সাপ্তাহিক ১১

তিন মাস আগে চট্টগ্রামে আসার প্রথম দিন থেকেই ঈদের ছুটির জন্য কাউন্ট ডাউন শুরু করেছিলাম। দিন হিসেবে না হয়ে সেটা ছিল সপ্তাহ হিসেবে। শেষ পর্যন্ত সে কাউন্ট ডাউন এসে শেষ সপ্তাহে ঠেকল। সব কিছু ঠিক থাকলে এই বৃহঃস্পতিবার ঢাকায় ফিরব। তবে ছুটিতে যাবার আনন্দের চেয়ে রোজার মাস শেষ হয়ে যাবার দুঃখ বেশি হচ্ছে। এই শান্তিময় সময়ের জন্য আবারো এক বছর অপেক্ষায় থাকতে হবে। (আমার রোজার মাস প্রীতির কারন আগের পোস্টে বলেছিলাম)। আর আর এই রোজার মাসের আরাম আয়েশ ঈদের পরে সুদে আসলে পুষিয়ে দেবার জন্য কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে সকল প্রস্তুতি গ্রহন করে রেখেছে।

ফতার পার্টির নামে প্রতি রোজাতেই প্রায় সব মহলেই গেট টুগেদার হয়, এবারো হয়েছে। আর এখন পর্যন্ত সবগুলোই মিস করেছি। মন্দের ভালো হিসেবে গতকাল এবারের রোজার প্রথম ইফতারের দাওয়াত পেয়েছিলাম। তবে অভিজ্ঞতা মোটেই সুখকর হয়নি। যাওয়ার সময় মাঝপথে গাড়ী সমস্যা শুরু করলো, সেই সাথে ট্রাফিক জ্যাম। এ দুয়ের সমন্বয়ে গন্ত্যব্যে পৌছেছিলাম ইফতারের আধা ঘন্টা পরে। ( জম্পেশ ইফতার আর ডিনারের মাধ্যমে অবশ্য এসব ঝামেলাই পুষিয়ে নিয়েছি)

কিছু পেতে হলে নাকি কিছু হারাতে হয়। গতকাল এই ভূরিভোজের কারনে যা হারালাম সেটা হলো প্রিমিয়ার লীগের খেলাগুলো। তবে রেজাল্ট দেখার পর মনে হয়েছে না দেখেই ভাল হয়েছে। আর্সেনাল ম্যান সিটির কাছে ধরা খাবে আগেই সন্দেহ করেছিলাম, তবে তারপরও আশা ছিল, কিন্তু হলো না। তবে আদাবায়োরের কান্ড দেখে আমি স্থম্ভিত। কিভাবে একজন পেশাদার প্লেয়ার এভাবে নগ্নভাবে আরেকজন খেলোয়ারকে আঘাত করতে পারে, যে কিনা মাত্র কিছুদিন আগে তার স্ট্রাইক পার্টনার ছিল! ধিক্কার।

বারের মৌসুমের কোন দলবদলই কেন জানি আমার পছন্দ হচ্ছে না। আর্সেনালের কথা তো বাদই দিলাম। দেশে আবাহনী ক্রিকেট,ফুটবল দুটোতেই হতাশ করেছে। ফুটবলে মূল স্ট্রাইকার এমিলিকে মোহামেডানের কাছে হারালো। তারপরো গতবারের গতবারের আবাহনীর সর্বোচ্চ গোলদাতা এমেকাকেও ধরে রাখতে পারলো না, তাকেও দলে টেনে নিলো মোহামেডান। এমিলি, বুকালো আর আমেকাকে নিয়ে মোহামেডান এবার অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠতে পারে।

ক্রিকেটে অবশ্য আবাহনী রেকর্ড টাকার বিনিময়ে জাতীয় দলের অধিনায়ক, সহ-অধিনায়ক দুজনকেই দলে ভিড়িয়েছে। তবে সমস্যা হলো তারা দুজনেই ইঞ্জুরড। কবে মাঠে ফিরতে পারবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই।এদের কাছ থেকে কতটুকু সার্ভিস পাওয়া যাবে প্রশ্ন সাপেক্ষ। তবে গতবার এই মাশরাফিই ইঞ্জুরড অবস্থায় স্পিন বল করে আবাহনীকে লীগ চ্যাম্পিয়ন করেছিল।

ক্রিকেট দলবদলে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা মনে হয় তামিমের পল্টি খাওয়া। আবাহনীকে কমিটমেন্ট দিয়ে বিদেশে ঘুরতে গিয়ে ফিরে আসার পর বেশি টাকার অফার পেয়ে মোহামেডানে নাম লিখিয়েছে সে। এখন পেশাদারিত্বের যুগ, টাকা অবশ্যই দল নির্বাচনে প্রধান এবং একমাত্র নিয়ামক। তবে এভাবে একটা দলের সাথে প্রকাশ্যে কমিটমেণ্ট দেবার পরে সেটা রক্ষা না করাকে মনে হয় পেশাদারিত্ব বলে না। সবচেয়ে বাজে লেগেছে যখন তামিম নির্লজ্জের বললো “আমি গতবার মোহামেডানের সাথেও একই কাজ করেছি”

খানে আসার পর সময়ের অভাবে সংবাদপত্র পড়া, টিভিতে খবর দেখা এক রকম বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। গত কিছুদিন ধরে আবার এসবে চোখ রাখা হচ্ছে। তবে মনে হচ্ছে না রাখলেই মনে হয় ভাল হতো। সেদিন দেখলাম ব্যবসায়ী নেতারা বাজারদর পর্যবেক্ষন করতে দিয়ে জনতার রোষের মুখে পড়েছে। বছরের পর বছর ধরে রোজার মাসে সব কিছুর দাম বাড়ে অথচ কোন সরকারই কোন ব্যবস্থা নিতে পারেনি বা নেয়নি। সবাই প্রকাশ্যে বলছে রাস্তাঘাটে চাঁদাবাজির কারনে দাম বাড়ছে অথচ সেটা বন্ধ করার কোন প্রচেষ্টা নেই। কোথায় দেখলাম পরিদর্শনের নামে হয়রানির প্রতিবাদে চিনির আড়তদারেরা চিনি বিক্রি বব্ধ করে দিয়েছে। দুঃস্থদের মাঝে বরাদ্দের জন্য ভিজিএফ কার্ডের বিতরন নিয়ে কত কিছুই না হচ্ছে। একটি সিরাপ যা খেলে কিনা শিশুরা মারা যাবে, নিষিদ্ধ হবার কয়েক্মাস পরেও ডাক্তাররা সেটা প্রেস্ক্রাইব করছে, দোকানে সেটা পাওয়াও যাচ্ছে ফলস্বরুপ আরো শিশু মারা যাচ্ছে। খুন খারাবির কথা না হয় নাই বললাম। জনগনের এ সকল নূন্যতম মৌলিক চাহিদাগুলো যদি নিশ্চিত না হয় তাহলে সরকারের কাছ থেকে আর কি প্রত্যাশা থাকবে? আর বিরোধী পক্ষ এ সময়ে তাদের নেত্রী আর তার পুত্রদের মামলা প্রত্যাহারের দাবীতে আন্দিলনের ডাক দিচ্ছে। সাব্বাশ…

***ভারতের সাথে নতুন চুক্তি বিশেষ করে ট্রানজিট এর পক্ষে বিপক্ষে অনেক আলোচনা শুনছি। তবে এর নির্ভরযোগ্য আর নিরপেক্ষ বিশ্লেষন হাতের কাছে পাইনি। এ বিষয়ে কেউ যদি ব্লগে একটা লেখা অথবা সেরকম কোন লেখার লিঙ্ক দিত তাহলে আমার মতো অনেকেরই উপকার হত।

ত সপ্তাহের লেখায় রক গান ভাল লাগা না লাগা নিয়ে অনেকেই বলেছিল। আমার নিজের আলাদা কোন প্রিয় জেনর নেই, সব কিছুই শুনি, যদি সেটা পছন্দ হয়। এবারে রক গানই দিলাম। এটা মনে হয় আমার সবচেয়ে প্রিয় বাংলা রক। দি ওয়াটসন ব্রাদার্স এর রঙ। কিছুদিন আগে ডিজুসের বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করা ‘আকাশ কে জিজ্ঞেষ করি তোমায় রাঙায়কে’ গানটাও ওদের। ( এদের খোঁজ কেউ কি জানেন? একটা অ্যালবাম করেই গায়েব!!!) অডিও কোয়ালিটি কিছুটা দূর্বল। নেটে খোঁজ করলে আরো উন্নত অডিও ভার্সন পাওয়া যাবে মনে হয়।

শুভেচ্ছা।

১,৯৮০ বার দেখা হয়েছে

৩৪ টি মন্তব্য : “সাপ্তাহিক ১১”

  1. আহ্সান (৮৮-৯৪)

    আহসান,
    তোমার এই সাপ্তাহিক পরিক্রমাটা আমার দারুন লাগে। যথারীতি এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি...। অসাধারণ লেগেছে এবারের পরিক্রমাটাও...। চালিয়ে যাও...।
    অপেক্ষায় রইলাম পরের পর্বের...।

    জবাব দিন
  2. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    তবে গতবার এই মাশরাফিই ইঞ্জুরড অবস্থায় স্পিন বল করে আবাহনীকে লীগ চ্যাম্পিয়ন করেছিল। 😮 😮 বলচেন কি মশাই!!!! মাশ্রাফির মত অত লম্বা চওড়া মানুষটা পেস ছেড়ে ঘুর্ণি বল করে দিল??এ তো বড়ই অদ্ভুত ব্যাপার!!নাহ,বাঙ্গালরা পারেও! তা দাদা এ ব্যাপারে কিচুটা বিস্তারিত জানালে বাধিত হতাম কিন্তুক।

    অফ টপিক- আমি খেয়াল কইরা দেখছি কোলকাতার লোকজন খালি বাঙ্গালি নিয়া ভাব নেয়।ইন্ডিয়া বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সাথে হারার পরে নিউজপেপারের হেডলাইন ছিলঃ এগার বাঙ্গালির দাপটে ধরাশায়ী ভারত,মাঠে মারা গেল এক বাঙ্গালির লড়াই(সৌরভ হাফ সেঞ্চুরি করছিল ওই ম্যাচে)।

    আর প্রফেসর ইউনুস নোবেল পাওয়ার পর লিখছিলঃকোলকাতার জামাই নোবেল পেলেন(ডঃ ইউনুসের স্ত্রীর বাড়ি কোলকাতায়

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : সাব্বির (৯৫-০১)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।