আহ, হিপোক্রেসি!

ব্যক্তিগত ভাবে মানুষের যে দোষগুলিকে সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করি তার তালিকায় হিপোক্রেসি একদম উপরের দিকেই থাকবে, সে কারনে সব সময় চেষ্টা করে এসেছি নিজেকে এর মুক্ত রাখতে এবং এই দোষে দোষান্তিত মানুষদের থেকে দূরে থাকতে। কিন্তু এর কোনটিই শতভাগ অর্জন করা সম্ভব হয়নি। নিজে হিপোক্রেসি মুক্ত থাকার আপ্রান চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, কিছুটা হয়ত সফল ও হয়েছি কিন্তু হিপোক্রেটদের থেকে দূরে থাকার প্রচেষ্টায় রীতিমত ব্যর্থ। বাস্তব জীবনে বিভিন্ন অনিবার্য কারনে অনেক হিপোক্রেটদের সাথেই হাসি মুখে কথা বলতে হয় আর ভার্চুয়াল জগতে বন্ধু তালিকায় ছাকনি চালাতে চালাতে ঠগ বাছতে গা উজাড় হবার উপক্রম হলেও খোমাখাতা হিপোক্রেসি ভরপুর।

এই মুহুর্তে বাজার গরম হজ্জ্ব নিয়ে, এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এর পিছনে খরচ নিয়ে কথা বলায় এর পক্ষে বিপক্ষে জ্বালাময়ী স্ট্যাটাস, কমেন্ট করার মানুষের অভাব নেই। দুদিকেই সমান ভাবে হিপোক্রেসির জোয়ার। এটি আসলে বেশ পুরোনো একটা টপিক, কোরবানীর ঈদের আগে আগে হজ্জ্ব এবং কোরবানীতে খরচ নিয়ে অন্তর্জাল আলোড়িত হয়, এবার সেটা একটু বিশেষ মাত্রা পেয়েছে। একটা বড় অংশ এসবের মাধ্যমে কিভাবে আমাদের বোইদেশিক মুদ্রার অপচয় হচ্ছে, কিভাবে এই অর্থ আরো ভাল ভাবে মানব কল্যানে ব্যয় করা যেত ইত্যাদি ইত্যাদি নিয়ে খুব সোচ্চার। তাদের যুক্তি মেনে নিতে আমার আপত্তি নেই। আপত্তিটা তখনই আসে যখন দেখি এদের ভিতরেই কেউ কেউ হজ্জ্ব কোরবানীর চেয়ে বহুগুন বেশি টাকা খরচ করে বিদেশে প্রমোদ ভ্রমনে যায় কিংবা পরিচিত কেউ যখন বিদেশ ভ্রমনের ছবি ফেসবুকে শেয়ার করে তখন মুগ্ধ হয়ে মন্তব্য করে। একজন ব্যক্তির নিজের জোগাড় করা অর্থ খরচ করে তার মানসিক শান্তির জন্য বিদেশ ভ্রমন করা নিয়ে যদি আপনার কোন আপত্তি না থাকে তাহলে অন্য কেউ যখন নিজের পয়সায় হজ্জ্বে গিয়ে মানসিক শান্তি লাভ করতে চায় তখন আপনার এত আপত্তি কেন? একই ভাবে কেউ লাখ টাকা খরচ করে বিয়ে, জন্মদিনসহ বিভিন্ন বার্ষিকী পালন করে তখন আপনি যদি হাসিমুখে দাওয়াত খেতে পারেন কিংবা ফেসবুকের ছবিতে লাইক দিতে পারেন তাহলে লাখ টাকার গরু কোরবানী দিয়ে ঈদ উদযাপনে আপনার আপত্তি কতটা যুক্তিযুক্ত? এসব নিয়ে মন্তব্য করাকে আপনি আপনার ব্যক্তি স্বাধীনতা মনে করেন, কিন্তু নিজের উপার্জিত অর্থ কে কিভাবে খরচ করবে সেই ব্যক্তি স্বাধীনতাটুকু স্বীকার করতে আপনার ইচ্ছে করে না!

আবার হজ্জ্ব, কোরবানী নিয়ে কথা বললেই আমাদের ধর্মানুভূতিতে বিশাল আঘাত লাগে, মুখে, টাইপ করে তার মুন্ডুপাত তো করাই হয়, সেই সাথে ফাঁসি বা আরো জঘন্যভাবে মৃত্যু কামনা করতে পিছপা করি না আমরা। অথচ প্রতি বছর প্রায় একই সময় দেশে আরেক ধর্মালম্বীদের প্রধান উৎসবের প্রধান নির্দশন পুজা মন্ডপগুলো যখন ভাঙ্গা হয় তখন আমাদের শতকরা নব্বুই ভাগ পুরোপুরি নীরব। এর বিচার চাওয়া তো দূরে থাক, লোক দেখানো একটু উহু আহা ও করতে দেখা যায় না। ধর্মানুভূতি শুধু যেন যার যার একান্ত নিজস্ব সম্পত্তি, অন্য ধর্মকে তো আমরা মানিই না, ঐ ধর্মের ধর্মানুভুতি আবার কোথা থেকে আসবে!

আরো অনেক হিপোক্রেসির কথাই মাথায় ছিল লেখা শুরু করার সময়, পহেলা বৈশাখ, একুশে ফেব্রুয়ারী মত জাতীয় ইস্যু থেকে শুরু কর অনেক ব্যক্তিগত ইস্যু নিয়ে। কিন্তু বিশালাকার লেখা দিয়ে বিরক্ত করার ইচ্ছে হলো না, আপাতত শুধু এই গরম গরম বিষয় নিয়েই থাকলাম। আর শেষে সেই পুরোনো আফসোস, মানুষ* হতে পারলাম না।

(অনেক দিন ধরেই কিছু লেখা হয় না, অনেক বিষয় মাথায় আসে কিন্তু সেই সময় লিখে না ফেলায় পরে আর হয় না, তাই বেশ তাড়াহুড়ো করে এটা লিখে ফেললাম। পক্ষে বিপক্ষে যে কোন ধরনের মন্তব্যের আহবান রইলো)

২,৭৫১ বার দেখা হয়েছে

২৭ টি মন্তব্য : “আহ, হিপোক্রেসি!”

  1. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    মজাটা হচ্ছে জনপ্রিয় ফেসবুকাররা লতিফ সিদ্দিকী নিয়ে সত্য কথা বলে মুরিদ হারাবার ঝুকি নিচ্ছেন না।
    বেশ উপভোগ করছি।

    দ্যাটস হোয়াই আই লাইক রিলিজিয়ন।


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
  2. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

    বাংলার ফেসবুকে আজ মুরাদ টাকলার ঘনঘটা।
    এমনই উন্মাদনায় পেয়ে বসেছে যে, ফাঁসি চাই লিখতে গিয়ে লিখছে 'pase cay'.
    যে হারে ফাঁসি কামনা করছে, ভুলেই যাচ্ছে ওই একই মনোবৃত্তি পোষণের জন্য তার ফাঁসি চাওয়াটাও জায়েজ হয়ে যায়।
    যতসব মূর্খ আর ভণ্ডের দল।

    জবাব দিন
  3. মোকাব্বির (৯৮-০৪)

    সুখে থাকুক ফেইসবুক যুগের বাঙলার স্যাটেলাইট নেতারা ও তাদের ঘিরে আবর্তিত হওয়া কমেট ডেব্রি।

    হুম কথাটি বলে নিজেই চিন্তামগ্ন হয়ে গেলাম। ভাবছি ফেইসবুক পীর সাহেবদের গ্রহ ধরে, ফেইসবুককে সূর্য ধরে এবং পীরদের মুরীদ তথা ফলোয়ারের সংখ্যার ভিত্তিতে একটা স‌োলার সিস্টেম তৈরী করবো। দেখি কে কতবড় গ্রহ!


    \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
    অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

    জবাব দিন
  4. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে দুই দলের কারোরই হাস্যকর যুক্তিগুলো খণ্ডণ করার উপায় নেই। কারন ট্যাগ লেগে যাবে... 🙁


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
  5. তাওসীফ হামীম (০২-০৬)
    একজন ব্যক্তির নিজের জোগাড় করা অর্থ খরচ করে তার মানসিক শান্তির জন্য বিদেশ ভ্রমন করা নিয়ে যদি আপনার কোন আপত্তি না থাকে তাহলে অন্য কেউ যখন নিজের পয়সায় হজ্জ্বে গিয়ে মানসিক শান্তি লাভ করতে চায় তখন আপনার এত আপত্তি কেন?

    এইটাই ভাই সর্বশেষ ব্যটমলাইন, এইটা না বুঝলে যুক্তি অথবা তর্ক করে কোন লাভ হবে নাহ।


    চাঁদ ও আকাশের মতো আমরাও মিশে গিয়েছিলাম সবুজ গহীন অরণ্যে।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : আহসান আকাশ (৯৬-০২)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।