আমরা তিনজন – ২য় পর্ব

আমরা অপারেশনে গিয়েছিলাম ২৪ ফেব্রুয়ারী কিংবা মার্চ তারিখে (মাস টা আমার ঠিক খেয়াল নেই)। ২৪ তারিখ বিকেলে কঙ্গো কমান্ডোরা আমাদের সাহায্য চাইলো। বিকেল বেলা আমরা আমাদের পুরো ট্রুপস নিয়ে আরো সামনে এগোলাম এবং একটা পর্যায়ে আমরাই ফ্রন্টলাইন হলাম। বিকেলের কিছু আগে পাক আর্মির একটা কোম্পানী এসে আমাদের সাথে জয়েন করলো। এর আগে শুরু থেকেই আমাদের সাথে মরক্কো আর্মির একটি মর্টার ডিটাচমেন্ট ও ছিলো। এই তিন দেশের সব এলিমেন্টগূলো আমাদের বাংলাদেশের কমান্ডে কাজ করছিলো। আমরা ফ্রন্টলাইন হবার পরে কঙ্গো কমান্ডো’র ব্যাটালিয়ন কমান্ডারের নিকট থেকে পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা নিয়ে শত্রুর উপরে মর্টারের গোলা বর্ষণ শুরু করলাম। শত্রু আচমকা এই হামলার জন্য প্রস্তুত ছিলোনা। আমাদের মর্টারের আঘাতে তারা ছত্রভংগ হয়ে গেলো। কঙ্গো কমান্ডো বাহিনী আমাদের জড়িয়ে ধরে উল্লাস করতে লাগলো। ওদের আচরনে মনে হচ্ছিলো, আমরা ওদের জনম জনমের পরমাত্মীয়।

সন্ধ্যা নামতেই আমরা আমাদের বহর নিয়ে পিছনে আমাদের পূর্বের জায়গাতে ফেরৎ আসবার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলাম। কিন্তু কমান্ডো বাহিনী তা মানতে নারাজ। অনেক কষ্টে দ্বোভাষীর মাধ্যমে তাদেরকে বোঝানো হলো যে আমরা এভাবে ফ্রন্ট লাইন হয়ে থাকতে পারিনা কারণ আমাদের যে অপারেশন অর্ডার দেয়া হয়েছে এটা তার পরিপন্থী। আমরা তোমাদের একটু পিছনেই অবস্থান নিচ্ছি। কখনো কোন সমস্যা হলে আমরা তো আছিই। প্রায় ২/৩ কিঃমিঃ পিছনে আসার পরে আমরা একটা ভালো জায়গা দেখে চতুর্মুখী প্রতিরক্ষা অবস্থান নিলাম। রাশেদ, রশিদ এবং আমি যার যার দায়িত্বপূর্ণ এলাকা বুঝে নিলাম। সারা রাত জেগে জেগে সৈনিকদের সাহস দিতে থাকলাম আর আসন্ন সম্ভাব্য আক্রমনের অপেক্ষা করতে থাকলাম। অচিন দেশে শত্রু এলাকায় শত্রু পরিবেষ্টিত হয়ে নিশি যাপনের সেই অভিজ্ঞতা আমি কাউকে বলে বোঝাতে পারবোনা।

পরেরদিন অর্থাৎ ২৫ তারিখ খুব সকালে গোলাগুলির শব্দে চেতনা ফিরে পেলাম। ভোর রাতে কখন যে ঝিমুনি চলে এসেছিলো, টেরই পাইনি। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেটে কঙ্গো কমান্ডো বাহিনীর চীৎকার শুনে দ্বোভাষীর মাধ্যমে জানতে পারলাম, আমাদের সাহায্য প্রয়োজন। মুহুর্তের মধ্যে আমরা আবার ফ্রন্টলাইনে চলে গেলাম। সারাদিন আমরা মর্টার ফায়ার দিতে থাকলাম। শত্রু কে আমাদের অবস্থান থেকে প্রায় ৩কিঃমিঃ দূরে রাখতে সক্ষম হলাম। মাঝে মাঝে কিছু ছোট ছোট গ্রুপ কাছাকাছি চলে আসলে তাদেরকে এপিসি’র মেইন গান বা মেশিনগান দিয়ে এনগেজ করতে থাকলাম। সন্ধ্যা পর্যন্ত এভাবে চলতে থাকলো। রাতে আবার ফিরে এলাম আগের জায়গাতে।

২৬ তারিখ সকালবেলায় আমাদের এবং পাকিস্তানের কোম্পানী কমান্ডার কে ফরওয়ার্ড অপারেশন সেলে (এ্যাভেবা তে) ডেকে পাঠালেন ব্রিগেড কমান্ডার। ওনারা চলে যাবার পরপরই শুরু হলো প্রচন্ড যুদ্ধ। কঙ্গো কমান্ডোরা আবার আমাদের কাছে সাহায্য চাইলো। আমরা সেটে অনুমতি চাইলাম ফ্রন্টলাইনে যাবার জন্য। কিন্তু যেহেতু কোম্পানী কমান্ডার নেই, তাই আমাদেরকে বলা হলো অপেক্ষা করতে। পরে জানানো হচ্ছে। এইদিকে কঙ্গো বাহিনী প্রচন্ড আনরুলি হয়ে উঠছে। ওদের ammunition শেষ হয়ে গিয়েছে। Ammunition re-supply হচ্ছেনা।তাই ওরা শত্রুর অগ্রাভিযানকে ঠেকাতে পারছেনা। পর্যাপ্ত ফায়ারের অভাবে ওদের ক্যাজুয়ালিটির মাত্রাও বেড়ে গেছে। ওদের একটা অংশ দৌঁড়ে এসে আমাদের দেরী করার কারণ জানতে চাইলো। আমরা ওদেরকে বললাম যে হেডকোয়ার্টার্স আমাদের অনুমতি দেয়নি। কিন্তু ওরা কিছুই শুনতে চাইছেনা। ওদিকে ভাষাগত সমস্যার কারনে পরিস্থিতি আরো জটিল আকার ধারণ করেছে। একটা পর্যায়ে ওরা আমাদের সৈনিকদের মারধোর করতে উদ্যত হলো। কয়েকজন আমদের তিন অফিসারের বুকে এসএমজি ঠেকালো। বর্বর অকৃতজ্ঞ জাতি ভূলেই গেলো যে গত দুইটি দিন আমরা আমাদের জীবন বাজি রেখে ওদের রক্ষা করেছি। অনেক কষ্টে আমরা তাদেরকে বোঝালাম যে আমরা তোমাদের সাহায্যের জন্যইতো এসেছি। কিন্তু কে শোনে কার কথা। ঐদিকে শত্রুরা বাধা না পেয়ে দ্রুত গতিতে আমাদের দিকে এগিয়ে আসতে থাকলো। এক পর্যায়ে আমরা তিন বন্ধু মিলে ডিসিশন নিলাম, আমরা এগিয়ে যাবো। কারণ, এখানে থাকলে কঙ্গো বাহিনী মেরে ফেলবে আর সামনে গেলে শত্রু মেরে মরতে পারবো। অকৃতজ্ঞ মীর জাফরদের হাতে মরার চেয়ে বীরের মত লড়াই করে মরাই ভালো। হেডকোয়ার্টার্সের অনুমতির অপেক্ষা না করেই আমরা সামনে অগ্রসর হতে থাকলাম।

১ কিঃমিঃ সামনে এগুতেই দেখলাম কঙ্গো বাহিনী তাদের অবস্থান ছেড়ে শত্রুকে কোন বাধা না দিয়েই পালিয়ে পিছনে চলে আসছে। আমরা চীতকার করে ওদেরকে থামতে বলছি, কিন্তু আমাদের কথা শুনছেনা ওরা। মুহুর্তের মধ্যে ওরা সবাই আমাদের পিছনে চলে গেলো। হাজার হাজার সসস্ত্র বিদ্রোহীদের সামনে আমরা তিন বন্ধু আমাদের সৈনিকদের নিয়ে। শক্তির দিক দিয়ে আমরা খুবই দুর্বল ঐ হাজার হাজার বিদ্রোহীদের কাছে। বিদ্রোহীরা তখন আমাদেরকে তিন দিক থেকে ঘিড়ে ফেলেছে। সেটে রাশেদ কে বললাম সামনের দিকটা কভার দেবার জন্য আর আমি এবং রশীদ সব এপিসিগুলোকে পিছনে টার্ণ করাতে থাকলাম। বৃষ্টির মতো গোলাগুলি উপেক্ষা করে একে একে অনেক কষ্ট করে সব এপিসিগুলোকে ঘুড়িয়ে ফেললাম। বিদ্রোহীরা ততক্ষনে আমাদের প্রায় ৮০০ গজের মধ্যে চলে এসেছে।

পরিস্থিতি ক্রমান্বয়েই আয়ত্বের বাইরে চলে যাচ্ছিলো। আমরা এপিসি টান মেরে প্রায় ২ কিঃমিঃ পিছনে এনে একটা প্রতিরক্ষা লাইন নিয়ে মর্টার দিয়ে ফায়ার দেয়া শুরু করলাম। গোদের উপর বিষফোঁড়া হয়ে কঙ্গো বাহিনী তখন আমাদেরকেই মারতে উদ্যত হচ্ছিলো। আমরা আক্ষরিক অর্থে তখন দুইটি শত্রুদল মোকাবিলা করছিলাম। এক, বিদ্রোহীরা আর দুই, কঙ্গো বাহিনী যাদেরকে আমরা গত দুইটি দিন ধরে জীবন বাজি রেখে বাঁচিয়ে রেখেছি। মর্টার ফায়ার দিয়ে শত্রুর অগ্রাভিযানকে একটু স্লো করে আমরা আবার পিছূ হঠতে থাকলাম। এবার কঙ্গো বাহিনীর আবদার, তাদেরকে আমাদের এপিসিতে করে ফেরত নিয়ে যেতে হবে। কোন রকম অনুমতির তোয়াক্কা না করেই একেক্টি এপিসি’র ওপরে ৪০/৫০ জন করে গরু ছাগলের মত করে উঠতে থাকলো। এমনকি ওদের এইভাবে এপিসিতে ওঠার কারণে ড্রাইভাররা সামনে কিছুই দেখতে পাচ্ছিলোনা। তাই ক্ষণে ক্ষণেই এপিসি থেমে যাচ্ছিলো, আর এপিসি থামলেই মীর জাফরের দল আমাদের উপর গুলি করে যাচ্ছিলো। ঘটনাটা তখন এরকম যে, বিদ্রোহীদের চেয়ে কঙ্গোর কমান্ডোদের সামাল দেয়াই আমাদের জন্য মুশকিল হয়ে দাঁড়ালো। ঐদিকে বিদ্রোহীরা আবার সংগঠিত হয়ে আমাদেরকে ধাওয়া করতে শুরু করলো।

হঠাৎ আমাদের যুদ্ধবহর থেমে গেলো। সেটে জানতে পারলাম সামনের একটি এপিসির চাকা পাথরের চাইয়ের সাথে আটকে গেছে। ঐদিকে গুলি করতে করতে ধেয়ে আসছে বিদ্রোহী দল। আমি ছিলাম তখন সবার পিছনে ধাওয়াকৃত শত্রুদের থেকে পুরো বহরকে রক্ষা করার জন্য। কোন উপায় না দেখে এপিসি থেকে বের হয়ে সামনের দিকে দৌড়াতে লাগলাম। প্রায় ২/৩ কিঃমিঃ পথ এভাবে একা একা গুলি বৃষ্টির মধ্য দিয়ে দৌড়ে পৌঁছালাম সেই এপিসিটির কাছে। এতো শত শত রাউন্ড উড়ন্ত বুলেটের মাঝে কেন একটা বুলেটও আমার গায়ে লাগেনি সেটা এখনো আমার কাছে একটা মহা বিস্ময়। যাইহোক, মিনিট পাচেকের কসরতে এপিসিটিকে উদ্ধার করে আবার পিছূ হঠা শুরু করলাম। একে একে সব এপিসি পার করছি। আমার এপিসিটি যখন আমার কাছে আসলো, তখন দেখলাম ২টি এপিসি বহরের সাথে নেই। আমার মাথা ঘুরে উঠলো। সেটে সবার সাথে যোগাযোগ করে টের পেলাম আমাদের বহরে আমার প্রাণপ্রিয় দুই বন্ধু নেই। অজানা আশঙ্কায় আমার বুকটা কেঁপে উঠলো। দিশেহারা হয়ে উঠলাম। রাশেদ এবং রশিদের মায়াময় চেহারা আমার চোখের সামনে ভেসে উঠলো। অত্যন্ত মেধাবী (দুজনই বোর্ডে স্ট্যান্ড করা) এবং চৌকষ দুইটি অফিসারের মুখ আমার চোখের সামনে থেকে সরাতে পারছিলামনা।

স্মৃতির দুয়ারে ভিড় করে উঠলো ৬বছরের বিভিন্ন চিত্র। ভীষন পজিটিভ ছেলে রাশেদ। সবকিছু একসেপ্ট করে নেয়াব্র জন্যই হয়তো ওর জন্ম। কর্তৃপক্ষের কোন ডিসিশান আমরা না মানতে চাইলে এই রাশেদ ই আমাদের কে বোঝাতো। মনে পড়ে গেলো কলেজ পুকুরে ওর গড়ে তোলা একেকটি সাঁতারের রেকর্ড, কিংবা ফুটবল নিয়ে ছূটে চলা অথবা হাউস ক্রিকেট টিমের চরম আস্থাভাজন খেলোয়াড়ের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া। রশীদ ছিলো খুবই চুপচাপ। পড়া লেখা, সাঁতার প্রতিযোগীতা, হাউস দেয়াল পত্রিকা লেখা, আলপনা আকা………উফফফফ…আমি আর ভাবতে পারছিনা। কি করা যায় কি করা যায় ভেবে চলছি। হঠাতই মাথার উপরে এম আই-২৫ হেলিকপ্টারের (আ্যটাক হেলিকপ্টার) আওয়াজ পেলাম। আইকম সেটটি টেনে নিয়ে পাইলটের সাথে যোগাযোগ করলাম। অনুরোধ করলাম আমার হারিয়ে যাওয়া এপিসি দুটোকে খুঁজে দিতে। মিনিটখানেকের মধ্যেই পাইলট জানালো আমার অবস্থান থেকে প্রায় এক কিঃমিঃ দূরে ২টি এপিসি দেখা যাচ্ছে এবং সেগূলো অনেক লোকজন ঘিড়ে রেখেছে। আমার সারা শরীর ঠান্ডা হয়ে গেলো। ঐলোক গূলি যদি বিদ্রোহীরা হয়ে থাকে…ইয়া আল্লাহ, আমার এই চিন্তা যেন সত্যি না হয়…। আমার বন্ধু দুটিকে তুমি উদ্ধার করো। পাইলটকে আবার কল করে বললাম, যে করেই হোক এপিসি দুটোকে উদ্ধার করতে। পাইলট জানালো, সে ততক্ষণ পর্যন্ত শেলিং করতে পারবেনা, যতক্ষন না গ্রাউন্ড কমান্ডার তাকে বলবে যে গ্রাউন্ড ফোর্স শত্রু দ্বারা আক্রান্ত। এবং সেই কথাটি তারা রেকর্ড করে রাখবে (যাতে করে পরবর্তীতে আর্ন্তজাতিক ক্রিমিনাল কোর্ট ফেস করতে হলে ওরা এটা শোনাতে পারে) এবং তারপর ফায়ার করবে। আমি নিজেই গ্রাউন্ড কমান্ডার হয়ে তখন পাইলটকে জানালাম যে আমরা শত্রু দ্বারা আক্রান্ত। অতঃপর পাইলট প্রথমে ডামি ডাইভ এবং পরে ওয়ার্ণিং শট দিতেই লোকজন সরে গেলো, আর ততক্ষণে রাশেদ এবং রশিদ আমাদের সাথে যোগ দিয়েছে। পরে জেনেছি, ওদের একটা এপিসি হঠাৎ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এই অবস্থা হয়েছিলো।

এরমাঝে ব্রিগেড কমান্ডার সেটে আমার সাথে যোগাযোগ করলেন। তিনি নির্দেশ দিলেন সরাসরি এভেবা না আসতে। আমাদেরকে যেকোন একটা গ্রাউন্ড ফিচার ধরে রেখে সেখান থেকে ফাইট দিতে বলছিলেন। স্যারকে বোঝাতে পারছিলামনা যে, কঙ্গো বাহিনীর কারণে প্ল্যানড ওয়েতে কোন ফাইট দেয়া সম্ভবই না। তারউপর বিদ্রোহী কঙ্গো কমান্ডো বাহিনী বলছে ওদেরকে এভেবা নিয়ে যাবার জন্য। এরকম সিদ্ধান্থীনতার মাঝে আমরা হঠাত আবিষ্কার করলাম, মিলিশিয়ারা আমাদের ৫০০ গজের মাঝে চলে এসেছে। এটা যেহেতু ওদের এলাকা, তাই শর্টকাট সব রাস্তাঘাটই ওদের চেনা। আর কোন উপায় না দেখে আমরা চলে গেলাম এভেবা ক্যাম্পে যেখানে establish করা হয়েছিলো Forward Joint Operation Cell এবং ব্রিগেড কমান্ডার স্বয়ং সেখানে হাজির ছিলেন। ক্যাম্পে ঢোকার পরে যা হয়েছিলো তা চিন্তা করতে গেলে আমার গা এখনো শিউরে ওঠে। এভেবা আসার পরের ঘটনা আরেক দিন লিখবো।

উপরের সব ঘটনাগুলো আমি আমার মত ধীরে সুস্থে বর্ণনা করলেও, যুদ্ধক্ষেত্রে ছিলো অন্যরকম অবস্থা। একটা সেকেন্ডের জন্য ও গূলি বৃষ্টি বন্ধ হয়নি। আমার ধারণা ছিলো দেশে এবার একত্রে কমপক্ষে ৪০/৫০টি কফিন যাবে। বাতাসে শীস কেটে বুলেটগুলো যখন মাথার উপর দিয়ে কিংবা শরীরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো, তখন মনে হচ্ছিলো, এরপরেরটিই হয়তো আমার বুক কিংবা পেট ভেদ করে চলে যাবে। বাবা-মা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব সবার মুখগুলো সেলুলয়েড ফিতায় বন্দী ছবির মত ভেসে উঠছিলো। জীবনটা তখন অনেক আকর্ষনীয় মনে হচ্ছিলো। জীবনের নানা রঙ চোখের সামনে ভেসে উঠছিলো। বারবার শুধূ একটা কথাই মনে হচ্ছিলো, “ঘটনাবহুল আমার জীবনের উপসংহারটি কি এভাবেই লেখা ছিলো?”

(চলবে…)

======================================================================================
অফটপিকঃ ২৮সেপ্টেম্বর সকাল ৬টায় ছূটিতে চলে যাবো। ১১ অক্টোবর পর্যন্ত নেটে থাকবোনা। সিসিবি কে প্রচন্ড মিস করবো। মিস করবো এখানকার সব ভাই বোনদের। সবার জন্য অগ্রীম ঈদের শুভেচ্ছা। আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন যেন ঠিকমত বাসায় পৌছাতে পারি। ৬মাস ৩ দিন পরে বাবা মাকে দেখবো। মনে অনেক আনন্দ। আবহাওয়া খারাপ। লঞ্চ জার্নি করতে হবে। এজন্য একটু বেশী দোয়া করবেন। সবাই ভালো থাকুন, অনেক অনেক ভালো। ছুটিতে আমি ০১৭১৩৪২৩৮৪৮ নম্বরে থাকবো। সিসিবিতে বিশেষ কিছূ ঘটলে জানানোর অনুরোধ রইলো। আল্লাহ হাফেয।
======================================================================================

৩,৮৮৫ বার দেখা হয়েছে

৩৬ টি মন্তব্য : “আমরা তিনজন – ২য় পর্ব”

  1. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    যেন পরিস্কার চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি...
    অসাধারণ... :clap:
    আহসান ভাই আপ সি গ্রেট হো... :boss:

    ঈদ করে সহিসালামতে ফিরে আসুন...
    আঙ্কেল-আন্টিকে আমাদের সবার স্বশ্রদ্ধ সালাম।
    ঈদ মোবারাক।


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
  2. আরিফ (৯৫-০১)

    আহসান ভাই, আমি সবসময় একটা মুখচোরা টাইপ মানুষ..সামনে থাকলে কাউকে কিছু বলতে পারিনা..শুধু আমার ক্লাশমেট এবং কিছু প্রিয় ইমিডিয়েট সিনিয়র বাদে। ভাই কলেজে আপনাকে অনেক দেখেছি কিন্তু কোনদিন কোন কথা বলিনি বা বলতে পারিনি..আমার এই স্বভাবের জন্য..Even আমরা যখন কলেজ থেকে সবেমাত্র বের হযেছি..একদিন কলেজে ঢাকা থেকে গেছি,সেদিন কলেজে ছিল প্যারেন্টস ডে...আমি প্যারেন্টস ডে টাইম শেষ হলে সাত মাইলে লোকাল বাসের জন্য অপেক্ষা করছি...বাসে উঠে দেখি আপনি আপনার মায়ের সাথে উঠেছেন..আপনি আমার দিকে বার বার তাকাচ্ছিলেন, আমিও আপনার দিকে..কিন্তু শেষ পর্যন্ত কেউ কারো সাথে কথা হয়নি...আপনি হয়ত চেয়েছিলেন আমি আগে বলি..আর আমি আমার স্বভাবের কারনে বলতে পারিনি...(আপনার হয়ত মনে নাই..২০০১ এর কথা)..যাহোক এইখানে বলতেতো আমার কোন সমস্যা নেই.."আহসান ভাই আপনি ভালো আছেনতো"
    অফটপিক:আপনার লেখা সম্পর্কে অন্যরা বলবে...আমি শুধু নিরব পাঠক হয়ে থাকলাম...

    জবাব দিন
    • আহ্সান (৮৮-৯৪)

      আরিফ,
      আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ অনেক ভালো রেখেছেন। তুমি কেমন আছো ভাইয়া?
      ২০০১ সালের ঘটনাটা আসলেই আমার ঠিক মনে নেই। আশা করি তুমি কিছু মনে করবেনা কথাটি শুনে।

      ভালো হলো, দীর্ঘ ৭ বছর পরে হলেও আমরা একে অন্যের সাথে কথা বলতে পারছি। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া।

      লেখার নীরব পাঠক হয়ে কেন থাকবে? সব অভিনেতা অভিনেত্রীরাই (প্রকৃতপক্ষে সকল প্রকারের শিল্পীরাই)মঞ্চকে বেশী প্রাধান্য দেন। কারণ, মঞ্চে পারফর্ম করলে দর্শকদের প্রতিক্রিয়াটি সরাসরি পাওয়া যায়। ঠিক সেভাবেই, সকলের মন্তব্য পড়ে আমিও আমার লেখায় কোথায় কোথায় উন্নতির অবকাশ আছে তা বোঝার চেষ্টা করি(তবে আমি কিন্তু মঞ্চশিল্পীদের সাথে নিজেকে তুলনা করার ধৃষ্টতা দেখাচ্ছিনা)। আশা করি তোমার কাছ থেকে এটুকু সাহায্য আশা করতে পারি।

      ভালো থেকো ভাইয়া।

      জবাব দিন
      • এইতো ভাই ভালো আছি, আলহামদুলিল্লাহ।
        আর ভাই আমি অন্যদের মত এত সুন্দর করে মন্তব্য করতে পারিনা, মানে গুছিয়ে বলতে পারিনা। কিন্তু এইটা শুনে রাখবেন যে, আমার মত অমনোযোগী পাঠকদের আপনার লেখায় ধরে রাখার ক্ষমতা আছে।
        একটা উদাহরন দিলে বুঝতে পারবেন যে, আমার এক খুব নিকটের বন্ধু pcc r Hasan ও কিন্তু এখানের নিরব পাঠক, কোন নড়াচড়া দেয়নি কখনও,চরম চাপাস্বভাবের মানুষ,আমার লেখা পড়েও কোন কিছু বলেনা,সে একদিন বললো তোদের আহসান ভাইয়ের "টার্নিং পয়েন্ট" পড়ে আসলে ইচ্ছা করলে জীবনের কোন মানে পাওয়া যায়,এটা বুঝতে পারলাম।
        ভাইয়া ভালো থাকবেন সব সময় আল্লাহর কাছে এই কামনা করি।
        ধন্যবাদ জবাব দেবার জন্য।

        জবাব দিন
  3. সায়েদ (১৯৯২-১৯৯৮)

    আহসান ভাই,
    ফেসবুকে "কঙ্গো মিশনে কি হয়নি তাই বলো" বলেছিলেন। তার মানে কি এই 😮 ? আমি ভাবতেও পারছি না। সেই তুলনায় আমি তো বেহেশতে আছি বলব। যত যাই হোক না কেন আপনারা সবাই আমাদের মাঝে সহী সালামতে আছেন ভেবেই ভালো লাগছে। পরিবার পরিজনের সাথে আপনার ঈদ সুন্দর কাটুক এই কামনা করছি। আর পরবর্তী খন্ডের অপেক্ষায় দিন গোনা শুরু করছি।


    Life is Mad.

    জবাব দিন
    • আহ্সান (৮৮-৯৪)

      সায়েদ,
      দোয়া করি ভালোভাবে মিশন শেষ করে ফিরে আসো। কংগো আমার জীবনের একটা ব্যতিক্রমধর্মী অধ্যায়। আনুমানিক ১৫/১৬ বার আমি আক্ষরিক অর্থেই তওবা করে নিশ্চিত মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হয়েছিলাম। কিন্তু আল্লাহ আমার বাব-মা এর উপর প্রচন্ড দয়াশীল। নইলে হয়তো ওনারাও ইউ এন এর স্টীলের একটা কফিন বক্স পেতেন।

      জবাব দিন
  4. তৌফিক (৯৬-০২)

    1...

    হঠাত আমাদের যুদ্ধবহর থেমে গেলো। সেটে জানতে পারলাম সামনের একটি এপিসির চাকা পাথরের চাইয়ের সাথে আটকে গেছে। ঐদিকে গুলি করতে করতে ধেয়ে আসছে বিদ্রোহী দল। আমি ছিলাম তখন সবার পিছনে ধাওয়াকৃত শত্রুদের থেকে পুরো বহরকে রক্ষা করার জন্য। কোন উপায় না দেখে এপিসি থেকে বের হয়ে সামনের দিকে দৌড়াতে লাগলাম। প্রায় ২/৩ কিঃমিঃ পথ এভাবে একা একা গূলি বৃষ্টির মধ্য দিয়ে দৌড়ে পৌছালাম সেই এপিসিটির কাছে।

    :salute:

    2...

    .........কথা খুঁজে পাচ্ছি না, আপনার অভিজ্ঞতা এভাবে আমাদের সাথে ভাগ করে নেয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ।

    জবাব দিন
  5. তারেক (৯৪ - ০০)

    আহসান ভাই,
    দুটা পর্ব পড়তে গিয়েই গা শিউরে উঠলো। এই ব্যাপারগুলা সত্যিই মাসুদ রানা-র বইয়ের বাইরে কখনো সম্ভব, মনেই হয় না। আমি এখনও ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বসে আছি!
    *
    ফেইসবুকে আপনার প্রোফাইল পিকটা দারুন, গামছা মাথায় যেটা। 🙂

    🙂 🙂


    www.tareqnurulhasan.com

    জবাব দিন
  6. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    এই লেখাটা আগের দিনের লেখা বলে সবার নজরে আসে নাই তাই কমেন্টও কম বলে মনে হচ্ছে।হলিউড মুভিকে হার মানায় এরকম একটা সত্যিকারের কমান্ডো এ্যাকশানের কথা সরাসরি সেই অপারেশনে অংশ নেয়া একজন কমান্ডোর মুখ থেকে এভাবে শোনার সৌভাগ্য সিসিবি ব্যতীত খুব বেশি ব্লগারের হয়েছে বলে মনে হয়না।

    আহসান ভাই, সুযোগ পেলেই ধীরে সুস্থে সময় নিয়ে সিরিজটা লিখে ফেলেন বস,যাতে কোন ডিটেইলস বাদ না যায় 🙂

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : আদনান (১৯৯৩-১৯৯৯)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।