আলোকচিত্র

ছোটবেলা থেকেই ক্যামেরার প্রতি আমার বাড়তি একটা আগ্রহ ছিল। প্রথম কবে ক্যামেরা হাতে পেয়েছিলাম মনে নেই, তবে তখন থেকেই ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে ছবির জন্য পোজ দেয়ার থেকে ক্যামেরা হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করা আর অন্যের ছবি তুলে দেবার প্রতি আমার উৎসাহ বেশি ছিল। তবে সেসময় ছবির ব্যক্তি বা মান নিয়ে আমার তেমন কোন মাথাব্যথা ছিল না, সব আগ্রহ ছিল ক্যামেরাকে ঘিরেই।

ইন্টারনেটে নিয়মিত হবার পর থেকেই ছবি তোলা তথা ফটোগ্রাফি সম্পর্কে আমার ধারনাই পালটে গেল। মাথা নষ্ট করা এক একটা ছবির দিকে আক্ষরিক অর্থেই হা করে তাকিয়ে থাকতাম আর ভাবতাম ‘কেম্নে কি!’ ধীরে ধীরে ‘কেম্নে কি!’র জায়গায় নতুন ভাবনার আগমন ঘটলো, ‘হুম, একদিন আমিও…’ কিন্তু সব কিছু ঐ ভাবনাতেই সীমাবদ্ধ ছিল বেশ কিছুদিন।

গতবছরের মাঝামাঝিতে এসে ছবি তোলার পোকা মাথায় ভালই নাড়াচাড়া শুরু করলো, এক পর্যায়ে সেটা রুপান্তরিত হলো DSLR এর পোকায়। কিন্তু ঐ ক্যামেরার ওজন বইবার মত ক্ষমতা আমার মানিব্যাগের হয়ে উঠছিল না। আর সে কারনে আমার ক্যামেরার ভুতের কথা ঘরের অর্থমন্ত্রীকে খুলে বলা হচ্ছিল না।

কিন্তু আর সব কিছুর মত এটাও বেশিদিন তার কাছ থেকে চেপে রাখতে পারলাম না তবে তার প্রাথমিক ফলাফল খুব একটা প্রীতিকর হলো না। ‘ছবি তুলতে জানলে সাধারন ক্যামেরা দিয়েই তোলা যায়, তার জন্য DSLR লাগে না’, ‘DSLR এখন ছেলেদের নতুন ফ্যাশন’ ইত্যাদি বিভিন্ন জ্ঞানগর্ভ উক্তির পাশাপাশি ঐ টাকায় সংসারের প্রয়োজনীয় জিনিষ কেনা যাবে তার তালিকা শুনতে হলো। এমতবস্থায় আমার ক্যামেরার পোকা মাথাতেই থেকে গেল, বের হবার আর সুযোগ পেল না।

তবে তখন ভাবতেও পারিনি আমার জন্য আরো বড় কোন চমক অপেক্ষা করছে। আমার বউ ব্যাংকে একটা তিন বছর মেয়াদী সঞ্চয় হিসাব খুলেছিল, প্রতি মাসে নির্দিষ্ট পরিমানে টাকা হাত খরচ থেকে বাচিয়ে সেখানে জমা রাখতো। বছরের শেষ দিকে এসে সেটা ম্যাচিউরড হবার সময় হলো। এটার টাকা নিয়ে বিভিন্ন সময় তার বিভিন্ন পরিকল্পনা ছিল, তিন বছরে সেটা নিয়মিত পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু সব পরিকল্পনা ভেস্তে দিয়ে সে টাকাটা ব্যাংক থেকে তোলার দুদিন পরে আমার হাতে তুলে দিয়ে যখন DSLR কিনতে বললো তখন আমি হাসবো না কাদবো বুঝতে পারছিলাম না। বেশ কয়েকবার মানা করার পরে যখন বুঝলাম যে সে সিরিয়াস তখন নিজেকে অতীব ভাগ্যবান একজন বলে মনে হচ্ছিল।(প্রথমে অবশ্য এটা আমার জন্য কোন টেস্ট কিনা সে ব্যাপারে যথেষ্ঠ সন্দেহ ছিল) যাই হোক, বউ এর বদান্যতায় শেষ পর্যন্ত আমি একটা দামি ক্যামেরার মালিক হয়ে গেলাম, কয়েকমাস চলে গেলেও যেটা এখনো ঠিকমত নিজের আয়ত্তে আনতে পারিনি। আর ক্যামেরাটা কেনার পর থেকেই চোখের সামনে শুধু এই ছবিটাই ঘুরঘুর করেঃ

তবে ছবি তোলা থেমে থাকেনি, সামনে যা পেয়েছি ছবি তুলে যাচ্ছি, যার ৯৯ ভাগই প্রথম দেখাতেই বাতিল করে দিতে হচ্ছে। ধীরে ধীরে দু একটা ছবি পাতে তোলার মত মনে হওয়া শুরু হয়েছে। সাথে ফটোশপ নিয়ে হালকা নাড়াচাড়া করে কিছুটা কাজ আয়ত্ত্বে আনার পরে মনে হলো এবার হয়তো কিছু ছবি জনসম্মুখে আনা যায়। সেই সাথে অনেকদিন ধরে কোন ব্লগে কোন পোস্ট দেয়া হচ্ছিল না, এই উছিলায় একটা পোস্টও দেয়া হয়ে যাবে।

বিয়ের আগে প্রেম জীবনে আর পরে সংসার জীবনে এই ব্লগের পিছনে সময় দিয়ে তৎকালীন প্রেমিকা আর বর্তমানের বউকে কিছুটা হলেও বঞ্চিত করেছি, কিন্তু এত দিনে তাকে নিয়ে কোন কিছু লেখা হয়নি, তাই আজকের এই ব্লগ, সেই সাথে এগুলোসহ ভবিষ্যতে যত ছবিই আমি তুলি, সব উৎসর্গ করলাম আমার ‘বেটার হাফ’কে। আমার জীবনে আসার জন্য ধন্যবাদ।

নিজের ভিতরে ক্রিয়েটিভিটির পরিমান নিয়ে কখনোই আমার মনে সন্দেহ ছিল না, কিন্তু ছবিগুলোর নাম দিতে গিয়ে আবারো টের পেলাম। এখন পর্যন্ত কোন ছবিরই যুতসই কোন নাম খুঁজে পাইনি, তাই সবগুলোই শিরোনামহীন, আর ছবির উপরে ক্লীক করলে বড় করে মূল সাইজে দেখা যাবে।

২,১৩১ বার দেখা হয়েছে

১৯ টি মন্তব্য : “আলোকচিত্র”

  1. রাকেশ (৯৪-০০)

    :clap: :clap: :clap: :clap:

    ২ আর ৫ নাম্বারটা সেরকম হইছে, ২ নাম্বারে শুধু সবুজ অংশটা একটু উজ্জল হলে ভাল হত। ভাল হত মানে দৃস্টি টানতো।

    ১ নাম্বারটাও হয়েছে ভালর মত, রিং ফ্ল্যাশ থাকলে মনেহয় ভাল হত। এরিয়াল ভিউ থেকে ফুলের ছবি তোলা হলে সাধারনত পুরোটাতেই হাইলাইট করা হয়, অবশ্য সবসময় গ্রামার মানতে হবে এটা আর কি কথা।

    ৪ নাম্বারটাও যথেস্টই ভাল, কি জানি একটা মিসিং! একটু সেপিয়া টোন ওভারঅল শুধু পাতাগুলো উজ্জল সবুজ - পুরোনো দেয়ালে নতুন প্রান এরকম একটা থিম আসতো।

    ৩ নাম্বারটাতে যেখানে ফোকাস পড়েছে সেটা আরেকটু ব্রাইট হওয়া দরকার ছিল, যে কারনে এই ছবিটা একটু বিলো এভারেজ হয়েছে । সরি

    আমি ম্যাঙ্গো পাবলিক তো, তাই সমোলোচনা বেশী কইরালাইসি মনেহয় !

    জবাব দিন
    • আহসান আকাশ (৯৬-০২)

      অনেক ধন্যবাদ রাকেশ ভাই, এত যত্ন নিয়ে ছবিগুলো দেখে আপনার মন্তব্য দেবার জন্য। আপনার বলা বিষয়গুলো মাথায় থাকলো, ভবিষ্যতে কাজে দেবে।


      আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
      আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

      জবাব দিন
  2. মুসতাকীম (২০০২-২০০৮)

    খোমাখাতায় আগেই দেখছি :boss: :boss: :boss:
    সিরাম সিরাম :hatsoff:

    হুম, একদিন আমিও

    :dreamy: :dreamy: :dreamy:


    "আমি খুব ভাল করে জানি, ব্যক্তিগত জীবনে আমার অহংকার করার মত কিছু নেই। কিন্তু আমার ভাষাটা নিয়ে তো আমি অহংকার করতেই পারি।"

    জবাব দিন
  3. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

    ছবিগুলো নিয়ে টেকনিকাল যা কিছু বলার রাকেশ বলেছে।আমি দেখলাম তোমাদের টোনাটুনির গল্প, সংসারের টুকিটাকি মিঠেকড়া মুহূর্তগুলো।তোমার অর্থমন্ত্রী (মতান্তরে স্বরাষ্ট্র, 🙂 )কে স্যালুট।

    সবগুলো ছবিই খুব ভালো লেগেছে আমার।প্রকৃতিকে দেখার চোখ যার আছে তার ছবি আরো ভালো হতে কতক্ষণ! সেই ক্ষণের প্রতীক্ষায় রইলাম।

    জবাব দিন
    • আহসান আকাশ (৯৬-০২)

      ধন্যবাদ নূপুরদা, অনুপ্রেরণা পেলাম। আর উনি তো সকল মন্ত্রনালয়েরই দায়িত্বে থাকেন, তাই যখন যেটা প্রয়োজন তখন সেই মন্ত্রনালয়ে অফিস করেন আর কি 😛


      আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
      আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

      জবাব দিন
  4. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    :clap:
    😛 আমি এক্টা আই ম্যাক কিন্মু। অরথমন্ত্রী এখনো পাশ করে নাই।


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : হামীম (২০০২-২০০৬)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।