এ্যানাগ্লিফ

এই বছরের এপ্রিল মাস থেকে রাজধানীতে অবস্থান করছি। ৪ জন মিলে আছি আমার কলেজের-ই এক বন্ধুর বাসায়; ৪ ক্যাডেট বন্ধু, আর কেউ নয়। সুতরাং বলাই বাহুল্য, সময়টা দারুণ যাচ্ছে 🙂

আমাদের প্রতিদিনের একটা কমন কাজ হল অফিস থেকে ফিরে রাতে ডিনারের পর একসাথে রাত জেগে টিভি দেখা। এটা প্রতিটি পরিবারেরই একটা খুব সাধারণ দৃশ্য, কিন্তু ব্যাপারটা আদতে অত স্বাভাবিক নয়। ব্লগের নন-ক্যাডেট ভিজিটর-দের বোঝার সুবিধার্থে বলছি : ক্যাডেট কলেজে একসাথে থার্সডে নাইটে মুভি দেখার ব্যাপারটা অনেক স্পেশাল ছিল। ওখানে রিক্রিয়েশনের সুযোগ কম। গেমস বলে একটা জিনিস আছে, কিন্তু সেটা যখন বাধ্যকরি হয় তখন আর মজা থাকেনা। যাই হোক, ছুটির দিনে (যেটাকে আমরা বলতাম Free Day) কমনরুমে একসাথে বন্ধুরা বসে মুভি দেখা এবং সময়ে-অসময়ে একেকটা কমেন্ট করা এবং সেই ছোট ছোট এক-দুই শব্দের কমেন্টের হিউমার-এ সবার হাসতে হাসতে গড়িয়ে যাওয়া — এই ব্যাপারগুলি মনে হয় যেন আবার ফিরে পেয়েছি এই একসাথে থাকতে গিয়ে।

মূলতঃ টিভির কোনো পার্টিকুলার প্রোগ্রাম দেখা হয়না, চ্যানেল ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে কোথায় কি মুভি চলছে সেটা দেখা হয়, আর খেলা চললে সেটা দেখা হয়। আর মুভি দেখার ক্ষেত্রে যেসব মুভি প্রাধান্য পায় সেগুলি একটাও সিরিয়াস টাইপের কোনো মুভি নয়, বরং এদের ক্ষেত্রে যেই বাংলা শব্দটি একেবারে যাকে বলে “খাপে খাপে খাটে” তা হল “ফাচুকি”! কখনো কখনো যে সুন্দর রোমান্টিক ছবি বা “Aaww…. Wow” জাতীয় ধ্বনি বের করা এ্যাকশন ছবি দেখা হয়না তা নয়, তবে একটা জিনিস অবধারিতভাবে হয়ে থাকে সেটা হল – আমরা সবাই মুভি দেখার সময় একেকজন বড় মাপের ক্রিটিক হয়ে যাই। ছবির ক্ষুদ্রতম ডিটেইল-টা নিয়েও আলোচনা-সমালোচনা করতে ভুলে যাই না।

সিনেমা নিয়ে এসব পাগলামী করতে করতে বিভিন্ন সময় একেকজন তাদের এই সংক্রান্ত নানান অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে থাকে। যেমন- যেই বন্ধুর বাসায় আছি, আমার ঠিক পরের ক্যাডেট নাম্বার। ব্যারিস্টারী পড়তে গিয়ে লন্ডন বসবাস করে এসেছে ৭ বছর। সেখানে থাকতে তার iMax এ ত্রিমাত্রিক সিনেমা দেখার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করছিল একদিন। আমাদের যাদের ‘ফরেনে’ যাবার ভাগ্য হয়নি তারা চোখ গোল গোল করে তার থ্রিডি মুভি দেখার গল্প শুনেছি (বন্ধু বর্ণনা দেয় দারুণ)। মনে হচ্ছিল “ইশ! যদি একটা অন্ততঃ দেখতে পেতাম!” যাই হোক, থ্রিডি দেখার বাসনা পূর্ণ করার একটা সহজ উপায় ক’দিন আগে জানতে পারলাম, যেটা নিয়ে বলতে গিয়েই এত বড় ভূমিকা।

ব্লগের টাইটেল-এ আমি উল্লেখ করেই দিয়েছি এটাকে কি ডাকা হয়। জিনিসটা সম্পর্কে আমি উইকিপিডিয়ায় দেখে আমার সীমিত বোধ দিয়ে যতটুকু বুঝেছি সেটুকুই বলার চেষ্টা করছি:-

এটা হল কোনো ছবির আরো ২টি কপি যেগুলির একটি লাল এবং অপরটি সবুজাভ-নীল, যাকে ইংরেজিতে Cyan বলা হয়, সেই রং-এর ফিল্টারের মাধ্যমে আনা হয় এবং তারপর সেই দুটি কপি কে আসল ছবিটার উপর সুপার-ইম্পোজ করা হয়। সাধারণভাবে দেখলে ঐ Red-Cyan superimposed ছবিটা একরকম ঘোলাটে জাতীয় মনে হতে থাকে, অথবা মনে হতে পারে ‘প্রিন্টিং মিসটেক’।

এরপর আরেকটি হ্যান্ডিক্র্যাফট বাকি, সেটা হল, সেই এ্যানাগ্লিফ করা ছবিটাকে সঠিক উপায়ে দেখার জন্য একটি বিশেষ চশমা তৈরী। ঘরেই তৈরী করে ফেলা যায় ঐ ২টি রং এর সেলোফেন পেপার দিয়ে, খরচ সবচেয়ে কম। ঐ রঙের কাঁচ-ও ব্যবহার করা যায়, আরো ভাল। তবে এক্ষেত্রে চশমার ডান আর বামের রং দুই রকম হতে হবে। এখানে যেই ব্যাপারটা মাথায় রাখতে হবে সেটা হল – ছবিটির যেই দিকে ঐ ২টি রং-এর কোনোটির শেড থাকবে, চশমার সেই দিকে তার বিপরীত রংটির সেলোফেন/গ্লাস থাকতে হবে। অর্থাৎ, যদি ছবিটির লাল শেড টি ছবিটির ডান পাশে থাকে, তবে চশমার ডান দিকের লেন্স-এর রং হতে হবে Cyan। একই ভাবে উল্টোদিকেও তাই — Cyan vs Red।

চশমা বানানো হলে এবার ঐ চশমা চোখে দিয়ে সেই এ্যানাগ্লিফ চিত্রের দিকে তাকালে তখন সেটাকে ত্রিমাত্রিক দেখা যাবে।

যাদের iMax দেখার মত সৌভাগ্য এখনো হয়ে উঠেনি বা হবার সম্ভাবনা নিকটবর্তী সময়ে নেই, কিন্তু ত্রিমাত্রিক চিত্র কেমন হয় সেটা দেখার আগ্রহ আছে, তারা এই পদ্ধতি চেষ্টা করে দেখতে পারে। YouTube-এ এ্যানাগ্লিফ ফরম্যাটের বেশ কিছু ডেমো পাওয়া যায়। ইন্টারনেটে মুভি ডাউনলোডার-রাও মুভি’র নামের পাশে “Anaglyph format” এটি ডাউনলোডের জন্য অন্যতম কীওয়ার্ড ব্যবহার করতে পারে। ফটোগ্রাফার-রাও একটু মজা দিতে পারে তার ভিউয়ার-দের এই টেকনিক ব্যবহার করে 😉

৬ টি মন্তব্য : “এ্যানাগ্লিফ”

  1. নাজমুল (০২-০৮)

    ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর একটা ব্লগ লিখার জন্য।
    আমি কিছুদিন আগে আমার আগের মনিটরটা বিক্রী করে দিয়ে একটা থ্রিডী মনিটর কিনলাম।
    সাথে ২ টা চশমা এবং আসাসিনস ক্রীড এর থ্রিডী ভার্শন এর একটা ডিভিডী। দাম খুব একটা বেশি না।
    সাথে সাথে টরেন্ট এ নামাতে শুরু করলাম বিভিন্ন থ্রিডী মুভী।
    নেক্সট ডে ডেলিভারী ছিল, পরের দিন সকাল থেকেই উত্তেজিত ছিলাম কখন পাবো, তারপর আসার সাথে সাথে লাগাই ফেললাম পিসির সাথে।
    থ্রিডী চালানোর একটা সফটওয়ার ছিল সাথে।
    চশমা চোখে দিয়ে দেখলাম, আরে বিশাল কাজ করে পুরা আইম্যাক্স এর মত 😀
    পরে এভাটার থ্রিডী চালালাম, যেটা ডাউনলোড করসিলাম , তেমন কিছু টের পাইনাই।
    পাওয়ার ডিভিডি ১১ কিনলাম, ওইটা দিয়ে চালাইতে গিয়ে দেখি HDMI ক্যাবল ছাড়া চলবেনা, কিসব কপিরাইট এর ব্যাপার আছে।
    তারপর HDMI ক্যাবল কিনতে গিয়ে সাথে একটা ব্লুরে প্লেয়ার আর পিরহানা থ্রিডী ও কিনে ফেললাম।
    খুব ভালো না হলেও চলে।
    ব্যাপারটা হলো অনেকটা চশ্মার উপর। কারণ হলে গিয়ে ছবি যখন দেখে, সেগুলা থাকে রিয়াল থ্রিডী, কিন্তু আমরা ইউটিউব কিংবা ব্লুরে তে যখন টিভিতে দেখি তখন চশমাটা অনেক বড় একটা ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়
    চশমার প্রচুর দাম, বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১০০০০ টাকার মত।

    আমার জমানো টাকা তো কিছু ছিলনা বরং ধারের টাকা বেড়ে গেসে 🙁

    জবাব দিন
  2. ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

    আমার বাচ্চাদের সাথে মাঝে মাঝে থিয়েটারে গিয়ে ৩ডি কার্টুন মুভি দেখে আসি। অসম্ভব ভাল লাগে। আমি বরাবর এবং এখন আরও এ্যানিমেশনের ফ্যান হয়ে গেছি।


    “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
    ― Mahatma Gandhi

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : নাজমুল (০২-০৮)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।