একখানি ত্রিভুজ প্রেম উপাখ্যান

প্রেম জিনিষটা কি সেটা বোঝার বয়স হবার আগেই প্রথমবারের মত প্রেমে পড়ে যাই। প্রথম দর্শনের প্রেম ছিল কি না সেটা বলতে পারবো না কারণ প্রথম দর্শন ঠিক কবে সেটাই মনে নেই। তবে প্রেমে পড়তে খুব বেশিদিন লাগেনি এটা নিশ্চিত ভাবে বলতে পারি। আর সবার মত আমার প্রেমও আমাকে নিয়মিত হাসিয়েছে, কাঁদিয়েছে, আনন্দ দিয়েছে মাঝে মাঝে রাগে চুল ছেড়ার চেষ্টাও করিয়েছে। তবে ছেড়ে যায়নি কখনো, এখনো আমার প্রথম প্রেম আমার সাথে আছে, দিনে দিনে তার গভীরতা বেড়েছে।

দ্বিতীয় প্রেম খুব বেশিদিন পুরনো নয়, ছয় বছর হতে চললো। এবারে একেবারে প্রথম দেখায় প্রেম। ২০০৮ এ সেপ্টেম্বরের কোন এক গভীর রাতে প্রথম দেখা, তারপর থেকে একেবারে চুম্বকের মত জুড়ে আছে। মাঝে হয়ত ব্যস্ততায়, অলসতায় সেভাবে যোগাযোগ করা হয় না কিন্তু খোঁজ রাখা হয় নিয়মিত।

ত্রিভুজ প্রেম সবসময়ই বিপদজনক। বেশিরভাগ সময়ই যার সমাপ্তি হয় বেদনাদায়ক, কখনো বাংলা নাটক-সিনেমার মত একজনের বিসর্জনে আবার কখনো হিংসাত্মক ঘটনার মধ্য দিয়ে। তবে আমি দারুণ সৌভাগ্যবান, আমি আর আমার দুই প্রেম এই তিনে মিলেমিশে আমরা একাকার। সেই অদ্ভুত, রোমাঞ্চকর ত্রিভুজ প্রেমের জানান দিতেই এই লেখা।

এ পর্যায়ে যারা নতুন এক Vicky Cristina Barcelona কাহিনী পড়ার জন্য একটু নড়েচড়ে বসছেন তাদেরকে হতাশ করার জন্য দুঃখিত, কারণ আমার এই দুই প্রেমের একজনও মানবী নয় (মানবও না)।

আমার প্রথম প্রেমের নাম হলো ফুটবল। যেমনটা বলছিলাম, প্রথম কবে ফুটবল দেখলাম সে স্মৃতি নেই, তবে জীবনে প্রথম দিককার স্মৃতির মাঝে ফুটবল আছে। আব্বু প্রচণ্ড খেলা পাগল, নিজে নিয়মিত খেলতেন। গ্রামের ডাকসাইটে গোলকিপার ছিলেন, আশেপাশের জেলায় গিয়ে তার খেলে আসার কৃতিত্ব গ্রামে গেলে প্রায়ই শুনতাম। খেলার বয়স শেষে শুরু করলেন খেলা দেখা। আবাহনী ক্লাব থেকে সিজন টিকিট পেতেন, খুব কম খেলাই মাঠে গিয়ে দেখা মিস করতেন। একটু বড় হবার পর (৬-৭ বছর) আমারও মাঝেমাঝে মাঠে যাবার সুযোগ হয়ে গেল, ছুটির দিনে আবাহনীর কোন ছোট দলের সাথে খেলা থাকলে যেখানে গণ্ডগোল হবার কোন সম্ভাবনা নাই আব্বুর হাত ধরে আমিও আবাহনী গ্যালারীতে বসে খেলা দেখতাম। প্রেম সেই যে শুরু হলো, এরপর থেকে শুধু বাড়তেই লাগলো। আবাহনী দিয়ে শুরু, মাঝে বিশ্বকাপ আসলে তো পুরো প্রেমের ঈদ। ৯৮ থেকে শুরু করলাম ইউরোপিয়ান লীগ দেখা এরপর ফুটবল হয়ে গেল প্রতিদিনের অংশ।

এসবের সাথে খেলার মাঠে দাপাদাপি তো ছিলই। জেনেটিক কারণে কিনা জানি না, খেলার শুরু থেকেই গোলকিপার হয়ে উঠলাম আইসিসি ফুটবলের আগের প্যারেন্টস ডেতে যখন আব্বুকে জানালাম আমি গোলকিপার হিসেবে কলেজ টিমে সুযোগ পেয়েছি তখন তার মুখে সম্পূর্ণ অন্যরকম একটা হাসি দেখতে পেয়েছিলাম।

দ্বিতীয় প্রেম হলো এই ক্যাডেট কলেজ ব্লগ। ইন্টারনেটে ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ করে ২০০৮ এর সেপ্টেম্বরের এক গভীর রাতে এর দেখা পেলাম, তারপর থেকে একদিনের জন্যও মনে হয় এর সাথ ছাড়া হয়নি। শুরুতে ব্লগের আর সবার লেখা পড়ে বিমলানন্দ পেলেও নিজের লেখার মত সাহস করতে পারলাম না। জীবনে পরীক্ষার খাতা আর চিঠির পাতার বাইরে এক লাইনে না লেখা আমার সাহায্যে এগিয়ে এলো আমার প্রথম প্রেম ফুটবল, ফুটবল নিয়ে একটার পর একটা লেখা দিয়ে রীতিমত বিরক্ত করা শুরু করলাম সবাইকে, এমন অবস্থাও ছিল যে বাংলাদেশের প্রথম সুপার কাপের প্রতি ম্যাচে আলাদা আলাদা পোস্ট দিয়ে লাইভ কমেন্ট্রি পর্যন্ত করেছি। দুই প্রেমে একাকার হয়ে কিছুদিন লেখার পর ধীরে ধীরে অন্যান্য হাবিজাবি লেখা শুরু হলো।

ফুটবল থেকে দূরে থাকা পাঠকদের বিরক্তির কারণ না হতে অনেকদিন ব্লগে এ নিয়ে লেখা থেকে বিরত ছিলাম। ৯ বছর পর আর্সেনালের শিরোপা জয়ের পরে নিজেকে আর আটকাতে না পেরে লিখে ফেলেছিলাম অনেকদিন পরে। আর এর পরপরই শুরু হলো বিশ্বকাপ জ্বর। ফুটবল নিয়ে আবার ব্লগিং এর উপযুক্ত সময়, আবার দুই প্রেমের এক হবার সময়। আগামী এক মাস তাই ডুব দিচ্ছি ফুটবলে, ডুব দিচ্ছি সিসিবিতে। আপনারাও সাথে থাকুন।

১,৮০৫ বার দেখা হয়েছে

২০ টি মন্তব্য : “একখানি ত্রিভুজ প্রেম উপাখ্যান”

  1. আমিন (১৯৯৬-২০০২)

    ভার্চুয়াল একটিভিটি কমাইয়া ফেললেও বিশ্বকাপ টাইমে সিসিবির সাথে আছি। আমি আবার খেলা বিশ্লেষণে ব্যাপক পেলে সিনড্রোমে ভুগি মানে যা বলি তার উল্টা হয়। তাই নট গেট লাগাইটা পোস্টামু কিনা ভাবতেসি।

    ফুটবল নিয়ে টানা ব্লগ পড়েও বিরক্ত হচ্ছি না মোটেও।

    যদিও কমেন্টিং করা হচ্ছে না সেভাবে।

    জবাব দিন
  2. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

    তোমার ফুটবল প্রেমের কথা তো জানিই -- সেও তোমার আরেক প্রেম সিসিবির মাধ্যমেই।
    তোমার ফুটবল খেলা দেখিনি -- মনে হয় মাঠে তুমি 'ফেয়ার প্লে'রই চর্চা কর এসেছো ববাবর। তবে সিসিবির মাঠে তুমি হচ্ছো আমার দেখা অন্যতম ফেয়ার প্লেয়ার। হাজারো প্ররোচনাতেও, ভিন্নমতেও যে দিশা হারায়না -- স্পোর্টসম্যানশিপ ভুলে যায়না। তুমি আমাদের ফেয়ারপ্লেয়ার --- জেন্টলম্যান অব দ্য জেন্টলমেন।

    জবাব দিন
    • আমিন (১৯৯৬-২০০২)
      তবে সিসিবির মাঠে তুমি হচ্ছো আমার দেখা অন্যতম ফেয়ার প্লেয়ার। হাজারো প্ররোচনাতেও, ভিন্নমতেও যে দিশা হারায়না -- স্পোর্টসম্যানশিপ ভুলে যায়না। তুমি আমাদের ফেয়ারপ্লেয়ার --- জেন্টলম্যান অব দ্য জেন্টলমেন।

      নুপূরদা, প্রসঙ্গক্রমে একটু বলি, রোনালদোে দ্যা ফেনোমেনন তার ইন্টারন্যাশনাল ক্যারিয়ারে কোন লাল কার্ড পান নি। এবং খেলোয়াড় হিসাবেও অসাধারণ। আপনার কমেন্টিং এবং ব্লগিংয়ে আপনাকে আমি রোনালদোর মত মনে করি।

      জবাব দিন
      • নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

        হা হা। না রে ভাই --- তুমি যতটা বলছো, ততটা উদারতা এবং পরিচ্ছন্নতার পরিচয় বেশ কয়েকবারই আমি দিতে পারিনি -- হয়তো তুমি লক্ষ্য করোনি। সে যাক, তোমার দেয়া শিরোপা মাথায় তুলে নিলাম, এর আড়ালের ভালোবাসাটুকু নজর এড়ানোর জো নেই বলেই।
        ফুটবলের দিনেই ফুটবলের উপমায় কথা বলা সম্ভব। এই কথোপকথন সেদিনের সাক্ষী হয়ে থাক -- কি বলো। আমি কখনোই স্পোর্টসপার্সন ছিলামনা মাঠে। সবসময় দর্শকের দলে।

        জবাব দিন
    • আহসান আকাশ (৯৬-০২)

      নূপুরদা সত্যিকার অর্থেই আপনার মন্তব্যের জবাব খুঁজে পাচ্ছি না। শেষ কবে এত বড় কোন কমপ্লিমেন্ট পেয়েছিলাম মনে নেই। জানি না আসলেই কতটুকু ফেয়ার, জেন্টেলম্যান থাকতে পেরেছি তবে আপনার কমপ্লিমেন্টকে সম্মান জানিয়ে এখন থেকে থাকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।


      আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
      আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

      জবাব দিন
  3. সাজেদ (২০০৪-২০১০)

    ভাই, আপনার যদি কখনো জানার ইচ্ছা হয় গোল কিপিং টা genetic কিনা...দয়া করে আমাকে জানাবেন। 😛
    খুব ভাল লাগল পড়ে 🙂 :boss:


    "মরনের বীথিকায় জীবনের উচ্ছ্বাস,

    জীবনের যাতনায় মৃত্যুর মাধুরী"

    জবাব দিন
  4. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    পুরনোদের মধ্যে তুইই একমাত্র মোটামুটি রেগুলার আছিস...সিসিবিকে আগলে রেখেছিস ... এটার জন্য টুপি খোলা অভিবাদন... :hatsoff:


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মোকাব্বির (১৯৯৮-২০০৪)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।