ভরত ভায়না – যশোর

ভাত সামনে নিয়ে মা আমার অপেক্ষা করছিলেন। তাই ঘরে ঢুকেই কোন রকমে নাকে-মুখে গুজে বাসা থেকে বের হলাম। পেছনে মা’র দরজা বন্ধ করার শব্দ কানে ভেসে এলো। সূর্য তখন মাথার উপর থেকে সরে খানিকটা পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়তে শুরু করেছে। বাসার নিকটে হওয়ায় আর ভাতঘুম তাড়ানোর বলিষ্ট লক্ষ্যে পয়দলে চলে এলাম ‘মহসিন মোড়ে’। হাজী  ‍মুহাম্মদ মহসিন তার ইরানী পিতা হাজী ফয়জুল্লাহ ও মাতা জয়নব খানমের গর্ভে ১৭৩২ খ্রীঃ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলায় জম্মগ্রহণ করেন। পরবর্তীকালে তিনি মুঘল সাম্রাজ্যের জায়গরিদার তার পিতা ও বৈমাত্রের বোন মুন্নুজান খানমের অগাধ সম্পদের উত্তরাধিকারী হন। তার উদার দানশীলতার বিষয়টি সর্বজনবিদিত। এই দানবীরের পৃষ্ঠপোষকতায় খুলনা জেলার প্রথম বিদ্যালয় ‘দৌলতপুর মহসিন মাধ্যমিক বিদ্যালয়’ ১৮৬৭ খ্রীঃ স্থাপিত হয়। মহসিন স্কুলের কল্যাণেই মহসিন মোড় – এখান থেকে সহজে দক্ষিণে খুলনা শহর, উত্তরে যশোর, পূর্বে ভৈরব নদী আর পশ্চিমে সাতক্ষীরা যাওয়া-আসা করা যায়। আমার গন্তব্য পশ্চিমমূখী, খুলনা-যশোর সীমান্ত বরাবর কেশবপুর উপজেলার ‘ভরত ভায়না’।

একটি মাহেন্দ্র-যান রিজার্ভ করে শুরু করলাম আমার যাত্রা। বিভাগীয় শহর ছেড়ে উপজেলার এ্যাসফল্ট রাস্তায় চলছিলাম যদিও, তথাপি এবড়ো-থেবড়ো, ভাঙ্গা আর খানা-খন্দে ভরা রাস্তায় চলতে চলতে অনাকাঙ্ক্ষিত ঝাঁকুনিতে দেহখানি ঘড়ির পেন্ডুলামের মতো তিনচাকার পেছনের খাঁচায় সজোরে দুলছিল। ঝাঁকুনি কমানোর মহৎ উদ্দেশ্যে ত্রিচক্রযানের লোড বৃদ্ধির জন্য আরো কয়েকজন যাত্রী সঙ্গে নেবার বায়না ধরলে, পথে অনাকাঙ্খিত সামাজিক(!!) ভোগান্তি এড়াতে ড্রাইভারের এই অকাট্য প্রস্তাবে রাজী হলাম না। অবশ্য পথের ঝাঁকুনি আর ক্লান্তি নিমিষেই দূর হয়ে গেল রাস্তার পাশের নৈসর্গিক দৃশ্য ও অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য দেখে। নিঃসঙ্গতা কাটাতে মুঠোফোনের মাধ্যমে সচিত্র আলাপনে যুক্ত হলাম বন্ধুর সাথে।

দিগন্ত বিস্তৃত ফসলের ক্ষেত, বিস্তৃর্ণ সবুজের মাঝে চিংড়ী পোকার ঘের, রাস্তার পাশের সারি সারি গাছ, দূরের ও কাছের গ্রাম্য ঘর-বাড়ি, রাস্তার পাশের দোকানপাট, ছোট ছোট বাজার, হরেক-রকমের মানুষজনসহ গ্রাম-গঞ্জের হালচালের দৃশ্যপট একের পর এক পার হয়ে চলে এলাম শাহপুর বাজার। নিত্য প্রয়োজনীয় সামানা সাজিয়ে রাস্তার দু’পাশ জুড়ে চলছে হরদম বিকিকিনি। বাজারের এক প্রান্তে বয়ে যাওয়া রুগ্ন খালের পাড়ে বহু বছরের ঐতিহ্য ধরে রেখে জমায়েত হয়েছে হাজার হাজার গরু-ছাগল, বেচা-বিক্রির আশায়। ময়দান ছেড়ে রাস্তায় উপচে পড়া এই জমায়েতের ঘন সন্নিবেশ ভেদ করে অতি সন্তর্পণে এগোতে থাকলাম সামনের পানে।

আরো বেশ খানিকক্ষন এগিয়ে গেলাম, সর্পিল গতিতে বয়ে চলা শ্রীহরি নদীর উপর সেতু অতিক্রম করার আগেই দেখলাম রাস্তার ডান পাশে নদী তীরে দৃষ্টিনন্দন ‘পঞ্চানন বাড়ি মন্দির’টি এখানকার ল্যান্ডস্কেপকে বিদীর্ণ করে সুন্দরী রমনীর কপালের টিপের ন্যায় সৌন্দর্য্য বিলিয়ে যাচ্ছে। শ্রীহরি নদী সম্মন্ধে মজার এক তথ্য জানলাম, এ নদীর পূর্বপাশ হরি নামে আর পশ্চিমপাশ বুড়ীভদ্রা নদী নামে নাকি পরিচিত – সত্য মিথ্যা যাচাই করিনি। যাহোক, নদীর তীর থেকে ক্রমেই আমার দূরত্ব বাড়ছিল। অল্পক্ষনেই পথের পাশে স্থাপিত দিক-নির্দেশক ফলকটি চোখে পড়ল – নির্দেশনা মোতাবেক এগিয়ে বড় রাস্তা থেকে গলি ও তস্যগলি অতিক্রম করে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্য দৃষ্টিগোচর হল – টিলা সদৃশ প্রাচীন এক স্থাপনার নিদর্শন ‘ভরত ভায়না’।

প্রান্তরের পর প্রান্তর জুড়ে যেখানে ভূমি গঠন কেবলই সমতল সেখানে হঠাৎ ফোঁড়ার মত ভূমি ফুঁড়ে গজিয়ে ওঠা এক টুকরো মাটির ঢিবি জনমনে যে বিস্ময় জাগাবে তাই স্বাভাবিক। অজানা মাটির স্তুপ তাই লোক পরম্পরায় মুখোরোচক গল্প আর রহস্যের জাল বুনেছে কেবল। সেসব জনশ্রুতি, গাল-গপ্প ও কিচ্ছা-কাহিনীর নীচে তলিয়ে গেছে আসল গল্পটি, বাস্তব সত্যটি। কালের ভারে নূহ্য আমাদের পূর্ব-পুরুষদের অতুলনীয় স্থাপনাটি কেবল যে অচেতনভাবে এর সত্যটি হারিয়েছে তা নয়, বরং অসচেতনতা ও ক্রমবর্ধমান নাগরিক চাপে খুইয়েছে এর আদি অস্তিত্বটি, গ্রাস করে নিয়েছে এর চারপাশের অধিকাংশ নিদর্শন। লোকচক্ষুর অন্তরালে চিরতরে হারিয়ে যাবার আগ মূহুর্তে রক্ষা পেয়েছে শুধু এই ঢিবিটুকুই।

তলানীতে এসে ঠেকা অংশটুকু নিয়ে তাই রচিত হয়েছে ধুম্রজাল। ঘন কুয়াশায় ঢাকা সেই চাদর ভেদ করে সত্যের নির্যাস বের করে আনতে চেষ্টাও; সাধ্যের মধ্যে কম হয়নি! তাতে বহু মতের বিভক্তি যেমন আছে তেমনি প্রকৃত সত্যটাও ধীরে ধীরে উম্মোচিত হচ্ছে বটে। প্রাচীন স্থাপনা সংরক্ষণে আামাদের বৈরী জলবায়ু দায়ী একথা আমরা সবাই মানি। কিন্তু দক্ষিণাঞ্চলের লবণাক্ত আবহাওয়া জ্বলন্ত আগুনে যেনো ঘি ঢেলেছে। ফলে দেশের নানা স্থানে ধর্মীয় স্থাপনাগুলো এই বৈরীতার শিকার হলেও স্থানীয় মানুষের সদিচ্ছা ও ধর্মীয় স্পর্শকাতর অনুভূতির তীব্র সামাজিক দ্বায়িত্ববোধ থেকে তা রক্ষা করার উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায়।

এভাবে রক্ষা পাওয়া নিদর্শনের নজির খুব একটা বেশী আছে তা বলা যাবে না, আর দূর্ভাগ্যবশত ভরত ভায়নার প্রাচীন এই নিদর্শনটি যথাযথ সংরক্ষণের সেই সুযোগটিও পায়নি। ফলে প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে এক সময় গোটা স্থাপনাটি লোকচক্ষুর আড়ালে চলে গিয়ে ধীরে ধীরে ২৫০ মিটার ব্যাসের ভূমিজুড়ে মোচাকৃতির একটি ঢিবির রূপ পায়। সময়ের সাথে ঢিবির উচ্চতায় তারতম্য দেখা যায়, ১৮৯৭ খ্রীঃ বেঙ্গল আর্থকোয়েকের আগে যে উচ্চতা ছিল তাও কমপক্ষে ১৫/১৬ মিটার হবে কিন্তু এখন হয়ত ১১/১২ মিটারের থেকে বেশী হবে না। ১৯২২ খ্রীঃ ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ সর্ব প্রথম ঢিবিটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়। এরপর বাংলাদেশ প্রত্নতত্ব অধিদপ্তর ১৯৮৫ খ্রীঃ খনন কাজ শুরু করে এবং ২০০১ খ্রীঃ পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ক্রম ধরে খনন প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখে। খনন প্রক্রিয়া এখনো চলমান থাকার ফলে স্থাপনার অবয়বটি সকলের সামনে ক্রমান্নয়ে উম্মোচিত হচ্ছে।

স্থানীয় চাষীরা নিজেদের জমির পরিমান বাড়াতে বাড়াতে স্থাপনার পাদমূল ক্রমান্নয়ে ছোট করে বর্তমানে যে হাল করেছে সেই সীমানা বরাবর প্রত্নতত্ব অধিদপ্তর কাটাতাঁরের সীমানা বেঁধে দিয়েছে। ফলে অবাঞ্চিত ও অযাচিত অনুপ্রবেশ যে থামানো গেছে তা নয় কিন্তু তাতে খানিকটা হলেও স্থাপনার বর্তমান রূপটি ধরে রাখতে সাহায্য করছে। এই সীমানা প্রাচীরের পশ্চিম-দক্ষিণ কোণায় যে প্রবেশ পথ রয়েছে চলুন তা অতিক্রম করে দেড় হাজার বছরের প্রাচীন এই স্থাপনায় প্রবেশ করি। ফটক সংলগ্ন প্রহরী চৌকীর আঙ্গিনা পেরোলেই হাতের বায়ে অনুর্ধ্ব ৫০ বছরের বিশাল একটি বটগাছ শাখা-প্রশাখা বিস্তার করে দর্শনার্থীদের সাময়িক বিশ্রামের জন্য অপেক্ষা করছে। বটগাছের সুশীতল ছায়ায় দেহ-প্রাণ জুড়াতে জুড়াতে এর ডান পাশে অধিদপ্তরের স্থাপনা সম্পর্কিত তথ্য ফলকটিতে চোখ বুলিয়ে নিন।

স্থাপনা সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞাণ লাভের উদ্দেশ্যে যখন ফলকটি পড়া শেষ করলাম তখনই নজরে এলো দু’জন পুরুষ ও একজন নারী আমার পাশে নিজেদের মাঝে আলাপরত আছেন। তাদের দম্পতি বলেই মনে হল আর অপরজন স্থাপনার সরকারি তত্ত্বাবধায়ক। লুঙ্গী আর ফুল হাতা জামা পড়া তত্ত্বাবধায়কের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করাতে মনে হল তিনি আমাকে ‘কাবাব-মে-হাড্ডি’ সাব্যস্থ করে বিরক্তির চোখে আমার পরিচয় জিঞ্জাসা করলেন। স্থাপনার জানা-অজানা তথ্যসমূহ নিজের মনের মাধুরী মিশিয়ে তিনি যাদের সাথে আলাপে এতক্ষণ মশগুল ছিলেন, বেরসিকের মত আমার আগ্রহ দেখে তাই তিনি অনিচ্ছা সত্ত্বেও তার জানা ক্ষুদ্র তথ্যগুলো আমাকে জানাতে চাইলেন। বুঝলাম এই স্থাপনার বিষয়ে তার জ্ঞাণ মারাত্মক সীমিত। তবুও আমি যোগ দিলাম তার সাথে আলাপচারিতায়। বেশীর ভাগ সময় আমিই বলছিলাম আর তিনি শুনছিলেন। আলোচনা জমে উঠতে থাকলে স্বামী-স্ত্রী দু’জনও আগ্রহবোধ করেন। আমাদের সাথে যোগ দেবার জন্য বউটি ২/৪টি প্রশ্নও করলেন আমাকে। বোধ করি জামাই বাবু তাতে খু্ব সন্তুষ্ট হতে পারলেন না – সুন্দরী স্ত্রীলোক অনাহুত আগুন্তকের খপ্পরে আবার না পড়ে যায় সেই আশঙ্কায় “আমাদের দেখা শেষ, চল এবার যাই” – এমন ভাব করে স্ত্রীকে নিয়ে দৃষ্টির আড়াল হলেন। তাতে অবশ্য আমাদের উৎসাহে কমতি হল না – আমরা আরো কিছুক্ষণ খোশগল্পে মেতে থাকলাম। দিনের আলো কমে আসছিল, ‘কনে দেখা আলোয়’ আর যাই হোক পুরাবস্তু দর্শন বুদ্ধিমানের কাজ নয়।

কয়েক দফা খননের ফলে স্থাপনার নিচের ইট-পাজরের হাড্ডিসার রূপটির খানিকটা বের হয়ে পড়েছিল। তখন ধারনা করা হলো, এখানে প্রাচীনকালে সম্মৃদ্ধ কোনো জনপদ ছিল। প্রাচীন সেই জনপদে অসংখ্য ইমারতের অস্তিত্ব ছিল কিনা কে জানে! তবে রাজা, উজির, আমলাদের প্রাসাদ ও দূর্গের পাশাপাশি সাধারনত ধর্মীয় স্থাপনাগুলোও ইটের মজবুত গাঁথুনীতে তৈরী করা হত। সেই ধারাবাহিকতায় এখানেও একটি ইমারত নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু এই স্থাপনার উপরের অংশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় মূল কাঠামোটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। আন্দাজ কমপক্ষে ১ একর ২৯ শতক জমির উপর বর্তমান স্থাপনাটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, স্থাপনার উঁচু মঞ্চের ভিত্তির কাঠামোটি আয়তকার। এই আয়তকার ভিত্তিমূলে বদ্ধ প্রকোষ্ঠের সারি ধাপে ধাপে উপরে উঠিয়ে এই অট্টালিকার প্রধান কক্ষটি নির্মাণ করা হয়েছিল। ভূমি মূলে ৩.০৪৮ – ৩.৯৬ মিটার পুরুত্বের দেওয়াল দিয়ে প্রথমে ২২টি বদ্ধ প্রকোষ্ঠ বানানো হয়েছে। এই প্রকোষ্ঠগুলোর উপর পর পর ১.০৬৭ মিটার চওড়া দেওয়াল দিয়ে ১৯টি, তারপর ১.১৮৯ মিটার চওড়া দেওয়াল দিয়ে ১৮টি, আবার ৩.০৪৮ মিটার চওড়া দেওয়াল দিয়ে আরো ১৯টি এবং সর্বশেষ ধাপে ২.৮ মিটার পুরুত্বের দেওয়াল দিয়ে ৪টি বদ্ধ প্রকোষ্ঠ তৈরী করা হয়েছে। তার মানে সর্বমোট ৮২টি বদ্ধ প্রকোষ্ঠের উপর প্রধান কক্ষটি নির্মাণ করা হয়েছিল। বদ্ধ প্রকোষ্ঠগুলো কিন্তু মাটি দ্বারা ভরাট করা ছিল। প্রধান কক্ষের উপর ছাদ ছিল আর তা দেখতে ছিল শেকল আকৃতির। ভূমি থেকে এর উচ্চতা পাওয়া যায় ১১.৮৮ মিটার। ভিক্ষু, শ্রমণ, পূঁজারী, আচার্য্য, সিদ্ধাচার্য্যদের জন্য এই মঞ্চকে ঘিরে পাদদেশে চারিদিক ব্যাপী ৩ মিটার প্রশস্ত প্রদক্ষিণ পথ ছিল।

সাম্প্রতিক খননে দেখা যায় স্থাপনাটিতে একাধিক নির্মাণ যুগের অস্থিত্ব আছে অর্থাৎ প্রথম নির্মাণযুগে প্যানেল অলংকরণসহ বর্গাকার একটি কাঠামো তৈরী করা হয়েছিল। পরবর্তীতে বদ্ধ প্রকোষ্ঠের সারির সম্মন্নয়ে আড়াআড়ি দেওয়াল খাড়াভাবে স্থাপন করে কাঠামোটির ক্রশাকার রূপ দেওয়া হয়েছে। চারিদিকের ৪টি ডানায় যে ১২টি কক্ষ দেখা যায় সেখানে ভিক্ষুরা বসবাস করতেন বলে মনে হয়। এই ১২টি কক্ষ নিয়ে স্থাপনার সর্বমোট কক্ষের সংখ্যা দাঁড়াল ৯৪টি। মূল স্থাপনায় প্রবেশের জন্য ৪টি প্রবেশপথ ব্যবহার করা হতো, অবশ্য মূল স্থাপনা চত্ত্বরে প্রবেশ করতে হতো পূর্বদিকের প্রধান ফটক দিয়ে। সকলের ব্যবহারের জন্য স্থাপনা প্রাঙ্গনে ২টি কুয়া ছিল। প্রচলিত জনশ্রূতি এই যে, কুয়ার মধ্যে কলাগাছ ফেলে দিলে তা বুড়ীভদ্রা নদীতে গিয়ে ভেসে উঠতো। আগেই বলেছি এ ঢিবি নিয়ে নানা কেচ্ছা-কাহিনী ডাল পালা বিস্তার লাভ করেছিল, যেমন এটি ভরত রাজার সেনাচৌকী ছিল যেমন ছিল পাশের গ্রাম কাশিমপুরের ডালিঝাড়া ঢিবিটি তার রাজবাড়ির প্রতিরক্ষার জন্য বা এটি একটি জৈন মন্দির, জনৈক ব্যাক্তি/ভরত রাজা নিজেই দেউলের চুঁড়ায় মাতৃমূর্তি স্থাপন করে ‘মা তোমার মাতৃদুধের ঋণ শোধ করলাম’ বলা মাত্র মূর্তি ভেঙ্গে খান খান হয়ে গেল/ভেঙ্গে ফেলা হলো… ইত্যাদি।

নির্মাণ উপকরন হিসাবে স্থাপনাটিতে ইট ও কাদামাটির গাঁথুনী ব্যবহার করা হয়েছে। লক্ষ্যনীয় বিষয় হলো, এখানে ব্যবহৃত ইটের আয়তন বিভিন্ন পরিমাপের এবং কোন কোন ক্ষেত্রে তা ৩৬.৫-২৩-৫.৫ ঘনসেন্টিমিটার বা ৩৬-২৩.৫-৬ ঘনসেন্টিমিটার ও ৩৫.৫-২৩.৫-৫.৫ ঘনসেন্টিমিটার বা ৩৫-২৬-৫.৫ ঘনসেন্টিমিটার। এত বৃহৎ আকারের ইট এই অঞ্চলের অন্য কোনো স্থাপনায় পাওয়া যায়নি। সতীশ চন্দ্র মিত্র মহাশয় উল্লেখ করেছেন যে, এই স্থাপনার একদিক নদী বেষ্টিত আর অপর তিন দিকে পরিখা ও গড়খাই ছিল। নিশ্চয় তা করা হয়েছিল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে সুরক্ষিত করার জন্য। রংপুরের চাপড়াকোট বৌদ্ধ বিহারেও এমন পরিখার দৃষ্টান্ত রয়েছে।

এখান থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমানের প্রত্ন-নিদর্শন উদ্ধার করা হয়েছে। যেমন: মূর্তি, পোড়ামাটির – ফলক, আসবাবপত্র, মানুষের মাথা, হাত ও পায়ের ভাঙ্গা টুকরো; কাপড়, অলংকার, দেব-দেবীর হাতের ভাঙ্গা অংশ, খেলনা, ধর্মীয় আচারাদিতে ব্যবহৃত মাটির ছোট পাত্র, মাটির প্রদীপ, লোহার তৈরী হাতিয়ার, মহিষের মাথা, গবাদি পশুর হাড়, বাঘের মুখ, অলংকৃত জ্যামিতিক নকশা (যেমনঃ কপিং, ডেন্টিং, খিলান ইত্যাদি)করা ইটের টুকরা, পায়ের চিহ্নসহ ইটের টুকরা, তৈজসপত্র (বেশীর ভাগই সানকি/থালা), গৃহস্থালীর জিনিসপত্র – কলশী, পিরিচ, বাটি, ডাবর, হাড়ি, ঢাকনী, প্রদীপ, গোলাপদানির ভাঙ্গা অংশ, ধুপদানি, সংরক্ষণ পাত্র ইত্যাদি।

মাটির পাত্রের গাত্রবর্ণ কোনটা ঈষৎ লাল, গাঢ় ছাই কিংবা ঈষৎ পীতাভ রঙের। এই সব আবার মাছের কাটা, সমান্তরাল রেখা কিংবা জাল ইত্যাদি দ্বারা নকশা করা। ক্রুশাকার স্থাপনার প্রসারিত ডানায় টেরাকোটার ফলক ছিল যেখানে শিবলিঙ্গ, নর বক্ষ, নারী মস্তক, কড়ি ও নানা উপাসনার চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছিল। নকশা করা ইটের ধরন দেখে মনে হয় স্থাপনার কাঠামোটিতে অনেক ধরনের অলংকরণ ছিল। তাছাড়া এখানে বেশ বড় আকারের ২টি পোড়ামাটির ফলক পাওয়া গেছে – এর একটিতে সম্ভবতঃ দন্ডায়মান নারী ও এর ডানপাশে নরমূর্তি এবং বামপাশে একজন বাদক দৃশ্যমান হয়। এই ফলকটির পরিমাপ ছিল সম্ভবতঃ ১.৪-৭.৫ মিটার। অপর ফলকটিতে পোষাক পরিহিত একটি নরমূর্তি বিদ্যমান আর এর পরিমাপ ধারনা করা হয় ১.৫ মিটার দীর্ঘ। এই সব থেকে ধারনা করা হয়, আলোচ্য পোড়ামাটির ফলকদ্বয় কেবল বাংলাদেশের নয় বরং সমগ্র পূর্ব-ভারতের বৃহত্তম ফলক।

দেখতেই পারছেন, এই হলো মোটামুটি ভরত ভায়না স্থাপনার হালফিল চিত্র। আমাকেও ফিরতে হবে বাড়ী। এখানে আসার পর্বটি যতটা সুবিধের ছিল ফেরার পালাটি ততটি নয়। সাঁঝের আলো থাকতে থাকতেই এখান থেকে বের হতে হবে, কমপক্ষে একটি বাহনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। কেননা সন্ধ্যা নামলে এই পথে পা দুটো ছাড়া আর কোনো গতি থাকবে না। জলদি ফিরে এলাম বড় রাস্তায়। বেশ খানিকটা হেঁটে দু’দফা ভ্যানে চড়ে শাহপুর বাজার থেকে মাহেন্দ্র যান ধরলাম। বাজারের মসজিদে মাগরেবের আযানের সুমধুর ধ্বনি শেষ হবারও বেশ খানিকক্ষন পর ত্রিচক্রযানটি ছুটতে শুরু করল। দ্রূত রাত নেমে এলো গ্রামের এই আঁকাবাঁকা পথে। চোখের দৃষ্টি রুদ্ধ হলো বটে, তবে আমি হারিয়ে গেলাম ফেলে আসা হাজার বছরের স্মৃতিতে… প্রাপ্ত ও আনুষঙ্গিক তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণের গভীর ভাবনায় ডুবে নির্ণয় করার চেস্টা করতে থাকলাম এই স্থাপনার গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিষয় – যেমন, স্থাপনাটি কি? বিহার না মন্দির? মন্দির হলে জৈন মন্দির না বৌদ্ধ মন্দির? নাকি অন্য কোনো স্থাপনা যেমনঃ মঠ, স্তুপ, চৈত্য? এবং সর্বশেষে স্থাপনার বয়স কত?

স্থানীয় জনগনের কাছে ঢিবিটি প্রশাসনিকভাবে চিহ্নিত করণের পূর্ব থেকেই ‘ভরতের দেউল’ বা ‘ভরত রাজার দেউল’ নামে পরিচিত ছিল। দেউল অর্থ দেবালয় যেমন মন্দির এক ধরনের দেবালয়। হতে পারে সেজন্য স্থাপনার সাথে দেউল নাম যুক্ত হয়েছে বা মন্দির থেকেই দেউল কথাটির প্রচলন শুরু হয়েছে। অন্যদিকে, অনেকে বলেন এই অঞ্চল একদা ভরত রাজার শাসনাধীন ছিল। তিনি এই স্থাপনার নির্মাতা ও প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। স্থানীয়দের দৃঢ় বিশ্বাস রাজা দশরথের ২য় স্ত্রী কৈকেয়ীর গর্ভজাত পুত্র যে ভরত তিনিই হলেন এখানকার ভরত রাজা। পৌরানিক এই রাজার উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য এখান থেকে ২ কিলোমিটার দক্ষিণে আরেকটি ঢিবি দেখিয়ে স্থানীয়রা বলে থাকেন যে, সেটা ভরত রাজার রাজবাড়ির ধ্বংসাবশেষ কিংবা পাশের গ্রাম কাশিমপুরে ডালিঝাড়া নামের যে ঢিবিটি আছে তা এই রাজার এক আমলার আবাসস্থল। আবার কারো কারো মতে তিনি একজন ব্রাক্ষণ কিংবা ক্ষত্রিয় নৃপতি। অন্যদিকে, সুন্দরবনে ‘ভরতগড়’ ও ‘ভরত রাজার মন্দির’ নামে দু’টি স্থাপনার সন্ধান পাওয়া যায়। পুরাকালে সুন্দরবন এলাকায় ভরত নামের বিখ্যাত এক রাজা ছিলেন – বলছেন সতীশচন্দ্র মিত্র। ভরত ভায়নার রাজা আর সুন্দরবনের ভরত রাজা একই ব্যাক্তি কিনা তা অবশ্য নির্ণয় করা হয়নি। জানা মতে, গ্রামের নাম ‘ভরত ভায়না’-ও অপরিবর্তিত আছে সেই প্রাচীন আমল থেকেই। তাহলে ভরত রাজার লোকশ্রুতির সাথে গ্রাম ও স্থাপনা বা মন্দিরের একটি যোগসূত্র আছে বলতে হয়। মনে হয় ভরত পৌরানিক রাজা নন বরং তিনি হয়ত এখানকার সামন্ত কোন নৃপতি ছিলেন। সুতরাং স্থাপনাটি একটি দেউল বা মন্দির হবার সম্ভাবনাই বেশী।

মন্দিরের স্থাপাত্যিক কাঠামোটি ক্রুশাকার বা সর্বোতভদ্র শৈলীর ভিত্তির উপর নির্মিত। তাতে ধারনা হয় এটি এই স্থাপনার কেন্দ্রীয় মন্দির। কিছুকাল আগেও নদী ও পরিখা থেকে স্তুপটি প্রায় কেন্দ্রস্থলেই অবস্থিত ছিল। সাধারনতঃ এ ধরনের মন্দির কোনো বিহারের কেন্দ্রীয় মন্দির হিসাবে প্রতিষ্ঠা করা হয়ে থাকে। কুমিল্লার ময়নামতি-লালমাই পাহাড় শ্রেণির আনন্দ বিহার, ভোজবিহার, শালবন বিহার, নওগাঁর পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার, রংপুরের চাপড়াকোট বিহার কিংবা ভারতের বিহার প্রদেশের ভাগলপুর জেলার বিক্রমশীলা মহাবিহারের দৃষ্টান্ত আমলে নিলে এখানে বিহার থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। চীনের হেনান প্রদেশে জম্মগ্রহণকারী বিখ্যাত পরিব্রাজক য়ুয়াং চুয়াং/উয়ান চুয়াঙ/হিউয়েন সাঙ (Hiuen Tsang-জম্ম ও মৃত্যু ৬০৩ ও ৬৬৪ খ্রীঃ) ৬৩৮-৬৩৯ খ্রীষ্টাব্দে রাজা হর্ষবর্ধনের (৫৯০ খ্রীঃ – ৬৫৭ খ্রীঃ, যিনি নিজেও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ছিলেন) আমলে যখন তিনি বাঙলা ভ্রমণ করেন তখন বঙ্গ ও সমতটে ৩০টি সংঘারাম  দেখেছিলেন – এ প্রসঙ্গে মিস্টার কাশিনাথ দীক্ষিত বলছেন, এটিও তার মধ্যে একটি সংঘারাম। তবে চৈনিক পরিব্রাজক একই সাথে ১০০টি বৌদ্ধ মন্দিরও দেখেছিলেন। সংঘারাম ও বিহার যদিও সমার্থক, তবে এখনো পর্যন্ত এখানে বিহার থাকার বিষয়টি প্রমানিত হয়নি। তবে পরিকল্পিত বৈজ্ঞানিক খননের মাধ্যমে তা নিশ্চিত করা যেতে পারে। উল্লেখ্য যে, ভূতাত্ত্বিক বিবেচনায় যশোর প্রাচীন বঙ্গেরই অংশ ছিল।

ভরত ভায়নায় বিহার/সংঘারাম থাকার বিষয়টি আরো দৃঢ় হয় এই কারনে যে, নিকটবর্তী বেশ কয়েকটি স্থানে এরূপ স্থাপনা থাকার দৃষ্টান্ত অনুমিত হয়, যেমন সতীশ চন্দ্র মিত্র নানা তথ্য উপাত্ত ঘেঁটে অনুমান করেন যে খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনি ইউনিয়নের কপিলমুনি নামক স্থানে এমন একটি বৌদ্ধ সংঘারাম ছিল। কপিলমুনি ভরত ভায়না গ্রামের উপরে/উত্তরে অবস্থিত ও প্রাচীন একটি গ্রাম। এছাড়াও চুকনগরের বরাতিয়া কাঁঠালতলার হাটের নিকট-যশোর সদরের গদখালী, মুড়ালী, আলমনগর, পুরাতন কসবা-ফরিদপুরে মঠবাড়ি গ্রাম, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজার ইত্যাদি, হাতিয়াগড় ও বালান্ডা (পূর্বের যশোর ও বর্তমানে ভারতের ২৪ পরগনার অন্তর্গত), খুলনা-যশোরের গোবরডাঙ্গা, বোধখানা, বিদ্যানন্দকাঠি, জগদল, সত্রাজিতপুর, মসজিদকুড়, বাগেরহাটের ঠাকুরদিঘী এমনকি সুন্দরবনের বিভিন্ন স্থানে প্রাপ্ত বৌদ্ধমূর্তি/বৌদ্ধস্তুপ/ মঠ, পাথর (বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ মসজিদের পাথর, ঝিনাইদহের বারবাজারের রাজাপুর গ্রামের সোনাই পন্ডিতের পুকুরে প্রাপ্ত পাথর), স্তম্ভ (মসজিদকুড় মসজিদের ৪টি পাথরের স্তম্ভ, খানজাহান আলীর বসতবাড়ির পাথরের স্তম্ভ, বাগেরহাটের জাহাজঘাটার স্তম্ভ), ভাস্কর্য্য, প্রত্ন-নিদর্শন বিশ্লেষন করে মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর সাথে সুর মিলিয়ে সতীশ চন্দ্র মিত্রও বলছেন যে, এই সব স্থানে বৌদ্ধ বিহার/মঠ/সংঘারাম/স্তুপ/চৈত্য ছিল। মোর্য্য নৃপতি চন্দ্রগুপ্ত (৩২২ খ্রীঃ পূঃ – ২৯৮ খ্রীঃ পূঃ) নিজে জৈন ধর্মের সমার্থক হলেও তার পৌত্র মহারাজ অশোক (খ্রীঃপূঃ ২৬৯ – খ্রীঃপূঃ ২৩২) ছিলেন বৌদ্ধ ধর্ম প্রচারের অগ্রপথিক। ধারনা করা হয় সুন্দরবন অঞ্চলে যেসব বৌদ্ধ নিদর্শন পাওয়া গেছে তা অশোকের আমলে স্থাপিত। এই সব বিবেচনায় সতীশ চন্দ্র মিত্র মনে করেন ভরত ভায়নার স্থাপনাটি একটি বৌদ্ধ সংঘারাম। অতএবঃ যদি এখানে বিহার নাও থাকে তাহলেও এটি কেবলই একক একটি বৌদ্ধ মন্দির হিসাবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল – এমন সিদ্ধান্তে সহজেই উপনীত হওয়া যায়।

ভরত ভায়নার মন্দিরটি জৈন মন্দির – এমন একটি ক্ষীন আওয়াজ লক্ষ্য করা যায়। এটা ঠিক যে, বাঙলার কোথাও কোথাও জৈন ধর্ম পালন করা হতো, এমনকি তাদের বিহার এবং মন্দিরও কোথাও কোথাও তৈরী করা হয়েছিল। তবে বাঙলার কোথাও জৈন ধর্ম প্রাধান্য বিস্তার করতে সক্ষম হয়নি। যদিও পাহাড়পুরে প্রাপ্ত একটি তামার লিপি থেকে ধারনা করা হয় বিহারটি বৌদ্ধবিহার হবার পূর্বে হয়ত কোনো এক সময় তা জৈনবিহার ছিল বা সেই বিহারের উপকরন দিয়ে নতুন বিহারটি নির্মাণ করা হয়েছিল। যেহেতু ভরত ভায়নায় বিহারের কোনো অস্তিত্ব এখনো পাওয়া যায়নি তাই এটি কোনো বৌদ্ধ বিহার নয় হয়তো। বিহারে যে আবাসকক্ষ থাকে তা এতো উঁচুতে থাকে না ও এই রকম চিকনও হয়না। সম্ভবতঃ এটি একক কোনো কেন্দ্রীয় মন্দির বা বৌদ্ধ স্তুপও হতে পারে। তবে তা যাই হোক না কেনো, অন্তত প্রাপ্ত তথ্যের উপর ভিত্তি করে এটা যে জৈন মন্দির তা বলা যাবে না।

এখানে একটি বিষয়ে খটকা থেকে যায়। আর তা হলো, মন্দিরটি যদি বৌদ্ধ মন্দির হয় তাহলে টেরাকোটার ফলকে কেনো বৈদিক/হিন্দু দেবতা ‘শিব’ থাকবেন। প্রাচীন বাঙলার দুটি ধর্ম অর্থাৎ বৈদিক ও বৌদ্ধ ধর্ম প্রাধান্য বজায় রাখে। উভয় ধর্মের উৎসই বাঙলার বাহিরে। উত্তর ভারতের বৈদিক ধর্ম আর নেপাল থেকে বৌদ্ধ ধর্ম যদিও বাঙলায় প্রবর্তিত হয় তথাপি দীর্ঘ দূরত্ব আর স্থানীয় লৌকিক দেব-দেবী ও ধর্মাচারের প্রভাবে ধর্মদ্বয়ের বিশুদ্ধ রূপটি বজায় রাখা সম্ভব হয়নি। চৈনিক পরিব্রাজকও একই সুরে বলছেন – বাঙলার বৌদ্ধ ধর্ম মূল বৌদ্ধ ধর্ম থেকে সরে গেছে। অপরদিকে অনার্য/লৌকিক দেবতা শিব বৈদিক ধর্মে দাপটের সাথে স্থান করে নেয় অর্থাৎ তিনি অনার্য দেবতা থেকে আর্য দেবতায় পরিনত হন। বৌদ্ধরা বৈদিক দেব-দেবীর উপাসনা করতেন কিনা তা স্পষ্ট নয়, তবে তারা যে উক্ত দেব-দেবীদেরকে যথেষ্ট সম্মান দেখাতেন তার প্রমান পাওয়া যায়। উদাহরন স্বরূপ বলা যায়, নওগাঁর পাহাড়পুর/সোমপুর বিহারের মন্দিরগাত্রে যে ৬৩টি মূর্তি দেখতে পাওয়া যায় তার অধিকাংশই হিন্দু/বৈদিক দেব-দেবী। আর এখানকার পোড়ামাটির ফলকে তো অসংখ্য হিন্দু দেব-দেবীর সাথে শিবও রয়েছে। কুমিল্লার ময়নামতির শালবন/ভবদেব বিহারের পোড়ামাটির ফলকে হিন্দু দেব-দেবীর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।

বৌদ্ধ মন্দিরটি আসলে কত প্রাচীন? ভূমি মূলে স্থাপনার ইট ও পাদদেশ পর্যবেক্ষণ, বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করে তৎকালীন ভারতের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক মিস্টার কাশিনাথ দীক্ষিত ধারনা করেন এটি ৫ম শতকের কোন বৌদ্ধ বিহার। বিজ্ঞ প্রত্নবিদরা প্রাথমিকভাবে ধারনা করেছিলেন যে, মন্দিরটি ৩য়-৬ষ্ঠ খ্রীঃ কোন হারিয়ে যাওয়া জনপদের এক গুরুত্বপূর্ণ বৌদ্ধ মন্দির এবং এটি ‘আদি ঐতিহাসিক যুগ’-র একটি অনন্য স্থাপনা। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালকের কার্যালয়, খুলনা বলছে, “গঠন ও শৈলীর ভিত্তিতে উম্মোচিত স্থাপত্যটির প্রথম নির্মানকাল খ্রীঃ ৭-৯ শতকের মধ্যবর্তী কোনো সময় হতে পারে”। ভরত ভায়না গ্রাম তথা এর আশপাশের ভূমিগঠন অতি প্রাচীন যুগে প্রাকৃতিক নিয়মে শুরু হলেও সম্ভবত মৌর্য্য আামল থেকেই এখানে জনবসতি গড়ে উঠতে থাকে। ভরত ভায়না থেকে কেবলমাত্র ৬৪ কিলোমিটার দূরত্বে বর্তমানে ভারতের ২৪ পরগনা জেলার ‘চন্দ্রকেতুগড়’ মৌর্য্য কীর্তির স্বাক্ষর বহন করে। ভরত ভায়নার আশেপাশে বিশেষ করে গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলার ঘাঘর ইউনিয়নের মোক্ষ কোটালীপাড়া মৌজার ‌‘‌চন্দ্রবর্মনকোর্ট’ নামের মাটির দূর্গটি ৩১৫ খ্রীঃ রাজা চন্দ্রবর্মা কর্তৃক প্রতিষ্ঠা লাভ করে। আবার ভরত ভায়না থেকে উদ্ধারকৃত প্রত্ন উপাদানগুলোর মধ্যে একটি হলো ‘পোড়ামাটির মাথা’ যা কিনা গুপ্তামলের (৩২০ খ্রীঃ – ৫৫০ খ্রীঃ)। গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলার গুয়াখোলা, কুরপাল ও ঘুঘ্রাহটি গ্রামে সম্রাট দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত (৩৭৪ – ৪১৩ খ্রীঃ), স্কন্ধগুপ্ত (৪৫৫ – ৪৬৭ খ্রীঃ) ও নরেন্দ্রাদিত্য সমাচারদেব (৫৮০–৬০০ খ্রীঃ)-এর সোনার মুদ্রা ১৯০৮ খ্রীঃ আবিষ্কৃত হয়েছে। এইসব গ্রাম ও দূর্গে বিচ্ছিন্নভাবে ৬টি তামার লিপিফলক ও ১টি সূর্য্য মূর্তিও পাওয়া গেছে। সেখানে মহারাজাধিরাজা ধর্মাদিত্য (৫৩৫–৫৪০ খ্রীঃ), গোপচন্দ্র (৫৪০–৫৮০ খ্রীঃ), নরেন্দ্রাদিত্য সমাচারদেব ও শ্রীদ্বাদশাদিত্য নামের এক রাজার নাম উল্লেখ করা আছে। মাগুরা জেলার মহাম্মদপুরেও গুপ্ত যুগের মুদ্রা পাওয়া গেছে।

নৃতাত্ত্বিক বিশ্লেষনেও দেখা যায়, ভরত ভায়না থেকে কোটালীপাড়ায় মানব অভিবাসন হয়েছিল। আর কে না জানে, বঙ্গের সভ্যতা যাত্রা শুরু করেছিল সেই ‘গোষ্ঠী যুগ (খ্রীঃপূঃ ৩ – ১০০০ খ্রীঃ)’ থেকেই। ভরত ভায়নার জেলেপাড়ার আদি অধিবাসীরা রাজবংশী, আবার এই ‘‘গ্রামের নিকটবর্তী আগরহাটি, গৌরীঘোনা, বরাতিয়া, বামনদিয়া, সন্ন্যাসগাছা, বামনডাঙ্গার, মাদারডা্ঙ্গা, রত্নেশ্বরপুর, বাকসাপোল, সাতাইসকাটি প্রভৃতি ১৪/১৫ খানি গ্রামে কাপালীর বাস”। সতীশ চন্দ্র মিত্র বলছেন এই গ্রামের নিকটবর্তী এলাকায় এমন অনেকে আছেন যারা বর্তমানে নিজেদের হিন্দু বলে পরিচয় দিচ্ছেন যদিও তারা অতীতে আসলে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ছিলেন। এমনকি খুলনা-বাগেরহাটের বহু গ্রামে যোগী জাতির আবাসভূমি পরিলক্ষিত হয় যারা আগে বৌদ্ধ ছিলেন। আবার মন্দিরের গঠন শৈলীর সাথে যশোর জেলার মনিরামপুর উপজেলার দমদম পীরস্থান ঢিবি খননে উম্মোচিত পূর্বমূখী মন্দির, বগুড়া জেলার মহাস্থানগড়ের গোকুল মেড় (বেহুলার বাসর ঘর বা লক্ষীন্দরের মেড় নামে পরিচিত)-এর সাথে মিল রয়েছে। মনিরামপুর ভরত ভায়না গ্রামের নীচে/দক্ষিণে অবস্থিত।

ভরত ভায়নার আশে পাশে গুপ্তামলের নিদর্শন থাকা এবং মন্দিরে সেই আমলের ‘পোড়ামাটির মাথা’ পাওয়া যাওয়ায় স্থাপনার প্রাচীনতা যে কমপক্ষে গুপ্তামলের সমসাময়িক তা কি আপাতভাবে ধরে নেওয়া যায়? যত দূর জানা যায়, ৬ষ্ঠ শতকের প্রথম দিকে মহারাজাধিরাজা ধর্মাদিত্য গুপ্ত রাজবংশের কাছ থেকে সমতট দখল করতে সক্ষম হয় এবং তার উত্তরসূরী গোপচন্দ্র ও নরেন্দ্রাদিত্য সমাচারদেব পরবর্তীতে রাজদন্ড প্রাপ্ত হয়। আগেই বলেছি এই নৃপতিদের সাথে বঙ্গের দক্ষিণাঞ্চল সম্পর্কিত ছিল। অপরদিকে, দমদম পীরস্থান ঢিবি মন্দিরে প্রাপ্ত প্রত্ন-নিদর্শন বিশ্লেষন করে ধারনা করা হয় এটি খ্রীঃ ২য়-৩য় শতকের এবং গোকুল মেড় খ্রীঃ ৫ম-৬ষ্ঠ শতকের স্থাপনা। তাহলে বোঝা যাচ্ছে এই ধরনের মন্দির নির্মাণের কৌশলটি কমপক্ষে খ্র্রীঃ ২য় শতক থেকেই শুরু হয়েছিল। বাংলাদেশের বৃহত্তম বৌদ্ধ নিদর্শন কুমিল্লার ময়নামতি-লালমাই পাহাড় শ্রেণিও গুপ্তামলের পরপরই বিশেষ করে পাল আমলে (৭৫০ খ্রীঃ – ১২০০ খ্রীঃ) বিস্তার লাভ করেছিল এবং দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গেও তা প্রসারিত হয়েছিল। কিন্তু সেখানকার সাথে এই মন্দিরের ভূমি নকশার মিল থাকলেও নির্মাণ কৌশলে ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। ধারনা করি ভরত ভায়নায় ব্যবহৃত ইটগুলো হাতে বানানো – বলতে চাচ্ছি ইট বানানোর কৌশল সম্ভবতঃ তখনও তারা রপ্ত করতে পারেনি যেমনটা পরবর্তীতে উন্নতি লাভ করেছিল। কুমিল্লার বিহার ও মন্দিরগুলো খ্রীঃ ৬ষ্ঠ শতকের পর তৈরী করা হয়েছিল এবং বাংলার ক্রুশাকার/সর্বোতভদ্র স্থাপত্য শৈলীটি সম্ভবত ভরত ভায়নার ভিত্তির অনুকরণে পরবর্তীকালে অনুসরন করা হয়েছে। এই সব নিয়ামকসমূহ বিবেচনা করে ধারনা করি বৌদ্ধ মন্দিরটি খ্রীঃ ৫ম-৬ষ্ঠ শতকের কোন এক সময় নির্মাণ করা হয়েছিল। Archaeological Survey Report ও মোহা. মোশাররফ হোসেন একই মত পোষণ করেন।

সপ্তম শতাব্দীর শুরুর দিক থেকেই বাঙলার পরাক্রমশালী নৃপতি রাজা শ্রীমহাসামন্ত শশাংক (৬০৬ খ্রীঃ – ৬২৫ খ্রীঃ) বৌদ্ধদের প্রতি মারাত্মকভাবে খড়গহস্ত হয়েছিল। ফলশ্রূতিতে বৌদ্ধ সমাজের উপর নেমে এসেছিল বিভীষিকা। বিহার, মন্দির, বৌদ্ধমূর্তি ভেঙ্গে ফেলা, বোধগয়ায় বোধিবৃক্ষ কেটে ফেলাসহ বৌদ্ধদের বিতাড়িত করার মতো ঘটনাও তখন ঘটেছিল – বিষয়টি পুরোপুরি সত্য না হলেও সারা বাঙলা জুড়ে কিন্তু তখন শশাঙ্কের শৈব মত ব্যপক প্রসার লাভ করতে সক্ষম হয়। হতে পারে, এই বিপর্যয়ের ধামাক্কা সামলে উঠতে না পেরে বা পরবর্তীতে অন্য কোনো কারনে ভরত ভায়নার বৌদ্ধ মন্দিরটিও ধ্বংসের শিকার হয়েছিল। অবশ্য এসবই নিছক অনুমান মাত্র, কেবলমাত্র প্রকৃত গবেষণার মাধ্যমেই এই সবের সত্যতা যাচাই করা সম্ভব। মনে রাখা প্রয়োজন যে, বাঙলায় পাল আমলে (৭৫০ খ্রীঃ – ১২০০ খ্রীঃ) পুনরায় বৌদ্ধ ধর্ম পুনর্জীবিত হয়। ভরত ভায়না মন্দিরের পরিখা, গড়খাই, ইটের তৈরী সীমানা প্রাচীর ও লোহার হাতিয়ারের উপস্থিতি নিশ্চিতভাবেই অতর্কিত আক্রমণ প্রতিহত করার বিষয়টিকে আমাদেরকে স্মরণ করে দেয়।

বৌদ্ধ মন্দিরটি দেশের আদি ঐতিহাসিক যুগের অন্যতম এবং দক্ষিণ বঙ্গের একমাত্র আদি ঐতিহাসিক ও সর্বোতভদ্র ধরনের মন্দিরের নিদর্শন। মোক্ষম সুযোগ ও সুবিধা বুঝে এখান থেকে অগনিত ইট যথেচ্ছাচারে হরণ করা হয়েছে। ইট হরণকারীদের দৌরাত্ব্যের কারণে ‘মরার উপর খরার ঘা’-র মত স্থাপনার অবশিষ্ট হাড়-মাংস আলাদা করে কংকালটি অত্যন্ত জীর্ণদশায় বহুকাল অভিভাবকহীনতায় ভূগছিল। বর্তমানে শ্রীহরি নদীর ভাঙ্গনের কবলে নাজুক অবস্থায় আছে প্রাচীন এই মন্দিরটি। তাই প্রত্ন স্থাপনাটি রক্ষার আন্তরিক পদক্ষেপ এখনই নেওয়া অতীব জরুরী। খুলনা-যশোর জেলার সীমান্তে কেশবপুর উপজেলার বুড়ীভদ্রা নদীর পশ্চিম তীরে গৌরীঘোনা ইউনিয়নের ত্রিমোহনী এলাকায় ভরত ভায়না গ্রামের বৌদ্ধ মন্দিরটি অজানা আক্ষেপে; সম্মৃদ্ধ আগামীর প্রত্যাশায় প্রতিটি পর্যটকের মুখ পানে চেয়ে থাকে! চিরায়ত নাগরিক ব্যস্ততা আর কোলাহলের মাঝে সেই চাপা কান্না কেউ কি শুনতে পায়!!


১৫ এপ্রিল ২০১৮/

mamun.380@gmail.com

 

তথ্যসূত্রঃ

১. Greater Jessore Archaeological Survey Report, Md. Mosharraf Hossain, পৃঃ ২১-২২/২৮-৩০/

২. Coins From Bangladesh, A guide to The Coins of Bengal Especially Circulated in Bangladesh, Bulbul Ahmed and AKM Shahnawaz, পৃঃ ১৬-১৭/

৩. যশোহর খুলনার ইতিহাস, প্রথম খন্ড, সতীশ চন্দ্র মিত্র, পৃঃ ৭৪/১৫৪-১৬৪/৩০১/

৪. যশোহর খুলনার ইতিহাস, দ্বিতীয় খন্ড, সতীশ চন্দ্র মিত্র, পৃঃ ৫৩৮/

৫. ভরত ভায়না আদি মধ্যযুগীয় বৌদ্ধ মন্দির, আঞ্চলিক পরিচালকের কার্যালয়, খুলনা, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়/

৬. বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, এ কে এম শাহনাওয়াজ, পৃঃ ৫৯-৬০/

৭. স্থাপত্যের ইতিহাস, মোহা. মোশাররফ হোসেন, পৃঃ ১৩৯-১৪০/

৮. যশোর জেলার ইতিহাস, আসাদুজ্জামান আসাদ সম্পাদিত, পৃঃ ২১-২২/১১৫-১১৮/

৯. হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি, গোলাম মুরশিদ, পৃঃ ৫২-৫৯/৩৯৬-৩৯৯/

১০. বাংলায় ভ্রমণ, ইস্ট বেঙ্গল রেলওয়ে (১৯৪০)/BANGLAY BHRAMAN, a `Travelogue on historical documents and legends by E. B. RAILWAY (1940), পৃঃ ১৩৬/

১১. ৬৪ জেলা ভ্রমণ, লিয়াকত হোসেন খোকন, পৃঃ ৩১১/

১২. বাংলার প্রাচীন সভ্যতা ও পুরাকীর্তি, খন্দকার মাহমুদুল হাসান, পৃঃ ১৮৭/

১৩. প্রাচীন বাংলার পথ থেকে পথে, খন্দকার মাহমুদুল হাসান, পৃঃ ১৬১/

১৪. বাংলা ও বাঙালির ইতিহাস, খন্দকার মাহমুদুল হাসান, পৃঃ ১৬/৪৩/৫৬/৫৭/

১৫. পল্লীবাংলার ইতিহাস, ডব্লিউ হান্টার, পৃঃ ৯৫/

১৬. পুরাকীর্তি পুরাতত্ত্ব, মোঃ মোশাররফ হোসেন, পৃt ১০০/১৩৩/

১৭. বাঙ্গালার ইতিহাস, রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, ১ম খন্ড, পৃঃ ৩৭/৪১/৪৩/৬০/৬১/৬৪/৬৫/৬৭/৭১/৭২/১০৫/

১৮. বাঙলাদেশের প্রত্নসম্পদ, আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া, পৃঃ ৩৭৮-৩৮৩/

১৯. পুরাতত্ত্বের বাংলাদেশ ঐতিহ্যের বাংলাদেশ, মোহা. মোশাররফ হোসেন, পৃঃ ২০/১১৮-১২০/

২০. বাঙলাদেশ, মনসুর মুসা সম্পাদিত, পৃঃ ৫১/

২১. বাংলা অঞ্চলের ইতিহাস, নতুন দৃষ্টিকোণে একটি সমীক্ষা, সৈয়দ আমীরুল ইসলাম, পৃঃ ১৮৪/

২২. ভরত ভায়নার ঢিবিরহস্য, দৈনিক কালের কন্ঠ, ০৯ এপ্রিল ২০১২ খ্রীঃ/

২৩. ঘুরে আসুন ভরতের দেউল, বাংলা নিউজ ২৪, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ খ্রীঃ/

২৪. ঘাঘরের তীরে জলদুর্গ বসতি, মিজানুর রহমান, বনিকবার্তা, ১১ জুন ২০১৫ খ্রীঃ/

২৫. ভরত ভায়না বৌদ্ধ মন্দির, উত্তম মন্ডল, দৈনিক প্রথম আলো, ২০ আগষ্ট ২০১৬ খ্রীঃ/

২৬. ভরত-ভায়নার দেউল ও কিছু কথা, মোঃ রুহুল আমিন, কেশবপুর নিউজ, ৩০ জানুয়ারী ২০১৭ খ্রীঃ/

২৭. মৃতপাত্র পোড়ামাটির ফলক ভগ্নাংশ থেকে ইতিহাসের খোঁজ, দৈনিক জনকন্ঠ, মোরসালিন মিজান, ১৯ এপ্রিল ২০১৭ খ্রীঃ/

২৮. কেশবপুরে ভরত রাজার দেউল ভিন্ন মাত্রার পর্যটন কেন্দ্র, দৈনিক বাস্তবতা, ২৩ মার্চ ২০১৮ খ্রীঃ/

২৯. কেশবপুরে ভাঙ্গন আতংকে দুই শতাধিক পরিবার, দৈনিক ইত্তেফাক, ১০ এপ্রিল ২০১৮ খ্রীঃ/

৩০. উইকিপিডিয়া/বাংলাপিডিয়া/

২ টি মন্তব্য : “ভরত ভায়না – যশোর”

  1. অনেক ধন্যবাদ আপনাদের লেখাগুলো খুব ভালোলাগে।
    www.eyenewsbd.com একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল যা ২018 থেকে যাত্রা শুরু করে। এই সংবাদ পোর্টালটি সব ধরণের ঘটনা চূড়ান্ত প্রমাণের সাথে বাস্তবায়িত হয়। আমরা সর্বদা সত্য অনুসন্ধান করছি এবং আমরা কখনোই কোন অনৈতিক বিষয় সমর্থন করি না।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : কাজী আব্দুল্লাহ-আল-মামুন (১৯৮৫-১৯৯১)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।