হযবরল


লন্ডনের বাসের গল্প শুনেছি, এর জন্য নাকি লম্বা সময় ধরে অপেক্ষা করে থাকতে হয় কিন্তু বাস আর আসতে চায় না, আর যখন আসে তখন দুটো এক সাথে আসে। আমার ব্লগের অবস্থাও সেরকম, মাঝে মাঝে কিছু একটা লিখতে ইচ্ছে করে, কিন্তু লেখার মত কিছু খুঁজে পাই না আর যখন একটা লিখে ফেলি তখন মাথায় আরো ব্লগর ব্লগরের আইডিয়া গিজগিজ করতে থাকে আবার ওদিকে আগের লেখাও প্রথম পাতা থেকে যেতেই চায় না। আর যেতে যেতে দেখা যায় মাথা থেকে আইডিয়াই চলে গিয়েছে বা লেখার বিষয় ততদিনে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গিয়েছে। গোল্ডফিশিও স্মৃতিশক্তিও এই দেশে আবার টপিক পুরনো হতে খুব বেশি সময় লাগে না। এ কারনে প্রায়ই আগের লেখা গায়েব হবার আগেই নতুন লেখা পোস্ট করে দেই। এডু স্যার এখন পর্যন্ত কিছু বলে নাই, সেই সুযোগে আবারো একই কাজ করলাম। আসুন ব্লগারেরা আরো বেশি করে পোস্ট দিয়ে আমাকে এডু স্যারের চোখ রাঙ্গানি খাবার আগেই উদ্ধার করুন।


বিভিন্ন আড্ডা/আলোচনা, লেখালেখিতে গোল্ডফিস মেমোরি শব্দটি প্রায় ব্যবহার করা হয় আমাদের দেশের মানুষের স্বভাব বোঝাতে। প্রথম দিকে অপরিচিত এই শব্দের আভিধানিক অর্থ না জানলেও ব্যবহার দেখে মোটামোটি একটা ধারনা করে নিয়েছিলাম গোল্ডফিস নিশ্চয়ই খুব স্বল্পকালীন স্মৃতি শক্তির অধিকারী হবে। গুগল করে আসল কাহিনি দেখি দেখি করেও দেখা হয় নি অনেক দিন। এবার সময় করে দেখেই নিলাম আর বিস্মিত হয়ে আবিষ্কার করলাম আমরা সফলতার সাথে গোল্ডফিসকেও হার মানিয়েছি। গোল্ডফিস মেমোরি কথাটা প্রচলিত হয়েছিল একটা মিথের উপরে যে ওদের স্মৃতি থাকে মাত্র ৩ সেকেন্ডের জন্য, তার মানে ফিসবলে একটা চক্কর শেষ করেই ও সব কিছু ভুলে যায়। প্রতিটি চক্করই ওর কাছে প্রথম চক্কর!

কিন্তু এই মিথ ভুল প্রমানিত হয়েছে আর তা প্রমান করেছে অস্ট্রেলিয়ার ১৫ বছরের এক বালক। পরীক্ষা করে দেখিয়েছে গোল্ডফিস কমপক্ষে তিন মাসের স্মৃতি ধরে রাখতে পারে।। পরবর্তীতে বিশেষজ্ঞরাও এর সাথে সম্মতি জানিয়েছে। তার মানে দাড়াচ্ছে গোল্ডফিস মেমোরি হলো তিন মাস। তিন মাস!!! আমাদের জন্য সেটা তো অনেক লম্বা সময়, আমরা ঘটনা মনে রাখি বেশি হলে তিন সপ্তাহ। তারপর নতুন ঘটনায় কাগজের পাতা আর টিভির খবর গরম হয়।


ক্রিকেট খেলাটা ইদানিং আমাকে তেমন একটা টানে না, শুধুমাত্র বাংলাদেশের খেলা দেখেই আনন্দ পাই, আগেও যে খুব বেশি ভক্ত ছিলাম তাও না। তবে ইদানিং অর্থহীন এত ২০/২০ আর ওয়ানডে হচ্ছে যে খোঁজই নেয়া হয় না। তবে ভাল টেস্ট ম্যাচ দেখার জন্য সবসময়ই অপেক্ষায় থাকি, যেমন অপেক্ষায় ছিলাম ইংল্যান্ড ইন্ডিয়া টেস্ট দেখার জন্য। খুব একটা হতাশও করেনি, প্রথম টেস্টে ৫ম দিন পর্যন্ত মোটামোটি কন্টেস্ট ছিল। আর ২য় টেস্টে ইংল্যান্ড তো দূর্দান্ত। তবে মাঠের খেলার বাইরেও যে আরো যে জিনিশগুলো খেলাটা উপভোগ করতে সাহায্য করেছে তা হলো কমেন্ট্রি। আইপিএল এর কমেন্ট্রি তো রীতিমত অত্যাচার, ওয়ানডেতেও কমেন্ট্রির মান অনেক নীচে নেমে এসেছে। তবে এই সিরিজের জন্য স্টার ক্রিকেটের কমেন্ট্রি টিমের রবি শাস্ত্রীকে বাদ দিলে দারুন একটা গ্রুপ, আর সাথে আমার সবচেয়ে প্রিয় ডেভিড লয়েড তো আছেই। সাথে আরো ছিল স্টেডিয়ামের দর্শক, টানা পাঁচ দিন ধরে হাউসফুল দর্শক মনে হয় একমাত্র ইংল্যান্ডেই সম্ভব, সাথে তাদের ফ্যান্সি ড্রেস। আজব আজব সব কস্টিউম পরে দল বেধে গ্যালারী ভরে রাখে এরা। তাও ভাল খেলা দক্ষিন আফ্রিকায় হচ্ছে না, তাহলে এই রোজা হালকা হয়ে যাবার ভয় থাকত।


এই উইকেন্ডে বেশি মুভি দেখা হয়নি, ইন্টারনেটে বেশি ব্যস্ত ছিলাম। তবে টিভি সিরিয়াল দেখেছি, যেটা মুভির চেয়ে কোন অংশেই কম না। নাম শারলক (Sherlock)

ঠিক ধরেছেন, এটা বিখ্যাত ডিটেকটিভ শার্লক হোমস এর কাহিনি। তবে স্যার আর্থার কোনান ডয়েলের শার্লক হোমস নয়, স্টিভেন মোফ্যাট আর মার্ক গ্যাটিশ এর একবিংশ শতকের শার্লক হোমস। এই শার্লক হোমস স্মার্ট ফোন ব্যবহার করে, ইন্টারনেটের সাহায্য নেয়। মূল ভিত্তিটাকে ঠিক রেখে এ যুগোপুযোগী করে কাহিনি গড়ে তোলা হয়েছে। হোমস এর সাথে ডঃ ওয়াটসন ও আছে, আফগানিস্তান যুদ্ধ ফেরত আহত মিলিটারি ডাক্তার। বিবিসির তৈরী করা এই সিরিজের প্রথম সিজনে তিনটি পর্ব করা হয়েছে, প্রতিটি ৯০ মিনিটের। “A Study in Pink”, “The Blind Banker”, The Great Game। প্রথম পর্ব যাকে বলে শ্বাষরুদ্ধকর, দ্বিতীয় টা মোটামোটি, তৃতীয়টা আবারো দারুন, চরম এক ক্লাইমেক্স মুহুর্তে শেষ করা হয়েছে শেষ পর্ব। এ বছর আবারো নতুন তিনটি পর্ব নিয়ে ফিরে আসছে। অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি আগামী সিজনের জন্য। পুরো সিজন একসাথে টরেন্ট থেকে নামাতে পারবেন এখান থেকে।


গতকাল ছিল কনসার্ট ফর বাংলাদেশের ৪০ বছর পুর্তি। ১৯৭১ সালের ১লা আগস্ট নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেনে পন্ডিত রবিশঙ্কর আর জর্জ হ্যারিসনের মূল উদ্যেগে সে সময়ের লিজেন্ডারি সব মিউজিশিয়ান এক হয়েছিল যুদ্ধবিধস্ত বাংলাদেশের জন্য ফান্ড তৈরী করতে আর আরো গুরুত্বপূর্ণভাবে বাংলাদেশে ঘটতে থাকা স্বাধীনতা যুদ্ধের সঠিক চিত্র তুলে ধরে পশ্চিমা জনগনের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি। সেখানে পারফর্ম করেছে বব ডিলান, এরিক ক্ল্যাপটন, বিলি প্রেস্টন, রিংগো স্টার, লিওন রাসেল, ওস্তাদ আলী আকবর, ওস্তাদ আল্লা, ব্যাড ফিঙ্গারস, হলিউড হর্নস সহ আরো অনেকে। তাদের শেষ পরিবেশনা ছিল জর্জ হ্যারিসনের বাংলাদেশ গানটি। প্রথম থাকে শুরু করে এখন পর্যন্ত যতবার এই গানটা শুনেছি ততবারই গায়ের রোম খাঁড়া হয়ে গিয়েছে।

৪০ বছর পার হয়ে গেলেও আমরা জর্জ হ্যারিসনের মত আরো অনেক বিদেশি বন্ধু যারা বিভিন্ন ভাবে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আমাদের পাশে দাড়িয়েছিল তাদেরকে সম্মান জানাতে পারিনি। ইন্দিরা গান্ধীর মাধ্যমে এ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, আশা করি শীঘ্রই অন্যদেরকেও সম্মানিত করা হবে।

১,৫১৪ বার দেখা হয়েছে

১২ টি মন্তব্য : “হযবরল”

  1. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    এইটা কি জানিস ঐ টাকা শরণার্থীদের অইখানে পৌছায় নাই। আমারে এক স্প্যানিশ ফ্রেন্ড কইল। তাতে কিছু যায় আসে না। তারা তো অ্যাট লিস্ট ফিল করে কনসার্ট টা করেছিলো।
    আর লন্ডনে বাস টাইম মতোই আসে; একেবারে ঘড়ির কাটা মেনে।
    লেট যে হয় না তা না, তবে কদাচিৎ।
    প্রথম যেইদিন টিউবের জন্য ওয়েট করতেছিলাম দেখি একটার পর আরেকটা আসে। আমি তো কনফিউসড। কি হইতেছে। একটার পর আরেকটা আসে কি কইরা!
    আর এখন ১ মিনিটের জায়গায় ২ মিনিট লাগ্লে ভাবি এতো লেট কেন?


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
    • আহসান আকাশ (৯৬-০২)

      টাকা নিয়ে কাহিনিটা আগে শুনিনি, তবে আমার মনে হয় টাকার থেকে প্রচারনাটাই মনে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

      লন্ডন বাসের উদাহরনটা সবচেয়ে বেশি শুনেছি ইংলিশ ফুটবল কমেন্ট্রিতে, কোন স্ট্রাইকার গোলখরা কাটিয়ে দেখা যায় এক ম্যাচেই দুগোল করে ফেলেছে সে সময়, কিছু টিভি সিরিজেও শুনেছি।


      আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
      আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

      জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মাহফুজ (৯২-৯৮)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।