সাপ্তাহিক…৮

য়াবহ এক সপ্তাহ শেষ করলাম। ফায়ারিং এ গিয়েছিলাম, দিন শুরু হতো ভোর(নাকি রাত?) সাড়ে চারটায়, রুমে আসতে আসতে রাত। বৃহঃস্পতিবার পর্যন্ত এই রুটিন চলল, রবিবার আবার পরীক্ষা। ছুটির দুদিন গেল পড়তে পড়তে। আজ পরীক্ষা শেষ করে যেন একটু হাফ ছেড়ে বাঁচলাম।

তো কিছুর মাঝেও সিসিবিতে ঢু না মেরে থাকতে পারিনি, সব লেখার উপরেই চোখ বুলিয়ে গিয়েছি। তবে এর মাঝে এহসান ভাইয়ের ফ্যান্টাসি ফুটবলের পোস্ট মাথায় পোকা ঢুকিয়ে দিল। যদিও এর আগেও ফ্যান্টাসি দল বানিয়েছি, তবে প্রথম দু এক ম্যাচের পরেই দলের অভাবনীয় সাফল্যে(?) আগ্রহ হারিরে ফেলতাম। অন্য কেউ এর খবর রাখত না বলে তেমন গায়েও লাগত না। তবে এবার ঘটনা ভিন্ন। সিসিবি’র কমবেশি সবাই ফলাফল জেনে যাবে, তাই মুখ রক্ষার তাগিদেই টিম নিয়ে গবেষনা শুরু করলাম। শেষমেশ একটা টিম দাড় করিয়ে ফেললাম, কিন্তু টিমের ভবিষ্যত নিয়ে আমি নিজেই সন্দিহান। দেখা যাক কপালে কি আছে। ( যারা এখনো টিম রেজিস্টার করেননি… আর মাত্র ৬ দিন সময় আছে, ১৫ তারিখ পর্যন্ত, এখনি মাঠে নেমে পড়ুন, এখানে দেখুন)

ত বৃহঃস্পতিবার গেল শবে বরাত। ক্যাডেট কলেজে ঢোকার পর থেকে গত ১৩ বছরে মাত্র একবার বাসায় শবে বরাত করতে পেরেছিলাম। এ কারনে সেভাবে আয়োজন করে হালুয়া রুটি খাওয়া হয়না অনেকদিন। তবে এবারের অবস্থা সবচেয়ে করুন, একটু চেখে দেখারো সুযোগ হয় নি। এই শবে বরাতের রাত ছিল ছোট বেলায় আমার জন্য বছরের সেরা রাত। ঈদের আগে চাঁদ রাতেও মনে হয় এতো মজা করতাম না। শবে বরাতের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যেত আগের কোরবানীর ঈদ থেকেই, গরুর ঝিল্লি শুকিয়ে রেখে দিতাম, সেই সাথে সালামির একটা অংশ শবে বরাতের জন্য পটকা, মুররা(মরিচা), চকলেট, তারাবাত্তি ইত্যাদির ব্যবস্থা করার জন্য। প্রায় একমাস আগে থেকেই পূর্ণদমে প্রস্তুতি শুরু হয়ে যেত। শুরুটা হতো সাইকেলের স্পোক দিয়ে বানানো একধরনের পটকা ফুটানোর যন্ত্র , দেয়াশলাইয়ের কাঠির বারুদ ঢুকিয়ে দেয়ালে বাড়ি দিলে বেশ আওয়াজ হতো। পাড়ার বড় ভাইয়েরা পটকার মসল্লা কেনার জন্য চলে যেত চকবাজারে। শবে বরাতের রাত্রে মসজিদে যাবার কথা বলে শুরু হতো এইসব পটকাবাজি। সবচেয়ে মজা হতো টার্গেট করা বাড়ির চারিদিকে চকলেট বোম দিয়ে ঘিরে ফেলে একসাথে ফাটিয়ে দেয়া। টাইমিং মেলানো আর নিজেরা নিরাপদ দূরত্বে সরে যাবার জন্য মশার কয়েল বা আগর বাতি ব্যবহার করতাম ডিলে ফিউজ হিসেবে। আহ কি দারুন সব স্মৃতি। একবার পুলিশের দৌড়ানিও খেয়েছিলাম।

ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগ শুরু হচ্ছে আগামী সপ্তাহে, ট্রান্সফার উইন্ডো অবশ্য এ মাসের শেষ পর্যন্ত ওপেন থাকবে। তবে আর্সেনালের অবস্থা দেখে আমি বেশ শংকিত। সেরকম কোন সাইনিং হয়নি, যা ছিল তার ভিতরে আবার নাসরি, রসিস্কি ইঞ্জুরিতে পড়ল। এস্টন ভিলা, ম্যান সিটি এবার টাফ ফাইট দিবে, কপালে কি আছে আল্লাই যানে। অবশ্য ম্যান ইউ, লিভারপুল দুই দলই মনে হয় গতবারের থেকে কিছুটা দূর্বল হয়েছে, চেলসি আরো শক্তিশালি হতেছে মনে হয়। এবারের লীগ আশা করি আগের চেয়ে অনেক কম্পিটিটিভ হবে। ( এহসান ভাইয়ের কাছে একটা সিজন প্রিভিউ এর আবদার জানিয়েছিলাম… )

মাদের বি-লীগেও দলবদল শুরু হয়ে গিয়েছে, এক মাস ধরে চলার কথা থাকলেও আবাহনী- মোহামেডান দুদলই প্রথমেই ঘর গুছিয়ে ফেলেছে। পর পর দুবার শিরোপা জিততে ব্যর্থ হয়ে মোহামেডান এবার কোমর বেধে নেমেছে। জাতীয় দলের ১২ জনকে দলে ভিড়িয়েছে, আবাহনী থেকে নিয়েছে দেশের সেরা স্ট্রাইকার এমিলি, ডিফেন্সের ওয়ালী ফয়সাল, আর মধ্যমাঠের মামুনকে। আবাহনীও কম যায় নি। মোহামেডানের ডিফেন্সের মূল তারকা রজনী,স্ট্রাইকার রবিন, ব্রাদার্স থেকে মতিউর মুন্না আর চ্যালেঞ্জ কাপের চমক জাগানো স্ট্রাইকার এনামুলদেরকে নিয়ে তারা দল গড়েছে। শুধু শুধুই মোহামেডান এতো গুলো টাকা খরচ করল, আবাহনী এবার বি-লীগের শিরোপার হ্যাট্রিক পূরন করতে যাচ্ছে সন্দেহ ছাড়া।

জ অনেকদিন পর বাংলাদেশের খেলা দেখলাম, এতোদিন ক্রিকিনফো ছিল ভরসা। আর আজকেই আশরাফুল সেঞ্চুরী মারল… মনে হচ্ছে আমি আমার কুফা পুরাপুরি কাটিয়ে উঠছি। সেঞ্চুরির সাথে সাথে আজকে ওয়ান ডে ৩০০০ রান পূর্ণ হলো। অভিনন্দন আশরাফুল… ( ওর এই ফর্মের পিছনে আমাদের মত দর্শকদের গালাগালির বিশাল ভূমিকা আছে বলে আমি মনে করি, তাই সকলের প্রতি আহবান… বাহবা না দিয়ে গালিবর্ষন জারি রাখুন)

শরাফুলের ওয়ানডে ইনিংস গুলোর মধ্যে আমার সবচেয়ে প্রিয়টা সবার জন্য দিয়ে দিলাম। ‘০৫ সালের ন্যাটওয়েস্ট সিরিজে ইংল্যান্ডের সাথে ৫২ বলে ৯৪ করেছিল… ঐ সিরিজেই ওর সেঞ্চুরিতে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ।

১,৭১২ বার দেখা হয়েছে

২৪ টি মন্তব্য : “সাপ্তাহিক…৮”

  1. তানভীর (৯৪-০০)

    এইমাত্র কমিউনিটি শিল্ডের খেলা দেখা শেষ করলাম। ওয়েন রুনিটা শেষের দিকে গোল করায় ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম, না জানি ম্যান ইউ জিতে যায়। যাক্‌, জিতে নাই। 😀
    আর্সেনালরে নিয়া আমিও কিছুটা শংকিত। যাই হোক, দেখি এবারের সিজন কেমন যায়! :dreamy:

    যত দিন যাচ্ছে, যে কোন উৎসবেই আগ্রহ অনেক কমে যাচ্ছে। শবে বরাতটা কোন ফাঁক দিয়ে এসে চলেও গেলো টের পেলাম না......

    তোমার পরীক্ষা কেমন হইল আকাশ?

    জবাব দিন
    • আহসান আকাশ (৯৬-০২)

      খেলা দেখতে পারি নাই, বিবিসির লাইভ টেক্সট কমেন্ট্রি ফলো করছিলাম... ম্যান ইউ হারায় খুশি, কিন্তু চেলসি জেতায় খুশি হতে পারিনি, চেলসি, রিয়াল, ম্যান সিটি এই সব টাকা উড়ানো দলগুলোকে সহ্য করতে পারিনা।

      আমি নিজেকে সব সময় ভাগ্যবান মনে করি যে আমি মীরপুরে বড় হয়েছি, তা না হলে ঢাকার অন্যান্য জায়গায় বেড়ে ওঠা আমার অনেক বন্ধুদের মত আমিও হয়ত শৈশবের অনেক কিছু মিস করতাম।

      পরীক্ষার ব্যাপারে সবচেয়ে বড় সুঃসংবাদ হলো পরীক্ষা শেষ হয়েছে 😀


      আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
      আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

      জবাব দিন
  2. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

    গতকাল অনেকক্ষণ মন্তব্য বন্ধ করে রেখেছিলে, তাই পড়েও তখন কিছু লিখতে পারিনি।

    ১. শবেবরাত নিয়ে তো দেখি আমাদের সময়ের কথা লিখেছো! মতিঝিল কলোনীতে পোলাপাইনের পটকার টার্গেট হতো সুন্দরীদের বাসাগুলো!! :dreamy:

    ২. অ্যাশের সেঞ্চুরিটা উপভোগ করলাম। ওর খেলার এই ধরণটা অনেকের পছন্দ না। আমি বরং ওর ট্রান্সফরমেশনের পক্ষে। ম্যাচুওরিটি আসছে। তবে ও আমাদের আরো ভোগাবে বলে মনে হয়। দেখি সামনের দিনগুলো। এবারের জন্য :hatsoff:

    ৩. ফ্যান্টাসি আমার না। তোমরা খেল আর আপডেট দিও। ;;;

    ৪. বি-লীগটা কি এবার আরো আকর্ষনীয় হবে?? মনে হচ্ছে। :gulli2:


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : দিহান (অতিথি)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।