সবই দেখি তা না-না-না!

জাত গেল জাত গেল বলে
একি আজব কারখানা
সত্য কাজে কেউ নয় রাজি
সবই দেখি তা না-না-না।

লালনের গান বা তার দর্শন বোঝার ক্ষমতা হয়ে ওঠেনি পুরোপুরি। কিন্তু কিছু কিছু গানের কথা মাঝে মাঝে দারুন ভাবে প্রভাবিত করে। এই গানটা তার মাঝে একটা। ইদানিং কালে আমাদের ধর্মানুভূতির নাজুকতা দেখে। গানের মূল ভাবের সাথে সেটা কত দূর যায় জানি না, তবে বিশেষ করে প্রথম চার লাইনের সাথে খুব মিল পাই।

আমাদের ধর্ম নিয়ে কে কোথায় কি বললো না বলো তা নিয়ে আমরা গেল গেল রব তুলতে বিন্দুমাত্র সময়ক্ষেপন করি না। আহত বাঘের মত ঝাপিয়ে পড়ি অনুভূতিকে চাঙ্গা করতে। একটা পর্যায় পর্যন্ত আমি এতে দোষের কিছুও দেখি না। কিন্তু এই আমরাই আবার সত্য কাজে কেউ নয় রাজি। কারো লেখায়, মুখের কথায় যে অনুভূতি আমাদের আহত হয়ে পড়ে অন্যান্য সব ধর্মবিরোধী কাজ করার সময় সে অনুভূতি খুঁজে পাওয়া যায় না। মিথ্যা বলার সময়, প্রতারণা করার সময়, ঘুষ লেনদেন করার সময়, চুরি করার সময়, দূর্নীতি করার সময়, শিলার উদ্যোম জাওয়ানী দেখার সময়, মেয়েদের উত্যক্ত, নির্যাতন করার সময় ইত্যাদি আরো অনেক ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে গর্হিত কাজ আমরা নিজেরা করার সময় বা আমাদের পাশের মানুষটি করার সময় আমাদের অনুভূতি একটুও আহত হয় না। এসবের বিরুদ্ধে আমাদের কন্ঠ, কলম বা কীবোর্ডে ঝড় ওঠে না। এসব দেখে লালনের কন্ঠেই বলে উঠতে ইচ্ছে হয়, সবই দেখি তা না-না-না, তা না-না-না, তা না-না-না!

এই লেখার মাধ্যমে আবার কারো অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে থাকলে সে জন্য দুঃখ প্রকাশ করতে পারছি না বলে দুঃখিত।

শেষ করছি গানটি দিয়েই। প্রথম শুনেছিলাম ফরিদা পারভিনের কন্ঠে, সে সময় অবশ্য এর মানে বোঝার বয়স হয়নি। ওনার গাওয়াটাই দিলাম। আগ্রহী হলে ইউটিউব ঘেটে দেখতে পারেন, আরো অনেকের কন্ঠে কিছুটা ভিন্ন সুরে ভিন্ন আয়োজনে বেশ কিছু ভার্সন আছে।

শুভেচ্ছা!

১,৬২৫ বার দেখা হয়েছে

৪২ টি মন্তব্য : “সবই দেখি তা না-না-না!”

  1. মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)
    আমাদের ধর্ম নিয়ে কে কোথায় কি বললো না বলো তা নিয়ে আমরা গেল গেল রব তুলতে বিন্দুমাত্র সময়ক্ষেপন করি না। আহত বাঘের মত ঝাপিয়ে পড়ি অনুভূতিকে চাঙ্গা করতে। একটা পর্যায় পর্যন্ত আমি এতে দোষের কিছুও দেখি না। কিন্তু এই আমরাই আবার সত্য কাজে কেউ নয় রাজি।

    মজার একটা ব্যাপার হল- একই অবজারভেশন ভার্চুয়াল মুক্তিযোদ্ধাদের বেলাতেও খাটে। অথচ এই কথাটা মনে আসেনা যে, নিজের ঈমান বা দেশপ্রেম দেখানোর সবথেকে সোজা রাস্তা হচ্ছে নিজে ধর্ম পালন করা এবং দেশের+দশের কল্যাণের জন্য কাজ করা। সেদিকে না গিয়ে শুধুই অন্যে কোথায় ধর্মকে আঘাত করল বা দেশবিরোধী কাজ/কথা বলল সেদিকে পুরো মনোযোগ!

    লালন ঠিকই বলে গেছেন যে, সত্য কাজে কেউ রাজি নয়। সবই শুধু তা-না-না-না (আজাইর‍্যা)।


    There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

    জবাব দিন
  2. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    দূর! সত্য কাজে কোন মজা নেই, কষ্টও বেশি... :thumbdown:
    এর চাইতে আজাইরা তেনা প্যাঁচাইতে কত্ত মজা... 😀


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
  3. সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

    ইবোলার থোতা মুখ করে দিতে ভোঁতা
    এমোরিতে ইউনিট হয়েছে যে খোলা
    আমাদের সব রোগী এনে এমোরিতে
    সেবিয়া করেছে সুনাম বিশ্বব্যাপীতে!

    http://dfw.cbslocal.com/2014/10/15/3rd-dallas-ebola-patient-headed-to-emory-university-hospital/

    অটঃ লেখিকা এমোরি ইউনিভার্সিটিতে কর্মরত বিধায় আমাদের এমোরি বলছি, ভাই সকল! (সম্পাদিত)

    জবাব দিন
      • সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

        পাবলিক ট্রান্সপোর্টেশন ব্যাবহার করবার সময় সতর্ক থেকো। বারবার হাত ধুবে, গায়ে কাঁটা ছেঁড়া থাকলে ঢেকে রেখো। ব্লাড, বডি ফ্লুইড অথবা বমি থেকে ইবোলা ভাইরাস আমাদের শরীরে ঢুকতে পারে। \

        একদিন ইবোলা ধরাশায়ী হবে জানি, তখন এর চাইতেও ভয়াবহ কিছু আসবে সামনে শিং উঁচিয়ে! ছোট একটা ক্লিপ দিলাম, দেখতে পারো, মোকাব্বির!

        http://www.cleveland.com/metro/index.ssf/2014/10/60-second_know-it-all_avoiding.html

        জবাব দিন
        • মোকাব্বির (৯৮-০৪)

          ধন্যবাদ আপা। দেখলাম। সমস্যা হলো শনি-রবিবার হলের ডাইনিং কিংবা বাথরুমগুলোতে কাজ করা লাগে। যদিও থাকি একদম উত্তরে, (আপার পেনিনসুলা মিশিগান) তারপরেও আরো সতর্কতা অবলম্বন করবো।


          \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
          অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

          জবাব দিন
  4. তাওসীফ হামীম (০২-০৬)

    ভাই এইটা মনে হয় সময়ের সবচেয়ে কড়া প্রশ্ন। সেদিন দেখলাম দুই বাম নেতা হজে গেছে, যে যার মত ধর্ম ব্যবহার করে যাচ্ছে। অথচ ব্যবহারের কোন রেগুলেশন দেবার ক্ষমতা কারো নাই, এই জন্য দিনে দিনে ধর্মের প্রশ্ন দিন দিন কঠিন হয়ে যাচ্ছে।


    চাঁদ ও আকাশের মতো আমরাও মিশে গিয়েছিলাম সবুজ গহীন অরণ্যে।

    জবাব দিন
  5. দিবস (২০০২-২০০৮)

    প্রতিমা ভাঙ্গা আর মুখের কথা কোনটায় অনুভূতি বেশী আঘাত পায় অথবা কোনটার অপরাধের মাত্রাটা বেশী সেটা নিয়ে দ্বিধায় আছি। শাস্তির মাত্রা আর পাবলিক রিএকশন দেখে!!!


    হেরে যাব বলে তো স্বপ্ন দেখি নি

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : আহসান আকাশ (৯৬-০২)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।