এইসব রাত্রি-দিন

বিটিভি হয়ত ভুল করেও এখন কেউ দেখে না। সেদিন একরকম ভুল করেই কিছুক্ষন বিটিভি দেখা হয়ে গেল। কোন এক নাটকে তরুন বয়সের আসাদুজ্জামান নূরকে দেখে কৌতুহলী হয়ে আটকে গেলাম। বেশ পুরাতন নাটকটি দেখতে ভালই লাগছিল, একেবারে শেষ পর্যন্ত গিয়ে বুঝতে পারলাম এটা ছিল ‘এইসব দিন রাত্রি’। যখন এটা প্রথম দেখায় তখন আমার দেখা থাকলেও মনে থাকার কোন সুযোগ নেই, তবে অবাক হলাম নাটক শেষে ক্রেডিট দেখানোর সময় বাজতে থাকা সুরটি শুনে। এত পরিচিত লাগলো! নাটকের কিছুই মনে না থাকলেও সুরটা মনে গেথে আছে দেখে আমি দারুন অবাক, কেমন যেন নস্টালজিয়া ছুঁয়ে গেল।

ংখ্যার বিচারে ব্লগে অনেক অনেক লেখা লিখে ফেললেও এর মাঝে অধিকাংশই উদ্দেশ্যহীন, খাপছাড়া বকর বকর, শুদ্ধ ব্লগীয় ভাষায় ব্লগর ব্লগর। এসব লেখার ক্ষেত্রে মূল লেখার থেকে শিরোনাম ঠিক করাই বেশি কঠিন, সেখানেও ফাকিবাজি করতে একই নাম দিয়ে সিরিজ বানিয়ে চালিয়েছি বেশ কবার। আজকেও কোন কিছু খুঁজে না পেয়ে নাম ধার নিলাম হুমায়ূন আহমেদের কাছ থেকে, হালকা ঘুরিয়ে, কারন লেখালেখির বেশিরভাগই জেগে থাকা রাতের অবদান।

সিসিবির প্রথম যে গেটটুগেদার এ যোগ দেই সেটা ছিল লাবলু ভাইয়ের এবিসি রেডিওতে। বেশিরভাগ সিসিবিয়ানের সাথেই সেদিন প্রথমবারের মত দেখা। এক পর্যায়ে আমরা একে অপরকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলাম। চেনার সুবিধার্থে আমরা সবাই আমাদের ব্লগীয় ট্যাগলাইন নামের সাথে জুড়ে দিচ্ছিলো। আমি নিজেকে বলেছিলাম আবাহনীর আহসান আকাশ। তখন পর্যন্ত আমার ব্লগিং মানেই ছিল ফুটবল আর আবাহনী। মনে আছে প্রথম সুপার কাপের প্রায় প্রতিটি ম্যাচের লাইভ ব্লগিং আপডেট দিতাম। আর মোহামেডানকে হারানোর সাথে সাথে উদযাপন পোস্ট ছিল নিয়মিত। কিন্তু মোহামেডানকে হারাতে হারাতে জিনিষটা এমন পানষে হয়ে গেল যে অনেকদিন আর এ নিয়ে মোহামেডানের দূর্ভাগা সমর্থকদের আর খোঁচা মারা হয় না। গতকালকেও বাংলাদেশ লীগে আবাহনী মোহামেডান খেলা ছিল, আজকেও আবাহনী জিতেছে। বিকেলে এক ক্রিকেট ম্যাচে কোন বল না খেলেই রান আউট হয়ে শেষ পর্যন্ত ১৫ রানে ম্যাচ হেরে যে হতাশায় ছিলাম তার অনেকটাই দূর হয়ে গিয়েছে এই ফলাফল, তাই মনে হলো অনেকপরে মোহামেডান পার্টিকে হালকা খোঁচা দিয়ে যাই। আশা করি কবিতাটা এতদিনে ওদের মুখস্থ হয়ে গিয়েছে,

ইলিশ মাছের তিরিশ কাঁটা, বোয়াল মাছের দাড়ি
মোহামেডান ভিক্ষা করে আবাহনীর বাড়ি

ফুটবল আমার প্রথম প্রেম, খেলাধূলার ক্ষেত্রে ক্রিকেট এসেছিল দ্বিতীয় প্রেম হিসেবে। ৯৭ এর আইসিসি ট্রফির পর থেকে প্রথম স্থান দখলের জন্য ফুটবলের সাথে জোরালো সংগ্রাম করেছে। তবে ধীরে ধীরে সেটা আবার দূর্বল থেকে দূর্বলতর হয়ে এখন তালিকায় ৪-৫ এ ঝুলে আছে। ক্রিকেটে আগ্রহ বলতে এখন শুধু বাংলাদেশের খেলা, সাথে হাতে গোনা কয়েকটি দলের টেস্ট। কিন্তু এটুকুও আর বেশী দিন থাকবে না মনে হচ্ছে। ক্রিকেট বিশ্বের পুরোনো দুই মনিব অস্ট্রেলিয়া আর ইংল্যান্ডের সাথে নব্য ক্ষমতাবান ভারত মিলে ক্রিকেটকে এক পুরোদস্তুর ব্যবসা বানিয়ে নিজেদের পকেট বন্দি করার সকল পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে ফেলেছে। এরা সফল হয়ে গেলে ক্রিকেটের টিকে থাকতে হবে লাইফ সাপোর্টে। বিস্তারিত জানতে হলে এখানে ঢু মারুন। আপাতত অবশ্য এ নিয়ে চিন্তা আমরা বাদ দিতে পারি, কারন বহুদিন পর আমাদের ক্রিকেট টিম টানা কয়েকমাস খেলার মধ্যে থাকবে। আমাদেরকে গোনায় না ধরার দিন যে শেষ সেটা প্রমানের সবচেয়ে ভাল জায়গা হলো ক্রিকেট মাঠ। আশা করি টাইগারেরা মাঠে নিজেদের প্রমান করবে।

ফুটবল আর ক্রিকেটের মাঝে আমার ভালবাসার দ্বন্দ নিতান্তই নগন্য অস্ট্রেলিয়ার মেয়ে এলিস পেরি’র(Ellyse Perry) কাছে। মাত্র ১৬ বছর বয়সেই অস্ট্রেলিয়ান মহিলা ফুটবল এবং ক্রিকেট, দুই জাতীয় দলেই অভিষেক ঘটে পেরির। তারপর থেকে দুই দলেই নিয়মিত ২৪ বছর বয়েসি এই তরুনী, শুধু ঝামেলা বাধে দুই খেলা ওভারল্যাপ হয়ে গেলে, গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় কখনো সে ছাড় দেয় ফুটবল, কখনো ক্রিকেট। এর পাশাপাশি সে ইকোনোমিক্স এন্ড সোশ্যাল সাইন্স এ বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রী নিয়েছে। পাশাপাশি চালিয়ে যাচ্ছে রেডিও ও টিভি সাংবাদিকতা। সুপার উওম্যান!

collage

উপরিঃ
ব্লগে আজকাল কবিতার যুগ চলছে, লেখায়, মন্তব্যে ছন্দের ছড়াছড়ি। এ বিষয়ে আমি বরাবরি চরম দূর্বল। কিন্তু কালকে রাত তিনটায় যখন মস্তিস্ক সকালের অফিসের কথা চিন্তা করে ঘুমানোর জন্য সংকেত দিচ্ছে কিন্তু পারিপার্ষিক পরিস্থিতিতে পুরো উলটো সুর, সেই মুহুর্তে এই কয়েক লাইন নাজিল হলো। আর মনের সকল সাহস সঞ্চয় করে প্রকাশও করে ফেললাম উপরি হিসেবে।

ঘড়িতে রাত বেজে তিন
কানে মশার পিনপিন,
রাস্তায় কুকুরের অক্ষম ঘেউ ঘেউ
টিভিতে ফুটবল,
ল্যাপিতে ব্লগ-ফেসবুক
আমাকে ঘুমুতে দিবি না নাকি তোরা কেউ!

৪,০২৭ বার দেখা হয়েছে

৪১ টি মন্তব্য : “এইসব রাত্রি-দিন”

  1. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

    তোমাদের এই স্টাইলের লেখাগুলো আমার কাছে অলস চুমুকে চুমুকে হুইস্কিপানের মতো - সঞ্জীবনী সুরা।

    বানানঃ দ্বন্দ্ব বানান কিন্তু সোজা। দ-ব-ন-দ-ব।

    জবাব দিন
  2. টিটো মোস্তাফিজ

    আকাশ ফাটা ক্ষেপনাস্ত্র :boss:

    ঘড়িতে রাত বেজে তিন
    কানে মশার পিনপিন,
    রাস্তায় কুকুরের অক্ষম ঘেউ ঘেউ
    টিভিতে ফুটবল,
    ল্যাপিতে ব্লগ-ফেসবুক
    আমাকে ঘুমুতে দিবি না নাকি তোরা কেউ!

    :gulli2: :gulli2: :gulli2:


    পুরাদস্তুর বাঙ্গাল

    জবাব দিন
  3. জিহাদ (৯৯-০৫)

    ছোটবেলায় মোহামেডান করতাম। বড় হয়ে আসলে কিছুরই হিসেব রাখা হয়না। আবাহনী মোহামেডান সব নামগুলো এখন একই রকম লাগে। আমার প্রথম প্রেমও ফুটবল। মোহামেডানের সাব্বিরের খেলা দেখে ভাবতে ভালো লাগতো বড় হয়ে একদিন ফুটবলার হবো। ক্রিকেটের নেশা কবে ধরলো ঠিক মনে নেই। কিন্তু ধরেছিলো ভালোমতই। স্কুলের সময় শেষ হবার জন্য অপেক্ষা করতাম। আর বাকি সময় ক্রিকেট নিয়ে পড়ে থাকা। পাইলটকে দেখে উইকেট কীপিংএ খুব আগ্রহ ছিলো। পাড়ার টীমে উইকেট কীপার হিসেবেই খেলতাম। অনেক কষ্টে কীভাবে কীভাবে যেন টাকা জমিয়ে এক জোড়া গ্লাভস কিনেছিলাম। দেখা যেত সবসময় সে গ্লাভস পড়েই ঘুরতেসি আর দেয়ালে ড্রপ দিয়ে দিয়ে প্র্যাকটিস করতেসি। সবচে মজার সময় ছিলো কোন টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করলে। আগের দিনে প্র্যাকটিস, স্ট্র্যাটেজি ঠিক করা এইসব নিয়ে দারুণ উত্তেজনায় সময় কাটতো। ফাইনালে কোনভাবে উঠে গেলে সেই এড্রেনালিন রাশ এখনো মিস করি। কয়েকবার অন্য পাড়ায় খেলতে গিয়ে ঝগড়া, মারামারি অভিজ্ঞতাও আছে। মনে আছে যেদিন আমাদের ক্যাডেট কলেজের চুড়ান্ত ফলাফল দিলো আমি তখন অন্য পাড়ায় টুর্নামেন্টে খেলতে গেসি। কেউ একজন বাইক চালিয়ে মাঠে এসে খবরটা দিয়েছিলো আমাকে। আমি তখন ব্যাটসম্যানের সামনে খুব ক্লোজ পজিশনে ফিল্ডিং করছিলাম। প্রতিপক্ষের সবচে তুখোড় ব্যাটসম্যান ব্যাটিং এ। অমানুষিক জোরে শট নেয়া একটা বল কয়েক ফিট দূরে দাড়িয়ে কীভাবে যেন ক্যাচটা ধরে ফেলেছিলাম। সবাই খুব অবাক হয়ে গেছিলো। আমি নিজেও। এলাকার বড় ভাই, বন্ধুরা আড্ডায় এখনো মাঝে মাঝে সেটার কথা মনে করে আর বলে সেদিন বেশি খুশিতে ঐটা হয়ে গেসিলো।
    এখন এসব নিয়ে ভাবলে বহু বছর আগের বলে মনে হয়। আর মনে হয় সেই দিনগুলোর স্মৃতি ছাড়া আর সবকিছুই হারিয়ে ফেলেছি। বড় হওয়া আসলে সবসময় ভালোনা, বোধহয় বেশিরভাগ সময়েই না।

    লেখা ভাল্লাগসে 🙂


    সাতেও নাই, পাঁচেও নাই

    জবাব দিন
    • আহসান আকাশ (৯৬-০২)

      আমার বেড়ে ওঠা ফুটবলের মধ্য দিয়ে, আবাহনীর মধ্য দিয়ে। মাঠে গিয়ে খেলা দেখা শুরু একদম ছোটবেলা থেকে বাপের সাথে। এখনো স্বপ্ন দেখি সেই সময়ের ফুটবলের উন্মাদনার অর্ধেকটা হলেও ফিরে আসবে, আবার সেই ছোটবেলার সাধ পাব।


      আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
      আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

      জবাব দিন
  4. ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

    ছোটবেলায় নানাবাড়িতে একবার ভাই আর খালাত ভাই দল ভাগ করছে। খালাত ভাই আমাকে শিখিয়ে দিল আমি মোহামেডান - তারপর থেকে সে একই দলে আছি। এলিস পেরির সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।


    “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
    ― Mahatma Gandhi

    জবাব দিন
  5. তাওসীফ হামীম (০২-০৬)

    ঘড়িতে রাত বেজে তিন
    কানে মশার পিনপিন,
    রাস্তায় কুকুরের অক্ষম ঘেউ ঘেউ
    টিভিতে ফুটবল,
    ল্যাপিতে ব্লগ-ফেসবুক
    আমাকে ঘুমুতে দিবি না নাকি তোরা কেউ!

    এইটা বোমা ছিল ভাই, ব্যপক 😀


    চাঁদ ও আকাশের মতো আমরাও মিশে গিয়েছিলাম সবুজ গহীন অরণ্যে।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : আহসান আকাশ (৯৬-০২)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।