জীবন যখন যেমন

মাসতিনেক আগ পর্যন্ত সাময়িক বিরতি বাদে বিবাহিত ব্যাচেলর জীবন পার করছিলাম। দুপুর দুটো থেকে আড়াইটার মধ্যে অফিস শেষ করে চারটার ভিতরে মাঠে, ফুটবল বা ক্রিকেট খেলা শেষে সন্ধ্যার আগ থেকে শুরু হতো কয়েক ঘন্টার জন্য টেনিস। রাতের খাবার খেয়ে টিভিতে ইউরোপিয়ান ফুটবল আর তা না হলে সদ্য ডাউনলোড করা কোন টিভি সিরিজ দেখতে দেখতে ঘুমানো। ব্যতিক্রম হিসেবে মাঝে মাঝে অন্যদের সাথে ইন্টারন্যাশনাল ব্রিজ খেলতে বসা। আর এ সব কিছুর মাঝে মাঝে ফেসবুক, ব্লগ বা ম্যাসেঞ্জারে আড্ডাবাজি তো ছিলই। সত্যি কথা বলতে শুধু বউকে মিস করা ছাড়া রুটিনটা খুব একটা মন্দ ছিল না।

এক পর্যায়ে আমার বিবাহিত ব্যাচেলর স্ট্যাটাস থেকে ব্যাচেলর অংশটা ঝরে পড়লো। অফিস আর বিকালের বাধ্যতামূলক এক ঘন্টার গেমস বাদে বাকি সময় পরিপূর্ণ সংসার জীবন। দুজনের টোনাটুনির সংসার চালানোর পাশাপাশি হালকা ঘোরাঘুরি, টিভি, মুভি ইত্যাদি নিয়ে দারুন সময় কাটালাম কিছুদিন। বাস্তব জীবন নিয়েই পুরোপুরি মগ্ন থাকায় ইন্টারনেটের ভার্চুয়াল জগতের প্রতি আকর্ষণ অনেকটাই কমে গেল। চোখের পলকে দুমাস কেটে গেল।

ফেব্রুয়ারির শুরুতে যোগ দিলাম এক দীর্ঘমেয়াদী কোর্সে। সারাদিন ক্লাস, তারপর ক্লাসের প্রিপারেশন, এসাইনমেন্ট, প্রেজেন্টেশন ইত্যাদি নিয়েই সকল ব্যস্ততা। এর আগে খেলা, টিভি ইত্যাদি নিয়ে সারারাত জেগে থাকতেও যেখানে অসুবিধা হতো না সেখানে বই নিয়ে বসলে মাঝরাতের আগে থেকেই ঘুমের সাথে যুদ্ধ শুরু।

ফেব্রুয়ারির ১০ তারিখে এক নতুন জীবনের শুরু হলো। আমাদের ঘর আলো করে নতুন মেহমান হিসেবে ‘নক্ষত্র’ আসলো । এরপর থেকে দিনের সব ব্যাস্ততার মাঝেও সব কিছুই ছেলেকে কেন্দ্র করেই ঘুরতে লাগলো। যেকোন কাজ শুরু করার আগে প্রথম চিন্তাই থাকতো কিভাবে নক্ষত্রের জন্য একটু বেশি সময় বের করা যায়। জীবনের প্রধান লক্ষ্যই যেন হয়ে দাড়ালো ওর সাথে সর্বোচ্চ সময় কাটানো।

কিন্তু সপ্তাখানেক আগে আবারো জীবন বদলে গেল। গত আট বছর ধরে আমার ভূতপূর্ব প্রেমিকা এবং বর্তমান বউ ভবিষ্যৎবানী করে আসছে এই বলে যে খেলাধুলা বিশেষ করে ফুটবলই আমার জীবন ধ্বংস করবে। ধ্বংস না করলেও ফুটবল আপাতত আমার জীবন স্থবির করে দিতে সক্ষম হয়েছে। ডান পায়ে (ফিবুলা) ফ্রাকচার হয়ে এখন পুরো পা প্লাস্টার করে গত এক সপ্তাহ যাবত সিএমএইচ এর বিছানায় শুয়ে আছি। প্রকৃতি ডাক না দিলে এই শোয়া অবস্থা থেকে ওঠাও হয় না। সময় কাটে কিছুক্ষণ পর পর বউ এর সাথে কথা বলে, নক্ষত্রের কান্নার আওয়াজ শুনে আর ঘুমিয়ে। বাকি যতক্ষণ জেগে থাকি ততক্ষন মোবাইলে জমে থাকা ইবুক গুলো পড়ে। ইচ্ছা করেই ইন্টারনেট থেকে দূরে ছিলাম। পুরো পৃথিবীর সাথে বিচ্ছিন্ন থেকে অন্যরকম এক জীবন কাটাচ্ছি, ছেলে আর ছেলের মা কে মিস করা ছাড়া জীবনটা মন্দ না।

আজ যখন মোবাইলে বই এর ভান্ডার শেষ হয়ে গেল তখন বাধ্য হয়ে ইন্টারনেটের শরনাপন্ন হতে হলো। বই সংগ্রহ শেষ করে সিসিবিতে ঢু মারার লোভ সামলাতে পারলাম না। অনেক নতুন লেখা আর মন্তব্য দেখে মন ভরে গেল, ভাবলাম আমিও বাদ যাব কেন, লিখে ফেলি কিছু আবোল তাবোল। যার ফলাফল প্রথম বারের মত মোবাইল থেকে লেখা এই ব্লগ। রিদ্মিক কে ধন্যবাদ বাংলা লেখাকে এত সহজ করে দেবার জন্য।

শুভেচ্ছা।

১,৯৭৫ বার দেখা হয়েছে

২০ টি মন্তব্য : “জীবন যখন যেমন”

  1. অরূপ (৮১-৮৭)

    নক্ষত্রের জন্য ভালোবাসা আর শুভ কামনা রইল ... পড়ার সুযোগ হাতছাড়া করো না ... কত কিছুই তো আছে পড়ার মত।
    আর সুস্থ হয়ে উঠ তাড়াতাড়ি ...


    নিজে কানা পথ চেনে না
    পরকে ডাকে বার বার

    জবাব দিন
    • আহসান আকাশ (৯৬-০২)

      ধন্যবাদ অরূপদা।

      পড়ার অভ্যাসটা সবসময় চেষ্টা করেছি ধরে রাখার। আপাতত কিছু চটকদার থ্রিলার পড়ছি, এই বন্দিদশায় এগুলোই ভাল লাগছে।


      আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
      আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

      জবাব দিন
    • আহসান আকাশ (৯৬-০২)

      আমার লেখালেখির দৌড় সাধারনত দিনলিপি আর খেলাধুলা পর্যন্ত। দিন গুলো এখন আমার জন্য মোটামোটি নিথর আর খেলা দেখাও হচ্ছে না, তাই লেখার মত কিছু খুজে পাওয়া এই মুহুর্তে বেশ কষ্টসাধ্য 🙁
      তবে লিখি বা নাই লিখি, সিসিবিতেই আছি 🙂


      আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
      আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

      জবাব দিন
  2. সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

    🙂 🙂 🙂 🙂

    আকাশের পুত্র নক্ষত্র! ওয়াও!!
    কারো নাম যে নক্ষত্র হতে পারে আমার মাথাতেই আসেনি। চমৎকার! আমার কন্যার নাম কিন্তু তারা! যদিও উজবুক আম্রিকানগুলো হামেশাই ট্যারা বলে ডাকে ওকে। আমরা খুব সোচ্চার তারার নামের উচ্চারণে। সঠিক ভাবে তারা না বলা অবধি ছাড়াছাড়ি নাই!

    খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়েওঠো তুমি, আকাশ! অনেক দোয়া আর ভালবাসা রইল তোমার জন্য!

    তোমার আবোলতাবোল লেখাও ভীষণ সুখপাঠ্য আমাদের কাছে। এই অবসরে আরো কিছু লিখো, প্লিজ! অপেক্ষায় রইলাম কিন্তু!

    জবাব দিন
  3. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    ঐদিন এক পার্টি তে আর্সেনাল কেক খাইলাম।
    তোর জন্য ছবি আপলোড দিমুনি।


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
  4. নাফিস (২০০৪-১০)

    পা ফ্র্যাকচার 🙁 ফুটবল খেলে আমার এখনো কোন ইনজুরি হয় নাই। এভাবে দিন যাবেনা। কোননা কোন একদিন আমারও হবে এই জিনিসটা। বুঝতেই পারতেছি পেইনফুল এক্সপেরিয়েন্স। শুভ কামনা রইলো।

    নক্ষত্র নামটা বিশাল পছন্দ হইছে !! আসলেই 🙂

    জবাব দিন
  5. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    সত্যি কথা বলতে যত ভাল খেলোয়ারের সাথে খেলবা, সিরিয়াস ইঞ্জুরির চান্স তত কম। আমার ক্ষেত্রে যে ফাউল করছে ওর বয়স কম, খেলে ভাল কিন্তু সেন্স গ্রো করে নাই এখনো। সরাসরি পিছন থেকে কিক করছে, ফুটবলের ভাষায় বলতে গেলে he had no chance of getting the ball. প্রফেশনাল খেলা হইলে লম্বা ব্যান খাইতো 😛

    যাই হোক, সাবধানের মাইর নাই, একটস সময় পরে ফুটবলের মত ফিজিক্যাল খেলা ছেড়ে দেয়াই ভাল, আমি নিজেও প্রায় ছেড়ে দিছিলাম, টেনিস নিয়েই থাকতাম। এবার শুধু টুর্নামেন্ট বলে খেলছিলাম। তিন ম্যাচ ভাল মত শেষ করে ফাইনালে গিয়ে ধরা খেলাম।


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  6. পারভেজ (৭৮-৮৪)

    সেল ফোনে এত্তো বড় লিখা? বাব্বা!!!

    ভাল লাগলো। তোমার লিখা মিস করছিলাম।
    গেট ওয়েল সুন।
    বাই দ্যা ওয়ে, কোন সিএমএইচে আছো?

    নক্ষত্র ও তার মায়ের জন্য শুভেচ্ছা।
    তোমার এবসেন্সে তাঁদের নিশ্চয়ই "সময় যেন কাটেনা, বড় একা একা লাগে........."

    আমি ভালোই বুঝি।
    ৯৬-তে দুমাস সাভার সিএমএইচে ছিলাম যখন আনীলা বছর খানেকের।


    Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

    জবাব দিন
  7. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    চিটাগং সিএমএইচ পারভেজ ভাই।

    নক্ষত্র কে নিয়ে ওর মা মাঝে একদিন ঘুরে গিয়েছে, মাত্র ৪ দিনের ব্যবধানেঈ মনে হলো নক্ষত্র অনেক বড় হয়ে গিয়েছে আর আমি ওর এই বড় হয়ে যাওয়া ভিষন ভাবে মিস করছি 🙁


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  8. মোকাব্বির (৯৮-০৪)

    লেখাটা পড়সি এইটা বইলা গেলাম! 😛 শিশুদের কথা কানে আসলেই মন উতলা হয়ে উঠে। পিতা পিতা ভাব সন্তানের অভাব টাইপের অবস্থা! :shy:


    \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
    অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : আহসান আকাশ (৯৬-০২)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।