ক্রস কান্ট্রি এর বিভীষিকা

প্রথমেই আমি আমার দোষ স্বীকার করে নিচ্ছি, আমার অনেক বানান ভুল হবে কারন এটিই আমার এখানে প্রথম লেখা ।যাই হোক, কলেজে একটি জ়িনিস আমি খুবই ভয় পেতাম আর টা হচ্ছে এই ক্রস কান্ট্রি নামক ব্যপারটি।
প্র্যাকটিস দৌড়, যা আগের দিন হত তাতেই আমার পা এর অবস্থা শেষ ! মনে আছে খুব চেষ্টা করতাম যেন কোন ভাবে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া যায় কিনা। ১ বার মনে হয় মেডিকেল অফিসার কে বোকা বানিয়ে ভর্তি হতেও পেরেছিলাম । কিন্তূ বাকি ৪ বার আমাকে এই অবস্থা এর মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছিল ।
ক্লাস ৮,৯ এ ছিলাম জুনিয়ার গ্রুপে । ১০০ জনের মধ্যে ২ বারেই ৮০ বা ৮২তম হলাম । ক্লাস ১০ এ উঠে এস এস সি পরীক্ষা এর জন্য বেঁচে গেলাম সে যাত্রা । আবার ক্লাস ১১ এ এসে দেখি একি যন্ত্রণা ! সেবার দেখি ১৫০ জন প্রতিযোগী । আমি ভাবলাম এবার আমি গেছি । প্রতিবার কিছু ছেলে দৌড় শেষ করতে পারে না, তারা দেখি মাইক্রোবাসে করে স্যারদের সাথে ফিরে ।আমি ভাবলাম এই পন্থাই অবলম্বন করব, যা আছে কপালে। কিন্তূ আমার হাউসমেটরা মিটিং ডাকল এবং ঠিক করা হল আর যাই হোক ডিসলকোয়ালিফাই হওয়া যাবে না । আর আমি তো পরলাম মহা বিপদে । তার উপর এতগুলি জুনিয়র এর সামনে মাইক্রোবাসে করে ফেরাও খুব একটা গরবের ব্যাপার মনে হল না । তো যাই হোক দৌড় আমি দিয়েছিলাম, এবং এত কষ্ট করে দৌড়ে ছিলাম যে আজ পর্যন্ত আমার মনে হয়, যে এত কষ্ট আর জীবনে পরে আর কখনো করি নাই ।
আমি সেবার ১০৪তম হয়ে ছিলাম ১৪৪ জনের মধ্যে (বাকী ৬জন ডিসলকোয়ালিফাই হয়েছিল)। দৌড় শেষ করে যখন মাঠে বিছানো কম্বলের উপরে শুয়ে পরলাম এবং আকাশের দিকে তাকালাম, এত শান্তি পেয়েছিলাম যে এই লেখা লিখবার সময়েও আমি সেই শিহরন টের পাচ্ছিলাম । ডাইনিং হল বেয়ারা লবন আর লেবু মেশানো পানি হাতে দিয়ে গেল, একটা ক্লাস ৭ এর ছেলে হাতে টাওয়েল দিয়ে গেল ঘাম মোছার জন্য । নিজেকে মনে হচ্ছিল যেন ম্যারাথন রেস শেষ করে আসলাম ।
সেই সুখ, সেই শান্তি মনে হয় না কোনদিনো ভুলতে পারব ।

৪৬ টি মন্তব্য : “ক্রস কান্ট্রি এর বিভীষিকা”

  1. আদনান (১৯৯৩-১৯৯৯)

    কিন্তূ আমি এখনো জানি না যারা ১ম ২য় হত তাদের কি খাতির করা হতো কারণ আমি যখন শেষ করতাম ততক্ষনে তারা হাউসে চলে যেত । আসেন না কি এখানে কেঊ ১ম ২য় হতেন?

    জবাব দিন
  2. জিহাদ (৯৯-০৫)

    ১০০ জনের মধ্যে ৮০ আর ১৪৪ জনের মধ্যে ১০৪... ভাইয়া, আপনি তো বিশাল দৌড়বিদ!! আমগো ব্যাচের অনেকে শেষমেষ না পাইরা স্টাফের সাইকেলের পিছনে চইরা আসতো।

    ক্রস কান্ট্রি শেষে লেবু পানি, আর ডাইনিং হলে গিয়ে একের পর এক পরোটা খাওয়া - এই দুইটা স্মৃতি আসলেই বেশি জোস। মনে হইতো এই জীবনে আর কিছুর দরকার নাই। খালি এক গ্লাস লেবুর শরবত হইলেই হবে 😀

    আমাদের ব্লগের ক্রসকান্ট্রিতে শুরুটা কিন্তু খারাপ করেন নি। এখন খালি লীডটা ধইরা রাখেন 🙂


    সাতেও নাই, পাঁচেও নাই

    জবাব দিন
  3. আদনান (১৯৯৩-১৯৯৯)

    জিহাদ তো খুব সহজে একটা খুব কঠিন কাজ় দিয়ে দিলা লীড ধরে রাখা তো খুবি কঠিন একটা কাজ, তার উপর বাংলা টাইপ করতে যে কি কষ্ট হচ্ছে তা আর কি বলবো । English হলে এতক্ষনে ৩ টা post করে ফেলতাম ।

    জবাব দিন
    • আদনান,

      ফাটাফাটি একটা পোস্ট!!

      সেই ক্লাস সেভেন এর ক্রস কান্ট্রি দেয়ার সময় দৌড়াচ্ছি আর দৌড়াচ্ছি...রাস্তা আর শেষ হচ্ছে না...
      কটন মিল টা পার হয়ে দেখি...আমাদের ক্লাস এরই একজন সমানে ফ্রন্ট রোল দিচ্ছে...অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম..."কিরে একা একা ফ্রন্ট রোল দিচ্ছিস কেন??"

      উত্তরঃ ফ্রন্ট রোল দিলে দৌড়ের চাইতে কষ্ট কম হয়...এই জন্য এ ফ্রন্ট রোল দিতাছি...

      আল্লাহ আমার সেই বন্ধু টির মনের বাসনা পুরন করেছে...ও এখন আর্মি তে আছে...

      জবাব দিন
  4. সামিয়া (৯৯-০৫)

    ভাইয়া ব্লগে স্বাগতম...আমার চোদ্দ গুষ্টি ডাক্তার, এইজন্য আমি ডাক্তারদের উপর খুবই বিরক্ত, সুযোগ পাইলেই ডাক্তারী ভাষায় কিচিরমিচির শুরু করে 🙁
    আপনে এখন একটু ক্যাডেটীয় ভাষায় কিচিরমিচির করে দেখায় দেন, ডাক্তাররাও পারে 😀

    জবাব দিন
  5. আদনান (১৯৯৩-১৯৯৯)

    বন্য, আমাকে কিন্তূ ক্লাস ৭ এর ছেলে লেবুর সরবত দেয় নাই, দিয়েছে ডাইনিং হল বেয়ারা। ভাল করে পড়ে দেখো।
    এরশাদ ভাই, Obstacle এর কথা না হয় এর পরের বার এর জন্য বাকি থাকল। সব একবারেই বলে ফেললে কেমন হয় বলেন?

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : কামরুল হাসান (৯৪-০০)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।