রাতলিপি ৩

বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা অবশেষে শেষ হলো। আজ সন্ধ্যার পর পর হঠাৎ করেই চলে এল বৃষ্টি, তবে একা নয় সাথে ছোট খাট একটা কালবৈশাখীকে সঙ্গী করে। তাঁবুর ভেতরে বসে এই ঝড় ঝঞ্ঝা ভালই লাগছিল, যদিও একটু টেনশন ছিল ঝড়ের শক্তি বেশি বেড়ে গেলে তাঁবু টিকে থাকতে পারবে কিনা। তবে ঝড় শেষে বৃষ্টি নেমে এল, কোন প্রকার দূর্ঘটনা ছাড়াই। আর আমিও নিশ্চিন্ত মনে বেশ উপভোগ করতে লাগলাম সেই বৃষ্টি।

ড় শুরু হবার সাথে সাথে অধিকাংশ সময় যে কাজটা হয় সেটা হলো ইলেকট্রিসিটি চলে যাওয়া, আজকেও এর ব্যতিক্রম হলোনা। এক সময় ঝড় থেমে গেল, কিন্তু ইলেকট্রিসিটি আসার কোন নাম নেই। খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম কোথায় নাকি তার ছিড়ে গিয়েছে, কাজ চলছে। অপেক্ষার পালা শুরু হলো, সঙ্গী হলো ল্যাপটপ, প্রায় দু ঘন্টা সাথে থাকার পর সেটার চার্জ শেষ, এর মাঝেই চার্জার লাইট অক্কা পেয়েছে। তখন হাতে নিলাম মোবাইল, দুটো মোবাইলের একটির চার্জ আগেই শেষ, আরেকটার অবস্থা নিভু নিভু, সে অবস্থাতেই নেট থেকে গেমস নামিয়ে খেলাও শুরু করলাম, নোকিয়ার স্টোর থেকে নামিয়ে নিলাম পোস্টাল বেব, পুরো লেডি রংবাজ টাইপের একশন গেম। কিন্তু এই বেবকে দিয়ে দুষ্ট লোকদের শায়েস্তা করতে করতে মোবাইলের অবশিষ্ট চার্জ ও অক্কা পেল। সেই মুহুর্তে আমি পুরা পৃথিবীর সাথে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লাম, এই ভাবনাটা মাথায় আসতেই কেন জানি বেশ ভাল লাগার একটা অনুভূতি হলো। মোবাইল, ইন্টারনেট, টিভি, রেডিও ইত্যাদির মধ্যে আমি সাত না, পুরো সাতাত্তোর পাকে বাধা পড়ে আছি আমি। এই সব কিছু থেকেই বিছিন্ন হয়ে যেতেই কেমন শান্তি শান্তি লাগছিল।

পুরো অন্ধকারের মাঝে বসে বেশ কিছুক্ষন বৃষ্টি উপভোগ করার চেষ্টা করলাম। কিছুক্ষন পরে আর সময় কাটতে চাচ্ছিল না। হ্যারিকেন জ্বালানো হলো, আর আমি গল্পের বইয়ের ভান্ডারে হাত দিলাম। ঘটনাক্রমে আমার কাছে বুদ্ধদেব গুহ বেশ অনেকগুলো বই আমার কাছে এসেছে। এর আগে তার শুধু মাধুকরী পড়া হয়েছিল। গত কয়েকদিনে আরো কয়েকটা পড়ে ফেলেছি। আগে হাতের কাছে যা পেতাম সেটাই পড়ে ফেলতাম,ভাল না লাগলেও পুরোটা শেষ করতাম। তবে ইদানিং অভ্যাস পরিবর্তন হয়েছে। কয়েক পৃষ্ঠা পড়ে ভাল না লাগলে আর পড়া হয় না, রেখে দেই অন্য কোন সময় পড়বো বলে, জানিনা সেগুলো আর পড়া হবে কিনা। আজ শুরু করলাম ধুলোবালি ভাল লেগেছে বলতে হবে, কারন একটানা পড়ে শেষ করলাম।

ইটা শেষ করতে না করতেই দীর্ঘ প্রায় আট ঘন্টা পরে রুমের সিএফএল বাল্বটা জ্বলে উঠল। অনেকদিনের অনভ্যাসের কারনে হ্যারিকেন ফুঁ দিয়ে না নিভিয়ে নেভাতে গিয়ে সলতে ভিতরে ঢুকিয়ে ফেললাম। মোবাইল চার্জারে কানেক্ট করে অন করে একটা নির্দিষ্ট নাম্বারে কল দিলাম, এর মাঝেই মিসড কল এলার্টের একটা মেসেজ পেলাম, প্রথমবারের মত, মোবাইল বন্ধ হবার সুযোগই যে পায় না। সেখানে ওই নম্বর থেকে আসা মিসড কলের সংখ্যা দেখে নিজেকে বেশ ভাগ্যবান মনে হলো। এরপর ল্যাপটপের সুইচ অন হলো, টিভি অন হলো (ক্যাবল কানেকশন না থাকায় আবার অফ)। আবার ফিরে এলাম নিয়মিত রুটিনে।

ই গানটা মনে হয় আগেও একবার শেয়ার করেছিলাম, তবে আজকে এই গানটার কথাই বারবার মাথায় ঘুরছিল, তাই আবারো শেয়ার না করে পারলাম না, আর্টসেলের এই বৃষ্টি ভেজা রাতে……

শুভেচ্ছা।

১,০৭১ বার দেখা হয়েছে

১৫ টি মন্তব্য : “রাতলিপি ৩”

মওন্তব্য করুন : মেহেদী হাসান (১৯৯৬-২০০২)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।