বিসিসি ইফতার পার্টি – সিলেট এডিশন

আজ মহা ধুমধামে বিসিসি’র সিলেট পার্টির ইফতার সন্ধ্যা হয়ে গেল। জমজমাট এই ইফতার পার্টির উদ্যোক্তা ছিলেন বকক এর ৬ষ্ঠ ব্যাচের শফিউল্লাহ ভাই (মেজর শফিউল্লাহ)। ব্যতিক্রমধর্মী এইজন্য বলছি, যে ইফতার পার্টি টি ছিল খোলা আকাশের নীচে বিশাল এক মাঠের মধ্যে। আয়োজনের এই ব্যতিক্রম, উপস্থিত সবাইকে অত্যন্ত অভিভূত করেছে।

সিলেট ক্যান্টনমেন্টের ঠিক উল্টো পার্শ্বের হাউজিং সোসাইটির সর্বশেষ কিনারায় খোলা আকাশের নীচে চাদর বিছিয়ে একদল রোযাদার ইফতার করছে ব্যাপারটা আসলেই রোমাঞ্চকর। ইফতারের আইটেমগুলো বাইরে থেকে কিনে আনা হয়েছে আর কিছু আইটেম নিজেরা নিয়ে গিয়েছিলাম। ইফতারের ঘন্টাখানেক আগে থেকে শুরু হয়েছিল সমাগম। চাদর বিছিয়ে তার উপর একে একে সব আইটেম সাজিয়ে রাখা হলো। অতঃপর বিশাল এক পাত্রের মধ্যে ইফতারের সকল আইটেম ভেঙ্গে চুড়ে শফিউল্লাহ ভাই’র নেতৃত্বে মাখানো হচ্ছিলো। সর্বমোট ২০-২৫ জন ছিলাম আমরা (একজন ভাবী এবং পুচ্চি সুইট একটা ভাতিজা সহ)। সম্ভবত বলছি এই কারণে যে, ব্যতিক্রমধর্মী এই আয়োজনের কারণে আসলে কারোই প্যারেড স্টেট লেয়ার কথা খেয়াল ছিলোনা। এখানে উল্লেখ্য যে, এই ইফতার পার্টিতে ঝকক, পকক এবং ককর (রংপুর) এর কয়েকজন অতিথিও ছিল।

যাহোক, শফিউল্লাহ ভাইয়ের এবং ওনার সহযোগী পার্টির হাতে নিশ্চয়ই যাদু ছিলো। তারা সব কিছু ভেঙ্গে যে মিশ্রণটি তৈরী করেছিলেন তার আসলেই কোন জবাব হয়না। প্রথমে মনে হয়েছিল এত্তগুলো কে খাবে। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গেল যে, মাত্র ৫ মিনিটে সব শেষ। বরং মনে হচ্ছিল, আরেকটু হলে কি এমন ক্ষতি হত? যাহোক, সব চেটে পুটে খেয়ে দেয়ে শফিউল্লাহ ভাই’র ইমামতিতে বিশাল সেই খোলা প্রান্তরে একদল ধর্মপ্রাণ মুসুল্লী আমরা নামাযে দাঁড়িয়ে গেলাম। ৬ বছর কম্পলচারি মাগরিবের নামাযে ক্যাডেটরা মসজিদে গিয়ে দুষ্টুমি করতে অভ্যস্ত। এত বছর পরেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। পিছনের সাঁড়ির কয়েকজন শুরু করে দিল সেই চিরাচরিত খোঁচাখুঁচি ও হাসাহাসি। তাদের সেই দুষ্টুমি চলতে থাকলো ১ম রাকা’তের রুকু’তে যাওয়া পর্যন্ত। প্রকৃতির কোলে এভাবে নামায আদায়ের এই নৈসঃর্গিক দৃশ্য আর কখনো দেখতে পাবো কিনা জানিনা।

নামায শেষ করে সন্ধ্যার আঁধারে শুরু হলো আড্ডাবাজি। সবাইকে গরম গরম চা দেয়া হলো আর সাথে সিগারেট পোড়ার উৎসব শুরু হলো। মনের আনন্দে সব কিছু উজাড় করে দিয়ে চলতে থাকলো আড্ডাবাজি। কত শত যে গল্প, যেন শেষ ই হতে চায়না। ফাঁকে ফাঁকে চলতে থাকলো ফটো সেশন। রেজওয়ানকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম ছবিগুলো এখানে ফটোব্লগ হিসেবে সবার সাথে শেয়ার করার জন্য। কি যে করেছে দুষ্টটা আল্লাহই জানেন।

সবশেষে মাঠের মাঝে অবহেলায় পড়ে থাকা খাবারের প্যাকেটগুলো এবং একটা গ্লাসের ভাঙ্গা কিছু কাঁচের টুকরোকে পেছনে ফেলে রেখে ফিরে চললাম আমরা নিজ নিজ ডেরায়। সাথে নিয়ে গেলাম জীবনের প্রথম খোলা বিস্তীর্ন এক প্রান্তরে প্রকৃতির কোলে ইফতার করার এক বিরল অভিজ্ঞতা। ব্যতিক্রমধর্মী এই ইফতার আয়োজনের জন্য শফিউল্লাহ ভাইকে জানাই অনেক অনেক ধন্যবাদ। একই সাথে যাদের নিরলস পরিশ্রমে এই আয়োজন সার্থক হয়েছে তাদের প্রতি রইল কৃতজ্ঞতা।

ছোট্ট একটি মজার ঘটনা দিয়ে এই আয়োজনের গল্প শেষ করবো। ইফতারিতে উপস্থিত কোন একজনের দুই পায়ের পাতায় “ডান পা” এবং “বাম পা” লেখা দেখে চরমতম আগ্রহবোধ করলাম। কি কারণে অমোচনীয় কালি দিয়ে একটা মানুষের বাম পায়ের উপরে “বাম পা” এবং ডান পায়ের উপরে “ডান পা” লেখা থাকতে পারে তা আমার মাথায়ই আসছিলোনা। অবশেষে থলের বিড়াল বের হলো। কারণটা হচ্ছে, অফিসে যাবার সময় ইউনিফর্ম পরার পরে যখন ব্যাটম্যান বুট পরার জন্য এগিয়ে দেয়, তখন ঘটে বিপত্তি। কারন, ব্যাটম্যান তার স্যারের দিকে মুখোমুখি বসে বুট পরতে সাহায্য করে বলে, ব্যাটম্যানের ডান আর যিনি বুট পরছেন তার বাম দিক একই হয়ে যাচ্ছে। ফলে প্রায়শঃই উক্ত অফিসারের ডান পায়ে চলে যায় বাম পায়ের বুট আর ফলাফল হচ্ছে মারাত্মক ঝারি।

এই ঝারি থেকে বাঁচার জন্য ব্যাটম্যান একদিন তার স্যারের ঘুমের মধ্যে আর্ট লাইনার দিয়ে সুন্দর করে ডান এবং বাম পায়ের পাতার উপরে যথাক্রমে “ডান পা” এবং “বাম পা” লিখে রেখেছে। এখন আর তার বুট পড়াতে ভুল হয়না কিংবা এক পায়ের টা অন্য পায়ে চলে যায়না। বেচারা ব্যাটম্যানতো বেঁচে গেল, কিন্তু তার স্যারের এখন বেচারা হয়ে গেল। কারণ, কোথাও গেলে তাকে এখন কৌশলে পায়ের পাতা দু’টোকে আড়াল করে রাখতে হয়। আহারে…বেচারা…।

———————————————————————————————————-
**রেজওয়ান, দুষ্ট ছেলে তাড়াতাড়ি ছবিগুলো আপলোড কর।

৩,৩২৯ বার দেখা হয়েছে

৮৩ টি মন্তব্য : “বিসিসি ইফতার পার্টি – সিলেট এডিশন”

  1. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    আচ্ছা,ওই ব্যাটম্যানকে আড়ং ধোলাই দেওয়া হয়নাই???? ঘুমের মধ্যে অফিসারের পায়ের পাতায় ট্যাট্টু কইরা দেয়,কি সাঙ্ঘাতিক!!! নাহ,আর্মি থিকা আইসা পইড়া কি বাঁচাটাই না বাঁচছি!!! 😮 😮 😮

    জবাব দিন
  2. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    ও হ্যাঁ, বলতে ভুইলা গেছিলাম।ডিসেম্বরের আগ পর্যন্ত ঠিক করছি আপনের সব লেখায় এই শ্লোগানটা দিমুঃ

    এক দফা এক দাবী
    আমাদের চাই আহসান ভাবী 😡 😡

    জবাব দিন
  3. দিহান আহসান

    আসসালামুয়ালাইকুম ভাইয়া, অনেক অনেক বছর ওহো অনেকদিন পর এলেন বেড়াতে, :teacup: খান। ওরে বাবা লেখাও দিয়েছেন দেখছি 😛 :hug:

    খান খান ইফতার খেয়ে বেড়ান, আপনাদের'ই তো দিন :gulli2:

    ভালো আছেন? 😀

    জবাব দিন
    • আহ্সান (৮৮-৯৪)

      ওয়ালাইকুমসালাম ছোট আপু।
      এতদিন পরেই যদি আইলাম, তাইলে খালি চা ক্যান????? ফ্রিজটা কুন দিকে???? একটু খুইলা কি দেখা যায় গোল গোল সেই বস্তুগুলা (যাহা পিঁপড়ার অতি প্রিয়) আছে কিনা...?

      ছুড আফু, আপনেতো দেখি দিন দিন নিষ্ঠুর হইয়া যাইতাছেন...। রোযা রাইখা আপনি ইফতার খাইতে দিতেও নারাজ...!!!!!! 😮 আর আমি কি কইছি যে রাইত আমাগো? তোমাগো রাইত আমাগো দিন...কুন সমিস্যা???

      হুমম...ভালো...। মঈন আর ভাতিজাদের খবর কি?

      জবাব দিন
  4. আহারে আহসান ভাই!!

    শফি স্যারের কথা মনে করাইয়া দিলেন! আমাদের এ্যাডু আছিলেন... :dreamy:
    উনার কত না রকমারি ঝকমারি আইডিয়া!
    সেইগুলা পালনের ভার হইত আমাদের উপর (টুয়েল্ভ এর পিরিফেক্ট পাট্টি)..
    তারে সিসিবিতে আনন যায় না? 😀

    পায়ে সিল মারার গল্প শুইন্না মিজা পিলাম :khekz: :khekz:

    জবাব দিন
  5. রেজওয়ান (৯৯-০৫)

    আমি কান ধইরা ব্লগে ঢুকছি 😕 😕 😕
    ছবি দিতে একটু দেরী হইতাছে......কারন পায়ে উল্কি আকা বান্দরটারে ধরতে পারতেসি না... :(( :(( :((
    তবে ইনশাল্লাহ অতি শীঘ্রই আহসান ভাই এর হাতে পৌছাইয়া দিব এবং জম্পেশ একখানা ছবি ব্লগ হবে... 😀 😀
    আর তারপর সেই ব্লগে জোস কইরা আহসান ভাইয়ের কাহিনী বলব :awesome: :awesome:
    অঃটঃ আহসান ভাই বস B-) আমারে সিলেটের সবচেয়ে খানদানী রেস্টুরেন্টের খানদানী আইটেম খাওয়াইছে :tuski: :tuski:

    জবাব দিন
  6. শফি ভাই, অন্যের পোস্টে ব্লগে জয়েন করার আওয়াজ দিলে চলবে না...জলদি লেখা দিন...

    আর হ্যাঁ, সেম ইন্টেক হবার কারনে এডু স্যার স্বজনপ্রীতি করতে পারেন...তাই শফি ভাই এর রেজিমেন্টেশন করানোর জন্য শওকত ভাই অথবা প্রিন্সু স্যারের হস্তক্ষেপ কামনা করছি...

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : আহ্সান (৮৮-৯৪)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।