হিলারিয়াস বিড়ালিয়াস এক্সপেরিয়েন্স!

আমার একটা রেগুলার শিডিউল হল ইউনিভার্সিটি থেকে বাবার অফিসে যাই। সেখান থেকে একসাথে লাঞ্চে যাই; লাঞ্চ করে আবার ২য় শিফট-এর ক্লাস ধরি (যদি থাকে কোনটা)।

সেদিন আমি আর বাবা যথারীতি লাঞ্চ এর জন্য বেরুচ্চি। আব্বু গাড়ি ব্যাক করে বের হল, আমি ঢুকলাম। আমাদের একটা ডার্ক ব্লু কালারের TOYOTA STARLET SOLEIL L গাড়ী। যাই হোক, যেতে লাগলাম লাঞ্চে। হঠাৎ শুনি একটা আনিউজুয়াল শব্দ। প্রথমে পাত্তা দেইনি। গাড়িটা পুরানো হয়েছে, নানা রকম চাই-চুই শব্দ প্রায়-ই পাওয়া যায়। আমরা অত গা না করে যেতে লাগলাম। কিন্তু ক্ষণে ক্ষণে সেই শব্দ আরো বেশি যেন কানে লাগতে লাগল। আমরা গাড়ি স্লো করে শোনার চেস্টা করলাম কি ব্যাপারটা।

শব্দটা অনেকটা বিড়ালের মিউ মিউ ডাকের মত। আমরা চিন্তা করলাম গাড়ি তে কি বিড়াল ঢুকল নাকি? সেটা তো হবার কথা না কারন গাড়ি অল টাইম লক থাকে। গাড়ি থামিয়ে চেক করলাম, সিটের পিছন, নীচে, ব্যাকবনেট সব। ‘কোথাও কেউ নেই’… আমরা যখন চেক করছিলাম তখন কোন সাড়াশব্দও পাচ্ছিলাম না। আমরা আবার চলা শুরু করলাম। কিছুক্ষণের মাঝে আবার সেই “মিউ মিউ”!

গাড়ি আবার থামালাম। ঘটনা কি? এই আওয়াজটা পিছু ছাড়েনা কেন? এবার ঠিক করলাম পুরা গাড়ি চেক করব। রাস্তার সাইডে গাড়ি দাড় করিয়ে গাড়ি মোছার স্টিকটা দিয়ে গুতো দিয়ে দিয়ে দেখলাম সিট এর নীচে কিছু আছে কি না আসলেই। এভাবে চেক করতে করতে কি মনে করে সামনের বনেট খুল্লাম। সেইরাম সিরিয়াস!!! একটা কিটি বসে আছে ইঞ্জিনের মধ্যে। চোখে এমন একটা দৃষ্টি যে, “আমাকে ড্রাইভ না করতে দিলে খেলুম্না, খেলামু-ও না; কিন্তু সব খেইলা দিমু এক্কেরে”।

গাড়ির ইঞ্জিনের ভিত্রে বিলাই-এর বাচ্চা

গাড়ির ইঞ্জিনের ভিত্রে বিলাই-এর বাচ্চা


নানা ভাবে এটাকে বের করার চেস্টা করতে থাকলাম। গরম ইঞ্জিনের ভেতরে হাত দিতেও তো ভয় লাগে। ছাতা দিয়া গুতা দিয়া দিয়া বের করার চেষ্টা করতে লাগলাম। বাইর হইতে চায়না!! অনেক গ্যাড়াগেড়ির পর বের হল কিন্তু গাড়ির তল থেকে যায় না। এই দিক থেকে আমরা ওকে ‘চু-চু’ করতেসি যাতে বের হয়। আমাদের দেখে ও এদিক আসেনা, আর অন্য দিকে তো রিক্সা-গাড়ি সমানে চলতেসে, সেদিকেও যায়না। কি বিপদ!

শেষমেষ সে গাড়ির তল থেকে সরলো, কিন্তু চলে গেলনা — উঠল গিয়া পিছনের চাকায় (ডান দিকেরটা)!!

চাক্কার মধ্যে যায়া ঢুক্সে

চাক্কার মধ্যে যায়া ঢুক্সে


আরেক যন্ত্রনা শুরু হল। ওখানে তো গুতা দেবার মত স্পেস ও নাই। মহা টেনশন নিয়া আমরা চিন্তা করলাম, অফিসে ব্যাক করি। সেখানে গিয়ে দেখা যাবে। গেলাম… সেখানে গিয়া অনেক কষ্টে বের করলাম চাকার ভেতর থেকে। তারপর-ও ক্ষান্ত হইতে পারিনাই। ওটা আবার গিয়ে ইঞ্জিনের ভিতর ঢুকল। এখন আর বাইর-ই হয়না। শেষে পিয়নকে ডেকে বলা হল বের করতে … সে এসে হাত দিয়ে ঘাড়ের কাছে ধরে বের করে ফেলল; ছেড়ে দিল। আমরা হাপ্‌ ছেড়ে বাচলাম।

কোনভাবে যদি ওটার কোন ইঞ্জুরি হত তাহলে ব্যাপারটা কত খারাপ হত! আল্লাহ্‌ আমাদের সঠিক সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ায় সাহায্য করেছেন এজন্য তাঁকে ধন্যবাদ।

২৯ টি মন্তব্য : “হিলারিয়াস বিড়ালিয়াস এক্সপেরিয়েন্স!”

  1. জিহাদ (৯৯-০৫)

    ব্যাপারটা আসলেই অদ্ভূত। এত জায়গা থাকতে ইঞ্জিনের ভিতরে কোন স্বর্গসুখের আশায় বসে ছিল কে জানে!

    আমার অটোমোবাইল কোর্স চলে এই সেমিস্টারে। গাড়ির ইঞ্জিন দেখলেই মনে হয় অটোমোবাইলের ল্যাব করতেসি । 😀


    সাতেও নাই, পাঁচেও নাই

    জবাব দিন
  2. জ়ে এম সারোয়ার মুজিব ( এডিসন) (১৯৭৯-১৯৮৫)

    অনেকদিন আমার মেয়েটাকে দেখিনা। আমি যখন বাংলাদেশ থেকে আসি তখন ওর সবচেয়ে প্রিয় খেলা ছিল আম্মু," বিড়াল, কুকুর, বাঘ, মোরগ ইত্যাদি কেমন করে ডাকে। সে খুব সুন্দর করে ডাকতো।" যখন সে খুব কান্না শুরু করে দিত, যদি বলা হতো আম্মু বিড়াল কেমন করে ডাকে? সে কান্না থামিয়ে মিঁয়াউ বলতো আবার কান্না শুরু করতো। এখন হয়তো আর তা করেনা। অনেকদিন পড়ে ঐ স্মৃতিটা মনে করে দিলা।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : আদনান (১৯৯৭-২০০৩)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।