স্মৃতি

মানবিক বিভাগের ছাত্র হওয়ায় মানব শরীরের কলকব্জা সম্পর্কে ধারনা অত্যন্ত সীমিত। তারপরও এর বেশিরভাগ অংশের কার্যপ্রণালী সম্পর্কে সাধারণ কিছু ধারনা আছে। শুধু মস্তিষ্ক কিভাবে কাজ করে সেটা সম্পর্কে প্রায় বকলম। আর এই মস্তিষ্কের কিছু কাজকর্ম দেখে মাঝে মাঝে ওখানে ঝড় তুলেও কূল কিনারা করতে পারি না কিভাবে কি হলো।

টিভিতে এখন বেশ কিছু বাংলা গানের চ্যানেল দেখা যায়। সেদিন মোটামুটি অখ্যাত এক গানের চ্যানেলে হঠাৎ করে একটু সুর শুনে মনে হলো পরিচিত। গানের প্রথম লাইন চন্দ্রিমা রাত্রীতে... শোনার সাথে সাথে টের পেলাম এই গানের প্রায় অর্ধেকটা আমার মুখস্ত। আজব ব্যাপার হলো যে এই গান আমি শেষ বার শুনেছিলাম ২০-২২ বছর আগে। এত পুরোনো গানের কথা মস্তিষ্কের কোন কোনায় এতদিন লুকিয়ে ছিল কে জানে! অথচ কত জরুরী জিনিষ যথাসাধ্য চেষ্টা করেও মস্তিষ্কে ধরে রাখতে পারি না।

ফেসবুকের Bangladesh Old Photo Archive আমার বেশ পছন্দের একটা পেজ। পুরাতন ছবি গুলো দেখে বেশ ভাল লাগে। কালকে সেখানে চোখে পড়লো একদল কিশোর ফুটবল খেলে জেতা শিল্ড উঁচিয়ে ধরে আছে। ছোটবেলার এই আরাধ্য জিনিষটার কথা একদম ভুলেই গিয়েছিলাম। মাঝে মাঝে নিজেকে একটা ভাগ্যবান প্রজন্মের অংশ মনে হয়, যারা মাঠে ঘাটে ঐ শিল্ডের জন্য ফুটবল খেলেছি আবার ভিডিও গেমস ও খেলেছি। লাট্টু(লাটিম),চাড়া, গুল্লি(মার্বেল) ঘুড়িতে মাঞ্জা মারা মনে হয় আমাদের পরের ছেলেমেয়েরা পায়নি।

ফটোগ্রাফারঃ আনোয়ার হোসেন

ফটোগ্রাফারঃ আনোয়ার হোসেন

এই এতকিছু বিশেষ করে শিল্ড এর কথা মস্তিষ্কের কোথায় যে লুকিয়ে ছিল, ছবি দেখে এক ধাক্কায় সব সামনে চলে আসলো। আর মাঝে মাঝে এই মস্তিষ্ক পুরো উল্টো খেলা দেখিয়ে কি বিপদেই না ফেলে। পরিচিত চেহারা দেখেও কিছুরেই নামটা আর মনে আসতে চায় না।

একই ঘটনা ঘটেছিল অনেকদিন পরে হ্যাজাক বাতি দেখে। ছোটবেলায় রাতগুলো ছিল হলুদ রঙ এর। টাংস্টেন বাল্ব দেখতে দেখতে রাস্তার পাশের হকার বা পরোটা-চাপের দোকানের হ্যাজাক বাতির ধপধপে সাদা আলোর দিকে আমি সবসময়ই আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে থাকতাম। আর সাথে উপরি আগ্রহ ছিল পাম্প করার সময় আলো যেভাবে বেড়ে উঠতো।

এই হ্যাজাক বাতির কথাও বেমালুম ভুলে বসে ছিলাম, কিন্তু দেখার সাথে সাথে শুধু বাতি না, বাতিকে ঘিরে থাকা হাজারো স্মৃতি মনে পড়ে গেল।

কম্পিউটার হার্ডডিস্কের মত আমাদের স্মৃতিও ইচ্ছে মত সংরক্ষন/মুছে ফেলা নিয়ে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী অনেক লেখা হয়েছে। এই জীবনে সেটার বাস্তবায়ন দেখে যাওয়ার সম্ভাবনা মনে হয় নেই, যদি কোন ভাবে হয়েও যায় তাহলে আমি কোন স্মৃতি মুছবো না। হঠাৎ করে ছোট একটা জিনিষ বা ছবি এভাবে পুরো একটা সময়কে মনে করিয়ে দিয়ে চমকে দেবে, মস্তিষ্কের এই চমকগুলো হারাতে চাই না।

শুভেচ্ছা

৫,৬০২ বার দেখা হয়েছে

১১ টি মন্তব্য : “স্মৃতি”

  1. খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

    খুব সুন্দর লিখেছো আহসান। খুব আঁটসাঁট লেখায় মস্তিষ্কের বিভিন্ন খেয়ালী কার্যকলাপ সম্বন্ধে ভালোই বলেছো। স্মৃতির আর্কাইভ থেকে যে ক'টা চিত্র তুলে ধরেছো, গানটা বাদে সবগুলোই আমারো পরিচিত।
    ফুটবল খেলে জেতা শিল্ড উঁচিয়ে ধরে চলার ছবিটা আনুমানিক কোন সময়ের এবং কোথাকার? রাস্তা যেমন ফাঁকা দেখাচ্ছে, তাতে তো মনে হচ্ছে এটা ষাটের দশকেরও আগের ছবি।

    জবাব দিন
  2. মোকাব্বির (৯৮-০৪)

    পড়ে ফেললাম আহসান ভাই। পড়েই ফেললাম। অনিয়মিত লেখক পাঠক সবই হয়ে গিয়েছি। ক‌োথায় যেন ছেদ পড়েছে। কোথায় যেন ছন্দহীন। স্মৃতিশক্তি এক আজব চিড়িয়া। মাঝেমাঝে খুব বিপদে ফেলে। চিন্তায় ফেলে। বলতে বাধ্য করে, এই তথ্য মাথায় ছিল তাহলে?


    \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
    অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

    জবাব দিন
  3. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    নব্বই এর দশঅকের শুরুতে ব্যান্ডের গানগুলোর কথা বেশ ভারী ছিলো।


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।