বালকবেলার প্রেম..

অনেকদিন ধরে কিছু লেখা হয়না, সিসিবি পড়াও হয়না । বেশিরকম ব্যস্ত, যাও বা সময় থাকে নানাধরনের ইযি কাজ সময় খেয়ে ফেলে । বেশ বড় রকমের একটা ডুব দিয়ে ছিলাম । ব্যাক করার আশায় ভাবছি এখন থেকে সিটকম স্টাইলে লিখব । সিরিজ লেখা কিন্তু পরস্পর সম্পর্কহীন । আমার এ লেখাগুলো কিছুটা কাল্পনিক কিছুটা অতি কাল্পনিক, তাই ঘটনার সূত্র জানতে চেয়ে কোন লাভ নাই ।

আজকে আমার প্রথম প্রেমের কথা বলি । প্রথম প্রেমে পরা বললে বোধহয় সবচেয়ে যথার্থ হয় । আজকের গ্যাদা পোলাপানের হয়ত মনে নাই কিন্তু ইন দ্যা ইয়ার ১৯৯০ যারা আমির খান – মাধুরী অভিনীত দিল মুভি দেখেছেন তাদের মুঝে নিন্দ না আয়ে গানটা নিশ্চয়ই মনে আছে । আহা মাধুরী লাল ড্রেস, পুরা আমার নাদান দিলে চাক্কু মেরে দিয়েছিল । সে যাকগে মুভি তো মুভি হয়তো একদিন মাথায় থাকে । কিন্তু একদিন রাতে ঘুমের মাঝে আমি কি হেরিলাম ! দেখি আমি আর আমাদের পাশের বাসার জাস্ট ফ্রেন্ড মুঝে নিন্দ না আয়ে গানটা পারফর্ম করছি । সকালে ঘুম থেকে উঠে অনকে কষ্ট করেও মনে করতে পারলাম না সুবিহ সাদিকের আগে স্বপ্নটা দেখেছিলাম কিনা । মা বলত সুবিহ সাদিকের আগে দেখা স্বপ্ন নাকি সত্যি হয় । এরকম আগডুম বাগডুম ভাবতে ভাবতে হঠাত শুনি আমার জাস্ট ফ্রেন্ড বাবার ট্রান্সফারের সুবাদে সিলেট চলে যাচ্ছে । মনটাই খারাপ হয়ে গেল, কিন্তু কোন আমিরী চাল না চেলে স্বাভাবিক ভাবে ফ্রেন্ডকে বিদায় দিলাম । এরপর পদ্মা-যমুনা দিয়ে অনেক পানি বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পরেছে, আর আমি এসে পরেছি সিডনীতে ।

অন্য অনেকদিনের মতই মেসেন্জারে বসে চ্যাট করছি । হঠাত দেখি একটা পরিচিত নাম বন্ধু হতে চায় । মেয়েদের নাম তাও আবার মনে হয় চিনি চিনি, বেশি না ভেবে এ্যাড করে ফেললাম । তারপর কথা শুরু করতে একি এ দেখি আমার জাস্ট ফ্রেন্ড । কাকতালীয় ঘটনা তাহলে বাস্তবেও ঘটে, ভাবতে ভাবতে কথা চালিয়ে যাচ্ছি । একথা সেকথা কি কর – কি করি, বের হল সে এখন আমেরিকায় বিয়ে করেছে এবং কয়েকদিন পরে মা হতে যাচ্ছে । আমি এতোগুলো সারপ্রাইজ কিভাবে হযম করব ভাবছি তার আগে ফ্রেন্ডের অনুরোধ তার বাচ্চার একটা নাম রেখে দিতে হবে ! আমিতো ভাবলাম ভাবাবেগে বলেছে হয়ত, বলে ফেললাম দেব একটা নাম । সেদিনের মত চ্যাট সেশন শেষ । পরে ভাবছি এলেই যখন দুটা বছর আগেই আসতে । যাক ব্যাপার না গুরু তো বলেই গেছেন বাস আর মেয়েদের জন্য বেশিক্ষন আপপেক্ষা করতে নেই একজন গেলে ৫ মিনিট পরে আরেকজন এসে পরে যদিনা রাস্তায় বেশি জ্যাম থাকে । তা বলেছি যখন নাম দিব তখন একটা বেবি নেম সাইটে গিয়ে ঘাটাঘাটি করে একটা নাম পছন্দ হলো, মানেটা সুন্দর আল্লাহর উপহার । পরবর্তী চ্যাটিং সেশনে জানিয়ে দিলাম আমার পছন্দের নামের কথা । ফ্রেন্ডের পছন্দের শর্ট লিস্টে যায়গা করে নিল । এরপর যথাসময়ে ফ্রেন্ড একটি সুস্হ পুত্র সন্তানের জন্ম দিল এবং আমাকে অবাক করে আমার দেয়া নামটাই রাখল ওর ছেলের জন্য । মনে মনে খুশিই হলাম আমার দেয়া নামটা রাখায় । তারপরো মাঝে মাঝে কথা হয় । মাঝখানে অনেক বছরের ব্যবধান তবুও আমাদের শৈশবের এক্কা-দোক্কা, বরফ-পানি, টিলোস্কেপ, ফুল টোক্কাদের আমরা একজন আরেকজনের মাঝে খুঁজে পাই । আর আমি মুঝে নিন্দ না আয়ের কথা ভেবে মনে মনে হাসি । ভাল থেক জাস্ট ফ্রেন্ড, অনেক ভাল ।

৬,৮৩১ বার দেখা হয়েছে

৭০ টি মন্তব্য : “বালকবেলার প্রেম..”

  1. কামরুল হাসান (৯৪-০০)

    পৃথিবীতে সবচেয়ে দুঃখের ব্যাপার হচ্ছে 'পুরোনো প্রেমিকাদের ছেলে-মেয়েরা যখন মামা বলে ডাকে ' 😀
    আমার এরকম অনেক ভাগিনা-ভাগিনী আছে। 🙁
    'মামা ক্লাবে' স্বাগতম আদনান। 😉


    ---------------------------------------------------------------------------
    বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
    ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।

    জবাব দিন
  2. তারেক (৯৪ - ০০)

    দোস্ত,
    ইন দ্য ইয়ার অব ১৯৯১, আমিও ফুলটোক্কা খেলা শিখছিলাম।
    আর কিছু কমু না, প্রিবলিম আছে। 🙂
    তোর স্মৃতিচারণ ভালা লাগলো। তবে সাবধান, হবু বউ-র কাছে প্রিন্টআউট চলে গেলে কামরুলরে সন্দেহ করিস না কিন্তু। :grr:


    www.tareqnurulhasan.com

    জবাব দিন
  3. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    ওহ, কত কথা মনে করে দিলেন আদনান ভাই :dreamy:

    ছুডু বেলায় আমারও একজন ফুল টোক্কা, বরফ পানি খেলার সাথি জাস্ট ফ্রেন্ড ছিল... গত বছর ভোটার আইডি করার সময় আমার সার্ভারে হঠাৎ করে তাকে খুজে পাই। তবে যোগাযো করা হয় নি... (ততদিনে আমি বান্দা গরু 😛 )


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  4. এহসান (৮৯-৯৫)

    যাক পুরোনো বন্ধু খালি বাচ্চার নাম চাইসে। অনেক আগে বুদ্ধদেব গুহের একটা বই পড়েছিলাম নাম মনে নাই। নায়ক যশোয়ন্তের কাছে :just: বন্ধু আস্ত বাচ্চার আব্দার করেছিল।

    আমেরিকা আর অস্ট্রেলিয়ায় থেকে বাচ্চার নাম ছাড়া বেশী কিছু চাওয়াও যায় না। কি আর করা। ‘মামা ক্লাবে’ যোগ দাও 🙁

    আসলেও দুনিয়াজুড়া পচুর গিয়াঞ্জাম।

    জবাব দিন
  5. মাহবুব (২০০০-০৬)

    যাক ব্যাপার না গুরু তো বলেই গেছেন বাস আর মেয়েদের জন্য বেশিক্ষন আপপেক্ষা করতে নেই একজন গেলে ৫ মিনিট পরে আরেকজন এসে পরে যদিনা রাস্তায় বেশি জ্যাম থাকে

    ৫ মিনিট ত পার হইয়া গেছে......রাস্তায় কত বড়ো জ্যাম লাগল.........। :(( :(( :((

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : রকিব (০১-০৭)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।