খিচুড়ি-৬

ছর প্রায় শেষ, সব জায়গাতেই চলছে ২০১১ সালের কাঁটা ছেড়া আর ময়না তদন্ত। সিসিবির ২০১১ সালের সালতামামি নিয়ে একটা পোস্ট দেয়ার ইচ্ছা মাথায় এসেছিল কিন্তু সে পরিমান সময় হাতে নেই, তবে এরকম একটা পোস্ট পড়তে ইচ্ছা করছে। তাই আইডিয়াটা বাজারে ছেড়ে দিলাম, আগ্রহী ব্লগারেরা চেষ্টা করে দেখতে পারেন।

শেষ পর্যন্ত ভারতীয় সিনেমা আমাদের সিনেমা হলে মুক্তি পেয়েছে। এর পক্ষে বিপক্ষে অনেক কথা হয়েছে। আন্দোলনের ডাক দিয়েও শেষ পর্যন্ত আদালতের রায়ের কারনে শিল্পীরা আন্দোলনে যেতে পারেনি। ব্যক্তিগতভাবে আমি শর্ত সাপেক্ষে আমাদের হলে বিদেশি ছবি মুক্তি দেবার পক্ষে, তবে সে বিতর্ক টানবো না। আমার শুধু যারা এখন জীবন দিয়ে ভারতীয় সিনেমা রুখে দেবার ডাক দিচ্ছিলেন, তারা গত ১৫ বছর কোথায় ছিলেন যখন ভারতীয় সিনেমা, সিরিয়াল, বিজ্ঞাপন এমনকি হাল আমলে ভারতীয় ভাষার কার্টুন আমাদের ড্রয়িংরুম দখল করে নিয়েছে?

নিয়ে চতুর্থ বারের মত সিলেট আসা হলো। এখানের সবচেয়ে যে জিনিষটা ছাল লাগে সেটা হল ইচ্ছে হলেই দারুন দারুন সব জায়গায় ঘুরতে চলে যাওয়া যায়। এ সুযোগ কোনবারেই হাতছাড়া করিনি, এবারো ছুটির দিনগুলোতে এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াচ্ছি। কিছু কিছু জায়গায় প্রথম বারের মত যাওয়া হচ্ছে, এর মাঝে একটা হলো ‘সাত রঙের চা’ এর জন্য বিখ্যাত নীলকন্ঠ টি কেবিন। অনেক নাম শুনলেও এতদিন এর স্বাদ নেয়া হয়নি। এবার সে স্বাদ নিয়ে বুঝলাম যে সেটা কত ভাল সিদ্ধান্ত ছিল। সোজা ভাষায় বললে, আমি এর থেকে বাজে চা আর জীবনে খাইনি। এর থেকে কলেজে ফ্লাক্সের গরম পানিতে টি ব্যাগ ডুবিয়ে তাতে শুধু কয়েক চামচ চিনি গুলিয়ে আমি নিজে যে চা বানাতাম সেটাও ভাল ছিল।

রো যেটি প্রথম দেখলাম সেটি হলো চা গাছের ফুল, এতদিন চা বাগানে অনেক ঘোরাঘুরি করলেও ফুল কখনো দেখা হয়নি

চা ফুল

যেখানে গিয়ে রীতিমত হতাশ হয়েছি সেটা হলো মাধবকুন্ডো। এমনিতেই শীতকাল বলে পানি কম, তা উপর সেখানে এক পাশে সিমেন্টের ঘাট করা হয়েছে, সেটার কারনে পানি জমে জায়গাটা পুরো পরিনত হয়েছে ময়লা পানির এক ডোবায়। আর সেখানে ঘুরতে আসা লোকজনকে দেখে মনে হলো দীর্ঘদিন পানির অভাবে তারা গোছলের সুযোগ থেকে বঞ্চিত, তাই লুঙ্গি, গামছা, সাবান শ্যাম্পু নিয়ে তারা সকলে ঝাপিয়ে পড়েছে ঐ পানিতে। যারা আরো এক ধাপ এগিয়ে তারা কাপড় ধোয়া সাবানেরও পূর্ণ ব্যবহার করছে। গা শিউরে ওঠার মত দৃশ্য, চারিদিকে শুধু ফেনা আর ফেনা!

দানিং সিনেমা দেখার মাত্রা কিছুটা হ্রাস পেয়েছে, মূল কারন সিনেমার স্টক কমে আসা। এর মাঝে অসাধারন এক শিক্ষামূলক হিন্দি মুভি দেখা হয়ে গেল, “পেয়ার কা পঞ্চনামা” তিন ব্যাচেলর বন্ধুর কাহিনি, এক সময় তিনজনের জীবনেই নারীর আগমন ঘটে। এরপরে তাদের জীবনে যে পরিবর্তন আসে তা নিয়েই এই সিনেমা। বলিউডের পুতুপুতু প্রেম কাহিনির বাইরে গিয়ে বাস্তবতাকে দারুন ভাবে দেখিয়েছে। ব্যাপক মজা পেয়েছি মুভিটা দেখে, কোন মেয়ের হাতে নিজের নাকে বাঁধা দড়ি তুলে দেবার আগে এই মুভি একবার দেখে নেয়া মাস্ট। পাঁচ মিনিটের একটা ক্লিপ এখানে শেয়ার করলাম (কেউ ডাউট দেবার আগেই বলে নেই, আমি কিন্তু আমার বউরে সাথে নিয়েই এ মুভি দেখছি। আর দুইজনই মজা পাইছি)

শীত আমার প্রিয় ঋতু, (শুধুমাত্র সকালে ঘুম থেকে ওঠার সময়টা বাদে) এর পিছনে থাকা অনেক কারনের একটা হলো পিকনিক। ছোটবেলায় যেটা শুরু হয়েছিল আব্বুর অফিসের পিকনিক দিয়ে, কলেজের পিকনিকগুলোও দারুন ছিল। তবে নিজের চাকরির পিকনিকগুলোতে মজার করার চেয়ে দ্বায়িত্ব পালনেই বেশি ব্যস্ত থাকতে হয়েছে তাই সেগুলো সবসময়ই এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেছি। বহু বছর পরে একটা পিকনিক সত্যিকারভাবে উপভোগ করেছিলাম, সেটা হলো ২০০৯ এর সিসিবির পিকনিক। এরপর থেকে শুধু অপেক্ষা আর অপেক্ষা, মাঝখানে প্রায় দু’বছর চলে গেল কিন্তু সিসিবির পিকনিকের আর কোন খবর নাই। সপ্তাহ দুয়েক আগে ফয়েজ ভাই বিবেকের কাছে এই নিয়ে তার ৬ দফা উত্থাপন করেও এ নিয়ে বিবেকের কাছ থেকে তেমন কোন সাড়া পাওয়া গেল না। তাই আবারো আওয়াজ তুললাম, এক দফা-এক দাবী, জানুয়ারী মাসের মধ্যেই পিকনিক চাই। আর আবারো এই রকম ছবি তুলতে চাই

সিসিবির ফুটবল ইতিহাসে অপরাজিত সিনিয়র টিম

সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা।

৮৯২ বার দেখা হয়েছে

২০ টি মন্তব্য : “খিচুড়ি-৬”

  1. রকিব (০১-০৭)

    সালতামামিটা পরের পোষ্টেই নামায়ে ফেলান আকাশদা।
    আগেই কইছিলাম, উল্টাপালটা চা না খেয়ে আমার দোকান থেকেই খান 😛
    পিকনিক টিকনিক ভালু না। :((


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
    • আহসান আকাশ (৯৬-০২)

      সেই পরিমান সময় হাতে নাই রে। আর সবসময় ভালু জিনিষ করলেই হয় না, মাঝে মাঝে খারাপ জিনিষও করতে হয় এই যেমন পিকনিক টিকনিক :grr:

      সিসিবিতে যে 'চায়ের দোকান' বলে একটা জিনিষ আছে এইটা মনে হয় সবাই ভুলেই গেছে 🙁


      আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
      আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

      জবাব দিন
  2. রাব্বী (৯২-৯৮)

    আমার মত একটা কার্যকরী শর্ত সাপেক্ষে নিদ্রিষ্ট সংখ্যক বিদেশি সিনেমার মুক্তির পক্ষে। হলে গিয়ে তো দেখার মতো মুভি থাকে না। সিনেমা হল মরে গেলে সিনেমাও শেষ। বিদেশি ছবির ক্ষেত্রে একটা ভাষার কোটা থাকতে পারে - মানে কোন ভাষায় কয়টা প্রতি মাসে। গত কয়েকদশক ধরে যে এক-টিকিটে-দুই-ছবি চলে এগুলি তো সব বিদেশি ছবি! বরং ভাল সিনেমা আনার বাস্তবসম্মত পলিসি করা প্রয়োজন।

    মাধবকুন্ড জায়গাটারে এমনে নষ্ট করতেছে! বড় দুঃখজনক।

    চায়ের ফুল আগে দেখিনাই কোনদিন। সৌন্দর্য্য 🙂


    আমার বন্ধুয়া বিহনে

    জবাব দিন
    • আহসান আকাশ (৯৬-০২)

      সিনেমা হলে ভবিষ্যত আসলেই অন্ধকার, শহর এলাকায় মাল্টিপ্লেক্স করে হয়ত কিছু করা যেতে পারে। কিন্তু মফস্বল বা গ্রামে বর্তমান পরিস্থিতি চলতে থাকলে সিনেমা হল টিকিয়ে রাখা মনে হয় আসলেই দুরুহ।

      তবে হলে গিয়ে সিনেমা না দেখার অন্যতম প্রধান কারন আমার মনে হয় স্থানীয় ডিশ চ্যানেলে সিনেমা দেখানো। যারা আমাদের বাংলা সিনেমার নিয়মিত দর্শক তারাও হলে না গিয়ে বাসায় বসে বা গ্রামের বা পাড়ার চায়ের দোকানে বসে নতুন পুরাতন সব সিনেমাই দেখতে পারছে, কলকাতার বাংলা সিনেমারও সেখানে দারুন কদর। আমাদের চলচিত্র শিল্পের সাথে জড়িত লোকেরা এর বিরুদ্ধে কেন সোচ্চার না বুঝতে পারলাম না।


      আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
      আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

      জবাব দিন
  3. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

    আশা করছি বছরের শুরুতেও আরেকটা রিফ্রেশিং লেখা পাবো তোমার কাছ থেকে।
    বিদেশী সিনেমা বলতে একরকম বুঝি, ভারতীয় বললে আরেকরকম। সেই 'আরেকরকম' ছবি হলে এনে লোকজনকে গেলানোর আগেই তো আমরা শাহরুখ খান, একতা কাপুরদের কাছে ড্রয়িং রুম ছেড়ে দিয়ে বসে আছি। তোমার সাথে একদম সহমত।
    বিদেশী ছবি চালানো মানে যদি ভিন্ন রুচি আর ভিন্ন স্বাদের চর্চা হয় তাহলে তো বিটিভির 'মুভি অব দ্য উইক'- কালচারই শুরু করা যেতে পারতো হলগুলোতে, তাই না? ভারতীয় ছবি আর বলিউড যদি সমার্থক হয় তাহলে আর বলার কিছু নাই।

    জবাব দিন
  4. সামীউর (৯৭-০৩)

    শেষ ছবিতে সবার বামে খাড়ায় আছে কেঠায়, কাইয়ুম ভাই নাকি?

    আকাশদা- আসলে সিনেমা ব্যবসার ধরণেই অনেক পরিবর্তন আসছে, যার সঙ্গে আমাদের দেশের রুগ্ন চলচ্চিত্রশিল্প পাল্লা দিয়ে পারার কোন সক্ষ্মমতাই রাখেনা। যে কারণে হল বন্ধ হচ্ছে, ভাল ছবি হচ্ছে না, ইত্যাদি। আমার ব্যক্তিগত মত হল, মধ্যবিত্তকে দর্শক বিবেচনা করে ছবি বানানোর দিন শেষ, কারণ তাদের জন্য টিভি নাটক আছে। ম্যাটিনি শো মূলত চলত গৃহবধু দর্শকদের জোরে, কিন্তু একুশ শতকের মহিলাদের সেই সময় কোথায়। সিনেমা এখন শহুরে এলাকায় মাল্টিপ্লেক্স যুগে চলে গেছে। যেখানে তরুণ সমাজ বিনোদনের আসায় আসবে এবং টেনপিন বোলিং, বিলিয়ার্ড এসব খেলার ব্যবস্থা থাকবে, ফুডকোর্ট থাকবে, সেই সঙ্গে সিনেমা হল। প্রক্ষেপণ প্রযুক্তিতেও এসেছে পরিবর্তন।ত্রিমাত্রিক ও আইম্যাক্স পদ্ধতিতেও ছবি দেখানোর বন্দোবস্ত থাকাটা দরকার।এখানে দেশী ছবির পাশাপাশি বিদেশী ছবিও চালাতে হবে, না হলে প্রেক্ষাগৃহ ফাঁকাই থাকবে। কারণ এই দর্শকদের রূচি অনুযায়ী চলচ্চিত্র বছরে খুব বেশি তৈরি হবে না। মূলত ছাত্রছাত্রী ও তরুণ পেশাজীবিরাই এই ভোক্তাশ্রেণীতে পড়েন। গ্রামীন অঞ্চলের জন্য সালাউদ্দিন লাভলুর নাটকের আদলে গ্রামীন জনপদের হাস্যরস, জীবনযাত্রা, অনেকটা যাত্রার ঢং এর চলচ্চিত্র তৈরি করা দরকার। যাতে হাসি, আনন্দ, বিনোদন থাকে। সব ধরণের দর্শককে প্রেক্ষাগৃহে আনার মত ছবি কিন্তু অনেক বড় চলচ্চিত্র শিল্পের দেশেও খুব বেশি তৈরি হয় না। আমার ব্যক্তিগত মত, বৃন্দাবন দাস ও সালাউদ্দিন লাভলু জুটির টেলিফিলগুলোকে একটু ঘষামাজা করলেই বিনোদনদায়ক চলচ্চিত্র হবে, গ্রামের দিকের চায়ের দোকানে লোকে কিন্তু এগুলোই দেখে। কারণ ভাষার মিল, প্রতিবেশের মিল। এই মিল নাই দেখেই শাকিব খানের সিনেমার হিট নায়ক হলেও তার কেশবিন্যাস কিংবা পোষাকসজ্জা কাউকে অনুকরণ করতে দেখা যায় না।

    জবাব দিন
  5. আদনান (১৯৯৭-২০০৩)
    যারা এখন জীবন দিয়ে ভারতীয় সিনেমা রুখে দেবার ডাক দিচ্ছিলেন, তারা গত ১৫ বছর কোথায় ছিলেন যখন ভারতীয় সিনেমা, সিরিয়াল, বিজ্ঞাপন এমনকি হাল আমলে ভারতীয় ভাষার কার্টুন আমাদের ড্রয়িংরুম দখল করে নিয়েছে?

    একদম!

    বিদেশী সিনেমা আমাদের হলে দেখানো নিয়ে আমারও কোনো সমস্যা নাই। In fact, হলে দেখায় না বলেই আমরা ডিস্ক কিনে বা ডাউনলোড করে পাইরেটেড কপি দেখি, দেখা তো ঠিক-ই হয়। আর কুরুচি'র কথা বলে ডাউট দিলে বলব- বাংলাদেশে যেসব কমার্শিয়াল ছবি বানানো হয় তা কি খুব রুচিসম্মত?

    "চা-ফুল" দেখে খুব মজা পাইলাম। কিন্তু মাধবকুন্ডে ফেনাওয়ালা পুল?? মনে হয় বর্ষাকালে গিয়ে দেখে আসার সিদ্ধান্তটা সঠিক ছিল। আর ঐ ৭ লেয়ার চা? সুপেয় না হলেও ফটোজেনিক 🙂

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : আহসান আকাশ (৯৬ - ০২)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।