অন্তর্জালিক

বাঙ্গালী সৃষ্টির আদিকাল থেকেই হুযুগে জাতি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে আর আজ পর্যন্ত বেশ সফলতার সাথেই আমরা আমাদের এই পরিচয় সমুন্নত রাখতে সক্ষম হয়েছি। ইন্টারনেট বিশেষত ফেসবুক এসে এই হুযুগেপনার মাত্রা কয়েকগুন বাড়িয়ে দিয়েছে। ফেসবুক দুনিয়ার এই মুহুর্তের হুযুগ হলো লুকব্যাক ভিডিও। প্রথমে যখন একের পর এক ভিডিও দিয়ে আমার ফেসবুক নিউজ ফিড ভরে যেতে লাগলো তখন কিছুটাই বিরক্তই হয়েছিলাম, কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিজেকে সংবরন করতে না পেরে নিজের ভিডিওটা দেখেই ফেললাম। ভাল না লেগে উপায় নেই, ১ মিনিটে গত প্রায় ছয় বছরের স্মৃতি ঘুরে আসা। নিজেকে কেমন হিরো হিরো মনে হয়।

মেরিকার জন বার্লিনেরও এই লুকব্যাক ভিডিওর ছড়াছড়ি দেখে একটি বিশেষ লুকব্যাক ভিডিও দেখার ইচ্ছে হয়। তার ছেলে জেস বার্লিনের। কিন্তু সেটি সম্ভব নয়, কারন জেস ২০১২ সালে ২২ বছর বয়সে মৃত্যুবরন করেছে, তার ফেসবুক একাউন্টে কারো এক্সেসও নেই। হারানো ছেলের কিছু স্মৃতি ফিরে পেতে জন ফেসবুকের উদ্দেশ্যে ইউটিউবে এই হৃদয়স্পর্ষী ভিডিও আপলোড করে জেস এর লুকব্যাক ভিডিওর জন্য।

এই ভিডিও ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে শেষ পর্যন্ত ফেসবুক কর্তৃপক্ষের নজরে আসে এবং তারা জেসের প্রোফাইলের পাবলিক কনটেন্ট নিয়ে একটি লুকব্যাক ভিডিও তৈরী করে দিচ্ছে। ভবিষ্যতে একটা সময়ে ফেসবুক কাপিয়ে বেড়ানো আমি, আমরা আস্তে আস্তে বিদায় নেয়া শুরু করবো, মৃত আমাদের জীবিত ফেসবুক একাউন্টগুলো তখনো সবাইকে আমার জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানানোর তাগিদ দেবে, বন্ধু বানানোর জন্য তাগিদ দিয়ে যাবে। কারো মন একটু খারাপ করে দেবে, কারো বা একটু ভাল আর কেউ হয়ত বিরক্ত হয়ে ডিলিট/ব্লক করে দেবে।

মৃত্যু মাত্রই একটি দুঃখের বিষয় হবার কথা কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই এর ব্যতিক্রম হয়। কিছুদিন আগে কাদের মোল্লার ফাঁসির পরে অনেকেই আনন্দ উদযাপন করেছে, সুশীল সমাজ অবশ্য তার নিন্দাও জানিয়েছে। হিটলারের মৃত্যুর পরেও নিশ্চয়ই এরকম উদযাপন হয়েছিল তবে তার নিন্দা হয়েছিল কিনা সে বিষয়ে আমার কোন ধারনা নেই। হিটলার বিষয়ে অনেক আগে থেকেই আগ্রহ ছিল, অনেক কিছুই পড়া হয়েছে, দেখা হয়েছে হিটলারের জীবন জীবন সম্পর্কে। কিন্তু এতদিন কেন জানি হিটলারের এর পরবর্তী বংশধরদের নিয়ে জানার আগ্রহ কখনো জন্মায়নি। তাই হিটলারের ব্লাড লাইন সম্পর্কে হঠাৎ করে যখন জানতে পেরে বেশ বেশ অবাক হইয়েছি। হিটলারের নিজের কোন সন্তান না থাকলেও তার ব্লাড লাইন এখন পর্যন্ত চলমান আছে তার সৎ ভাই এলইস হিটলার এবং সৎ বোন এঞ্জেলা হিটলারের বংশধরদের মাধ্যমে। এঞ্জেলা হিটলারের দুই ছেলে (৮২ ও ৬৪ বছর বয়েসি) এখন পর্যন্ত কোন সন্তান নেয়নি। সৎ ভাই এলইস হিটলারের একমাত্র ছেলে উইলিয়াম প্যাট্রিকের রয়েছে তিন ছেলে। এই উইলিয়াম প্যাট্রিক ২য় বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকান নেভিতে যোগ দিয়ে হিটলারের জার্মান বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ পর্যন্ত করেছে। তার তিন ছেলে এখনো জীবিত এবং তারাও এখন পর্যন্ত কোন সন্তান নেয়নি, অবাক করার বিষয় হলো এমনটা বিশ্বাষ করা হয় যে তারা তিন ভাই মিলে চুক্তি করেছে যে তারা কখনোই সন্তান নেবে না যাতে হিটলার বংশের ব্লাড লাইন চিরতরে থেমে যায় (যদিও এক ভাই এরকম কিছুর কথা অস্বীকার করেছে) স্বল্প সময়ে গুগলের শরনাপন্ন হয়ে এই তথ্যগুলো পেলাম। হিটলার আর তার বংশধরেরা সামনের কিছুদিন আমার আরো কিছু সময় নেবে নিশ্চিত।

শেষ করি মন ছুঁয়ে যাওয়া একটি ভিডিও দিয়ে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন র‍্যাঙ্কিং এ আমরা সুখী দেশ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছি। এই ভিডিওতে ঢাকায় কিছু র‍্যান্ডম মানুষকে একটি প্রশ্ন করা হয়েছে, আপনি কি সুখী?

শুভেচ্ছা

৮৮০ বার দেখা হয়েছে

১৮ টি মন্তব্য : “অন্তর্জালিক”

  1. মোকাব্বির (৯৮-০৪)

    দুইটা ভিডিও দেইখা বেশ চোখের পানি ফালাইলাম ভাই। মাঝে মাঝে কান্নাকাটি করা ভাল। পুরান পানি ফালানো লাগে। নাইলে শ্যাওলা জইমা যায়! ভিডু দুইটার লাইগা অনেক ধইন্যা পাতা! :hatsoff:


    \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
    অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মোস্তাফিজ

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।