জন্মদিন রকার্‌স

হে হে হে … সিরিজের মাঝখানে অন্য পোস্ট দেওনের মজা পাইয়া গে – সি ……… টইং টইং টইং :awesome:

৩রা জুলাই আমরা প্রথম ক্যাডেট কলেজে পদার্পণ করি। দিনটি সব ব্যাচমেটদের জন্যই স্মরণীয় নানা ভাবে। তবে আমার কাছে স্মরণীয় একটু অন্যভাবে।

আমাদের হাউজে জামাকাপড় এ্যারেঞ্জ করা-করি, লুকার পার্টনারের সাথে ঘুরাঘুরি, এসব বিষয় সবার-ই একরকম। তবে অডিটোরিয়ামে আমাদের যে নবীন বরণ অনুষ্ঠান হয়েছিল সেটার বাকি সব ইভেন্ট মনে না থাকলেও তাহসির ভাই-এর কিবোর্ড তুখোড় কিবোর্ড বাজানো আর আলী ভাই-এর ‘মনে পড়ে যায় আমার কৈশোর’ গানটির পারফর্ম্যান্স কখনো ভোলার নয়। তখনও জানতাম না যে ওটা ওয়ারফেজ-এর গান, আসলে ওয়ারফেজ নামের কোনো ব্যান্ড-ই তখন চিনতাম না। ধুর, আসল কতা হইল গিয়া বাংলাদেশের ব্যান্ডগুলারেই আমি তহন চিনতাম না!! ঐ শো-ই পথ দেখাইলো, আমাকে ব্যান্ড মিউজিকের প্রতি আসক্ত করার একটা অন্যতম ব্রেকপয়েন্ট ছিল সেটা। আমার নিজের একটা টয় কিবোর্ড ছিল বাসায়, ওটাতে কোনোমতে গানের সুর-টুর একটু তোলার চেষ্টা করতাম। তাহসির ভাই-এর কিবোর্ড প্লেইং স্টাইল আমার মিউজিক সেন্স-এর একটা লেভেল-আপ করে দিয়েছিল। তাহসির ভাই স্টিল রক্‌স!! আর মেইনলী উনাদের ফলোয়ার হয়ে আমরাও এই গানটিই আবার আমাদের লিডিং-এ যখন ক্লাস সেভেন আসলো (৩৯ ইনটেক) তখন তাদের নবীন বরণে করেছিলাম।

হাউজে আসার পথে নতুন আসা আরো সতীর্থদের দেখলাম, যাদের মধ্যে আমার হাউজের একটা ছেলেকে আমার বেশ ভালভাবেই সেদিন চোখে লেগেছিল। তার মাথায় ইয়া লম্বা লম্বা চুল, আকারেও সে একটু লম্বা-ই, সামনের দিকে ঝুঁকে ঝুঁকে হাঁটছিল, সাথে তার জন্য এ্যাপয়েন্টেড লুকার পার্টনার। তার হাঁটার দুলুনির সাথে সাথে মাথার চুলগুলোও বাম্প করছিল। এ্যাডভার্টাইজমেন্ট যারা বানায় তাদের কেউ থাকলে শিওর ওকে শ্যাম্পুর এ্যাড করার জন্য কাস্টিং দিয়ে দিত। হাউজের সামনের লনে সিনিয়ররা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চিড়িয়াগুলোর আগমন দেখছেন। তার মধ্যে এক গ্রুপ সেই স্টাইলিশ ছেলেটাকে ডাক দিয়ে বললেনঃ “এই ছেলে তোমার নাম কি?” তখন সে ঠিক শ্যাম্পুর মডেলদের মত (নাকি সিনেমার নায়কের মত?) মাথা ঝাঁকা দিয়ে চোখের সামনে থেকে চুল সরিয়ে বড় ভাইদের দিকে বেশ ভাব নিয়ে তাকিয়ে বললঃ “মেহরাজ।” … উরি আল্লারে কি রকিং রে বাবা!!

মাগরিবের নামাযের সময় সিরিয়াস বৃষ্টি। আমরা সবাই শেড দিয়ে কলেজ মস্কে গেলাম। আমার লুকার পার্টনার ফারহান ভাই আমার ঠিক পেছনে হেঁটে আসা একজনের প্রতি আমার মনযোগ আকর্ষণ করিয়ে আমাকে বলল – “উনি বরকত ভাই, কলেজ প্রিফেক্ট।” আমি পেছনে তাকালাম, দেখলাম ই-ই-ই-য়া-য়া-য়া লম্বা একজন আমার দিকে তাকিয়ে মুখে একটা শয়তান মার্কা চাপা হাসি ঝুলিয়ে রেখেছেন। ভয়ে আমি আবার সামনে তাকিয়ে পড়লাম। কলেজ প্রিফেক্ট সম্পর্কে বাবা’র কাছে শুনেছি, তাই ভয়টা পেয়েছিলাম আরেকটু বেশি-ই। পুরা কলেজের লিডার, কম কথা না কি রে ভাই!!

কলেজে প্রথম ডিনারে টেবিল লিডার ছিলেন শিবলী ভাই। উনাদের ইনটেকের অন্যতম সুন্দর চেহারার অধিকারী; আজকালকার পাঙ্ক ছেলেপেলে যেটাকে ‘লেডি কিলার’ বলতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। প্রথম দিন আমার খেতে বেশ সমস্যা হয়েছিল, উনি এটা নিয়ে কোনো পেইন দেন নাই। এমনকি ঐ সাতদিনের টার্মে কোনোদিন-ই পেইন দেন নাই। বড়ই ভালা লোগ… বাট মাস্তিবাজ! আহ… রিউনিয়ন ‘০৭-এ কি ড্যান্স-টাই না দিলেন আমার লগে! মাইকেল জ্যাকসন আইলে আমগো সেলাম দিয়া মানে মানে কেটে পড়ত কোনো ডাউট নাই।

আরে …… আসল ঘটনা তো মাইকেল জ্যাকসনকে নিয়েই। ডিনারের পর ক্লাস টুয়েল্ভ-এর ডর্মের সামনে সেই শিবলী ভাই-এর সাথে আমার আগমন। অনেকজন সিনিয়র দাঁড়িয়ে আছেন। নানান রকম উদ্ভট প্রশ্নে আমি জর্জরিত। আমার মধ্যে কোন সুপ্ত প্রতিভা আছে কি না সেটার ব্যাপারেও কেউ কেউ বেশ আগ্রহী। একসময় সেটা বেরুলো — আমি মাইকেল জ্যাকসনের গান পছন্দ করি, কিছু কিছু গান আমি পারি-ও। শুরু হয়ে গেল তামশা! Comparatively শর্ট মতন একটা চশমা পরা ভাইয়া (ঐ কলেজ প্রিফেক্ট বরকত ভাই-এর মত ইইইয়া লম্বা না এই আর কি) এসে বললেন, “গাও দেখি একটা গান”। আমি শুরু করলাম, তারা শুনলেন, তার পর আরো ক’জন বন্ধুদের ডাকলেন শো দেখানোর জন্য। হুনাইন হাউজের কোনো এক ভাইয়া-ও এসে পড়েছিলেন সেখানে।
এবার ঐ চশমা লাগানো ভাইয়া বললেন, “আবার গাও।” আমি আবার গাইলাম। এবার গানের মাঝে উনি থামিয়ে দিয়ে বললেনঃ “হচ্ছে না, মাইকেল জ্যাকসনের মত ড্যান্স দিয়ে দিয়ে গাও”। আমি তো এইবার ফাপরে। ড্যান্স তো আমি পারিনা। উনাকে বলাতে উনি চোখ পাকিয়ে বললেনঃ “ড্যান্স দিতে বলসি না? ড্যান্স দাও।” আমি ভয়ে ভয়ে কি করব, কোনমতে আড়ষ্ট হয়ে আবার গান গাইতে লাগলাম। ঐ ভাইয়াটা এবার আমাকে একটা মুভ শিখিয়ে দিলেন; বললেনঃ “হাত সামনে আন, গানের তালে তালে বডি লেফট-রাইট সুইং করাবা আর হাত দুইটা একবার মুঠি করবা আরেকবার খুলবা… দেখ এইভাবে” বলে তিনি আবার একটু ডেমো দিয়ে দেখিয়ে দিলেন। আবার গান শুরু হল, সেই সাথে সেই ‘ড্যান্স’… বড় ভাইরা তো দেখে হেসেই কুটিকুটি! কলেজে মাইকেল জ্যাকসন আইছে রক্‌ করতে!!

মাহফুজ ভাই… এই ঘটনাটা এখনো আমার স্মৃতিতে মেহফুজ আছে, দেখসেন?

১,৯৮৭ বার দেখা হয়েছে

২৭ টি মন্তব্য : “জন্মদিন রকার্‌স”

  1. জাহিদ (১৯৯৯-২০০৫)

    আদনান ভাই, নেক্সট সিসিবি গেট টুগেদারে আপনার জ্যাকসনীয় ড্যান্স দেখতে চাই। :tuski:

    হাত সামনে আন, গানের তালে তালে বডি লেফট-রাইট সুইং করাবা আর হাত দুইটা একবার মুঠি করবা আরেকবার খুলবা…

    জটিলস্য জটিল :thumbup: :thumbup:

    জবাব দিন
  2. মাহফুজ (৯২-৯৮)

    আদনান, আমাকে নিয়ে তোমার আরো অনেক কিছুই মনে থাকার কথা...আমি সব ভুলে গেছি কেন যেন। বহুদিন পরে মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। তোমার সিরিজের পরবর্তী পর্ব কবে পাব?

    জবাব দিন
  3. মেহেদী হাসান (১৯৯৬-২০০২)

    অনেক অনেক কথা মনে করিয়ে দিলে.....................

    আলী ভাই-এর ‘মনে পড়ে যায় আমার কৈশোর’ গানটির পারফর্ম্যান্স কখনো ভোলার নয়

    আমাদের সময় মল্লিক ভাই গেয়েছিল "হাসতে দেখ, গাইতে দেখ..."

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : স্বপ্নচারী (১৯৯২-১৯৯৮)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।