (৯৫-০১)

            সে এক বিরাট ইতিহাস.........যাইহোক সংক্ষেপে ১টা ছোট ঘটনা বলি,
            বছর ২/৩ আগে এক সন্ধ্যায় দেখি লাল নীল বাত্তি দিয়া প্রভোষ্ট বাংলো সাজানো হইছে। আমরা ব্যাপক অনুসন্ধান করে জানতে পারলাম প্রভোষ্ট এর কাজের মেয়ের সাথে হল এর কোনো এক কর্মচারীর বিয়ে উপলক্ষ্যে এই সাজ সজ্জা। আমরা সবাই এই মহান উদ্যোগকে স্বাগত জানালাম।

            ..... অতঃপর ১০/১২ দিন পরে আরেক সন্ধ্যায় দেখি ঐ নতুন জামাই হলের সামনে কান্না কাটি করতেছে। আমরা আবারো গভীর অনুসন্ধান করলাম। আর যা জানলাম তাকেই সম্ভবতঃ বলে কেচো খুড়তে গিয়ে ডাইনোসরের কঙ্কাল বের হয়ে আসা। ঘটনাটা হলো বিয়ের ২/১ দিনের মাথায় নতুন জামাই আবিস্কার করে যে, তার বৌ এর "চরিত্র ভাল" না। তারপর সে যারপর নাই ক্ষিপ্ত হয়ে বৌকে ব্যাপক জিজ্ঞাসা বাদ করে জানতে পারে যে... বিয়ের পূর্বে তার সাথে "একজনের" শারীরিক সম্পক ছিল। এই একজন টা কে সেটা জানার পর সে আরো ক্ষিপ্ত হয়। অতপর নতুন জামাই এই মহিলাকে তালাক দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় । এই ঘটনা জানার পর "কর্তৃপক্ষ" এই কর্মচারীকে চাকরি থেকে বহিস্কারের হুমকি দেয়।
            চাকরি হারানোর ভয়ে তাই সে কান্নাকাটি করছিল।
            পাঠক, এইখানে "একজন"/ "কর্তৃপক্ষ" বলতে কাকে বুঝানো হচ্ছে সেটা নিশ্চই বুঝতে পাচ্ছেন। :))
            যাহোক ঘটনার পরিণতি কি হইছিল আমরা জানি না। কিন্তু নতুন জামাইকে পরে আর কখনো হলে দেখা যায় নি।

            জবাব দিন
    • আলীম (২০০১-২০০৭)

      আগামি সংখ্যার কোন একটাতে এটা ছাপায়া দিমু..... আমাগো পত্রিকাতে।স্যারগো ওটা পাচ টাকা খরচ কইরা কিনতে হয়, তাই তারা সেটা পড়ে।আমি আবার সম্পাদক...হ্যা হ্যা.... প্লান আছে.....আনার্স শেষের দিকে আসলে এই কাজ করবো।


      -আলীম হায়দার.1312.

      জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : ফরিদ (৯৫-০১)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।