MJ, তোমাকে ভালবেসেছি, বেসে যাব!

কোনো একটা ব্লগে লিখেছিলাম, কলেজে ৭ম শ্রেণীতে পদার্পণ করার পর ১২এর সিনিয়র ভাইরা ডেকে নিয়ে যায়, সেখানে আমাকে ড্যান্স করে মাইকেল জ্যাকসনের গান গাওয়ানো হয়। ঐটুকু পিচ্চির মাইকেল জ্যাকসনের আস্ত একটা ইংরেজী গান মুখস্ত ছিল এটা তো কম কথা নয়।

হ্যা, আমি মাইকেলের সেরকমই একজন ভক্ত ছিলাম। আমাকে এই সিরিয়াস ট্যালেন্টেড আর্টিস্ট-এর সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় আমার খালাত ভাই রাজীব। তখন আমরা মনে হয় ক্লাস 3/4 এ পড়ি। ওর হিল দ্য ওয়ার্ল্ড গানটা দিয়েই ফ্যান হওয়া। তখন তো আর সিডি’র এত চল ছিল না, ক্যাসেট পাওয়া যেত। আমার মনে আছে, বাজারে মাইকেলের যতগুলি এ্যালবাম পাওয়া গেছে সব আমি কিনেছি, কোনোটা বাদ দেইনি। আমার বাসায় একটা পুরো র‌্যাক ভর্তি জ্যাকসন কালেকশন ছিল। মনে আছে, ওল্ড স্কুল রকারদের মত আমিও বিশাল ২ টা স্পিকার আনিয়েছিলাম বাসায়, বাসার একেবারেই সাধারণ ডেকসেটের সাথে ঐ জায়ান্ট সাউন্ডবক্স দু’টি লাগিয়ে হাই ভলিয়্যুমে ঈদের দিন সে কি জ্যাকসনের গান শোনা!

ওর কোন জিনিসটা আমার ভাল লাগেনি সেই সময়ে বার করা মুশকিল। ওর প্রত্যেকটা স্টাইল আমার ভাল লাগত। ওর পাম-সু টাইপের জুতা থেকে সেই পপ-কিং বুট, ওর মাথার হ্যাটের ফাঁক দিয়ে ঝুলে থাকা এক গোছা কোকড়ানো চুল, প্রমান সাইজের গগল্‌স, ঝকমকে জামা… আর ইন্ডিয়া যেবার আসল তখন তো ফাটাফাটি অবস্থা! মেয়েরা পপ কিং-এর দিকে চুমু ছুঁড়ে দিয়ে আবেগে জ্ঞান হারাচ্ছে, পাবলিকের সেকি তুমুল হুল্লোড়! টিভিতে দেখছিলাম – ইন্ডিয়ার সব বড় বড় সেলিব্রিটিরা পরিচিত হচ্ছে জ্যাকসনের সাথে, তার মধ্যে অনুপম খের একটু পর পর মাইকেলের ঢং-এ ‘আউ’ বলে চিৎকার করছে।

জীবনে অনেক ঝামেলাতে নানান ভাবে জড়িয়ে গেলেও জ্যাকসনের যেই অবদান অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই সেটি হল তার গানের ম্যাসেজের মাঝে সে যে সাম্য, শান্তি আর ভালবাসার কথা পৃথিবীর মানুষকে জানাতে চেয়েছে সেই প্রয়াস। বিভিন্ন সময়ে তার মিউজিকাল ট্যুরগুলি শুধু নিছক বিনোদনের উদ্দেশ্যে ছিলনা, বরং সেখানে একেকটা ম্যাসেজ থাকত জীবনের গভীর উপলব্ধিমূলক। এই কাজ ক’জন করে?

শিশুদের প্রতি তার ভালবাসার প্রকাশ তার মিউজিক ভিডিওগুলোতেই প্রকাশ পেয়েছে। দ্য আর্থ সং, হিল দ্য ওয়ার্ল্ড এসব কালজয়ী গানের স্রষ্টা আমাদের এই জ্যাকসন। বিখ্যাত সব পপ গানের মধ্যে বিট ইট, বিলি জিন, জ্যাম, স্মুথ ক্রিমিনাল, ডেঞ্জারাস, ব্ল্যাক অর হোয়াইট, থ্রিলার, গিভ ইন টু মি ইত্যাদি উল্লেখ্য। তার কিছু বালাড যেমন আই কান্ট স্টপ লাভিং ইউ, ইউ আর নট এ্যালোন এগুলো আমার মনে দাগ কাটে এখনো। তার বিট ইট গানটিতে ভ্যান হেলেনের বাজানো লিড সোলোটা আমার খুবই প্রিয় একটা অংশ।

সব মিলিয়ে জ্যাকসনের একটা সিরিয়াস ফ্যান ছিলাম আমি ছোটবেলা থেকেই। আজ আমার সেই আইডল নেই। মনটা খুব খারাপ হয়ে গিয়েছে খবরটা শুনে। তাই শেয়ার করার জন্য লিখলাম। তার মত গায়ক এবং একই সাথে পারফর্মার এই পৃথিবী কি মিস করবে না? তার গানের মাঝে তার যে স্বপ্ন ছিল, সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়নের চেষ্টায় কেন সবাই একসাথে গেয়ে উঠি না – Make it a better place for YOU and for ME.

১,৬৩২ বার দেখা হয়েছে

১৩ টি মন্তব্য : “MJ, তোমাকে ভালবেসেছি, বেসে যাব!”

  1. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)
    শিশুদের প্রতি তার ভালবাসার প্রকাশ তার মিউজিক ভিডিওগুলোতেই প্রকাশ পেয়েছে।

    নাহ্‌, ভারি পোষ্টে হাল্কা কিছু কমু না... ;))
    তবে, ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করে বসে মরে গিয়েই বেঁচে গেল... :-B
    নানান বিতর্ক, শারীরিক ও মানসিক অশান্তি...এর চেয়ে এইটাই ভাল... :-B

    মরে গিয়ে এখন পুরোমাত্রায় ভক্তদের মনে বেঁচে থাকবে এই ক্ষণজন্মা পপ সম্রাট... :thumbup:


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
  2. সামীউর (৯৭-০৩)
    Like A Sunset
    Dying With The Rising Of The Moon
    Gone Too Soon

    Gone Too Soon

    জ্যাকসনের একটা গানের লাইন জ্যাকসনের মৃত্যুতেই কোট করলাম, এমজে মুনওয়াক করতে করতে চলে গেছেন নেভারল্যান্ডে :hatsoff: :hatsoff: :hatsoff:

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : আদনান (১৯৯৪-২০০০)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।