ছায়াছন্দ! ছায়াছন্দ!!

গীতিকার লিখে গান
সুরকার দেয় সুর
শিল্পীর ছন্দে
মনের আনন্দে
হয়ে উঠে সুমধুর।
সুমধুর সুমধুর সুমধুর…

আমার বেড়ে ওঠা বিটিভি যুগে। সেসময় এখনকার মত টিভিতে কোন অনুষ্ঠান দেখার থেকে চ্যানেল বদলানোর পিছনে বেশি সময় খরচ হতো না, বরং দূপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করা লাগতো টিভিতে কিছু দেখতে হলে আর ছুটির দিনের একটা বিশেষ আকর্ষন ছিল সকালের টিভি অনুষ্ঠান। নস্টালজিয়ায় আক্রান্ত হবার মত বিটিভির প্রচুর অনুষ্ঠানের কথা নিয়েই বলা যায়, অনুষ্ঠান কেন, কিছু বিজ্ঞাপনই যথেষ্ঠ। তবে আজকে শুধু চলচিত্রের গান নিয়ে অনুষ্ঠান ছায়াছন্দ নিয়েই একটু নস্টালজিক হই।

ছায়াছন্দ হতো মাসে একদিন, সেই একদিনের জন্য পুরোমাস জুড়ে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা। একটা সময় পর্যন্ত প্রতিমাসেই কেন জানি ঘুরে ফিরে কিছু নির্দিষ্ট গানই দেখানো হতো, তবে এখনকার মত মিউজিক চ্যানেলে একই গান দিনে পাঁচবার বাজানোর চল না থাকায় মাসে একবার করে পুরোনো গান দেখতেও খারাপ লাগতো না।

ডাকে পাখি, খোলো আঁখি

এটি ছিল ছায়াছন্দের নিয়মিত প্রথম গান। সিনেমাটা দেখার সুযোগ হয়নি, তবে প্রতিদিন সকালে কেউ একজন এভাবে গান গেয়ে গেয়ে ঘুম ভাঙ্গাচ্ছে এই আইডিয়াটা দারুন লাগতো। (প্রতিরোধ সিনেমার গান)

সবাই তো ভালবাসা চায়

নায়ক জসিম বা তার নাচ নিয়ে হাসাহাসি করার বয়স তখনো হয়নি, ছায়ছন্দে ওর গান বা বিটিভিতে ওর সিনেমা দেখতে ভালই লাগতো তখন। সারেন্ডার সিনেমাটাও বিটিভির কল্যানে দেখা হয়েছিল।
(ছায়াছন্দে খুব সম্ভবত এই গ্নের অন্য একটি ভার্সন দেখানো হতো, ইউটিউব ঘেটে সেটা পেলাম না)

ও রে নীল দরিয়া

এই গানটা সত্যিকারভাবে ভাল লাগা শুরু হয়েছিল ২০০১ সালের রিইউনিয়নের এক আড্ডায় কোন এক বড় ভাইয়ের গলায় গিটারের সাথে শুনে, যদিও ছায়াছন্দের কল্যানে খুব পরিচিত একটা গান। সারেং বউ সিনেমাটাও পরবর্তীতে আবার দেখে নতুন ভাবে ভাল লেগেছে।

হায়রে মানুষ রঙ্গীন ফানুস

গানটা প্রথম দিকে শোনার পর থেকেই আমার মনে প্রশ্ন ঘুরতো ফানুষ জিনিষটা কি। অনেক ধরনের আইডিয়া মাথায় ঘুরতো, বেশ পরে বড় কাউকে জিজ্ঞেষ করে ফানুষ মানে জেনেছিলাম। ‘বড় ভাল লোক ছিল’ সিনেমাটা দেখা হয়নি, তবে এই গানটাও পরে নতুন ভাবে ভাল লেগেছিল।

যেও না সাথি

এই গানের নায়ক নায়িকাকে চিনতাম না সেসময়, শুধু জানতাম বিদেশি। ছবির নাম দূরদেশ।

আমি বন্দি কারাগারে

বেদের মেয়ে জোসনা মনে হয় বাংলাদেসের ইতিহাসের সবচেয়ে জনপ্রিয় সিনেমা। এর সবগুলো গানই দারুন জনপ্রিয় ছিল, তবে ছায়াছন্দে নিয়মিত ভাবে এই গানটাই দেখাতো।

তুমি কি দেখেছো কভু, জীবনের পরাজয়

এই গানটাও সত্যিকার ভাবে ভাল লাগা শুরু হয়েছে অনেক পরে, ‘এত টুকু আশা’ সিনেমাটাও।

এই পৃথিবীর পরে

আলোর মিছিল সিনেমাটা দেখা হয়েছিল বেশ পরে, গান দেখার সময় আমি কেন জানি রাজ্জাকের গভীর মনযোগ দিয়ে তবলা বাজানো দেখে বেশ মজা পেতাম।

তুমি ডুব দিও না, জলে কন্যা

ঝিনুক মালা সিনেমার এই গানটার কথা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম, ইউটিউব ঘাটতে গিয়ে অনেকদিন পরে আবার শোনা হলো।

ও আমার বন্ধু গো

কেয়ামত থেকে কেয়ামত দিয়ে সালমান শাহ, মৌসুমী বাংলা সিনেমায় নতুন ঝড় তুলে দিয়েছিল, এরপরে ছায়াছন্দেও এইগানটি মোটামুটি নিয়মিত ছিল।

আপাতত এখানেই শেষ করি, আরো অনেক গানই মাথায় আসছিল। তবে ঠিক নিশ্চিত হতে পারছি না সেগুলো ছায়াছন্দের নিয়মিত আয়োজনে থাকতো কি না। এখানে উল্লেখ করা গানগুলোর মধ্যেও দু একটা হয়তো স্মৃতির প্রতারনার কারনে ছায়াছন্দের বাইরে থেকে আসতে পারে।

শুভেচ্ছা।

৩,৯০৪ বার দেখা হয়েছে

৩৫ টি মন্তব্য : “ছায়াছন্দ! ছায়াছন্দ!!”

  1. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

    দূরদেশ ছবিটা হলে গিয়ে দেখেছিলাম। বেশ ভাল চলেছিল ছবিটা।
    আর 'নীল দরিয়া' তো আমার সব সময়ের ফেভারিট।
    তোমার লেখালেখি চিন্তাভাবনায় তুমি হলে আমাদের জেনারেশনের --- বয়সের দিক থেকে পড়ে গেছ পরেরটাতে।
    তোমার পেইন আমি টের পাই মাঝে মাঝে। 🙂

    জবাব দিন
    • আহসান আকাশ (৯৬-০২)

      হা হা হা, ভাল বলেছেন নূপুরদা, এভাবে যদিও আগে চিন্তা করা হয়নি তবে বিষয়টা বিভিন্ন সময় অন্য ভাবে উপলব্ধি করেছি।


      আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
      আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

      জবাব দিন
  2. পারভেজ (৭৮-৮৪)

    যতদুর মনে পড়ে, চলচ্চিত্রের গান টিভিতে দেখানো শুরু হয় মধ্য সত্তরে। তিয়াত্তর, চুয়াত্তর বা পচাত্তরে।
    সপ্তাহে একদিন দেখানো হতো।
    তখন তো টিভিও ছিল সাদাকালো আবার চলচ্চিত্রও। ভালোই সাদাকালোর মাখামাখি তে দেখতাম সব।
    ঐ অনুষ্ঠানটার নাম ছায়াছন্দ ছিল না। কি যে ছিল খুব পরিষ্কার মনে নাই। তবে সংগিতা হবার সম্ভবনা অতি উচ্চ।
    তখন তো টিভির এত প্রচলন ছিল না, তাই সারা পাড়ার মানুষ এসে ভীর করতো ঐ সব গান দেখতে। বাসা হয়ে যেতো লোকে লোকারন্য।
    হঠাৎ একদিন দেখা গেল সংগিতা বন্ধ।
    কেন? কারন চলচ্চিত্রে প্রদর্শকরা আপত্তি তুলেছে যে টিভিতে মাগনা গান দেখে মানুষ নাকি টাকা দিয়ে টিকেট কেটে হলে সিনামা দেখতে যাচ্ছে না।
    সেই যে সংগিতা বন্ধ হলো দীর্ঘ্যদিন তা আর নিয়মিত অনুষ্ঠান হিসাবে ফিরে এল না।
    কালে ভদ্রে ওটা হতো বিশেষ অনুষ্ঠান হিসাবে ঈদের বা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার সময়।
    সেই রকন কোন এক অকেশনে ওটার নাম হিসাবে ছায়াছন্দ ব্যবহৃত হয়েছিল। পরে সেটাই স্থায়ি রূপ নেয়।

    স্মৃতি থেকে ছায়াছন্দের এইটুকু ইতিহাস জানানোর ছিল।
    জানালাম... (সম্পাদিত)


    Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

    জবাব দিন
  3. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    ১। আয়নাতে ঐ মুখ দেখবে যখন... (নাচের পুতুল)

    ২। প্রেমের নাম বেদনা... (নীল আকাশের নীচে)

    ৩। একবার যদি কেউ ভালবাসত... (জন্ম থেকে জ্বলছি)

    ৪। জন্ম থেকে জ্বলছি মা গো... (জন্ম থেকে জ্বলছি)

    ৫। তুমি আজ কথা দিয়েছ... (দুই জীবন) (এই গানটা আমার খুব প্রিয়। এত আধুনিক গান ঐ আমলের হিন্দী সিনেমাতেও ছিল কিনা সন্দেহ!)

    যতদূর মনে পড়ে বাংলা সিনেমা প্রথম হলে গিয়ে যেটা দেখেছিলাম সেটার নাম ছিল 'তিন কন্যা'। বোনাস হিসেবে সেটারও একটা গান দিলাম... 😀

    তিন কন্যা এক ছবি... (তিন কন্যা)


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
  4. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    তুমি কি দেখেছো কভু খুব সম্ভবত উনার নাম বেবি সামাদ।
    খেয়াল করে দেখিস আগের যুগের অভিনেতাদের মধ্যে এক্টা প্যাশন ছিলো, প্রফেশনালিজম ছিলো। আজ এটা অনেক নায়ক-নায়িকাদের মধ্যেও দুর্লভ।
    হয়তো তখন সবাই মন দিয়েই কাজ টা করতো, শুধুমাত্র অর্থের জন্যই নয়।


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
  5. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    কেয়ামতের লাষ্ট সিন টায় কোলে তুলে ঘুরাঘুরি করাটআ আমি যতদূর জানি এক ট্রাক ড্রাইভারের করা।
    আমাদের মৌসুমী তো প্রথম থেকেই একটু মোটা। সালমান শাহ নাকি মৌসুমীকে কোলে তুলতে পারছিলো না। তখন এক ট্রাক ড্রাইভার যে শুটিং দেখছিলো সে নাকি মৌসুমী কে কোলে তোলে।


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
  6. তাওসীফ হামীম (০২-০৬)

    ডাকে পাখি খোলো আঁখি গানটা বাংলাদেশ বেতারেও নিয়মিত শোনা যেত, আমি গ্রামের বাড়িতে চাচার বাসায় অনেক বার শুনেছি।


    চাঁদ ও আকাশের মতো আমরাও মিশে গিয়েছিলাম সবুজ গহীন অরণ্যে।

    জবাব দিন
    • আহসান আকাশ (৯৬-০২)

      আহ বাংলাদেশ বেতার, সকাল শুরু হতো সকাল সাতটার খবর দিয়ে, স্কুলে যেতে যেতে সব দোকানে দোকানে খবর শোনা যেত, আর দুপুরে ছিল বিজ্ঞাপন তরঙ্গ।


      আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
      আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

      জবাব দিন
      • মোকাব্বির (৯৮-০৪)

        সকাল সাতটার খবর ও বাবাকে নিয়ে ছোট একটি স্মৃতি মনে আছে। সাতটার খবরের সূচনা সঙ্গীত, ওল্ড স্পাইস আফটার শেভ, পপুলার জুতার কালি ও মেটাল পলিশের গন্ধ লেপের তলা দিয়ে কালচে সবুজ রঙের উর্দি পরা বাবা। 🙂


        \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
        অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

        জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।